০৯:১৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

বিজ্ঞপ্তি

বিভিন্ন অনুষ্ঠান উদযাপনের নামে আমরা এগুলা করছিটা কী ?

মো. ছাব্বির হোসাইন
বিভিন্ন অনুষ্ঠান, নববর্ষ ও খেলাধুলার নামে দেশে এ বিশৃঙ্খলার অবসান হবে কবে ? অনুষ্ঠান পালন করেন, নববর্ষ উদযাপন করেন, খেলা দেখেন ভালো কথা তবে সারারাত ধরে উচ্চস্বরে গানবাজনা, আতশবাজি, ফানুস উড়ানো এগুলা কোন ধরনের উদযাপনের দৃশ্য ? একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত উদযাপন করা ঠিক আছে। যেমন নববর্ষে রাত ১২টায় বাজি ফুটান, ১২টা পর্যন্ত গানবাজনা করেন। আর শহরের আকাশে তো ফানুসে আলোকিত হয়ে যায়। এই ফানুস উড়াতে গিয়ে দেশের কতো স্থানে আগুন ধরেছে, কতো মানুষের জীবন ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে, হাজার হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে, বিদ্যুতের তারে লেগে মারাত্মক বিষ্ফোরণ হয়েছে এর খবর রেখেছেন ? পশুপাখিদের খবর রেখেছেন ? ওহ্ ভালো কথা, আমরা তো মানুষের খবরই রাখি না, আর পশুপাখিদের! ফেসবুকে দেখলাম একটি মেয়ে রাতে লাইভে গিয়ে একটি কুকুরকে দেখাচ্ছে, কুকুরটা কতটা আতঙ্কিত, ভয়ে সে দরজার সামনে চলে আসছে, কুকুরটির শরীর কাঁপছে! আহ্, আমরা কতটা অমানবিক! এটা দেখে জাহানারা ইমামের লেখা ‘একাত্তরের দিনগুলি’-এর মিকি নামের পোষা কুকুরটির কথা মনে পড়ে গেলো ! আমার আপনার ফোটানো এই বাজির শব্দে এরা আতঙ্কিত হয়ে পড়ে, নানাদিক ছোটাছুটি করে। আপনার আমার যেমন স্বাধীনতা আছে, পশুপাখিদেরও এ পৃথিবীতে সুন্দরভাবে বেঁচে থাকার স্বাধীনতা আছে।
মনে আছে ৪ বছরের ছোট্ট শিশু তানজীমের কথা ?
থার্টি ফার্স্ট নাইটের রাতে তানজীমও মনের আনন্দে খেলছিলো। রাত তখন প্রায় পৌনে বারোটা। হঠাৎ শহরজুড়ে শুরু হলো আতশবাজি আর পটকার বিকট শব্দ। হাসিখুশী তানজীমের চেহারা বদলে গেলো মুহূর্তের মধ্যে। প্রতিটা বিকট আওয়াজে প্রচন্ডভাবে কেঁপে উঠছিলো ওর দেহ। কাঁদতে কাঁদতে গলা শুকিয়ে গেলো ওর। আতঙ্কে চোখগুলো যেন বেরিয়ে আসছিলো। শ্বাসকষ্ট শুরু হলো। যদিও তার আর্তনাদগুলো আতশবাজি আর পটকার শব্দের কাছে অসহায় আত্মসমর্পণ করেছিলো। কোনোমতে রাতটা কাটিয়ে ভোরেই তাঁকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। বিকেলে ডাক্তার বললেন, হার্টফেল করে ছোট্ট তানজীম উমায়ের আল্লাহর কাছে চলে গিয়েছে।
ফুটবল বিশ্বকাপ উন্মাদনায় বিভোর জাতি যখন উত্তাল, ঠিক তখনই এক বৃদ্ধের বাড়িতে নেমে এসেছিলো শোকের ছায়া। ফানুসের আগুন তারে লেগে মারাত্মক বিষ্ফোরণ হয়ে সারারাত বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়েছিল রাজধানীর কয়েকটি এলাকা।
পটকা আর আতশবাজির শব্দে কেউ কষ্ট পেলে বা মারা গেলে কী বা আসে যায় এমনটা হয়ে পড়েছে বিষয়টা! দেশে আজ প্রতিটি ঘরেই হার্টের রোগী রয়েছে, সারারাত ঘুম না আসায়, ঘুমের ঔষধ খেয়ে ঘুমাতে হয় এমন রোগীর সংখ্যাও নেহাত কম নয়। তবে যেদিন নিজ আত্মীয়ের মধ্যে কোন একজনকে নিয়ে সমস্যায় পড়বেন তখন বুঝবেন এর মজা।
তাই আসুন আমরা সচেতন হই, মানবিক হই!
ট্যাগস :
আপডেট : ০৭:০০:৪৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ১ জানুয়ারী ২০২৩
১৯১৭ বার পড়া হয়েছে

বিভিন্ন অনুষ্ঠান উদযাপনের নামে আমরা এগুলা করছিটা কী ?

আপডেট : ০৭:০০:৪৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ১ জানুয়ারী ২০২৩
বিভিন্ন অনুষ্ঠান, নববর্ষ ও খেলাধুলার নামে দেশে এ বিশৃঙ্খলার অবসান হবে কবে ? অনুষ্ঠান পালন করেন, নববর্ষ উদযাপন করেন, খেলা দেখেন ভালো কথা তবে সারারাত ধরে উচ্চস্বরে গানবাজনা, আতশবাজি, ফানুস উড়ানো এগুলা কোন ধরনের উদযাপনের দৃশ্য ? একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত উদযাপন করা ঠিক আছে। যেমন নববর্ষে রাত ১২টায় বাজি ফুটান, ১২টা পর্যন্ত গানবাজনা করেন। আর শহরের আকাশে তো ফানুসে আলোকিত হয়ে যায়। এই ফানুস উড়াতে গিয়ে দেশের কতো স্থানে আগুন ধরেছে, কতো মানুষের জীবন ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে, হাজার হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে, বিদ্যুতের তারে লেগে মারাত্মক বিষ্ফোরণ হয়েছে এর খবর রেখেছেন ? পশুপাখিদের খবর রেখেছেন ? ওহ্ ভালো কথা, আমরা তো মানুষের খবরই রাখি না, আর পশুপাখিদের! ফেসবুকে দেখলাম একটি মেয়ে রাতে লাইভে গিয়ে একটি কুকুরকে দেখাচ্ছে, কুকুরটা কতটা আতঙ্কিত, ভয়ে সে দরজার সামনে চলে আসছে, কুকুরটির শরীর কাঁপছে! আহ্, আমরা কতটা অমানবিক! এটা দেখে জাহানারা ইমামের লেখা ‘একাত্তরের দিনগুলি’-এর মিকি নামের পোষা কুকুরটির কথা মনে পড়ে গেলো ! আমার আপনার ফোটানো এই বাজির শব্দে এরা আতঙ্কিত হয়ে পড়ে, নানাদিক ছোটাছুটি করে। আপনার আমার যেমন স্বাধীনতা আছে, পশুপাখিদেরও এ পৃথিবীতে সুন্দরভাবে বেঁচে থাকার স্বাধীনতা আছে।
মনে আছে ৪ বছরের ছোট্ট শিশু তানজীমের কথা ?
থার্টি ফার্স্ট নাইটের রাতে তানজীমও মনের আনন্দে খেলছিলো। রাত তখন প্রায় পৌনে বারোটা। হঠাৎ শহরজুড়ে শুরু হলো আতশবাজি আর পটকার বিকট শব্দ। হাসিখুশী তানজীমের চেহারা বদলে গেলো মুহূর্তের মধ্যে। প্রতিটা বিকট আওয়াজে প্রচন্ডভাবে কেঁপে উঠছিলো ওর দেহ। কাঁদতে কাঁদতে গলা শুকিয়ে গেলো ওর। আতঙ্কে চোখগুলো যেন বেরিয়ে আসছিলো। শ্বাসকষ্ট শুরু হলো। যদিও তার আর্তনাদগুলো আতশবাজি আর পটকার শব্দের কাছে অসহায় আত্মসমর্পণ করেছিলো। কোনোমতে রাতটা কাটিয়ে ভোরেই তাঁকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। বিকেলে ডাক্তার বললেন, হার্টফেল করে ছোট্ট তানজীম উমায়ের আল্লাহর কাছে চলে গিয়েছে।
ফুটবল বিশ্বকাপ উন্মাদনায় বিভোর জাতি যখন উত্তাল, ঠিক তখনই এক বৃদ্ধের বাড়িতে নেমে এসেছিলো শোকের ছায়া। ফানুসের আগুন তারে লেগে মারাত্মক বিষ্ফোরণ হয়ে সারারাত বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়েছিল রাজধানীর কয়েকটি এলাকা।
পটকা আর আতশবাজির শব্দে কেউ কষ্ট পেলে বা মারা গেলে কী বা আসে যায় এমনটা হয়ে পড়েছে বিষয়টা! দেশে আজ প্রতিটি ঘরেই হার্টের রোগী রয়েছে, সারারাত ঘুম না আসায়, ঘুমের ঔষধ খেয়ে ঘুমাতে হয় এমন রোগীর সংখ্যাও নেহাত কম নয়। তবে যেদিন নিজ আত্মীয়ের মধ্যে কোন একজনকে নিয়ে সমস্যায় পড়বেন তখন বুঝবেন এর মজা।
তাই আসুন আমরা সচেতন হই, মানবিক হই!