০৫:৪১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

বিজ্ঞপ্তি

জমি নিয়েছে, এখন আমার জীবনটাও নিতে চায় ছেলেরা

প্রতিনিধির নাম

এবার প্রথম না, এর আগেও চার বার মেরেছে আমার ছোট ছেলে আজমত। গ্রামের অনেকের কাছে বিচার দিয়েছি। কেউ আমার বিচার করে দেয়না। পাঁচ দিন আগেও আমাকে মেরে ঘর থেকে নামিয়ে দিয়েছে। হাসপাতালে এসে হুমকি দিয়েছে আমি বাড়ি গেলে নাকি মেরে ফেলবে। অনেক কষ্ট করে ছেলেদের বড় করেছি। তাদের ভালোবেসে ৫ বিঘা জমি দিয়েও ভালোবাসা পাইনি। এখন আমার জীবনটাও নিতে চায় নিজের সন্তানরা। হাসপাতাল থেকে ছুটি দিলে এই বৃদ্ধ বয়সে কোথায় যাব চিন্তায় আছি।’

হাসপাতালের বিছানায় বসে কথাগুলো বলছিলেন মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার সাহারবাটি গ্রামের ৮০ বছরের বৃদ্ধ আমির আলী। গত ১৪ জানুয়ারি বিকেল থেকে বৃদ্ধ আমির আলী ও তার স্ত্রী জরিনা গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

জানা গেছে, জমি দিতে না চাওয়ায় আমির আলী  ও জরিনা খাতুনকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছেন চার ছেলে।  তাদেরকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেছেন ছেলেরা। অসহায় ও অসুস্থ অবস্থায় এই দম্পতি পাঁচদিন ধরে গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রয়েছেন। কোথাও যাওয়ার  জায়গা নেই তাদের। হাসপাতাল থেকে ছুটি দিলে কোথায় গিয়ে উঠবেন তা নিয়ে চিন্তায় দিশেহারা এই বৃদ্ধ দম্পতি।

আমির আলী বলেন, আমার দুই স্ত্রী। প্রথম স্ত্রীর নাম খুয়ারী খাতুন। আমার প্রথম স্ত্রীর দুই ছেলে হেকমত আলী ও আব্দুল মতিন। দ্বিতীয় স্ত্রী জরিনা খাতুন। বর্তমানে আমার সঙ্গেই থাকে। দ্বিতীয় স্ত্রীর দুই ছেলে আজমত আলী ও খেজমত আলী। ৫ বিঘা জমি সবটাই দুই স্ত্রীর চার ছেলেকে রেজিস্ট্রি করে দিয়েছি। আর মাত্র ৯ শতক জমি আছে সেটুকুও নিতে চায় তারা। জমি নেওয়ার সময় ছেলেদের সঙ্গে চুক্তি ছিল আমাদের ভরণপোষণের সব দায়িত্ব নেবে তারা। প্রথম দিকে  খাওয়ার জন্য কিছু টাকা দিলেও আর তারা আমাদের খোঁজ নেয় না।

তিনি বলেন, আমার বাকি ৯ শতক জমি আমার স্ত্রী জরিনার নামে দিয়েছি। সে জমিটুকুও তারা আমার কাছ থেকে নিয়ে নিতে চায়। আমি তাদের জমিটুকু লিখে না দিতে চাইলে ছোট ছেলে আজমত আলী কিনে নিতে চায়। আমার ভবিষ্যতের কথা ভেবে শেষ সম্বলটুকু হাতছাড়া করতে চাইনি। সে অপরাধে গত ১৪ জানুয়ারি আমাদের দুজনকে মারধর করে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে। পরে আমার লেপ কাথা নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে আসতে চাইলে সেগুলো কেড়ে নিয়েছে। অসুস্থ অবস্থায় দুজন বৃদ্ধ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছি। আজমত আলী ও খেজমত আলী হাসপাতালে এসেও হুমকি দিয়ে গেছে। আমরা যেন বাড়ি ফিরে না যাই। এই বৃদ্ধ বয়সে কোথায় যাব? কী খাব কিছুই ভেবে পাচ্ছি না। এখন পর্যন্ত আমাদের খোঁজ নেইনি তারা। তাই আইনের আশ্রয় নিতে চাই।

বৃদ্ধা জরিনা খাতুন বলেন, আমার বাবার বাড়ি থেকে পাওয়া জমি বিক্রির চার লাখ টাকাও চার ভাই মিলে নিয়ে নিয়েছে। সেটাও আর ফেরত দেইনি।

এ ব্যাপারে সাহারবাটি ইউনিয়নের স্থানীয় ইউপি সদস্য আনারুল ইসলাম (আকালী) বলেন, বিষয়টি নিয়ে আমি ও মহল্লার লোকজন বেশ কয়েকবার সালিস বৈঠক করেছি। তাদের প্রতি মাসে চার হাজার করে টাকা দেওয়ার কথা ছিল। জমি রেজিস্ট্রি করে নেওয়ার পর ছেলেরা আর তা দেয় না। বৃদ্ধ বাবা-মাকে প্রায়ই তারা মারধর করে। কয়েক দিন হলো তাদের বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে।

এ বিষয়ে আমির আলীর ছেলে খেজমত আলী বলেন, বাবা-মা আমাদের কথা মেনে চলে না। আমরা তাদের খেতে দিতে চাই। কিন্তু তারা সে খাবার খায় না। বাবা-মায়ের এখন জমির কী দরকার? বাবা আমাকে যে জমি রেজিস্ট্রি করে দিয়েছে, আমার কাছ থেকে ফেরত চাইলে সেটা ফেরত দিয়ে দেব। শুধু আমি না আমার অন্যান্য ভাইয়েরাও ফেরত দিয়ে দেবে। তারা এখন জমি ফেরত নিয়ে কী করে হালচাষ করে তার শেষ দেখতে চাই।

গাংনী থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রাজ্জাক বলেন, এ বিষয়ে কোনো অভিযোগ পাইনি। বিষয়টি খুবই দুঃখজনক ও মানবিক হওয়ায় খোঁজ নিয়ে দেখে ছেলেদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এই বৃদ্ধ বয়সে ছেলেরা যদি বাবা-মায়ের খেয়াল না রাখেন তাহলে তারা অসহায় হয়ে যাবেন।

ট্যাগস :
আপডেট : ১২:৫৩:৩৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২০ জানুয়ারী ২০২২
২৮৫ বার পড়া হয়েছে

জমি নিয়েছে, এখন আমার জীবনটাও নিতে চায় ছেলেরা

আপডেট : ১২:৫৩:৩৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২০ জানুয়ারী ২০২২

এবার প্রথম না, এর আগেও চার বার মেরেছে আমার ছোট ছেলে আজমত। গ্রামের অনেকের কাছে বিচার দিয়েছি। কেউ আমার বিচার করে দেয়না। পাঁচ দিন আগেও আমাকে মেরে ঘর থেকে নামিয়ে দিয়েছে। হাসপাতালে এসে হুমকি দিয়েছে আমি বাড়ি গেলে নাকি মেরে ফেলবে। অনেক কষ্ট করে ছেলেদের বড় করেছি। তাদের ভালোবেসে ৫ বিঘা জমি দিয়েও ভালোবাসা পাইনি। এখন আমার জীবনটাও নিতে চায় নিজের সন্তানরা। হাসপাতাল থেকে ছুটি দিলে এই বৃদ্ধ বয়সে কোথায় যাব চিন্তায় আছি।’

হাসপাতালের বিছানায় বসে কথাগুলো বলছিলেন মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার সাহারবাটি গ্রামের ৮০ বছরের বৃদ্ধ আমির আলী। গত ১৪ জানুয়ারি বিকেল থেকে বৃদ্ধ আমির আলী ও তার স্ত্রী জরিনা গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

জানা গেছে, জমি দিতে না চাওয়ায় আমির আলী  ও জরিনা খাতুনকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছেন চার ছেলে।  তাদেরকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেছেন ছেলেরা। অসহায় ও অসুস্থ অবস্থায় এই দম্পতি পাঁচদিন ধরে গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রয়েছেন। কোথাও যাওয়ার  জায়গা নেই তাদের। হাসপাতাল থেকে ছুটি দিলে কোথায় গিয়ে উঠবেন তা নিয়ে চিন্তায় দিশেহারা এই বৃদ্ধ দম্পতি।

আমির আলী বলেন, আমার দুই স্ত্রী। প্রথম স্ত্রীর নাম খুয়ারী খাতুন। আমার প্রথম স্ত্রীর দুই ছেলে হেকমত আলী ও আব্দুল মতিন। দ্বিতীয় স্ত্রী জরিনা খাতুন। বর্তমানে আমার সঙ্গেই থাকে। দ্বিতীয় স্ত্রীর দুই ছেলে আজমত আলী ও খেজমত আলী। ৫ বিঘা জমি সবটাই দুই স্ত্রীর চার ছেলেকে রেজিস্ট্রি করে দিয়েছি। আর মাত্র ৯ শতক জমি আছে সেটুকুও নিতে চায় তারা। জমি নেওয়ার সময় ছেলেদের সঙ্গে চুক্তি ছিল আমাদের ভরণপোষণের সব দায়িত্ব নেবে তারা। প্রথম দিকে  খাওয়ার জন্য কিছু টাকা দিলেও আর তারা আমাদের খোঁজ নেয় না।

তিনি বলেন, আমার বাকি ৯ শতক জমি আমার স্ত্রী জরিনার নামে দিয়েছি। সে জমিটুকুও তারা আমার কাছ থেকে নিয়ে নিতে চায়। আমি তাদের জমিটুকু লিখে না দিতে চাইলে ছোট ছেলে আজমত আলী কিনে নিতে চায়। আমার ভবিষ্যতের কথা ভেবে শেষ সম্বলটুকু হাতছাড়া করতে চাইনি। সে অপরাধে গত ১৪ জানুয়ারি আমাদের দুজনকে মারধর করে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে। পরে আমার লেপ কাথা নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে আসতে চাইলে সেগুলো কেড়ে নিয়েছে। অসুস্থ অবস্থায় দুজন বৃদ্ধ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছি। আজমত আলী ও খেজমত আলী হাসপাতালে এসেও হুমকি দিয়ে গেছে। আমরা যেন বাড়ি ফিরে না যাই। এই বৃদ্ধ বয়সে কোথায় যাব? কী খাব কিছুই ভেবে পাচ্ছি না। এখন পর্যন্ত আমাদের খোঁজ নেইনি তারা। তাই আইনের আশ্রয় নিতে চাই।

বৃদ্ধা জরিনা খাতুন বলেন, আমার বাবার বাড়ি থেকে পাওয়া জমি বিক্রির চার লাখ টাকাও চার ভাই মিলে নিয়ে নিয়েছে। সেটাও আর ফেরত দেইনি।

এ ব্যাপারে সাহারবাটি ইউনিয়নের স্থানীয় ইউপি সদস্য আনারুল ইসলাম (আকালী) বলেন, বিষয়টি নিয়ে আমি ও মহল্লার লোকজন বেশ কয়েকবার সালিস বৈঠক করেছি। তাদের প্রতি মাসে চার হাজার করে টাকা দেওয়ার কথা ছিল। জমি রেজিস্ট্রি করে নেওয়ার পর ছেলেরা আর তা দেয় না। বৃদ্ধ বাবা-মাকে প্রায়ই তারা মারধর করে। কয়েক দিন হলো তাদের বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে।

এ বিষয়ে আমির আলীর ছেলে খেজমত আলী বলেন, বাবা-মা আমাদের কথা মেনে চলে না। আমরা তাদের খেতে দিতে চাই। কিন্তু তারা সে খাবার খায় না। বাবা-মায়ের এখন জমির কী দরকার? বাবা আমাকে যে জমি রেজিস্ট্রি করে দিয়েছে, আমার কাছ থেকে ফেরত চাইলে সেটা ফেরত দিয়ে দেব। শুধু আমি না আমার অন্যান্য ভাইয়েরাও ফেরত দিয়ে দেবে। তারা এখন জমি ফেরত নিয়ে কী করে হালচাষ করে তার শেষ দেখতে চাই।

গাংনী থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রাজ্জাক বলেন, এ বিষয়ে কোনো অভিযোগ পাইনি। বিষয়টি খুবই দুঃখজনক ও মানবিক হওয়ায় খোঁজ নিয়ে দেখে ছেলেদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এই বৃদ্ধ বয়সে ছেলেরা যদি বাবা-মায়ের খেয়াল না রাখেন তাহলে তারা অসহায় হয়ে যাবেন।