১০:৫৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

বিজ্ঞপ্তি

বঙ্গমাতা গোল্ডকাপ ফুটবল টূর্ণামেন্ট: তথ্যগোপন করে বহিরাগত খেলোয়ার নিয়ে সেমিফাইনালে অংশ নেয়ার অভিযোগ ভাঙ্গা উপজেলার ৫নং চুমুরদি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের

প্রতিনিধির নাম
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অংশ গ্রহনে বিভাগ ভিত্তিক দেশব্যাপী অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব গোল্ডকাপ ফুটবল টূর্ণামেন্ট। বিভাগ ভিত্তিক প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো অংশ নেয় এ খেলায়। প্রথমে নিজ উপজেলার বিভিন্ন বিদ্যালয়ের মধ্যে প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে বিজয়ী দল অংশ নেয় জেলা পর্যায়ের প্রতিযোগিতায়। সেখান থেকে সেমিফাইনাল। অবশেষে ফাইনালে অংশ নেয় কোমলমতি শিক্ষার্থীদের টিম। ভালো খেলোয়ার তৈরির প্রয়াস থেকেই শিশু শিক্ষার্থীদের নিয়ে এই টূর্ণামেন্ট বেশ আলোচিত দেশজুড়ে।
শিশু শিক্ষার্থীদের (১২ বছরের নিচে) অংশ গ্রহনের এই খেলার সেমিফাইনালে ভাঙ্গা উপজেলার ৫ নং চুমুরদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে তথ্য গোপন করে জালিয়াতির মাধ্যমে ১২ বছরের উর্ধ্বে বহিরাগতদের দিয়ে খেলায় অংশ গ্রহনের অভিযোগ উঠেছে। গত ১৯ অক্টোবর গোপালগঞ্জের শেখ ফজলুল হক মনি স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত খেলায় ‘বড়’ শিক্ষার্থীদের নিজেদের শিক্ষার্থী সাজিয়ে টিম গঠন করে খেলায় অংশ নেয় এবং প্রতিপক্ষকে ২-১ গোলে হারিয়ে বিজয়ী হয়। ওই বিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন সেমিফাইনালে অংশ নেয়া অপর টিম শিবচরের ৪৫ নং কুতুবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।
এদিকে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের খেলায় শিক্ষকদের জালিয়াতি কান্ডে ক্ষোভ প্রকাশ করেন অভিভাবকেরা।
জানা গেছে, মাদারীপুর জেলার শিবচর উপজেলার ৪৫ নং কুতুবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সাথে সেমি ফাইনালে অংশ নেয় ফরিদপুর জেলার ভাঙ্গা উপজেলার ৫নং চুমুরদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় টিম। গোপালগঞ্জের শেখ ফজলুল হক মনি স্টেডিয়ামে গত ১৯ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হয় খেলাটি। নিয়ম অনুযায়ী খেলায় অংশগ্রহনকৃত শিক্ষার্থীদের ইউনিক আইডিসহ যাবতীয় তথ্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট জমা দিতে হয়। এরপর অনুষ্ঠিত হয় খেলা। ওই খেলায় শিবচরের ৪৫ নং কুতুবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় তাদের টিমের সকল শিক্ষার্থীদের তথ্য জমা দিলেও প্রতিপক্ষ ৫ নং চুমুরদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ইউনিক আইডি সংবলিত তথ্য না দিয়ে আলাদা ভাবে তৈরিকৃত শিক্ষার্থীদের তথ্য জমা দেয়। এসময় দেখা যায় তাদের টিমের তালিকাভুক্ত শিক্ষার্থীদের নামের পাশে অংশ একজনের ছবি স্টাপলার করে লাগানো। এবং যার বয়স ১২ বছরের উর্ধ্ব, যে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রী। এরকম কয়েকজনকে নিয়ে সেমিফাইনাল খেলে বলে অভিযোগ উঠেছে ওই বিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে।
৪৫ নং কুতুবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মিজানুর রহমান অভিযোগ করে বলেন,’তাদের বিদ্যালয়ের খেলোয়ারদের তালিকার ৪ নং ক্রমিকের ২ নং জার্সি পরিহিত খেলোয়ার ৫ম শ্রেণির ছাত্রী মাহিয়া আক্তার তুলির ছবির স্থলে বন্যা আক্তার নামের এক মেয়ের ছবি যুক্ত করে খেলায় অংশ নেয়। যার বয়স আনুমানিক ১৬ বছর। ঠিক তেমনি ৫ নং ক্রমিকের ৭নং জার্সি পরিহিত খেলোয়ার ৫ম শ্রেনির ছুরাইয়া আক্তারের স্থলে খেলেন এরিন আক্তার নামের আরেক মেয়ে। যার বয়সও ১২ বছরের উর্ধ্বে। এবং ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নয়।’
তিনি আরও বলেন,’চুমুরদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের খেলোয়ারের তালিকার ২ ও ৩ নং ক্রমিকের ১২ ও ১৩ নং জার্সি পরিহতদ্বয় অন্য উপজেলার বাসিন্দা। তথ্য গোপন করে ভাঙ্গা উপজেলার কথা উল্লেখ করেছেন তারা। এভাবে তথ্য গোপন করে বহিরাগতদের দিয়ে খেলায় অংশ নিয়ে ওই বিদ্যালয় সেমিতে বিজয়ী হয়ে ফাইনালে উঠেছে! যা সম্পূর্ণরূপে জালিয়াতি!’
এদিকে খেলা শুরুর পূর্বে এ বিষয়ে আপত্তি জানালেও সংশ্লিষ্টরা সময় স্বল্পতার অজুহাতে কোন ব্যবস্থা গ্রহন না করেই খেলা সম্পন্ন করেন বলে তিনি জানান। পরে এ বিষয়ে গোপালগঞ্জ জেলা প্রশাসক এবং বিভাগীয় উপ-পরিচালক, প্রাথমিক শিক্ষা, ঢাকা বিভাগে একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন ৪৫ নং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।
নাম পাল্টে খেলার কথা স্বীকার করে বন্যা আক্তার বলেন,’খেলায় আমার চাচাতো বোনের স্থানে আমি খেলেছি। চাচাতো বোন অসুস্থ্য থাকায় আমাকে নিয়েছে খেলতে।’
আর্থিক অস্বচ্ছলতার কারণে সপ্তম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় গত দুই বছর আগে সে লেখাপড়া ছেড়ে দেয় বলে জানায়।
এ বিষয়ে জানতে ভাঙ্গা উপজেলার ৫ নং চুমুরদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দিপালী রানী মালো এবং প্রশিক্ষক ও সহকারী শিক্ষক নূরুল ইসলামের সাথে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও ফোন রিসিভ করেন নি।
ভাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা(ইউএনও) আজিম উদ্দিন বলেন,’৫ নং চুমুরদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তালিকাভুক্ত খেলোয়ারদের বাদ দিয়ে বাইরের খেলোয়ার দিয়ে খেলানোর মাধ্যমে শিবচরের ৪৫ নং কুতুবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ২-১ গোলে পরাজিত হয়েছে’ এমন বিষয়টি আমরা শুনেছি। এমনটা হয়ে থাকলে তা খুবই অন্যায় করেছে। কোমলমতি শিক্ষার্থীদের খেলায় ছলচাতুরির আশ্রয় নিলে ওরা কি শিখবে? আমরা গুরুত্বের সাথে বিষয়টি দেখছি। অভিযোগের সত্যতা পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
ট্যাগস :
আপডেট : ০৩:৩৬:৩৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩১ অক্টোবর ২০২৩
১৮৮ বার পড়া হয়েছে

বঙ্গমাতা গোল্ডকাপ ফুটবল টূর্ণামেন্ট: তথ্যগোপন করে বহিরাগত খেলোয়ার নিয়ে সেমিফাইনালে অংশ নেয়ার অভিযোগ ভাঙ্গা উপজেলার ৫নং চুমুরদি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের

আপডেট : ০৩:৩৬:৩৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩১ অক্টোবর ২০২৩
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অংশ গ্রহনে বিভাগ ভিত্তিক দেশব্যাপী অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব গোল্ডকাপ ফুটবল টূর্ণামেন্ট। বিভাগ ভিত্তিক প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো অংশ নেয় এ খেলায়। প্রথমে নিজ উপজেলার বিভিন্ন বিদ্যালয়ের মধ্যে প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে বিজয়ী দল অংশ নেয় জেলা পর্যায়ের প্রতিযোগিতায়। সেখান থেকে সেমিফাইনাল। অবশেষে ফাইনালে অংশ নেয় কোমলমতি শিক্ষার্থীদের টিম। ভালো খেলোয়ার তৈরির প্রয়াস থেকেই শিশু শিক্ষার্থীদের নিয়ে এই টূর্ণামেন্ট বেশ আলোচিত দেশজুড়ে।
শিশু শিক্ষার্থীদের (১২ বছরের নিচে) অংশ গ্রহনের এই খেলার সেমিফাইনালে ভাঙ্গা উপজেলার ৫ নং চুমুরদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে তথ্য গোপন করে জালিয়াতির মাধ্যমে ১২ বছরের উর্ধ্বে বহিরাগতদের দিয়ে খেলায় অংশ গ্রহনের অভিযোগ উঠেছে। গত ১৯ অক্টোবর গোপালগঞ্জের শেখ ফজলুল হক মনি স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত খেলায় ‘বড়’ শিক্ষার্থীদের নিজেদের শিক্ষার্থী সাজিয়ে টিম গঠন করে খেলায় অংশ নেয় এবং প্রতিপক্ষকে ২-১ গোলে হারিয়ে বিজয়ী হয়। ওই বিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন সেমিফাইনালে অংশ নেয়া অপর টিম শিবচরের ৪৫ নং কুতুবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।
এদিকে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের খেলায় শিক্ষকদের জালিয়াতি কান্ডে ক্ষোভ প্রকাশ করেন অভিভাবকেরা।
জানা গেছে, মাদারীপুর জেলার শিবচর উপজেলার ৪৫ নং কুতুবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সাথে সেমি ফাইনালে অংশ নেয় ফরিদপুর জেলার ভাঙ্গা উপজেলার ৫নং চুমুরদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় টিম। গোপালগঞ্জের শেখ ফজলুল হক মনি স্টেডিয়ামে গত ১৯ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হয় খেলাটি। নিয়ম অনুযায়ী খেলায় অংশগ্রহনকৃত শিক্ষার্থীদের ইউনিক আইডিসহ যাবতীয় তথ্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট জমা দিতে হয়। এরপর অনুষ্ঠিত হয় খেলা। ওই খেলায় শিবচরের ৪৫ নং কুতুবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় তাদের টিমের সকল শিক্ষার্থীদের তথ্য জমা দিলেও প্রতিপক্ষ ৫ নং চুমুরদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ইউনিক আইডি সংবলিত তথ্য না দিয়ে আলাদা ভাবে তৈরিকৃত শিক্ষার্থীদের তথ্য জমা দেয়। এসময় দেখা যায় তাদের টিমের তালিকাভুক্ত শিক্ষার্থীদের নামের পাশে অংশ একজনের ছবি স্টাপলার করে লাগানো। এবং যার বয়স ১২ বছরের উর্ধ্ব, যে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রী। এরকম কয়েকজনকে নিয়ে সেমিফাইনাল খেলে বলে অভিযোগ উঠেছে ওই বিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে।
৪৫ নং কুতুবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মিজানুর রহমান অভিযোগ করে বলেন,’তাদের বিদ্যালয়ের খেলোয়ারদের তালিকার ৪ নং ক্রমিকের ২ নং জার্সি পরিহিত খেলোয়ার ৫ম শ্রেণির ছাত্রী মাহিয়া আক্তার তুলির ছবির স্থলে বন্যা আক্তার নামের এক মেয়ের ছবি যুক্ত করে খেলায় অংশ নেয়। যার বয়স আনুমানিক ১৬ বছর। ঠিক তেমনি ৫ নং ক্রমিকের ৭নং জার্সি পরিহিত খেলোয়ার ৫ম শ্রেনির ছুরাইয়া আক্তারের স্থলে খেলেন এরিন আক্তার নামের আরেক মেয়ে। যার বয়সও ১২ বছরের উর্ধ্বে। এবং ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নয়।’
তিনি আরও বলেন,’চুমুরদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের খেলোয়ারের তালিকার ২ ও ৩ নং ক্রমিকের ১২ ও ১৩ নং জার্সি পরিহতদ্বয় অন্য উপজেলার বাসিন্দা। তথ্য গোপন করে ভাঙ্গা উপজেলার কথা উল্লেখ করেছেন তারা। এভাবে তথ্য গোপন করে বহিরাগতদের দিয়ে খেলায় অংশ নিয়ে ওই বিদ্যালয় সেমিতে বিজয়ী হয়ে ফাইনালে উঠেছে! যা সম্পূর্ণরূপে জালিয়াতি!’
এদিকে খেলা শুরুর পূর্বে এ বিষয়ে আপত্তি জানালেও সংশ্লিষ্টরা সময় স্বল্পতার অজুহাতে কোন ব্যবস্থা গ্রহন না করেই খেলা সম্পন্ন করেন বলে তিনি জানান। পরে এ বিষয়ে গোপালগঞ্জ জেলা প্রশাসক এবং বিভাগীয় উপ-পরিচালক, প্রাথমিক শিক্ষা, ঢাকা বিভাগে একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন ৪৫ নং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।
নাম পাল্টে খেলার কথা স্বীকার করে বন্যা আক্তার বলেন,’খেলায় আমার চাচাতো বোনের স্থানে আমি খেলেছি। চাচাতো বোন অসুস্থ্য থাকায় আমাকে নিয়েছে খেলতে।’
আর্থিক অস্বচ্ছলতার কারণে সপ্তম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় গত দুই বছর আগে সে লেখাপড়া ছেড়ে দেয় বলে জানায়।
এ বিষয়ে জানতে ভাঙ্গা উপজেলার ৫ নং চুমুরদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দিপালী রানী মালো এবং প্রশিক্ষক ও সহকারী শিক্ষক নূরুল ইসলামের সাথে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও ফোন রিসিভ করেন নি।
ভাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা(ইউএনও) আজিম উদ্দিন বলেন,’৫ নং চুমুরদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তালিকাভুক্ত খেলোয়ারদের বাদ দিয়ে বাইরের খেলোয়ার দিয়ে খেলানোর মাধ্যমে শিবচরের ৪৫ নং কুতুবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ২-১ গোলে পরাজিত হয়েছে’ এমন বিষয়টি আমরা শুনেছি। এমনটা হয়ে থাকলে তা খুবই অন্যায় করেছে। কোমলমতি শিক্ষার্থীদের খেলায় ছলচাতুরির আশ্রয় নিলে ওরা কি শিখবে? আমরা গুরুত্বের সাথে বিষয়টি দেখছি। অভিযোগের সত্যতা পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।’