০৮:২০ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ০৯ ডিসেম্বর ২০২৩, ২৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

বিজ্ঞপ্তি

ঔষধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের দখলে নবীগঞ্জ সদর হাসপাতাল

প্রতিনিধির নাম

দিনভর ঔষধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের দখলে থাকে নবীগঞ্জ সদর হাসপাতাল। সকাল থেকেই তারা ওয়ার্ডগুলোতে অবাধ বিচরণ করতে থাকেন। দলে দলে ভাগ হয়ে হাসপাতালের ভেতরে ডাক্তারের চেম্বারের সামনে অবস্থান নিয়ে রোগীদের ব্যবস্থাপত্র নিয়ে টানা হেঁচড়া করেন। দেখেন কোন কোম্পানির ঔষধ সেখানে লেখা হয়েছে। অনেকে আবার রোগীদের বলে দেন পরীক্ষা-নিরীক্ষার কথাও। কেউবা নিজেদের মোবাইল ফোন নাম্বার দিয়ে বলেন অমুক ক্লিনিকে পরীক্ষা করান। বিভিন্ন ওয়ার্ডে ঢুকে সিস্টারদের কাছে থাকা রোগীদের ফাইল নিয়েও টানা হেঁচড়া করেন তারা। সিস্টাররাও নির্দিধায় ফাইল দিয়ে দেন তাদের কাছে। হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে ঔষধ কোম্পানির কয়েকজন প্রতিনিধি অবস্থান করছিলেন। পরিচয় জানতে চাইলে তাদের একজন নিজেকে গুলক ফার্মা কোম্পানির প্রতিনিধি হিসেবে পরিচয় দেন। নিজের নাম বলেন জয়নত দাশ। আরেক জনের পরিচয় জানতে চাইলে নিজেকে এরিষ্টু ফার্মা কোম্পানির প্রতিনিধি হিসেবে পরিচয় দেন। নিজের নাম বলেন মোঃ রিয়াদ খান। ও আরেক জনের পরিচয় জানতে চাইলে নিজেকে পেছিফিক কোম্পানির প্রতিনিধি হিসেবে পরিচয় দেন। নিজের নাম বলেন আকাশ বিশ্বাস। আরেক জনের পরিচয় জানতে চাইলে নিজেকে স্কয়ার কোম্পানির প্রতিনিধি হিসেবে পরিচয় দেন। নিজের নাম বলে ইমরান। আরেক জনের পরিচয় জানতে চাইলে নিজেকে কনসেপ্টটা কোম্পানির প্রতিনিধি হিসেবে পরিচয় দেন। নিজের নাম বলেন, খায়রুল ইসলাম। কেন ভেতরে ঢুকেছিলেন জানতে চাইলেই দ্রুত তিনি সটকে পড়েন। ঔষধ বিতরণ কেন্দ্রের সামনে অবস্থান নিয়ে রোগীর ব্যবস্থাপত্রের ছবি তুলছিলেন ঔষধ কোম্পানির প্রতিনিধিরা জানান, কারও সমস্যা সৃষ্টি করছেন না। শুধু ছবি তুলছেন। সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, অফিস সময়ে হাসপাতালে যাওয়ার নিয়ম না থাকলেও সকাল ১০টার আগেই দলে দলে ভাগ হয়ে সেখানে অবস্থান নিচ্ছেন ঔষধ কোম্পানির প্রতিনিধিরা। এসময় কানাইপু গ্রামের মোঃ  মোর্শাহিদ আলী নামে এক ভূক্তভোগী এই প্রতিবেদককে বলেন, ডাক্তারের চেম্বার থেকে বাহির হওয়ার পরে আমাদের সাথে ঔষধ কোম্পানির বেশ কয়েকজন প্রতিনিধি আমার ব্যবস্থা পত্র নিয়ে টানা হেঁছড়া শুরু করে দেন। ঔষধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের এই হেনেস্তার করনে আমরা ভুক্তভোগীরা অতিষ্ঠ। এসময় দেখা যায়, হাসপাতালের ডাক্তারদের বিভিন্ন কক্ষের সামনে রোগীদের ভিড় থাকার সুযোগ নেন তারা। কক্ষ থেকে রোগী বের হওয়া মাত্রই তাদের ব্যবস্থাপত্র নিয়ে একেকজন টানা হেঁচড়া শুরু করে দেন। ডাক্তার কোন কোম্পানির ঔষধ লিখেছেন তা জানার চেষ্টা করেন। কেউ কেউ আবার একটি ঔষধের বদলে নিজের কোম্পানির ঔষধ কেনার পরামর্শ দেন। কেউ আবার সুযোগ বুঝে ঢুকে পড়েন ডাক্তারের কক্ষে। রোগী দেখার সময় সেখানে অবস্থান নিয়ে তিনি নিজের কোম্পানির ঔষধ লেখানোর চেষ্টা করেন। সকাল থেকে জরুরি বিভাগ ও বহির্বিভাগের সামনে অবস্থান করেছিলেন বেশ কয়েকজন ঔষধ কোম্পানির প্রতিনিধি। এ সময় হাসপাতালে রোগীর ভিড় ছিল মারাত্মক। একেকজন রোগী ডাক্তারের কক্ষ থেকে বের হন আর তাদের ব্যবস্থাপত্র নিয়ে টানা হেঁচড়া শুরু করে দেন ঔষধ কোম্পানির প্রতিনিধিরা। তাদের ছবি ওঠানোর বিষয়টি টের পেয়ে কয়েকজন দ্রুত সটকে পড়েন। অবস্থান নেন হাসপাতালের মূল ভবনের প্রবেশকক্ষের গেটের সামনে। ঔষধ কোম্পানির প্রতিনিধিরা শুধু এখানেই নয়, তারা বিভিন্ন ওয়ার্ডে গিয়ে সিস্টারদের কাছ থেকে ফাইল নিয়ে ব্যবস্থাপত্র দেখেন। টানা হেঁচড়াও করেন। ঔষধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের এমন দৌরাত্ম হাসপাতালের প্রতিদিনের চিত্র। এ অবস্থায় নার্স, ব্রাদাররা যেন অনেকটা অসহায় হয়ে পড়েন। রোগীসহ তাদের স্বজনরাও মারাত্মক বিব্রতকর অবস্থায় পড়েন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে নবীগঞ্জ সদর হাসপাতালের সহকারী তত্ত্বাবধায়ক (আরএমও) ডা. চম্পক কিশোর সাহা (সুমন) এই প্রতিবেদককে বলেন, অফিস চলাকালীন সময়ে ঔষধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের হাসপাতালে আসা অবৈধ। এটি তারা করতে পারেন না। তিনি বলেন শনিবার ও মঙ্গলবার ১ টার সময় ভিজিট করার কথা আমরা নোটিশ দিয়ে জানিয়েছি। ইতোমধ্যে তাদের সমিতিকে অবহিত করা হয়েছে। তবে এ বিষয়ে কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার পরিকল্পনা করা হচ্ছে।

ট্যাগস :
আপডেট : ০৪:৪৯:৩৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ২২ জানুয়ারী ২০২২
১২৩ বার পড়া হয়েছে

ঔষধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের দখলে নবীগঞ্জ সদর হাসপাতাল

আপডেট : ০৪:৪৯:৩৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ২২ জানুয়ারী ২০২২

দিনভর ঔষধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের দখলে থাকে নবীগঞ্জ সদর হাসপাতাল। সকাল থেকেই তারা ওয়ার্ডগুলোতে অবাধ বিচরণ করতে থাকেন। দলে দলে ভাগ হয়ে হাসপাতালের ভেতরে ডাক্তারের চেম্বারের সামনে অবস্থান নিয়ে রোগীদের ব্যবস্থাপত্র নিয়ে টানা হেঁচড়া করেন। দেখেন কোন কোম্পানির ঔষধ সেখানে লেখা হয়েছে। অনেকে আবার রোগীদের বলে দেন পরীক্ষা-নিরীক্ষার কথাও। কেউবা নিজেদের মোবাইল ফোন নাম্বার দিয়ে বলেন অমুক ক্লিনিকে পরীক্ষা করান। বিভিন্ন ওয়ার্ডে ঢুকে সিস্টারদের কাছে থাকা রোগীদের ফাইল নিয়েও টানা হেঁচড়া করেন তারা। সিস্টাররাও নির্দিধায় ফাইল দিয়ে দেন তাদের কাছে। হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে ঔষধ কোম্পানির কয়েকজন প্রতিনিধি অবস্থান করছিলেন। পরিচয় জানতে চাইলে তাদের একজন নিজেকে গুলক ফার্মা কোম্পানির প্রতিনিধি হিসেবে পরিচয় দেন। নিজের নাম বলেন জয়নত দাশ। আরেক জনের পরিচয় জানতে চাইলে নিজেকে এরিষ্টু ফার্মা কোম্পানির প্রতিনিধি হিসেবে পরিচয় দেন। নিজের নাম বলেন মোঃ রিয়াদ খান। ও আরেক জনের পরিচয় জানতে চাইলে নিজেকে পেছিফিক কোম্পানির প্রতিনিধি হিসেবে পরিচয় দেন। নিজের নাম বলেন আকাশ বিশ্বাস। আরেক জনের পরিচয় জানতে চাইলে নিজেকে স্কয়ার কোম্পানির প্রতিনিধি হিসেবে পরিচয় দেন। নিজের নাম বলে ইমরান। আরেক জনের পরিচয় জানতে চাইলে নিজেকে কনসেপ্টটা কোম্পানির প্রতিনিধি হিসেবে পরিচয় দেন। নিজের নাম বলেন, খায়রুল ইসলাম। কেন ভেতরে ঢুকেছিলেন জানতে চাইলেই দ্রুত তিনি সটকে পড়েন। ঔষধ বিতরণ কেন্দ্রের সামনে অবস্থান নিয়ে রোগীর ব্যবস্থাপত্রের ছবি তুলছিলেন ঔষধ কোম্পানির প্রতিনিধিরা জানান, কারও সমস্যা সৃষ্টি করছেন না। শুধু ছবি তুলছেন। সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, অফিস সময়ে হাসপাতালে যাওয়ার নিয়ম না থাকলেও সকাল ১০টার আগেই দলে দলে ভাগ হয়ে সেখানে অবস্থান নিচ্ছেন ঔষধ কোম্পানির প্রতিনিধিরা। এসময় কানাইপু গ্রামের মোঃ  মোর্শাহিদ আলী নামে এক ভূক্তভোগী এই প্রতিবেদককে বলেন, ডাক্তারের চেম্বার থেকে বাহির হওয়ার পরে আমাদের সাথে ঔষধ কোম্পানির বেশ কয়েকজন প্রতিনিধি আমার ব্যবস্থা পত্র নিয়ে টানা হেঁছড়া শুরু করে দেন। ঔষধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের এই হেনেস্তার করনে আমরা ভুক্তভোগীরা অতিষ্ঠ। এসময় দেখা যায়, হাসপাতালের ডাক্তারদের বিভিন্ন কক্ষের সামনে রোগীদের ভিড় থাকার সুযোগ নেন তারা। কক্ষ থেকে রোগী বের হওয়া মাত্রই তাদের ব্যবস্থাপত্র নিয়ে একেকজন টানা হেঁচড়া শুরু করে দেন। ডাক্তার কোন কোম্পানির ঔষধ লিখেছেন তা জানার চেষ্টা করেন। কেউ কেউ আবার একটি ঔষধের বদলে নিজের কোম্পানির ঔষধ কেনার পরামর্শ দেন। কেউ আবার সুযোগ বুঝে ঢুকে পড়েন ডাক্তারের কক্ষে। রোগী দেখার সময় সেখানে অবস্থান নিয়ে তিনি নিজের কোম্পানির ঔষধ লেখানোর চেষ্টা করেন। সকাল থেকে জরুরি বিভাগ ও বহির্বিভাগের সামনে অবস্থান করেছিলেন বেশ কয়েকজন ঔষধ কোম্পানির প্রতিনিধি। এ সময় হাসপাতালে রোগীর ভিড় ছিল মারাত্মক। একেকজন রোগী ডাক্তারের কক্ষ থেকে বের হন আর তাদের ব্যবস্থাপত্র নিয়ে টানা হেঁচড়া শুরু করে দেন ঔষধ কোম্পানির প্রতিনিধিরা। তাদের ছবি ওঠানোর বিষয়টি টের পেয়ে কয়েকজন দ্রুত সটকে পড়েন। অবস্থান নেন হাসপাতালের মূল ভবনের প্রবেশকক্ষের গেটের সামনে। ঔষধ কোম্পানির প্রতিনিধিরা শুধু এখানেই নয়, তারা বিভিন্ন ওয়ার্ডে গিয়ে সিস্টারদের কাছ থেকে ফাইল নিয়ে ব্যবস্থাপত্র দেখেন। টানা হেঁচড়াও করেন। ঔষধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের এমন দৌরাত্ম হাসপাতালের প্রতিদিনের চিত্র। এ অবস্থায় নার্স, ব্রাদাররা যেন অনেকটা অসহায় হয়ে পড়েন। রোগীসহ তাদের স্বজনরাও মারাত্মক বিব্রতকর অবস্থায় পড়েন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে নবীগঞ্জ সদর হাসপাতালের সহকারী তত্ত্বাবধায়ক (আরএমও) ডা. চম্পক কিশোর সাহা (সুমন) এই প্রতিবেদককে বলেন, অফিস চলাকালীন সময়ে ঔষধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের হাসপাতালে আসা অবৈধ। এটি তারা করতে পারেন না। তিনি বলেন শনিবার ও মঙ্গলবার ১ টার সময় ভিজিট করার কথা আমরা নোটিশ দিয়ে জানিয়েছি। ইতোমধ্যে তাদের সমিতিকে অবহিত করা হয়েছে। তবে এ বিষয়ে কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার পরিকল্পনা করা হচ্ছে।