সাব্বির আহম্মেদ, বিশেষ প্রতিবেদক
- বুধবার ২৪ মে, ২০২৩ /

সাব্বির আহম্মেদ, বিশেষ প্রতিবেদক : সাভারের বনগাঁও ইউনিয়নে একটি পোশাক কারখানার ভেতরে জাল টাকার কারখানার সন্ধান পেয়েছে পুলিশ। এ ঘটনায় অভিযান পরিচালনা করে চক্রের মূলহোতাসহ তিনজনকে আটক করা হয়েছে। সেইসাথে কোটি টাকারও বেশি জাল টাকা উদ্ধার করা হয়। এ সময় জালটাকা তৈরির বেশকিছু সরঞ্জামাদি জব্দ করে পুলিশ।
ঢাকার অদূরে সাভারের বনগাঁও ইউনিয়নে এমনই এক অভিনব জাল টাকা তৈরির কারখানার সন্ধান পেয়েছে পুলিশ। পরে সেখানে অভিযান পরিচালনা করে ৫০ লাখ ১৭ হাজার টাকা মূল্যমানের জাল নোট, বিপুল পরিমাণ জালটাকা তৈরির বিভিন্ন সরঞ্জামাদি, এক বোতল বিদেশি মদ, এক ক্যান বিয়ার ও ১০০ পিস ইয়াবাসহ তিনজনকে আটক করা হয়।
বুধবার (২৪ মে) বেলা ১১টা থেকে সাভারের বনগাঁও ইউনিয়নের সাধাপুরের পুরান বাড়ি এলাকার কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের পাশে সাখাওয়াত হোসেন খানের মালিকানাধীন সাউথ বেঙ্গল এপারেলস গার্মেন্টস কারখানায় এই অভিযান পরিচালনা করা হয়।
আটকরা হলেন – বরিশাল জেলার মুলাদী থানার ডিগ্রীরচর খান বাড়ির জয়নাল আবেদীন খানের ছেলে সাখাওয়াত হোসেন খান (৫০), শরিয়তপুর জেলার পালং থানার গয়াধর গ্রামের আল ইসলাম সরদারের ছেলে সুজন মিয়া (৩০) ও বরিশাল জেলার মুলাদী থানার বয়াতিকান্দি গ্রামের মানিক মোল্লার ছেলে নাজমুল হোসেন (২৪)।
স্থানীয়রা জানান, দীর্ঘদিন থেকে কারখানাটি পরিচালনা করছেন সাখাওয়াত হোসেন খান নামের এক ব্যক্তি। তবে স্থানীয়দের কাছে কারখানাটি পোশাক কারখানা হিসেবেই বেশি পরিচিত। পোশাক কারখানার আড়ালে সেখানে জাল টাকার কারখানা রয়েছে তা আজ পুলিশের অভিযানের পরই জানতে পারলেন তারা।
এ ব্যাপারে কারখানার পাশের বাড়ির মালিক ইব্রাহীম খান বাংলাদেশ সমাচারকে জানান, দীর্ঘদিন থেকে এই এলাকায় পোশাক কারখানাটি পরিচালনা করছেন সাখাওয়াত হোসেন খান নামের ওই ব্যক্তি।
পরে করোনাকালীন সময়ে গার্মেন্টস ব্যাবসায় লস হবার কারনে, কারখানাটির পাশের একটি জমিতে গরুর ফার্মের ব্যবসা শুরু করেন তিনি। কিছুদিন পর সেটিও বাদ দিয়ে পুনরায় কারখানার ভেতর টুকটাক কাজ করছিল বলে জানতাম। কিন্তু তিনি যে পোশাক কারখানার আড়ালে ফ্যাক্টরির ভেতরে জাল টাকা তৈরি করত, সেটি আমাদের কল্পনাতেও ছিল না। আজ সকালে পুলিশের অভিযানের ফলে বিষয়টি জানতে পারলাম।
এদিকে অভিযুক্ত সাখাওয়াত হোসেন খান জানান, দীর্ঘদিন পূর্বে তিনি এখানে কারখানাটি প্রতিষ্ঠা করেন। পরবর্তীতে করোনার সময় তার বেশকিছু অর্ডার বায়াররা বাতিল করে দেয়। এতে তিনি বেশ বেকায়দায় পরেন এবং ব্যাংকের কাছে ৫-৭ কোটি টাকার মতো ঋণের বোঝায় পড়েন।
তিনি বলেন, পরবর্তীতে আমার এই আর্থিক সমস্যার সুযোগে গত চার মাস আগে সাইফুল নামের এক সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তা এবং আহসান উল্লাহ মন্ডল ও নুরুনবী নামে আরও দুজন আমাকে এই জাল টাকা বানানোর জন্য প্রস্তাব দেয়। তারাই আমাকে এই জাল টাকা প্রস্তুতির সকল সরঞ্জামও সরবারাহ করত।
অভিযান শেষে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার আসাদুজ্জামান পিপিএম বলেন, আজ সকালে সাভারের অন্ধ মার্কেটের সামনে থেকে জাল টাকা দিয়ে লিচু কিনতে গেলে দোকানদারসহ স্থানীয়রা জাল নোট শানাক্ত করে ও একজনকে আটক করে সাভার থানায় খবর দেয়। খবর পেয়ে সাভার মডেল থানাপুলিশ আটক ব্যক্তিকে নিয়ে সাভারের বনগাঁও এর সাধাপুর পুরানবাড়ি এলাকার ওই কারখানায় অভিযান পরিচালনা করে।
এরপর সম্পূর্ণ প্রস্তুত ৫০ লাখ নকল টাকা ও আরও প্রিন্ট অবস্থায় ৫০ লাখেরও বেশি টাকার সন্ধান পায়। পরে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত অভিযান পরিচালনা করে কারখানার সব জাল টাকা উদ্ধার করা হয়। এ সময় তিনজনকে আটক করা হয়। তিনি আরও বলেন, আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, গার্মেন্টসটির অভ্যান্তরে সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তাসহ কয়েকজনের সহায়তায় জাল নোট তৈরির কারখানা গড়ে তোলা হয়। আসন্ন ঈদুল আযহা উপলক্ষে গরুর হাটে এই জাল নোট ব্যবহার করে বিপুল অর্থের মালিক হওয়ার স্বপ্ন দেখছিলেন তারা। তাদের আরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
অভিযানে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ (ক্রাইম অ্যান্ড অপস ও ট্রাফিক উত্তর) আব্দুল্লাহিল কাফী- পিপিএম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সাভার সার্কেল) শাহিদুল ইসলাম, সাভার মডেল থানার অফিসার্স ইনচার্জ (ওসি) দীপক চন্দ্র সাহা ও বনগাঁও ইউনিয়নের ভবানীপুর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই মোখলেসুর রহমানসহ প্রায় অর্ধশতাধিক পুলিশ সদস্য ও স্থানীয় গণমাধ্যম কর্মীরা।
উল্লেখ্য, আটকদের বিরুদ্ধে, সাভার মডেল থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইন ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে পৃথক দুটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
Related