০১:৪৫ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১০ আশ্বিন ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

বিজ্ঞপ্তি

ভোলার চরাঞ্চলে হাঁস পালনে দুই শতাধিক যুবকের দিনবদল

প্রতিনিধির নাম
দেশী জাতের হাঁস পালন করে ভোলার চরফ্যাশনের দুই শতাধিক বেকার যুবক এখন স্বাবলম্বী হয়েছেন। বাড়ির আঙিনা, পতিত জায়গা, মাছের ঘের, পুকুর ও জলাশয়ে বাণিজ্যিকভাবে হাঁস পালন করছেন এ উপজেলার বেকার যুবক ও দরিদ্র নারীরা। তাদের সাফল্যে উপজেলার আরো অনেকে হাঁসের খামারের দিকে ঝুঁকছেন। বিভিন্ন এনজিও, মাল্টিপারপাস কিংবা ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে এসব খামার। তবে যথাযথ প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ, কারিগরি সহযোগিতা ও ভালো চিকিৎসাসেবা না পাওয়ায় খামারিদের হাঁস পালনে অনেকটাই বেগ পেতে হচ্ছে।
চরফ্যাশন উপজেলার মাদ্রাজ ইউনিয়নের বাসিন্দা শফিকুল ইসলামের ছেলে আবুবক্কর আট বছর আগে এইচএসসি পাস করার পর অভাব-অনটনের কারণে আর লেখাপড়া করতে পারেননি। বিভিন্নভাবে চেষ্টা করেও তেমন কোনো চাকরিতে যোগদান করতে না পেরে কয়েক বছর বেকার অবস্থায় পরিবারের কাছে অনেকটা বোঝা হয়ে উঠেছিলেন। ২০১৯ সালের দিকে প্রতিবেশী এক বন্ধুর পরামর্শে স্থানীয় একটি সমিতি থেকে ২০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে নিজ বাড়ির আঙিনায় গড়ে তোলেন হাঁসের খামার। প্রথমে তিনি যশোর থেকে ৩০০ হাঁসের বাচ্চা এনে শুরু করেন তার খামার। রোগাক্রান্ত হয়ে কিছু হাঁসের বাচ্চা মারা গেলেও হাল ছাড়েননি আবুবক্কর। প্রতিনিয়তই তিনি পরিচর্যা চালিয়ে গেছেন তার খামারের। এক বছরের মধ্যেই হাঁস বিক্রি করে লাভের মুখ দেখতে শুরু করেন। বর্তমানে ওই এলাকায় তার তিনটি হাঁসের খামার রয়েছে। সেখান থেকে প্রতি বছর প্রায় আড়াই থেকে তিন লাখ টাকা তিনি উপার্জন করেন।
শুধু আবুবক্করই নন, তার মতো ওই উপজেলার আবদুল্লাহপুর, এওয়াজপুর, আমিনাবাদ, মাদ্রাজ, হাজারীগঞ্জ, জাহানপুর, নজরুলনগরসহ চরকলমী এবং কুকরি-মুকরী ইউনিয়নে ছোট-বড় প্রায় দুই শতাধিক দেশী হাঁসের খামার গড়ে উঠেছে। শীতকালে হাঁসের মাংস খাওয়ার প্রতি মানুষের প্রবণতা দেখা দেয়। তাই এ সময় হাটবাজারে হাঁস ও হাঁসের ডিম বিক্রি করে ভালো দাম পাচ্ছেন খামারিরা।
স্থানীয় হাটবাজারগুলোতে দেখা যায়, অন্যান্য মৌসুমের তুলনায় শীত মৌসুমে হাঁসের বাজারে ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড়। খামারিদের একেকটি হাঁস বিক্রি হচ্ছে ৫০০-৬০০ টাকায়। আর গৃহস্থালিদের হাঁসের দাম হাঁকানো হচ্ছে ৭৫০-৮০০ টাকা। তাছাড়া বাজারে হাঁসের ডিম হালিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ৫০-৫৫ টাকা। ফলে দিন দিন হাঁস পালনের দিকে ঝুঁকছেন এখানকার চাষীরা।
মাদ্রাজ ইউনিয়নের খামারি মোজাম্মেল হক বলেন, আমি দীর্ঘ পাঁচ বছর বিদেশে শ্রমিক হিসেবে কাজ করেছি। বিদেশী কর্মস্থলে পরিশ্রম করে যে টাকা পাইনি তা দুই বছরেই নিজ গ্রামে হাঁস পালন করে উপার্জন করেছি। আমি প্রথমে পৌনে দুই একর জমিতে পুকুর খনন করে মাছ চাষের পাশাপাশি ৫ শতাধিক হাঁস পালন শুরু করি। মুনাফা ভালো হওয়ায় অল্প সুদে ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে আবারও বিনিয়োগ করি। এখন আমার খামারে মাছের পাশাপাশি প্রায় ১ হাজার ৫০০ হাঁস রয়েছে। বাজারে ডিমের পাশাপাশি প্রতি সপ্তাহে পাইকারদের কাছে হাঁস বিক্রি করে অধিক মুনাফা পাচ্ছি।
জাহানপুর ইউনিয়নের জামাল মুন্সি বলেন, আমার খামারে দুই হাজার হাঁস রয়েছে। প্রতিদিন খালেবিলে হাঁস ছেড়ে দিই। কম পরিচর্যায় শামুক ও গুল্ম লতাপাতা ছাড়াও পুকুর জলাশয়ের প্রাকৃতিক খাবার খায় হাঁস। তবে ওষুধ ও খাবারের চড়া মূল্যের কারণে লাভ কিছুটা কম হয়। সরকারের পক্ষ থেকে সহযোগিতা  পেলে এ অঞ্চলের বেকার যুবকদের কর্মসংস্থান আরো বাড়ত।
এ বিষয়ে উপজেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আতিকুর রহমান বলেন, আমাদের তালিকা অনুযায়ী চরফ্যাশনে ১৬০টি হাঁসের খামার রয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি এসব খামারির পাশাপাশি গ্রামের বেকার যুবক ও দরিদ্র নারীদের হাঁস পালনে উদ্বুদ্ধ করতে। বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে প্রশিক্ষণের পাশাপাশি মাঠ পর্যায়ে চিকিৎসা সেবা ও ভ্যাকসিন দেয়ার কাজ করে যাচ্ছি।
ট্যাগস :
আপডেট : ০৫:২৬:৫৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ৬ ফেব্রুয়ারী ২০২২
১৯০ বার পড়া হয়েছে

ভোলার চরাঞ্চলে হাঁস পালনে দুই শতাধিক যুবকের দিনবদল

আপডেট : ০৫:২৬:৫৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ৬ ফেব্রুয়ারী ২০২২
দেশী জাতের হাঁস পালন করে ভোলার চরফ্যাশনের দুই শতাধিক বেকার যুবক এখন স্বাবলম্বী হয়েছেন। বাড়ির আঙিনা, পতিত জায়গা, মাছের ঘের, পুকুর ও জলাশয়ে বাণিজ্যিকভাবে হাঁস পালন করছেন এ উপজেলার বেকার যুবক ও দরিদ্র নারীরা। তাদের সাফল্যে উপজেলার আরো অনেকে হাঁসের খামারের দিকে ঝুঁকছেন। বিভিন্ন এনজিও, মাল্টিপারপাস কিংবা ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে এসব খামার। তবে যথাযথ প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ, কারিগরি সহযোগিতা ও ভালো চিকিৎসাসেবা না পাওয়ায় খামারিদের হাঁস পালনে অনেকটাই বেগ পেতে হচ্ছে।
চরফ্যাশন উপজেলার মাদ্রাজ ইউনিয়নের বাসিন্দা শফিকুল ইসলামের ছেলে আবুবক্কর আট বছর আগে এইচএসসি পাস করার পর অভাব-অনটনের কারণে আর লেখাপড়া করতে পারেননি। বিভিন্নভাবে চেষ্টা করেও তেমন কোনো চাকরিতে যোগদান করতে না পেরে কয়েক বছর বেকার অবস্থায় পরিবারের কাছে অনেকটা বোঝা হয়ে উঠেছিলেন। ২০১৯ সালের দিকে প্রতিবেশী এক বন্ধুর পরামর্শে স্থানীয় একটি সমিতি থেকে ২০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে নিজ বাড়ির আঙিনায় গড়ে তোলেন হাঁসের খামার। প্রথমে তিনি যশোর থেকে ৩০০ হাঁসের বাচ্চা এনে শুরু করেন তার খামার। রোগাক্রান্ত হয়ে কিছু হাঁসের বাচ্চা মারা গেলেও হাল ছাড়েননি আবুবক্কর। প্রতিনিয়তই তিনি পরিচর্যা চালিয়ে গেছেন তার খামারের। এক বছরের মধ্যেই হাঁস বিক্রি করে লাভের মুখ দেখতে শুরু করেন। বর্তমানে ওই এলাকায় তার তিনটি হাঁসের খামার রয়েছে। সেখান থেকে প্রতি বছর প্রায় আড়াই থেকে তিন লাখ টাকা তিনি উপার্জন করেন।
শুধু আবুবক্করই নন, তার মতো ওই উপজেলার আবদুল্লাহপুর, এওয়াজপুর, আমিনাবাদ, মাদ্রাজ, হাজারীগঞ্জ, জাহানপুর, নজরুলনগরসহ চরকলমী এবং কুকরি-মুকরী ইউনিয়নে ছোট-বড় প্রায় দুই শতাধিক দেশী হাঁসের খামার গড়ে উঠেছে। শীতকালে হাঁসের মাংস খাওয়ার প্রতি মানুষের প্রবণতা দেখা দেয়। তাই এ সময় হাটবাজারে হাঁস ও হাঁসের ডিম বিক্রি করে ভালো দাম পাচ্ছেন খামারিরা।
স্থানীয় হাটবাজারগুলোতে দেখা যায়, অন্যান্য মৌসুমের তুলনায় শীত মৌসুমে হাঁসের বাজারে ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড়। খামারিদের একেকটি হাঁস বিক্রি হচ্ছে ৫০০-৬০০ টাকায়। আর গৃহস্থালিদের হাঁসের দাম হাঁকানো হচ্ছে ৭৫০-৮০০ টাকা। তাছাড়া বাজারে হাঁসের ডিম হালিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ৫০-৫৫ টাকা। ফলে দিন দিন হাঁস পালনের দিকে ঝুঁকছেন এখানকার চাষীরা।
মাদ্রাজ ইউনিয়নের খামারি মোজাম্মেল হক বলেন, আমি দীর্ঘ পাঁচ বছর বিদেশে শ্রমিক হিসেবে কাজ করেছি। বিদেশী কর্মস্থলে পরিশ্রম করে যে টাকা পাইনি তা দুই বছরেই নিজ গ্রামে হাঁস পালন করে উপার্জন করেছি। আমি প্রথমে পৌনে দুই একর জমিতে পুকুর খনন করে মাছ চাষের পাশাপাশি ৫ শতাধিক হাঁস পালন শুরু করি। মুনাফা ভালো হওয়ায় অল্প সুদে ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে আবারও বিনিয়োগ করি। এখন আমার খামারে মাছের পাশাপাশি প্রায় ১ হাজার ৫০০ হাঁস রয়েছে। বাজারে ডিমের পাশাপাশি প্রতি সপ্তাহে পাইকারদের কাছে হাঁস বিক্রি করে অধিক মুনাফা পাচ্ছি।
জাহানপুর ইউনিয়নের জামাল মুন্সি বলেন, আমার খামারে দুই হাজার হাঁস রয়েছে। প্রতিদিন খালেবিলে হাঁস ছেড়ে দিই। কম পরিচর্যায় শামুক ও গুল্ম লতাপাতা ছাড়াও পুকুর জলাশয়ের প্রাকৃতিক খাবার খায় হাঁস। তবে ওষুধ ও খাবারের চড়া মূল্যের কারণে লাভ কিছুটা কম হয়। সরকারের পক্ষ থেকে সহযোগিতা  পেলে এ অঞ্চলের বেকার যুবকদের কর্মসংস্থান আরো বাড়ত।
এ বিষয়ে উপজেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আতিকুর রহমান বলেন, আমাদের তালিকা অনুযায়ী চরফ্যাশনে ১৬০টি হাঁসের খামার রয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি এসব খামারির পাশাপাশি গ্রামের বেকার যুবক ও দরিদ্র নারীদের হাঁস পালনে উদ্বুদ্ধ করতে। বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে প্রশিক্ষণের পাশাপাশি মাঠ পর্যায়ে চিকিৎসা সেবা ও ভ্যাকসিন দেয়ার কাজ করে যাচ্ছি।