০৯:৪২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বিজ্ঞপ্তি

উৎপাদন খরচ তুলেতে না  পেরে আলু চাষীরা দিশেহারা

প্রতিনিধির নাম
মুন্সীগঞ্জে এবার আলুর বাম্পার ফলন হয়েছে।কিন্তু বাম্পার ফলন হলেও কৃষকের মুখে হাসি নেই।প্রতি মণ আলু চাষে একজন কৃষকের খরচ হয়েছে ৪শ’ ৫০ থেকে ৪শ’ ৮০ টাকা।সেই আলু মণ প্রতি বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৩শ’ ৪০ থেকে ৪শ’ ৬০ টাকায়।এ অবস্থায় লাভ তো দূরের কথা,উৎপাদন খরচ তুলতে না পেরে আলু চাষীরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।চাষীদের ভাষ্য,প্রতি মণ আলুতে তাদের একশ’থেকে দেড়শ’ টাকা করে লোকসান গুণতে হচ্ছে।প্রায় আড়াই একর জমিতে আলু চাষ করেছেন জেলার সদর উপজেলার বজ্রযোগী‌নি ইউনিয়নের আলু চাষী আরিফ।
আলুর বাম্পার ফলন হলেও তার মুখে হাসি নেই।উৎপাদন খরচ তোলা নিয়ে আশঙ্কায় রয়েছেন তিনি।আলু চাষী আরিফ জানান,চলতি মৌসুমে জমি প্রস্তুত থেকে শুরু করে জমি থেকে আলু উত্তোলন পর্যন্ত প্রতি মণে খরচ হয়েছে ৪শ’ ৫০ থেকে ৪শ’ ৮০ টাকা।কিন্তু আলুর বর্তমান বাজারদর মণ প্রতি ৩শ’৫০ থেকে ৪শ’৫০ টাকা।এ অবস্থায় প্রতি মণ আলুতে তাকে লোকসান গুণতে হচ্ছে একশ’ থেকে দেড়শ’ টাকা।হিমাগার খরচ ধরলে খরচের পরিমাণ আরও বেড়ে যাবে বলেও জানান তিনি।আরিফ আরও জানান,সরকার যদি আলুর বাজার মূল্য নির্ধারণ না করে দেয় এবং বিদেশে রফতানির ব্যবস্থা না করে,তবে চলতি বছর প্রত্যেক আলু চাষিকে লোকসান গুণতে হবে।
এতে অনেক কৃষকই আলু চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবেন।কেবল আরিফ নয়,একই আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন সদর উপ‌জেলার বা‌গেস্বর,রাম‌শিং সহ অন‌্যান‌্য এলাকার অনেক আলু চাষী।টংঙ্গীবাড়ী উপজেলার চা‌ষী বা‌লিগাও এলাকার আলু চাষি দুলু মিয়া বলেন, ‘আমরা এবার আলুর বাম্পার ফলন পেয়েও বিপদে পড়েছি।প্রতি ৯০ কেজি আলুতে উৎপাদন খরচ প্রায় ৬শ’ ৭৫ টাকা করে পড়লেও একই পরিমাণ আলু বিক্রি করতে হচ্ছে ৬শ’ থেকে ৬শ’ ২০ টাকায়।কোনও কোনও চাষী এই লোকসান মেনে নিয়ে আলু বিক্রি করতে চাইলেও তারা ক্রেতা পাচ্ছেন না।দুলু মিয়া আরও জানান,বিগত বছরগুলোতে হিমাগার থেকে ঋণের ব্যবস্থা করা হয়েছিল।
কিন্তু এ বছর ঋণ তো দূরের কথা,হিমাগার কর্তৃপক্ষ আলু কিনতেও অনিহা প্রকাশ করছে।লৌহজং উপজেলার ‌বেজগাও ইউনিয়নের আলু চাষি তৈয়ব আলী জানান, উপজেলা কৃষি বিভাগের পরামর্শে চলতি মৌসুমে তিনি প্রায় ৮ বিঘা জমিতে আলু চাষ করেছেন।গত বছরের চেয়ে এ বছর আলুর ফলন বেশি হয়েছে।তবে আলুর বাজারমূল্য কম হওয়ায় লোকসান গুণতে হচ্ছে তাকে।এই কৃষক আরও বলেন,এখন সরকারই আমাদের একমাত্র ভরসা। সরকার আলুর বাজারমূল্য নির্ধারণ করে দিলে আমরা লোকসানের হাত থেকে বাঁচবো।চাষীদের কাছে আলু কিনে দেশের বিভিন্ন বাজারসহ রফতানিকারকদের কাছে আলু বিক্রি করেন ব্যাপারি মো:কা‌দির ছৈয়াল(বাদশা)তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন,এবার জেলাজুড়ে আলুর ভালো ফলন হয়েছে।কিন্তু দেশের বিভিন্ন বাজারে চাহিদা না থাকায় এবং রফতানি নিয়ে ঝামেলার কারণে কেউ আলু কিনতে চাচ্ছেন না।আমরা যদি বেচতে না পারি,তাহলে আলু কিনে বিপদে পড়বো।
বিগত বছরগুলোতে হিমাগার মালিকেরা আলু কিনে এবং আলু চাষীদের লোন দিয়ে বড় ধরনের লোকসানের মুখে পড়েছিল,তাই এবছর তারাও আলু কিনতে বা কৃষকদের লোন দিতে আগ্রহী নয়।টংঙ্গীবাড়ী কৃষি সম্প্রসারণ অ‌ফিস সুত্রে জানা গে‌ছে ব‌লে জাহেদুল হক চৌধুরী জানান,চলতি মৌসুমে জেলায় প্রায় ২০ হাজার ২শ’ ৯১ হেক্টর জমিতে আলু চাষ করা হয়েছে, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে সামান্য কম।তবুও চলতি মৌসুমে আবহাওয়া অনকূলে থাকায় আলুর বাম্পার ফলন হয়েছে।
ট্যাগস :
আপডেট : ০৭:৩২:৩৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৫ মার্চ ২০২৩
৫২ বার পড়া হয়েছে

উৎপাদন খরচ তুলেতে না  পেরে আলু চাষীরা দিশেহারা

আপডেট : ০৭:৩২:৩৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৫ মার্চ ২০২৩
মুন্সীগঞ্জে এবার আলুর বাম্পার ফলন হয়েছে।কিন্তু বাম্পার ফলন হলেও কৃষকের মুখে হাসি নেই।প্রতি মণ আলু চাষে একজন কৃষকের খরচ হয়েছে ৪শ’ ৫০ থেকে ৪শ’ ৮০ টাকা।সেই আলু মণ প্রতি বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৩শ’ ৪০ থেকে ৪শ’ ৬০ টাকায়।এ অবস্থায় লাভ তো দূরের কথা,উৎপাদন খরচ তুলতে না পেরে আলু চাষীরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।চাষীদের ভাষ্য,প্রতি মণ আলুতে তাদের একশ’থেকে দেড়শ’ টাকা করে লোকসান গুণতে হচ্ছে।প্রায় আড়াই একর জমিতে আলু চাষ করেছেন জেলার সদর উপজেলার বজ্রযোগী‌নি ইউনিয়নের আলু চাষী আরিফ।
আলুর বাম্পার ফলন হলেও তার মুখে হাসি নেই।উৎপাদন খরচ তোলা নিয়ে আশঙ্কায় রয়েছেন তিনি।আলু চাষী আরিফ জানান,চলতি মৌসুমে জমি প্রস্তুত থেকে শুরু করে জমি থেকে আলু উত্তোলন পর্যন্ত প্রতি মণে খরচ হয়েছে ৪শ’ ৫০ থেকে ৪শ’ ৮০ টাকা।কিন্তু আলুর বর্তমান বাজারদর মণ প্রতি ৩শ’৫০ থেকে ৪শ’৫০ টাকা।এ অবস্থায় প্রতি মণ আলুতে তাকে লোকসান গুণতে হচ্ছে একশ’ থেকে দেড়শ’ টাকা।হিমাগার খরচ ধরলে খরচের পরিমাণ আরও বেড়ে যাবে বলেও জানান তিনি।আরিফ আরও জানান,সরকার যদি আলুর বাজার মূল্য নির্ধারণ না করে দেয় এবং বিদেশে রফতানির ব্যবস্থা না করে,তবে চলতি বছর প্রত্যেক আলু চাষিকে লোকসান গুণতে হবে।
এতে অনেক কৃষকই আলু চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবেন।কেবল আরিফ নয়,একই আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন সদর উপ‌জেলার বা‌গেস্বর,রাম‌শিং সহ অন‌্যান‌্য এলাকার অনেক আলু চাষী।টংঙ্গীবাড়ী উপজেলার চা‌ষী বা‌লিগাও এলাকার আলু চাষি দুলু মিয়া বলেন, ‘আমরা এবার আলুর বাম্পার ফলন পেয়েও বিপদে পড়েছি।প্রতি ৯০ কেজি আলুতে উৎপাদন খরচ প্রায় ৬শ’ ৭৫ টাকা করে পড়লেও একই পরিমাণ আলু বিক্রি করতে হচ্ছে ৬শ’ থেকে ৬শ’ ২০ টাকায়।কোনও কোনও চাষী এই লোকসান মেনে নিয়ে আলু বিক্রি করতে চাইলেও তারা ক্রেতা পাচ্ছেন না।দুলু মিয়া আরও জানান,বিগত বছরগুলোতে হিমাগার থেকে ঋণের ব্যবস্থা করা হয়েছিল।
কিন্তু এ বছর ঋণ তো দূরের কথা,হিমাগার কর্তৃপক্ষ আলু কিনতেও অনিহা প্রকাশ করছে।লৌহজং উপজেলার ‌বেজগাও ইউনিয়নের আলু চাষি তৈয়ব আলী জানান, উপজেলা কৃষি বিভাগের পরামর্শে চলতি মৌসুমে তিনি প্রায় ৮ বিঘা জমিতে আলু চাষ করেছেন।গত বছরের চেয়ে এ বছর আলুর ফলন বেশি হয়েছে।তবে আলুর বাজারমূল্য কম হওয়ায় লোকসান গুণতে হচ্ছে তাকে।এই কৃষক আরও বলেন,এখন সরকারই আমাদের একমাত্র ভরসা। সরকার আলুর বাজারমূল্য নির্ধারণ করে দিলে আমরা লোকসানের হাত থেকে বাঁচবো।চাষীদের কাছে আলু কিনে দেশের বিভিন্ন বাজারসহ রফতানিকারকদের কাছে আলু বিক্রি করেন ব্যাপারি মো:কা‌দির ছৈয়াল(বাদশা)তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন,এবার জেলাজুড়ে আলুর ভালো ফলন হয়েছে।কিন্তু দেশের বিভিন্ন বাজারে চাহিদা না থাকায় এবং রফতানি নিয়ে ঝামেলার কারণে কেউ আলু কিনতে চাচ্ছেন না।আমরা যদি বেচতে না পারি,তাহলে আলু কিনে বিপদে পড়বো।
বিগত বছরগুলোতে হিমাগার মালিকেরা আলু কিনে এবং আলু চাষীদের লোন দিয়ে বড় ধরনের লোকসানের মুখে পড়েছিল,তাই এবছর তারাও আলু কিনতে বা কৃষকদের লোন দিতে আগ্রহী নয়।টংঙ্গীবাড়ী কৃষি সম্প্রসারণ অ‌ফিস সুত্রে জানা গে‌ছে ব‌লে জাহেদুল হক চৌধুরী জানান,চলতি মৌসুমে জেলায় প্রায় ২০ হাজার ২শ’ ৯১ হেক্টর জমিতে আলু চাষ করা হয়েছে, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে সামান্য কম।তবুও চলতি মৌসুমে আবহাওয়া অনকূলে থাকায় আলুর বাম্পার ফলন হয়েছে।