০৫:৪৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বিজ্ঞপ্তি

বিএনপি’র তৎপরতা আওয়ামী লীগে’র জন্য সতর্কবার্তা

প্রতিনিধির নাম
আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে বছরের শুরু হতেই বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলার পরিকল্পনার পাশাপাশি কূটনৈতিক তৎপরতা জোরদার করার চেষ্টায় ছিলো বিএনপি। দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতার বাইরে থাকা দলটি নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি করে আসছে। এই দাবি আদায়ে আন্দোলনের পাশাপাশি বিদেশি বন্ধুরাষ্ট্রের সহায়তা প্রয়োজন বলে মনে করছে দলটি। যার পরিপ্রেক্ষিতে সাম্প্রতিক সময়ে সকল সহযোগী সংগঠনের কেন্দ্রীয়,মহানগরীয় কমিটি অনুমোদন দিচ্ছে জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি। কমিটি অনুমোদন দিয়েই ক্ষান্ত থাকেনি দলটি বরং একের পর আন্দোলনে দলকে চাঙ্গা করে তুলার সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাচ্ছেন দলের নীতি নির্ধারণী মহল। একটানা ১৩ বছর দলটি ক্ষমতার বাহিরে থেকে কোনঠাসা প্রায় দলটির দলীয় নেতা-কর্মীগণ হামলা,মামলা মাথায় নিয়েই মরণ কামড় দিতে তৎপর হয়ে উঠেছে এবার। বিগত ১০ বছরের মধ্যে যে সাহসীকতা বিএনপি ও তার সহযোগী সংগঠনগুলো দেখাতে পারেনি সাম্প্রতিক সময়ে তা-ই লক্ষ করা যাচ্ছে দলটির মধ্যে।  বিশেষ করে নব-গঠিত কেন্দ্রীয় ছাত্রদল কমিটি ঘোষণা হবার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে কেন্দ্র করে একের পর এক আন্দোলন বেগবান করার চেষ্টা যা গড়িয়েছে সুপ্রীমকোর্টের ময়দান পর্যন্ত! পাশাপাশি মহানগরীয় কমিটির মধ্যে চট্টগ্রাম, গাজীপুর,কুমিল্লা,রাজশাহী ও নারায়ণগঞ্জ ছাত্রদলও আন্দোলন,সংগ্রাম গড়ে তুলতে নানাভাবে শোডাউন চালিয়ে যাচ্ছে।  অন্যদিকে নতুন করে যুবদল কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা হতেই সংগঠনটির দলীয় নেতা-কর্মীর মাঝেও প্রাণের সঞ্চার লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ইতিমধ্যে তারা আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সংগঠনকে চ্যালেঞ্জও জানিয়ে রেখেছে আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে। এদিকে বিএনপির তৃণমূল পর্যায়েও কমিটি গঠন,গোপন বৈঠক ও দলীয় শক্তিবৃদ্ধিতে করণীয় সকল গুছিয়ে নেয়ার পূর্বাবাস পাওয়া যাচ্ছে। বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারাও আর অডিও-ভিডিও বার্তায় ক্ষান্ত নেই তারাও সরকার দলীয় আওয়ামী লীগকে এবার রুখে দেবার জন্য মাঠ পর্যায় নামার হুমকি অব্যাহত রেখেছে যা ইতিমধ্যেই তারা একের পর এক কর্মকান্ডে প্রমাণ দিয়ে যাচ্ছে। তাছাড়া তারা মহানগর, জেলা, উপজেলা, থানা, ইউনিয়ন এমনকি ওয়ার্ড পর্যায়েও তাদের কমিটি অনুমোদন দেয়া অব্যাহত রেখেছে। যা তাদের শক্তি আগের চেয়ে অনেকটা বৃদ্ধি পাবে বলেই আশা রাখে দলটি। তাছাড়া দলটির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী মহল বিদেশেও তাদের লবিস্ট নিয়োগে পিছিয়ে নেই। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দেশের বাহিরে আছে বলে কূটনৈতিক আলোচনা আগের চেয়ে বেশি বেগবান মনে হচ্ছে। যার ফলে বহিঃবিশ্বের নানান মহল থেকে সামনের নির্বাচন যেন সুষ্ঠ,নিরপেক্ষ হয় তার জন্য সরকার দলীয় আওয়ামী লীগের উপর বাড়তি চাপ রয়েছে বলে শুনা যাচ্ছে। তাছাড়া হঠাৎ দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, ম্যানি লন্ডারিং ইস্যূকেও সামনে দাঁড় করিয়ে সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে তৎপর বিএনপি। অন্যদিকে, আওয়ামী লীগ বিএনপি’র হঠাৎ এমন তৎপরতাকে নিশ্চুপে কেন মেনে নিচ্ছে তা বুঝা যাচ্ছে না!
তবে, অনেকেই মনে করছেন এটি একটি রাজনৈতিক কৌশল মাত্র। তবে এটাও সত্য আগের চেয়ে বিএনপিকে বেশি প্রানবন্ত মনে হচ্ছে যা বিগত ১০-১২ বছরে মনে হয়নি।
তাছাড়া, বিএনপির ছাত্র সংগঠন, যুব সংগঠন ও অন্যান্য সংগঠনকেও এতোটা বেগবান লক্ষ্য করা যায়নি দীর্ঘ সময় যাবৎ। অনেক বিজ্ঞ রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও গবেষক মনে করেন, এবার আওয়ামী লীগকে সত্যিকারের কঠিন পরীক্ষা দিতে হবে যা বিগত ১০-১৫ বছর দিতে হয়নি।
মূলত জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি’র সাংগঠনিকভাবে পীঠ দেয়ালে ঠেকে যাওয়ায় তারাও গুড়ে দাঁড়ানোতে মূল সেয়ানা দেখাতে মরিয়া। এমতাবস্থায় সরকার দলীয় আওয়ামী লীগের মনোভাব অনেকটাই পরিবর্তন এনে প্রতিপক্ষকে আয়ত্তে রাখার কৌশল ঢেলে সাজাতে হবে। বিশেষ করে মহানগর ও জেলা আওয়ামী লীগ ও সকল সহযোগী সংগঠনকে চাপে রেখে উপজেলা,থানা এমনকি সম্ভব হলে ওয়ার্ড পর্যায়ের সকল কমিটি নির্বাচনের আগেই নতুন করে গঠন করার প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করতে হবে। এতে তৃণমূলে আওয়ামী লীগসহ সকল সহযোগী সংগঠনের মাঝে নতুন উদ্যম ফিরে আসবে তাছাড়া প্রকৃত নেতৃবৃন্দ, বহিরাগতমুক্ত কমিটি যেন দেয়া হয় সেদিকে সর্বোচ্চ তদারকি করতে হবে। তাছাড়া সরকার দলীয় সকল উন্নয়ন জনসাধারণের মাঝে পৌঁছে দিতে পূর্বের মতো দলীয় নেতা-কর্মীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে তা তুলে ধরে দলের জন্য ভোট প্রত্যাশা করাই হবে অন্যতম কাজ।
তাছাড়া নির্বাচনের পূর্বে কূটনৈতিক তৎপরতা বৃদ্ধি, মন্ত্রী এমপিদের তদারকিতে রাখা যেন তাদের বিরুদ্ধে কোনো প্রকার প্রশ্নবৃদ্ধ কর্মকান্ডের অভিযোগ না উঠে, দলীয় নেতৃবৃন্দ ও সহযোগী সংগঠনের কোনো নেতাকর্মী যেন কোনো প্রকার প্রশ্নবৃদ্ধ কাজে লিপ্ত না হয় বা ক্ষমতার অপব্যবহার না করতে পারেন সেদিকে তীক্ষ্ণ চোখ রাখতে হবে আওয়ামী লীগকে, জোট করার ক্ষেত্রেও দেখাতে হবে ব্যাপক পারদর্শীতা, মনোনয়নের দেবার ক্ষেত্রে জনগনের প্রকৃত সমর্থন আছে এমন নেতাকে বেঁছে নেয়াই হবে আওয়ামী লীগের মূল টার্গেট, নির্বাচনকালীন সময়ে প্রসাশন নির্বরতা কমানো হবে দলের জন্য মঙ্গলজনক, নির্বাচন কমিশনের গতিবিধি বুঝার জন্য প্রয়োজন দক্ষ ও অভিজ্ঞ রাজনৈতিক বিশ্লেষক। উপরোক্ত  সকল বিষয়গুলো ঠিক থাকলেই আওয়ামী লীগের পক্ষে সম্ভব সামনের নির্বাচনী বৈতরণি সফলভাবে পাড় হওয়া।
 আওয়ামী লীগের তৃণমূল ও কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ যদি মনে করেন এবারের নির্বাচন অতি সহজে পাড় পেয়ে তারা পুনরায় সরকার গঠন করবে তা মোটেই ঠিক হবে না! বরং এবারের নির্বাচন সহজসাধ্য হবে না বলেই রাজনৈতিক বিশ্লেষকগণ মনে করেন। তবে, আওয়ামী লীগের সবচেয়ে বড় হাতিয়ার দলীয় প্রধান, বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য নেতৃত্বগুন সম্পূর্ণ নেতা, বাঙ্গালী জাতির জনকের সুযোগ্য কণ্যা, সততা ও সঠিক সময়ে সঠিক সিদান্তের দিকপাল, চার বারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যার সঠিক দিক নির্দেশনায় আওয়ামী লীগ তাদের এবারের বৈতরণিও পাড় পেয়ে যেতে পারেন। তাছাড়া, পদ্মা সেতু, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট, কর্ণফুলী টার্ণেল, বহুমুখী সেতু, মেট্রোরেলসহ যোগাযোগ ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন, মানুষের জীবন-মান উন্নয়ন, রিজার্ভ বৃদ্ধি, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, মোট জিডিপি’র উন্নয়ন, মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি, সামরিক ক্ষেত্রে দেশের অবস্থান উন্নয়ন করণ, বহিঃ বিশ্বে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল ও মধ্যম আয়ের রাষ্ট্র হিসেবে অন্যান্য রাষ্ট্রের রোল মডেল হিসেবে দেশকে প্রতিনিধিত্ব করার মূল দাবিদার আওয়ামী লীগ। এ-ই বিষয়গুলো জনসাধারণকে তুলে ধরে আওয়ামী লীগকে মাঠ পর্যায় মানুষের কাছে যেতে হবে এবং তা বুঝিয়ে দলের জন্য ভোট আদায় করে আনতে হবে। অন্যদিকে জাতীয় নির্বাচনের আগে বিএনপি ও সরকার দলীয় আওয়ামী লীগকে আরও একবার এসিড টেষ্টের সমূক্ষিন হতে হবে আর তা তিন থেকে চারটি সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন জাতীয় নির্বাচনের আগেই অনুষ্ঠিত হবার সম্ভাবনা রয়েছে। যা বিএনপি থেকে আওয়ামী লীগকেই বেশি বেকায়দায় ফেলবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে কোনো কারণে বিএনপি সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে অংশগ্রহন না করলে তা হবে বিএনপির জন্য আত্মহত্যার শ্যামিল! এতে আওয়ামী লীগ সহজেই ভাবমূর্তি অক্ষুণ্ণ রেখে জাতীয় নির্বাচনেও এ-ই প্রভাব বজায় রাখবে সন্দেহ নেই। তাই বৃহৎ দুই দলকেই সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে রাজনৈতিক পারদর্শিতা দেখাতে হবে শতভাগ। তবে আওয়ামীলীগ নেতাদের মাঝে দেশের উন্নয়নের প্রতিচ্ছবি ব্যতীত করোনা পরবর্তীতে কিছুটা হলেও সাংগঠনিক গা ছাড়া মনোভাব, দলীয় সাধারণ সম্পাদকের ভিডিও কনফারেন্সের আধিক্য, সাংগঠনিক নেতৃবৃন্দের ধীরগতি, বিরোধীদলকে সহজেই রুখে দেবার ভাবনা, ব্যক্তি কোন্দল ও ব্যক্তি কোরাম গঠন, মনোনয়ন মনমালিন্য, তৃণমূলে কমিটির হাহাকার দলটিকে সাম্প্রতিক সময়ে কিছুটা হলেও স্থিতিশীল মনে হচ্ছে  অন্যদিকে বিএনপি আগের চেয়ে তুলনামূলক বেশি সাংগঠনিক, কমিটি গঠনে তোড়জোড়, আন্দোলন-সংগ্রামে গতিশীল, তৃনমূলকে ভিন্ন কৌশলে বেগবান করে তুলতে তৎপর হয়ে উঠছে বলেই মনে হচ্ছে। যা সরকার দলীয় আওয়ামী লীগের জন্য সতর্কতা অবলম্বন করাই শ্রেয়।
অর্থাৎ, বিএনপি’র এই তৎপরতা আওয়ামী লীগের জন্য সর্তকবার্তা।
ট্যাগস :
আপডেট : ১০:০৪:০০ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৭ জুন ২০২২
৩২৪ বার পড়া হয়েছে

বিএনপি’র তৎপরতা আওয়ামী লীগে’র জন্য সতর্কবার্তা

আপডেট : ১০:০৪:০০ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৭ জুন ২০২২
আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে বছরের শুরু হতেই বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলার পরিকল্পনার পাশাপাশি কূটনৈতিক তৎপরতা জোরদার করার চেষ্টায় ছিলো বিএনপি। দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতার বাইরে থাকা দলটি নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি করে আসছে। এই দাবি আদায়ে আন্দোলনের পাশাপাশি বিদেশি বন্ধুরাষ্ট্রের সহায়তা প্রয়োজন বলে মনে করছে দলটি। যার পরিপ্রেক্ষিতে সাম্প্রতিক সময়ে সকল সহযোগী সংগঠনের কেন্দ্রীয়,মহানগরীয় কমিটি অনুমোদন দিচ্ছে জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি। কমিটি অনুমোদন দিয়েই ক্ষান্ত থাকেনি দলটি বরং একের পর আন্দোলনে দলকে চাঙ্গা করে তুলার সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাচ্ছেন দলের নীতি নির্ধারণী মহল। একটানা ১৩ বছর দলটি ক্ষমতার বাহিরে থেকে কোনঠাসা প্রায় দলটির দলীয় নেতা-কর্মীগণ হামলা,মামলা মাথায় নিয়েই মরণ কামড় দিতে তৎপর হয়ে উঠেছে এবার। বিগত ১০ বছরের মধ্যে যে সাহসীকতা বিএনপি ও তার সহযোগী সংগঠনগুলো দেখাতে পারেনি সাম্প্রতিক সময়ে তা-ই লক্ষ করা যাচ্ছে দলটির মধ্যে।  বিশেষ করে নব-গঠিত কেন্দ্রীয় ছাত্রদল কমিটি ঘোষণা হবার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে কেন্দ্র করে একের পর এক আন্দোলন বেগবান করার চেষ্টা যা গড়িয়েছে সুপ্রীমকোর্টের ময়দান পর্যন্ত! পাশাপাশি মহানগরীয় কমিটির মধ্যে চট্টগ্রাম, গাজীপুর,কুমিল্লা,রাজশাহী ও নারায়ণগঞ্জ ছাত্রদলও আন্দোলন,সংগ্রাম গড়ে তুলতে নানাভাবে শোডাউন চালিয়ে যাচ্ছে।  অন্যদিকে নতুন করে যুবদল কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা হতেই সংগঠনটির দলীয় নেতা-কর্মীর মাঝেও প্রাণের সঞ্চার লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ইতিমধ্যে তারা আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সংগঠনকে চ্যালেঞ্জও জানিয়ে রেখেছে আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে। এদিকে বিএনপির তৃণমূল পর্যায়েও কমিটি গঠন,গোপন বৈঠক ও দলীয় শক্তিবৃদ্ধিতে করণীয় সকল গুছিয়ে নেয়ার পূর্বাবাস পাওয়া যাচ্ছে। বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারাও আর অডিও-ভিডিও বার্তায় ক্ষান্ত নেই তারাও সরকার দলীয় আওয়ামী লীগকে এবার রুখে দেবার জন্য মাঠ পর্যায় নামার হুমকি অব্যাহত রেখেছে যা ইতিমধ্যেই তারা একের পর এক কর্মকান্ডে প্রমাণ দিয়ে যাচ্ছে। তাছাড়া তারা মহানগর, জেলা, উপজেলা, থানা, ইউনিয়ন এমনকি ওয়ার্ড পর্যায়েও তাদের কমিটি অনুমোদন দেয়া অব্যাহত রেখেছে। যা তাদের শক্তি আগের চেয়ে অনেকটা বৃদ্ধি পাবে বলেই আশা রাখে দলটি। তাছাড়া দলটির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী মহল বিদেশেও তাদের লবিস্ট নিয়োগে পিছিয়ে নেই। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দেশের বাহিরে আছে বলে কূটনৈতিক আলোচনা আগের চেয়ে বেশি বেগবান মনে হচ্ছে। যার ফলে বহিঃবিশ্বের নানান মহল থেকে সামনের নির্বাচন যেন সুষ্ঠ,নিরপেক্ষ হয় তার জন্য সরকার দলীয় আওয়ামী লীগের উপর বাড়তি চাপ রয়েছে বলে শুনা যাচ্ছে। তাছাড়া হঠাৎ দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, ম্যানি লন্ডারিং ইস্যূকেও সামনে দাঁড় করিয়ে সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে তৎপর বিএনপি। অন্যদিকে, আওয়ামী লীগ বিএনপি’র হঠাৎ এমন তৎপরতাকে নিশ্চুপে কেন মেনে নিচ্ছে তা বুঝা যাচ্ছে না!
তবে, অনেকেই মনে করছেন এটি একটি রাজনৈতিক কৌশল মাত্র। তবে এটাও সত্য আগের চেয়ে বিএনপিকে বেশি প্রানবন্ত মনে হচ্ছে যা বিগত ১০-১২ বছরে মনে হয়নি।
তাছাড়া, বিএনপির ছাত্র সংগঠন, যুব সংগঠন ও অন্যান্য সংগঠনকেও এতোটা বেগবান লক্ষ্য করা যায়নি দীর্ঘ সময় যাবৎ। অনেক বিজ্ঞ রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও গবেষক মনে করেন, এবার আওয়ামী লীগকে সত্যিকারের কঠিন পরীক্ষা দিতে হবে যা বিগত ১০-১৫ বছর দিতে হয়নি।
মূলত জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি’র সাংগঠনিকভাবে পীঠ দেয়ালে ঠেকে যাওয়ায় তারাও গুড়ে দাঁড়ানোতে মূল সেয়ানা দেখাতে মরিয়া। এমতাবস্থায় সরকার দলীয় আওয়ামী লীগের মনোভাব অনেকটাই পরিবর্তন এনে প্রতিপক্ষকে আয়ত্তে রাখার কৌশল ঢেলে সাজাতে হবে। বিশেষ করে মহানগর ও জেলা আওয়ামী লীগ ও সকল সহযোগী সংগঠনকে চাপে রেখে উপজেলা,থানা এমনকি সম্ভব হলে ওয়ার্ড পর্যায়ের সকল কমিটি নির্বাচনের আগেই নতুন করে গঠন করার প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করতে হবে। এতে তৃণমূলে আওয়ামী লীগসহ সকল সহযোগী সংগঠনের মাঝে নতুন উদ্যম ফিরে আসবে তাছাড়া প্রকৃত নেতৃবৃন্দ, বহিরাগতমুক্ত কমিটি যেন দেয়া হয় সেদিকে সর্বোচ্চ তদারকি করতে হবে। তাছাড়া সরকার দলীয় সকল উন্নয়ন জনসাধারণের মাঝে পৌঁছে দিতে পূর্বের মতো দলীয় নেতা-কর্মীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে তা তুলে ধরে দলের জন্য ভোট প্রত্যাশা করাই হবে অন্যতম কাজ।
তাছাড়া নির্বাচনের পূর্বে কূটনৈতিক তৎপরতা বৃদ্ধি, মন্ত্রী এমপিদের তদারকিতে রাখা যেন তাদের বিরুদ্ধে কোনো প্রকার প্রশ্নবৃদ্ধ কর্মকান্ডের অভিযোগ না উঠে, দলীয় নেতৃবৃন্দ ও সহযোগী সংগঠনের কোনো নেতাকর্মী যেন কোনো প্রকার প্রশ্নবৃদ্ধ কাজে লিপ্ত না হয় বা ক্ষমতার অপব্যবহার না করতে পারেন সেদিকে তীক্ষ্ণ চোখ রাখতে হবে আওয়ামী লীগকে, জোট করার ক্ষেত্রেও দেখাতে হবে ব্যাপক পারদর্শীতা, মনোনয়নের দেবার ক্ষেত্রে জনগনের প্রকৃত সমর্থন আছে এমন নেতাকে বেঁছে নেয়াই হবে আওয়ামী লীগের মূল টার্গেট, নির্বাচনকালীন সময়ে প্রসাশন নির্বরতা কমানো হবে দলের জন্য মঙ্গলজনক, নির্বাচন কমিশনের গতিবিধি বুঝার জন্য প্রয়োজন দক্ষ ও অভিজ্ঞ রাজনৈতিক বিশ্লেষক। উপরোক্ত  সকল বিষয়গুলো ঠিক থাকলেই আওয়ামী লীগের পক্ষে সম্ভব সামনের নির্বাচনী বৈতরণি সফলভাবে পাড় হওয়া।
 আওয়ামী লীগের তৃণমূল ও কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ যদি মনে করেন এবারের নির্বাচন অতি সহজে পাড় পেয়ে তারা পুনরায় সরকার গঠন করবে তা মোটেই ঠিক হবে না! বরং এবারের নির্বাচন সহজসাধ্য হবে না বলেই রাজনৈতিক বিশ্লেষকগণ মনে করেন। তবে, আওয়ামী লীগের সবচেয়ে বড় হাতিয়ার দলীয় প্রধান, বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য নেতৃত্বগুন সম্পূর্ণ নেতা, বাঙ্গালী জাতির জনকের সুযোগ্য কণ্যা, সততা ও সঠিক সময়ে সঠিক সিদান্তের দিকপাল, চার বারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যার সঠিক দিক নির্দেশনায় আওয়ামী লীগ তাদের এবারের বৈতরণিও পাড় পেয়ে যেতে পারেন। তাছাড়া, পদ্মা সেতু, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট, কর্ণফুলী টার্ণেল, বহুমুখী সেতু, মেট্রোরেলসহ যোগাযোগ ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন, মানুষের জীবন-মান উন্নয়ন, রিজার্ভ বৃদ্ধি, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, মোট জিডিপি’র উন্নয়ন, মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি, সামরিক ক্ষেত্রে দেশের অবস্থান উন্নয়ন করণ, বহিঃ বিশ্বে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল ও মধ্যম আয়ের রাষ্ট্র হিসেবে অন্যান্য রাষ্ট্রের রোল মডেল হিসেবে দেশকে প্রতিনিধিত্ব করার মূল দাবিদার আওয়ামী লীগ। এ-ই বিষয়গুলো জনসাধারণকে তুলে ধরে আওয়ামী লীগকে মাঠ পর্যায় মানুষের কাছে যেতে হবে এবং তা বুঝিয়ে দলের জন্য ভোট আদায় করে আনতে হবে। অন্যদিকে জাতীয় নির্বাচনের আগে বিএনপি ও সরকার দলীয় আওয়ামী লীগকে আরও একবার এসিড টেষ্টের সমূক্ষিন হতে হবে আর তা তিন থেকে চারটি সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন জাতীয় নির্বাচনের আগেই অনুষ্ঠিত হবার সম্ভাবনা রয়েছে। যা বিএনপি থেকে আওয়ামী লীগকেই বেশি বেকায়দায় ফেলবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে কোনো কারণে বিএনপি সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে অংশগ্রহন না করলে তা হবে বিএনপির জন্য আত্মহত্যার শ্যামিল! এতে আওয়ামী লীগ সহজেই ভাবমূর্তি অক্ষুণ্ণ রেখে জাতীয় নির্বাচনেও এ-ই প্রভাব বজায় রাখবে সন্দেহ নেই। তাই বৃহৎ দুই দলকেই সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে রাজনৈতিক পারদর্শিতা দেখাতে হবে শতভাগ। তবে আওয়ামীলীগ নেতাদের মাঝে দেশের উন্নয়নের প্রতিচ্ছবি ব্যতীত করোনা পরবর্তীতে কিছুটা হলেও সাংগঠনিক গা ছাড়া মনোভাব, দলীয় সাধারণ সম্পাদকের ভিডিও কনফারেন্সের আধিক্য, সাংগঠনিক নেতৃবৃন্দের ধীরগতি, বিরোধীদলকে সহজেই রুখে দেবার ভাবনা, ব্যক্তি কোন্দল ও ব্যক্তি কোরাম গঠন, মনোনয়ন মনমালিন্য, তৃণমূলে কমিটির হাহাকার দলটিকে সাম্প্রতিক সময়ে কিছুটা হলেও স্থিতিশীল মনে হচ্ছে  অন্যদিকে বিএনপি আগের চেয়ে তুলনামূলক বেশি সাংগঠনিক, কমিটি গঠনে তোড়জোড়, আন্দোলন-সংগ্রামে গতিশীল, তৃনমূলকে ভিন্ন কৌশলে বেগবান করে তুলতে তৎপর হয়ে উঠছে বলেই মনে হচ্ছে। যা সরকার দলীয় আওয়ামী লীগের জন্য সতর্কতা অবলম্বন করাই শ্রেয়।
অর্থাৎ, বিএনপি’র এই তৎপরতা আওয়ামী লীগের জন্য সর্তকবার্তা।