০১:২২ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১০ আশ্বিন ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞপ্তি :
বীর মুক্তিযোদ্ধা লে. কর্নেল আবদুর রউফ, বীর বিক্রম মেধা, মনন ও মানবিকতার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত

প্রতিনিধির নাম
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের অকুতোভয় বীর মুক্তিযোদ্ধা, বাঙালি জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান, মেধা, মনন ও মানবিকতার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত লে. কর্ণেল আবদুর রউফ, বীর বিক্রম (অব.)-কে দৈনিক বাংলাদেশ সমাচার পরিবারের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা জানান সফেন প্রতিষ্ঠাতা, আনসার-ভিডিপি উন্নয়ন ব্যাংকের পরিচালক, দৈনিক বাংলাদেশ সমাচার ও দ্যা ডেইলি বাংলাদেশ ডায়েরির সম্পাদক বহুমুখী শিল্পস্রষ্টা ড. খান আসাদুজ্জামান পিভিএমএস। এসময় লে. কর্ণেল আবদুর রউফ, বীর বিক্রম তাঁর লেখা মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গ্রন্থ ‘স্বাধীনতা ৭১ মুক্তিযুদ্ধে জনযোদ্ধা’ ড. খান আসাদুজ্জামান পিভিএমএস-কে উপহার হিসেবে তুলে দেন।
উল্লেখ্য যে, স্বেচ্ছাব্রতী জনযোদ্ধা লে. কর্নেল আবদুর রউফ, বীর বিক্রম, ছাত্রাবস্থায় মুক্তিযুদ্ধে যোগদান করেন। মুক্তিযুদ্ধ-পূর্ব ৬ দফা, ১১ দফা ও অসহযোগ আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ এবং বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের জনসভায় স্বশরীরে উপস্থিতি তাঁর ধীমান উপলব্দিতে এক বৈপ্লবিক চেতনার উন্মেষ ঘটায়। শানিত হন স্বদেশপ্রেম ও স্বাধীনতার প্রগাঢ় চেতনায়। ঋদ্ধ হন মুক্তিযুদ্ধের মূলমন্ত্রে। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি, এপ্রিলের মাঝামাঝি, কতিপয় সহযোদ্ধাসহ ভারতে পালিয়ে যান এবং ত্রিপুরায় অবস্থিত ২ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে যোগদান করেন। কিছুদিন অম্পিনগর মুক্তিযোদ্ধা ট্রেনিং ক্যাম্পে প্রশিক্ষণ নেন। ৯ অক্টোবর বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ১ম ওয়ার কোর্সে সেকেন্ড লেফট্যানেন্ট পদে কমিশন লাভ করেন এবং ৫ নম্বর সেক্টরে যোগ দেন। সেক্টর কমান্ডার মেজর মীর শওকত আলী, বীরউত্তম, তাঁকে জনযোদ্ধা দ্বারা গঠিত একটি কোম্পানীর কমান্ডারের দায়িত্ব প্রদান করেন, যা পরবর্তীতে (পরিকল্পিত গেরিলা যুদ্ধের প্রয়োজনে) বাছাই করা জনযোদ্ধাদের নিয়ে পাইওনিয়ার কোম্পানীতে রূপান্তরিত করা হয়। তাঁর বলিষ্ট নেতৃত্বে পাইওনিয়ার কোম্পানীর অমিত তেজা মুক্তিপাগল জনযোদ্ধারা ৩টি সফল অভিযানে অংশ নেয় এবং বিজয় অর্জন করে।
অধীনস্থ সহ-যোদ্ধাদের অমেয় ত্যাগ, বীরত্বগাথা এবং সংশ্লিষ্ট সকলের (গ্রামবাসী, গাইড, সংবাদ সংগ্রহকারী, সংগ্রাম কমিটি, নৌকার মাঝিগণ এবং রসদ ও গোলাবারুদ বহনকারী) অবদান নিয়ে লেখার দায়বোধ থেকেই ‘স্বাধীনতা ৭১ মুক্তিযুদ্ধে জনযোদ্ধা’ রচনা। নিরলস পরিশ্রম, অপরিসীম নিষ্ঠা ও সততার সঙ্গে দীর্ঘ পরিক্রমনের মাধ্যমে (১৫ বয়সের অধিক সময়) তিনি বস্তুনিষ্ঠ, সত্য ও নির্ভূল তথ্য সংগ্রহ ও যাচাই-বাছাই সম্পন্ন করেন এবং নির্মোহভাবে ৩টি যুদ্ধের কাহিনী লিপিবদ্ধ করেন। এক অতলস্পর্শী সহ-মর্মিতায় তুলে ধরেছেন তাঁর অধীনস্থ জনযোদ্ধা ও সংশ্লিষ্ট সকলের আত্মত্যাগ ও অবদানের গৌরবোজ্জল আলোচিত অধ্যায়, দৃপ্ত কাহিনী। এই বইটি পাইওনিয়ার কোম্পানীর জনযোদ্ধা ও সংশ্লিষ্ট সকলের অমেয় ত্যাগে সৃষ্ট ইতিবৃত্তের রূপরেখা, যাতে জনযুদ্ধ বা গেরিলা যুদ্ধের সকল বৈশিষ্ট্য ও উপাদান বিদ্যমান। মুক্তিযুদ্ধে জনযোদ্ধাদের আত্মত্যাগ ও অসাধারন সাফল্যের কথা এই বই। প্রকৃত অর্থে এটি মুক্তিযুদ্ধের একটি জীবন্ত চিত্র। এতে অসম্পূর্নতা থাকতে পারে, কিন্তু অপলাপ নেই।
লে. কর্নেল আবদুর রউফ, বীর বিক্রম (অব.)-এর জন্ম ১ আগস্ট ১৯৪৯ সালে, নরসিংদী জেলার মনোহরদী থানার কোচেরচর গ্রামে। তার পিতার নাম মরহুম আবদুল হেকিম এবং মাতা মরহুমা রওশনারা বেগম। স্ত্রী শামীম আরা রউফ এবং তিনি এক পুত্র ও তিন কন্যা সন্তানের জনক। হাতিরদিয়া ছাদত আলী মডেল হাইস্কুলের পাঠ চুকিয়ে তিনি ঢাকা কলেজে ভর্তি হন এবং কলেজের পাঠ চুকিয়ে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি বিভাগে ভর্তি হন এবং অর্থনীতি বিভাগ থেকে গ্রাজুয়েশন ও এম.এ. সম্পন্ন করেন। শিক্ষকতা পেশায় আগ্রহ থাকলেও মুক্তিযুদ্ধ তাঁর জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। মুক্তিযুদ্ধে যোগদানের কারণে তিনি সেনাবাহিনীতে কমিশন লাভ করেন এবং যুদ্ধ শেষে ৫ নম্বর সেক্টর থেকে ১৬ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে যোগদান করেন। অকালেন অবসরে যাওয়ার পর তিনি নিজস্ব ব্যবসায় আত্মনিয়োগ করেন। সেখান থেকে তিনি একজন সফল ও প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী হয়ে ওঠেন। বর্তমানে তিনি মুক্তিযুদ্ধের উপর লেখালেখি ও মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছেন এবং শিক্ষা, সংস্কৃতি, সামাজিক ও মানবিক কাজে নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন। দূরদর্শী, প্রজ্ঞাবান ও মানবিক ঐশ্বর্যে উদ্ভাসিত এই মহান ব্যক্তিত্ব রিটায়ার্ড আর্মড ফোর্সেস অফিসার্স ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশন (রাওয়া), আর্মি গলফ ক্লাব এবং বাংলাদেশ ওয়ার কোর্স ফাউন্ডেশনের একজন আজীবন সদস্য এবং সারাদেশে তাঁর মানবিক কর্মকাণ্ডের স্বীকৃতিস্বরূপ তাকে সফেন ফাউন্ডেশন-এর একজন সম্মানিত উপদেষ্টা ও আজীবন সদস্যপদ প্রদান করা হয়।
ট্যাগস :