০৮:১৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ০২ অক্টোবর ২০২৩, ১৭ আশ্বিন ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞপ্তি :
অষ্টগ্রামে ১৬১ বছর ধরে পালন করা হচ্ছে আশুরা

মোকারম হোসেন, বিশেষ প্রতিনিধি
মহানবী হজরত মুহাম্মাদ (সা.) এর দৌহিত্র ইমাম হোসাইন (রা.) ১০ মহররম শাহাদাৎ বরণ করেন। এই দিন কারবালা প্রান্তে এই হƒদয় বিদায়ক ঘটনার মাধ্যমে ইসলামের পূর্ণজাগরণ হয়। তাই মুসলমানদের সর্বোচ্চ শোকাবহ ধর্মীয় অনুষ্ঠান পবিত্র আশুরা। এর ই অংশ হিসেবে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রামে প্রতিবছর পবিত্র ১০ মহররম বা আশুরা শোকাবহ আয়োজনে পালিত হয়। ১০টি রোজা, জারি-মর্সিয়া, তাজিয়া মিছিলসহ শোকাবহ পরিবেশে ১২ দিনব্যাপী ঐতিহ্যবাহী আশুরা পালিত হয়ে আসছে ১৬১ বছর ধরে।
১-১০ মহররম লাল-কালো পতাকা উঠানোর মধ্য দিয়ে বাঁশ, রঙ্গিন কাগজ ও কাপড়ে তৈরি তাজিয়া মিছিলের মাধ্যমে এটি শুরু ও শেষ হয়। এসময় অষ্টগ্রামে সমবেত হন বিভিন্ন এলাকার লাখো মানুষ। ১০ মহররমের পর শোকের আমেজে লোকজ উৎসব চলে আরো দু’দিন।
শোকাবহ মহরমের মুল আনুষ্ঠানিকতা আরবি নববর্ষ প্রথম দিন থেকে শুরু হলেও, ১০ মহররম তাজিয়া মিছিলের মাধ্যমে স্থানীয় কারবালা নামক স্থানে গিয়ে শেষ হয়। শোকানুষ্ঠানে হাজার হাজার সুন্নী মুসলিমরা ঐতিহাসিক অষ্টগ্রাম হাবেলীর হোসাইনী মোকামে দল বেঁধে ‘হায় হোসাইন, হায় হাসান’ ধ্বনিতে অশ্রুবিসর্জন দেন।
অষ্টগ্রাম হাবিলী সুত্রে জানা যায়, সুন্নীদের মধ্যে অষ্টগ্রামে শোকাবহ মহরমের প্রধান প্রবক্তা, হজরত শাহজালাল (রহ.) সহচর সিপাহসালার সৈয়দ নাসির উদ্দিন (রহ.) ১৩তম বংশধর; জোয়ান শাহী পরগনার ন’কোষা জমিদার ও ‘ভাটির ওলি’ খ্যাত হজরত সৈয়দ আব্দুল করিম আল-হোসাইনী (রহ.), যিনি ‘সৈয়দ আলাই মিয়া সাহেব’ নামে পরিচিত। তিনি আধ্যাত্মিক সাধনায় মগ্ন হওয়ায়, ১৮৩৬ সালে অনাদায়ী খাজনার জন্য ন’কোষা জমিদারি বিলুপ্ত ঘোষণা করে ব্রিটিশ সরকার।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পবিত্র মহরমে চাঁদ দেখার পর অষ্টগ্রাম হাবলী’র ইমামবাড়ায় শুরু হয়, লাল কালো নিশান উত্তোলন, নামাজ, জারি, মাতম মর্সিয়া, ১০টি রোজা রাখা, নিরামিষ ভোজন, খালি-পা ও মাটিতে শয়ন, তাবারক বিতরণসহ নানা রকম শোকানুষ্ঠান। একই অবস্থা চলে উপজেলার ৫টি ইউনিয়নের অর্ধশত ইমামবাড়ায়। শোকাবহ পবিত্র মহররমের ১০ দিনের মধ্যে মূল অনুষ্ঠান হয় ৯ ও ১০ মহরম। ৯ মহরম ইমাম হোসাইনের রোহানী ফায়েজ হাসিলের উদ্দ্যেশে অষ্টগ্রাম হাবলী’র ইমামবাড়ায় গর্স্ত (প্রদক্ষিণ) ও ১০ই মহরম স্থানীয় কারবালায় (হাটখলা) রঙ্গিন তাজিয়া নিয়ে শোক মিছিলের মধ্যদিয়ে সমাপ্তি হয় ঐতিহ্যবাহী অষ্টগ্রামের আশুরার।
একই নিয়মে কিশোরগঞ্জের ভৈরব, হোসেনপুর, ভাগলপুর ও বৌলাই। নেত্রকোনা জেলার খালিয়াজুড়ি ও মদন। বি-বাড়িয়ার সরাইল, নাসিরনগর, সুনামগঞ্জ, সিলেট ও হবিগঞ্জের সুলতানশী হাবেলীসহ প্রায় ১০১ গ্রামে ১৬১ বছর ধরে পালিত হয় পবিত্র আশুরা।
এলাকার বাসিন্দা আল আমিন বলেন, আমরা বংশ পরম্পরায় নবী মোহাম্মাদ (সা.) নাতিদের শোকে দিবসগুলো পালন করে আসছি। যাদের প্রাণের বিনিময়ে ইসলাম পূর্নজাগরণ হয়েছে, তাদের জন্য এইটুকু ত্যাগ করতে না পারলে আমরা কিসের মুসলমান। ঈমানী দায়িত্বতে আমরা শোকাবহ মহরম পালন করি।
এই বিষয়ে অষ্টগ্রাম হাবিলী’র পীরজাদা ও সদর ইউপি চেয়ারম্যান সৈয়দ ফাইয়াজ হাসান বাবু বলেন, আমরা হোসাইন পন্থি, সত্যের প্রতি সম্মান জ্ঞাপন ও মিথ্যার প্রতি ঘৃণা প্রদর্শন করে থাকি। শোকাবহ মহরম মানুষের মধ্যে ধৈর্য্য ত্যাগ ন্যায় পরায়নতায় উদ্বুদ্ধ এবং সত্যের জন্য জীবন উৎসর্গ করতে অনুপ্রাণিত করে। শোকাবহ মহরমে সুন্নী মুসলীমদের কল্যাণ কামনা করি।
ট্যাগস :