০৪:২৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

বিজ্ঞপ্তি

অব্যবস্থাপনায় অগ্নি দুর্ঘটনা ও আমাদের উদ্বেগের বিষয় 

প্রতিনিধির নাম
আগুন মানে না নিয়ম,তোয়াক্কা করে না বাধা। সাম্প্রতিক সময়ে পরপর অগ্নিকান্ডের ঘটনা যেন এক গোলক ধাঁধাঁ। এপ্রিলের শুরুতে পুড়লো দেশের রাজধানী শহর ঢাকার বঙ্গবাজার। এই ঘটনার সপ্তাহ পার না হতেই বঙ্গবাজার সংলগ্ন হাজী সাইফুদ্দিন আহম্মেদ মিলন শপিং মলে লাগে আগুন। তার দিন কয়েক না যেতেই ১৫ই এপ্রিল ভোর ৫টা নাগাদ ফের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে রাজধানী শহর ঢাকার নিউ মার্কেট এলাকার নিউ সুপার মার্কেটে। বারবার এমন অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা সাধারন মানুষের মনে জন্ম দিচ্ছে অজানা এক উদ্বেগের। এগুলো কোনো গোলকধাঁধার মতো নাশকতা কিংবা পরিকল্পিত কাজ নয়তো? – এমন প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে জনমনে। আবার কেউ কেউ দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ভাবছেন- অব্যবস্থাপনায় অগ্নি দুর্ঘটনা আর কত?
তবে বলার অপেক্ষা রাখে না চির সবুজ বাংলাদেশের রাজধানী শহর ঢাকা অন্তত আরো এক যুগ আগেই হারিয়েছে নিজের বাসযোগ্যতা।গণপূর্ত অধিদফতরের অভ্যন্তরীণ তথ্য বলছে, ঢাকার অন্তত ৮০ শতাংশ ভবন ‘বাংলাদেশ ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড’ নিয়ম মেনে তৈরি করা হয়নি। অবশ্য এ সংখ্যার প্রায় ৮০-৮৫ শতাংশই অযোগ্য ঠিকাদার দ্বারা নির্মাণ করা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, যদি এখানে তুরস্ক ও সিরিয়ার মতো স্মরণকালের একটি ভূমিকম্প হয়, তাহলে মূহুর্তেই মৃত্যুপুরীতে পরিণত হবে এটি। অধিক পরিমানে ঘনবসতি এবং অপরিকল্পিত নগরায়নের কারণে ধ্বংসস্তুপ থেকে আহত মানুষ উদ্ধার করা তো দুরে থাক লাশ উদ্ধার করতেও আমাদেরকে যথেষ্ট বেগ পেতে হবে।
বর্তমানে যে হারে এ শহরে নগরায়ণ বাড়ছে, ঠিক একই হারে বিপর্যস্ত হচ্ছে এখানকার পরিবেশ। এমন অবস্থা দেখে দ্বিধাহীনভাবে বলতে পারি, আর কয়েক দশক পরেই মানুষ নিজকে বাঁচাতে এই শহর ছেড়ে পালাতে বাধ্য হবে। আমাদের উদ্বেগ এখানেই শেষ নয়। আরেকটি বড় ব্যাপার হলো, এই শহর বিকেন্দ্রীকরণ তথা জনবসতি কমানো নিয়ে নেই কোনো উদ্যোগ, নেই শহরটির জীববৈচিত্র্য রক্ষার জন্য কোনো তোড়জোড়। ঢাকার এমন বেহাল দশা থেকে আগের রুপে ফিরতে প্রয়োজন কিছু উদ্যোগ। আর সেগুলো হলো, পরিবেশ দূষণে প্রত্যক্ষ ভুমিকা আছে এমন কিছু কল-কারখানা সরিয়ে ফেলা। প্রয়োজন ক্ষীণ কিছু সরকারি দপ্তর এবং মন্ত্রণালয় অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া। বিশেষ করে বুড়িগঙ্গা-তুরাগ সহ আশপাশের নদীগুলোর দূষণ রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া। নির্মাণ হতে যাওয়া সম্ভাব্য স্থাপনাগুলোকে নির্মাণ নিয়ম মানতে বাধ্য করা ইত্যাদি। ফলে যেমন সুন্দর হবে ঢাকার পরিবেশ ঠিক তেমনিই এমন অগ্নিকাণ্ড ও অন্যান্য দুর্যোগ-দূর্ঘটনায় ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ কমিয়ে আনা সম্ভব হবে।
একটু লক্ষ করলেই আমরা দেখতে পাই, সাম্প্রতিক সময়ে যতগুলো ভয়াবহ আগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে যেমন, বঙ্গবাজার, বঙ্গবাজার সংলগ্ন হাজী সাইফুদ্দিন আহম্মেদ মিলন শপিং মল, পুরান ঢাকার নিমতলী, চকবাজার, চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে পরপর দুটি ঘটনা, নারায়ণগঞ্জের গার্মেন্টস এবং গুলশানের ডিএনসিসি মার্কেট কিংবা সর্বশেষ এই নিউ মার্কেট এলাকার নিউ সুপার মার্কেট। এর প্রায় প্রতিটি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় অগ্নিনিরাপত্তা নিয়ে আমাদের অবহেলা, অব্যবস্থাপনা ও অনিয়ম ভীষণ ভাবে পরিলক্ষিত হয়। বঙ্গবাজার ট্রাজেডিতে ফায়ার ডিফেন্সের পানির প্রধান উৎস ছিলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি পুকুর। আবার নিউ সুপার মার্কেটে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় পানির উৎস হয় ঢাকা কলেজের একটি পুকুর। পানির উৎসের এমন অবস্থা দেখে বোঝার বাকি থাকে না দেশে অবব্যবস্থাপনার মাত্রা কতোটুকু বেড়েছে।
মূলত কোনো স্থাপনা কিংবা ভবনকে পর্যাপ্ত আগুন প্রতিরোধক করতে হলে আগুন লাগার সম্ভাব্য কারণগুলো পুরোপুরি খুঁজে বের করে তার জন্য আগে থেকেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়ে রাখাই এখন পর্যন্ত অগ্নিনিরাপত্তা বিধানের সবচেয়ে কার্যকর উপায় তথা মাধ্যম। এটিকে একপ্রকার আগাম প্রতিরোধ ব্যবস্থাও বলা চলে। অথচ দুঃখের বিষয় হলো, বঙ্গবাজারের পাশেই ফায়ার ডিফেন্সের সদর দপ্তর থাকা স্বত্তেও রক্ষা করা সম্ভব হয়নি বঙ্গবাজারকে। অবশ্য ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে – বঙ্গবাজার অগ্নি দুর্ঘটনার ঝুঁকিতে রয়েছে মর্মে কয়েকবার নোটিশ প্রদান করা হলেও তা আমলে নেয়নি কর্তৃপক্ষ। অর্থাৎ এখানেও দায়ী চরম অবব্যস্থাপনা। আবার কাছাকাছি পর্যাপ্ত পানির উৎস না থাকায় চরম বিপাকে পড়তে হয় ফায়ার ডিফেন্স কর্তৃপক্ষকেও- এটিও এক প্রকার অবব্যস্থাপনা। এটির দায় সরকারসহ কোনো পক্ষই এড়াতে পারে না।
এখন প্রশ্ন হলো, আর কত অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটলে ভাঙবে আমাদের ঘুম? না কি জেগে ঘুমোচ্ছি আমরা?- এ সমস্যার উত্তরণে সরকারসহ সকল পক্ষকে সমানভাবে কাজ করতে হবে। পাশাপাশি ফায়ার ডিফেন্সসহ সংশ্লিষ্ট বাহিনীর সক্ষমতা আরো বাড়াতে হবে। ভবন নির্মাণসহ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে দেশের প্রচলিত আইনের কঠোর প্রয়োগ নিশ্চিত করা এবং একটি জবাবদি
ট্যাগস :
আপডেট : ১০:০১:৩৮ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৩
৭১ বার পড়া হয়েছে

অব্যবস্থাপনায় অগ্নি দুর্ঘটনা ও আমাদের উদ্বেগের বিষয় 

আপডেট : ১০:০১:৩৮ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৩
আগুন মানে না নিয়ম,তোয়াক্কা করে না বাধা। সাম্প্রতিক সময়ে পরপর অগ্নিকান্ডের ঘটনা যেন এক গোলক ধাঁধাঁ। এপ্রিলের শুরুতে পুড়লো দেশের রাজধানী শহর ঢাকার বঙ্গবাজার। এই ঘটনার সপ্তাহ পার না হতেই বঙ্গবাজার সংলগ্ন হাজী সাইফুদ্দিন আহম্মেদ মিলন শপিং মলে লাগে আগুন। তার দিন কয়েক না যেতেই ১৫ই এপ্রিল ভোর ৫টা নাগাদ ফের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে রাজধানী শহর ঢাকার নিউ মার্কেট এলাকার নিউ সুপার মার্কেটে। বারবার এমন অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা সাধারন মানুষের মনে জন্ম দিচ্ছে অজানা এক উদ্বেগের। এগুলো কোনো গোলকধাঁধার মতো নাশকতা কিংবা পরিকল্পিত কাজ নয়তো? – এমন প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে জনমনে। আবার কেউ কেউ দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ভাবছেন- অব্যবস্থাপনায় অগ্নি দুর্ঘটনা আর কত?
তবে বলার অপেক্ষা রাখে না চির সবুজ বাংলাদেশের রাজধানী শহর ঢাকা অন্তত আরো এক যুগ আগেই হারিয়েছে নিজের বাসযোগ্যতা।গণপূর্ত অধিদফতরের অভ্যন্তরীণ তথ্য বলছে, ঢাকার অন্তত ৮০ শতাংশ ভবন ‘বাংলাদেশ ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড’ নিয়ম মেনে তৈরি করা হয়নি। অবশ্য এ সংখ্যার প্রায় ৮০-৮৫ শতাংশই অযোগ্য ঠিকাদার দ্বারা নির্মাণ করা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, যদি এখানে তুরস্ক ও সিরিয়ার মতো স্মরণকালের একটি ভূমিকম্প হয়, তাহলে মূহুর্তেই মৃত্যুপুরীতে পরিণত হবে এটি। অধিক পরিমানে ঘনবসতি এবং অপরিকল্পিত নগরায়নের কারণে ধ্বংসস্তুপ থেকে আহত মানুষ উদ্ধার করা তো দুরে থাক লাশ উদ্ধার করতেও আমাদেরকে যথেষ্ট বেগ পেতে হবে।
বর্তমানে যে হারে এ শহরে নগরায়ণ বাড়ছে, ঠিক একই হারে বিপর্যস্ত হচ্ছে এখানকার পরিবেশ। এমন অবস্থা দেখে দ্বিধাহীনভাবে বলতে পারি, আর কয়েক দশক পরেই মানুষ নিজকে বাঁচাতে এই শহর ছেড়ে পালাতে বাধ্য হবে। আমাদের উদ্বেগ এখানেই শেষ নয়। আরেকটি বড় ব্যাপার হলো, এই শহর বিকেন্দ্রীকরণ তথা জনবসতি কমানো নিয়ে নেই কোনো উদ্যোগ, নেই শহরটির জীববৈচিত্র্য রক্ষার জন্য কোনো তোড়জোড়। ঢাকার এমন বেহাল দশা থেকে আগের রুপে ফিরতে প্রয়োজন কিছু উদ্যোগ। আর সেগুলো হলো, পরিবেশ দূষণে প্রত্যক্ষ ভুমিকা আছে এমন কিছু কল-কারখানা সরিয়ে ফেলা। প্রয়োজন ক্ষীণ কিছু সরকারি দপ্তর এবং মন্ত্রণালয় অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া। বিশেষ করে বুড়িগঙ্গা-তুরাগ সহ আশপাশের নদীগুলোর দূষণ রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া। নির্মাণ হতে যাওয়া সম্ভাব্য স্থাপনাগুলোকে নির্মাণ নিয়ম মানতে বাধ্য করা ইত্যাদি। ফলে যেমন সুন্দর হবে ঢাকার পরিবেশ ঠিক তেমনিই এমন অগ্নিকাণ্ড ও অন্যান্য দুর্যোগ-দূর্ঘটনায় ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ কমিয়ে আনা সম্ভব হবে।
একটু লক্ষ করলেই আমরা দেখতে পাই, সাম্প্রতিক সময়ে যতগুলো ভয়াবহ আগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে যেমন, বঙ্গবাজার, বঙ্গবাজার সংলগ্ন হাজী সাইফুদ্দিন আহম্মেদ মিলন শপিং মল, পুরান ঢাকার নিমতলী, চকবাজার, চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে পরপর দুটি ঘটনা, নারায়ণগঞ্জের গার্মেন্টস এবং গুলশানের ডিএনসিসি মার্কেট কিংবা সর্বশেষ এই নিউ মার্কেট এলাকার নিউ সুপার মার্কেট। এর প্রায় প্রতিটি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় অগ্নিনিরাপত্তা নিয়ে আমাদের অবহেলা, অব্যবস্থাপনা ও অনিয়ম ভীষণ ভাবে পরিলক্ষিত হয়। বঙ্গবাজার ট্রাজেডিতে ফায়ার ডিফেন্সের পানির প্রধান উৎস ছিলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি পুকুর। আবার নিউ সুপার মার্কেটে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় পানির উৎস হয় ঢাকা কলেজের একটি পুকুর। পানির উৎসের এমন অবস্থা দেখে বোঝার বাকি থাকে না দেশে অবব্যবস্থাপনার মাত্রা কতোটুকু বেড়েছে।
মূলত কোনো স্থাপনা কিংবা ভবনকে পর্যাপ্ত আগুন প্রতিরোধক করতে হলে আগুন লাগার সম্ভাব্য কারণগুলো পুরোপুরি খুঁজে বের করে তার জন্য আগে থেকেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়ে রাখাই এখন পর্যন্ত অগ্নিনিরাপত্তা বিধানের সবচেয়ে কার্যকর উপায় তথা মাধ্যম। এটিকে একপ্রকার আগাম প্রতিরোধ ব্যবস্থাও বলা চলে। অথচ দুঃখের বিষয় হলো, বঙ্গবাজারের পাশেই ফায়ার ডিফেন্সের সদর দপ্তর থাকা স্বত্তেও রক্ষা করা সম্ভব হয়নি বঙ্গবাজারকে। অবশ্য ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে – বঙ্গবাজার অগ্নি দুর্ঘটনার ঝুঁকিতে রয়েছে মর্মে কয়েকবার নোটিশ প্রদান করা হলেও তা আমলে নেয়নি কর্তৃপক্ষ। অর্থাৎ এখানেও দায়ী চরম অবব্যস্থাপনা। আবার কাছাকাছি পর্যাপ্ত পানির উৎস না থাকায় চরম বিপাকে পড়তে হয় ফায়ার ডিফেন্স কর্তৃপক্ষকেও- এটিও এক প্রকার অবব্যস্থাপনা। এটির দায় সরকারসহ কোনো পক্ষই এড়াতে পারে না।
এখন প্রশ্ন হলো, আর কত অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটলে ভাঙবে আমাদের ঘুম? না কি জেগে ঘুমোচ্ছি আমরা?- এ সমস্যার উত্তরণে সরকারসহ সকল পক্ষকে সমানভাবে কাজ করতে হবে। পাশাপাশি ফায়ার ডিফেন্সসহ সংশ্লিষ্ট বাহিনীর সক্ষমতা আরো বাড়াতে হবে। ভবন নির্মাণসহ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে দেশের প্রচলিত আইনের কঠোর প্রয়োগ নিশ্চিত করা এবং একটি জবাবদি