০৮:৩২ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১০ আশ্বিন ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

বিজ্ঞপ্তি

শ্রীপুরে দিনে দিনে হারিয়ে যাচ্ছে খেজুরের রসের ঐতিহ্য

প্রতিনিধির নাম
মাগুরার শ্রীপুরে দিনে দিনে হারিয়ে যাচ্ছে খেজুরের রসের ঐতিহ্য। উপজেলায় এখন দুষ্প্রাপ্য খেজুরের রস। শীতের সকালে খেজুরের রসের স্বাদ এখন হয়তো অনেকেই ভুলতে বসেছে। এক দশক আগেও যে দৃশ্য চোখে পড়তো তা আর এখন চোখে পড়ে না। এমন একটি সময় ছিল যখন সকালের হাড় কাঁপানো শীত উপেক্ষা করে খেজুরের রসের জন্য পড়তো দীর্ঘ লাইন। সকালের ঠান্ডা রসে শীতের মাত্রা আরো বাড়িয়ে দিতো। এ দৃশ্য এখন শুধু কল্পনার অতীত।
এখন উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরেও আর চোখে পড়ে না খেজুর গাছ কাটার সরঞ্জামসহ গাছির ব্যস্ততার দৃশ্য। খেজুরের রসের আশায় অনেকেই ভোর সকালেই খেজুর গাছের আশেপাশে ভীড় জমাতো। চলতো গাছির জন্য অপেক্ষা। এখন আর সে দৃশ্যও চোখে পড়ে না। তুলনামূলকভাবে উপজেলার বিভিন্ন গ্রামগঞ্জে খেজুর গাছ অনেকটাই বিলুপ্তির পথে। গ্রামের মাঠে, মেঠো পথের ধারে, রাস্তার পাশে ও কিছু বাড়িতে কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে কিছু খেজুর গাছ। গ্রামবাংলার ঐতিহ্য এই খেজুর গাছ আজ অস্তিত্ব সঙ্কটে। তবে যে হারে গাছ নিধন হচ্ছে সে তুলনায় রোপণ হচ্ছে না।
খেজুর গাছ নিধনের কারণেই আজ এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। আগে সচারাচর রাস্তার পাশে খেজুর গাছ দেখা গেলেও এখন আর সহজে দেখা যায় না। রাস্তার পাশে বৈদ্যুতিক খুঁটি স্থাপন, বসতি নির্মাণ, অবাধে গাছ নিধন, জ্বালানি হিসেবে ইট ভাটায় ব্যবহারসহ বিভিন্ন কারণে উপজেলায় দিনে দিনে কমছে খেজুর গাছ। ফলে দুষ্প্রাপ্য হয়ে উঠেছে খেজুরের রসও।
জানা গেছে, ইটের ভাটায় ব্যাপকভাবে খেজুর গাছ ব্যবহার করায় এ গাছ কমে গেছে। খেজুর গাছ সস্তা হওয়ায় ইটের ভাটায় এই গাছই বেশি পোড়ানো হয়। এছাড়া অনেক সময় ঘরবাড়ি নির্মাণ করার জন্য খেজুরের গাছ কেটে ফেলা হচ্ছে। ফলে দিন দিন খেজুর গাছ কমে যাচ্ছে।
শ্রীপুর উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্য মতে, দিনে দিনে শ্রীপুরে খেজুর গাছ কমেছে। তবে এখনো হারিয়ে যায়নি। উপজেলায় ১২’শ থেকে ১৩’শ খেজুর গাছ রয়েছে। এখনও খেজুরের রস ও গুড়ের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। তবে আগের মত খেজুরের রস ও গুড় পাওয়া যায় না। পেলেও আগের চেয়ে অনেক বেশি দাম দিয়ে কিনতে হচ্ছে।
উপজেলা তখলপুর গ্রামের ইনতাজ আলী বিশ্বাস বলেন, কাঁচা রস আর রসের পায়েস খাওয়ার কথা এখনো ভুলতে পারি না। আমাদের নাতি-নাতনীরা তো আর সেই রসে ভিজানো দুধচিতই, পিঠা-পুলি, পায়েস খেতে পায় না।
উপজেলার  গ্রামের আকমল জানান, খেজুর রসের মুখ কতদিন যে দেখি না। আমাদের গ্রামে এখন দু-এট্টা যে গাছ আছে। অধিকাংশ গাছিই মারা গেছে। আমাদের বাড়িতে এক সময় ৪০ টির মত খেজুর গাছ ছিলো। এখন আর একটাও নেই। আমরা কত সাঁঝো রস খেয়েছি। ১০-১২ বছর খেজুর রস খাই না। আমরা এক সময় ১ কারে রস কিনিছি ৫ টাকা দিয়ে এখন তা ২০০ টাকা। তবে রসের স্বাদ এখনো ভূলিনি।
উপজেলার পূর্ব শ্রীকোল গ্রামের গাছি পোলেন বলেন, খেজুরের গাছের সংখ্যা কমে যাওয়ায় চাহিদাও অনেক কমেছে। আগে এই কাজ করে ভালোভাবেই সংসার চলতো। এখন এ কাজ করে আর সংসার চলে না। তাই পেশার পরিবর্তন করেছি। রসের চাহিদা থাকলেও গাছ কমে যাওয়ায় রস কম হচ্ছে।
উপজেলার খামারপাড়া গ্রামের গাছি আকরাম হোসেন বলেন, এইতো কয়েক বছর আগে এক হাড়ি খেজুর রস বিক্রি করতাম ২০ টাকা। এখন খেজুর গাছ না থাকায় সে রসের দাম বেড়ে হয়েছে ২০০ টাকা। খেজুরের রস চুরি করে খেয়ে ফেলে এ যন্ত্রনায় এখন আর গাছ কাটি না। এখন ভ্যান চালিয়ে সংসার চালাচ্ছি।
ট্যাগস :
আপডেট : ০৫:২১:২৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ৫ ফেব্রুয়ারী ২০২২
১৭৫ বার পড়া হয়েছে

শ্রীপুরে দিনে দিনে হারিয়ে যাচ্ছে খেজুরের রসের ঐতিহ্য

আপডেট : ০৫:২১:২৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ৫ ফেব্রুয়ারী ২০২২
মাগুরার শ্রীপুরে দিনে দিনে হারিয়ে যাচ্ছে খেজুরের রসের ঐতিহ্য। উপজেলায় এখন দুষ্প্রাপ্য খেজুরের রস। শীতের সকালে খেজুরের রসের স্বাদ এখন হয়তো অনেকেই ভুলতে বসেছে। এক দশক আগেও যে দৃশ্য চোখে পড়তো তা আর এখন চোখে পড়ে না। এমন একটি সময় ছিল যখন সকালের হাড় কাঁপানো শীত উপেক্ষা করে খেজুরের রসের জন্য পড়তো দীর্ঘ লাইন। সকালের ঠান্ডা রসে শীতের মাত্রা আরো বাড়িয়ে দিতো। এ দৃশ্য এখন শুধু কল্পনার অতীত।
এখন উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরেও আর চোখে পড়ে না খেজুর গাছ কাটার সরঞ্জামসহ গাছির ব্যস্ততার দৃশ্য। খেজুরের রসের আশায় অনেকেই ভোর সকালেই খেজুর গাছের আশেপাশে ভীড় জমাতো। চলতো গাছির জন্য অপেক্ষা। এখন আর সে দৃশ্যও চোখে পড়ে না। তুলনামূলকভাবে উপজেলার বিভিন্ন গ্রামগঞ্জে খেজুর গাছ অনেকটাই বিলুপ্তির পথে। গ্রামের মাঠে, মেঠো পথের ধারে, রাস্তার পাশে ও কিছু বাড়িতে কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে কিছু খেজুর গাছ। গ্রামবাংলার ঐতিহ্য এই খেজুর গাছ আজ অস্তিত্ব সঙ্কটে। তবে যে হারে গাছ নিধন হচ্ছে সে তুলনায় রোপণ হচ্ছে না।
খেজুর গাছ নিধনের কারণেই আজ এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। আগে সচারাচর রাস্তার পাশে খেজুর গাছ দেখা গেলেও এখন আর সহজে দেখা যায় না। রাস্তার পাশে বৈদ্যুতিক খুঁটি স্থাপন, বসতি নির্মাণ, অবাধে গাছ নিধন, জ্বালানি হিসেবে ইট ভাটায় ব্যবহারসহ বিভিন্ন কারণে উপজেলায় দিনে দিনে কমছে খেজুর গাছ। ফলে দুষ্প্রাপ্য হয়ে উঠেছে খেজুরের রসও।
জানা গেছে, ইটের ভাটায় ব্যাপকভাবে খেজুর গাছ ব্যবহার করায় এ গাছ কমে গেছে। খেজুর গাছ সস্তা হওয়ায় ইটের ভাটায় এই গাছই বেশি পোড়ানো হয়। এছাড়া অনেক সময় ঘরবাড়ি নির্মাণ করার জন্য খেজুরের গাছ কেটে ফেলা হচ্ছে। ফলে দিন দিন খেজুর গাছ কমে যাচ্ছে।
শ্রীপুর উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্য মতে, দিনে দিনে শ্রীপুরে খেজুর গাছ কমেছে। তবে এখনো হারিয়ে যায়নি। উপজেলায় ১২’শ থেকে ১৩’শ খেজুর গাছ রয়েছে। এখনও খেজুরের রস ও গুড়ের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। তবে আগের মত খেজুরের রস ও গুড় পাওয়া যায় না। পেলেও আগের চেয়ে অনেক বেশি দাম দিয়ে কিনতে হচ্ছে।
উপজেলা তখলপুর গ্রামের ইনতাজ আলী বিশ্বাস বলেন, কাঁচা রস আর রসের পায়েস খাওয়ার কথা এখনো ভুলতে পারি না। আমাদের নাতি-নাতনীরা তো আর সেই রসে ভিজানো দুধচিতই, পিঠা-পুলি, পায়েস খেতে পায় না।
উপজেলার  গ্রামের আকমল জানান, খেজুর রসের মুখ কতদিন যে দেখি না। আমাদের গ্রামে এখন দু-এট্টা যে গাছ আছে। অধিকাংশ গাছিই মারা গেছে। আমাদের বাড়িতে এক সময় ৪০ টির মত খেজুর গাছ ছিলো। এখন আর একটাও নেই। আমরা কত সাঁঝো রস খেয়েছি। ১০-১২ বছর খেজুর রস খাই না। আমরা এক সময় ১ কারে রস কিনিছি ৫ টাকা দিয়ে এখন তা ২০০ টাকা। তবে রসের স্বাদ এখনো ভূলিনি।
উপজেলার পূর্ব শ্রীকোল গ্রামের গাছি পোলেন বলেন, খেজুরের গাছের সংখ্যা কমে যাওয়ায় চাহিদাও অনেক কমেছে। আগে এই কাজ করে ভালোভাবেই সংসার চলতো। এখন এ কাজ করে আর সংসার চলে না। তাই পেশার পরিবর্তন করেছি। রসের চাহিদা থাকলেও গাছ কমে যাওয়ায় রস কম হচ্ছে।
উপজেলার খামারপাড়া গ্রামের গাছি আকরাম হোসেন বলেন, এইতো কয়েক বছর আগে এক হাড়ি খেজুর রস বিক্রি করতাম ২০ টাকা। এখন খেজুর গাছ না থাকায় সে রসের দাম বেড়ে হয়েছে ২০০ টাকা। খেজুরের রস চুরি করে খেয়ে ফেলে এ যন্ত্রনায় এখন আর গাছ কাটি না। এখন ভ্যান চালিয়ে সংসার চালাচ্ছি।