০৮:২৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বিজ্ঞপ্তি

যুবলীগ নেতা জেম হত্যা মামলায় আসামি ৪৮, গ্রেপ্তার ১৪, তিন দিনের রিমান্ডে পাঁচজন

প্রতিনিধির নাম

চাঁপাইনবাবগঞ্জে যুবলীগের সাবেক সহ-শ্রমবিষয়ক সম্পাদক এবং শিবগঞ্জ পৌরসভার ৯নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর খাইরুল আলম জেমকে হত্যার ঘটনায় সদর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। নিহতের বড়ভাই মো. মনিরুল ইসলাম বাদী হয়ে ৪৮ জনের নাম উল্লেখসহ আরো ১৫ থেকে ২০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে। গত ২২ এপ্রিল তিনি মামলাটি দায়ের করেন। এ মামলায় মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত ১৪ জনকে গ্রেপ্তার এবং হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত তিনটি মোটরসাইকেল উদ্ধার করেছে পুলিশ।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, জেম হত্যা মামলায় ১ নম্বরে মো. মোখলেসুর রহমান, ২ নম্বরে সামিউল হক লিটন ও ৩ নম্বরে মেসবাউল হক টুটুলসহ ৪৮ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।
গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর এলাকার মিলকি বাগানপাড়ার মো. আলতাব হোসেনের ছেলে মো. মেসবাউল হক টুটুল (৪২), মসিজদপাড়া মহল্লার মৃত মোয়াজ্জেম হোসেনের ছেলে মো. মাসুদ রানা ওরফে রানা (৩৮), একই মহল্লার মৃত আনোয়ার হোসেনের ছেলে মো. ইব্রাহিম ওরফে দাউদ ইব্রাহিম ওরফে হাবা (৩২), হুজরাপুর রেলবাগান মহল্লার মো. রিয়াজ উদ্দিনের ছেলে মো. শামীম রেজা (৩৫), প্রান্তিকপাড়া মহল্লার মো. সানাউল হকের ছেলে মো. মিলন হোসেন (৩০)কে গত রবিবার দেশের দূরবর্তী একটি জেলা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গত সোমবার বেলা সোয়া ১১টায় পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে এক জরুরি প্রেস ব্রিফিংয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জের পুলিশ সুপার এএইচএম আবদুর রকিব এই তথ্য জানান।
এই হত্যাকা-ে জড়িত অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে জানিয়ে পুলিশ সুপার বলেন, জেলাশহরের উদয়ন মোড় নামক স্থানে গত ১৯ এপ্রিল ইফতারের আগে সন্ধ্যা ৬টা ২০ মিনিটে কতিপয় দুর্বৃত্ত খাইরুল আলম জেমের শরীরের বিভিন্ন স্থানে ছুরিকাঘাত করে। পরে আহত অবস্থায় তাকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এরপর দায়িত্বরত চিকিৎসক রাত সাড়ে ৮টায় চিকিৎসারত অবস্থায় তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় গত ২২ এপ্রিল শনিবার সদর মডেল থানায় খাইরুল ইসলাম জেমের বড়ভাই মনিরুল ইসলাম বাদী হয়ে হত্যা মামলা দায়ের করেন।
পুলিশ সুপার বলেন, ঘটনার পর থেকেই হত্যাকা-ের সঙ্গে জড়িত অপরাধীদের গ্রেপ্তারে থানা পুলিশ ও গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের সমন্বয়ে যৌথ অভিযান পরিচালনা করা হয়। একপর্যায়ে গোয়েন্দা তথ্য ও তথ্যপ্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে দেশের দূরবর্তী একটি জেলা থেকে এই হত্যাকা-ের দলনেতা মেসবাউল হক টুটুলসহ এই ৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদেরকে আদালতে হাজির করে রিমান্ড চাওয়া হবে এবং রিমান্ড পেলে জিজ্ঞাসাবাদে অনেক তথ্য বেরিয়ে আসতে পারে।
এদিকে মঙ্গলবার দুপুরে সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. সাজ্জাদ হোসেন বলেন, এই পাঁচজনকে আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ড চাওয়া হলে বিজ্ঞ আদালত তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন। এছাড়া অন্যদেরও রিমান্ডে নেয়ার জন্য আদালতে আবেদন করা হবে বলে তিনি জানান।
এদিকে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে পুলিশ জানায়, জেম হত্যা মামলায় আরো ৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তারা হলেন- জেলাশহরের হুজরাপুর কাজীপাড়ার মো. মিলন ওরফে বেলাল হোসেন (৩৫) ও সাজু ইসলাম (২৮), হুজরাপুর রেলবাজার এলাকার নিতাই চৌধুরী (৪৫), সদর উপজেলার বেহুলা এলাকার মো. রানা ওরফে ছোট রানা (৩০) এবং ইসলামপুর বড়ইন্দারা মোড় এলাকার মো. নুর আলম ওরফে আলম (৩২)।
প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে আরো জানানো হয়, রাজশাহী জেলার গোদাগাড়ী উপজেলার রেলবাজার গ্রাম থেকে সোমবার রাতে হত্যাকা-ে ব্যবহৃত তিনটি মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়।
এর আগে আরো চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরা হলেন- মো. রুনু, মো. রোকনুজ্জামান, রনি ও মেরাজ আলী। এদের মধ্যে তিনজন সন্দেহভাজন এবং একজন এজাহারভুক্ত বলে জানান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবুল কালাম সাহিদ।
প্রসঙ্গত, খাইরুল আলম জেমকে হত্যার পর দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ-উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। ঘটনার পরদিন হত্যার প্রতিবাদে জেমের মরদেহ নিয়ে শহরে বিক্ষোভ মিছিল ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
এদিকে গত সোমবার প্রেস ব্রিফিংয়ে এই এপ্রিলে ঘটে যাওয়া অন্যান্য হত্যাকাণ্ডসহ জেলার সার্বিক আইনশৃঙ্খলার অবনতির বিষয়টি উঠে আসে। এই সময় পুলিশ সুপর বলেন- শুধুমাত্র হত্যাকাণ্ড দিয়ে আইন-শৃঙ্খলার অবনতি হয়েছে এমনটা বলা যাবে না। অল্প দিনের ব্যবধানে হত্যাকা-গুলো ঘটেছে বলে এমনটা (অবনতি) মনে হচ্ছে।

ট্যাগস :
আপডেট : ০৭:৩৮:০৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৩
৮৭ বার পড়া হয়েছে

যুবলীগ নেতা জেম হত্যা মামলায় আসামি ৪৮, গ্রেপ্তার ১৪, তিন দিনের রিমান্ডে পাঁচজন

আপডেট : ০৭:৩৮:০৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৩

চাঁপাইনবাবগঞ্জে যুবলীগের সাবেক সহ-শ্রমবিষয়ক সম্পাদক এবং শিবগঞ্জ পৌরসভার ৯নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর খাইরুল আলম জেমকে হত্যার ঘটনায় সদর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। নিহতের বড়ভাই মো. মনিরুল ইসলাম বাদী হয়ে ৪৮ জনের নাম উল্লেখসহ আরো ১৫ থেকে ২০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে। গত ২২ এপ্রিল তিনি মামলাটি দায়ের করেন। এ মামলায় মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত ১৪ জনকে গ্রেপ্তার এবং হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত তিনটি মোটরসাইকেল উদ্ধার করেছে পুলিশ।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, জেম হত্যা মামলায় ১ নম্বরে মো. মোখলেসুর রহমান, ২ নম্বরে সামিউল হক লিটন ও ৩ নম্বরে মেসবাউল হক টুটুলসহ ৪৮ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।
গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর এলাকার মিলকি বাগানপাড়ার মো. আলতাব হোসেনের ছেলে মো. মেসবাউল হক টুটুল (৪২), মসিজদপাড়া মহল্লার মৃত মোয়াজ্জেম হোসেনের ছেলে মো. মাসুদ রানা ওরফে রানা (৩৮), একই মহল্লার মৃত আনোয়ার হোসেনের ছেলে মো. ইব্রাহিম ওরফে দাউদ ইব্রাহিম ওরফে হাবা (৩২), হুজরাপুর রেলবাগান মহল্লার মো. রিয়াজ উদ্দিনের ছেলে মো. শামীম রেজা (৩৫), প্রান্তিকপাড়া মহল্লার মো. সানাউল হকের ছেলে মো. মিলন হোসেন (৩০)কে গত রবিবার দেশের দূরবর্তী একটি জেলা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গত সোমবার বেলা সোয়া ১১টায় পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে এক জরুরি প্রেস ব্রিফিংয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জের পুলিশ সুপার এএইচএম আবদুর রকিব এই তথ্য জানান।
এই হত্যাকা-ে জড়িত অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে জানিয়ে পুলিশ সুপার বলেন, জেলাশহরের উদয়ন মোড় নামক স্থানে গত ১৯ এপ্রিল ইফতারের আগে সন্ধ্যা ৬টা ২০ মিনিটে কতিপয় দুর্বৃত্ত খাইরুল আলম জেমের শরীরের বিভিন্ন স্থানে ছুরিকাঘাত করে। পরে আহত অবস্থায় তাকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এরপর দায়িত্বরত চিকিৎসক রাত সাড়ে ৮টায় চিকিৎসারত অবস্থায় তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় গত ২২ এপ্রিল শনিবার সদর মডেল থানায় খাইরুল ইসলাম জেমের বড়ভাই মনিরুল ইসলাম বাদী হয়ে হত্যা মামলা দায়ের করেন।
পুলিশ সুপার বলেন, ঘটনার পর থেকেই হত্যাকা-ের সঙ্গে জড়িত অপরাধীদের গ্রেপ্তারে থানা পুলিশ ও গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের সমন্বয়ে যৌথ অভিযান পরিচালনা করা হয়। একপর্যায়ে গোয়েন্দা তথ্য ও তথ্যপ্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে দেশের দূরবর্তী একটি জেলা থেকে এই হত্যাকা-ের দলনেতা মেসবাউল হক টুটুলসহ এই ৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদেরকে আদালতে হাজির করে রিমান্ড চাওয়া হবে এবং রিমান্ড পেলে জিজ্ঞাসাবাদে অনেক তথ্য বেরিয়ে আসতে পারে।
এদিকে মঙ্গলবার দুপুরে সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. সাজ্জাদ হোসেন বলেন, এই পাঁচজনকে আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ড চাওয়া হলে বিজ্ঞ আদালত তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন। এছাড়া অন্যদেরও রিমান্ডে নেয়ার জন্য আদালতে আবেদন করা হবে বলে তিনি জানান।
এদিকে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে পুলিশ জানায়, জেম হত্যা মামলায় আরো ৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তারা হলেন- জেলাশহরের হুজরাপুর কাজীপাড়ার মো. মিলন ওরফে বেলাল হোসেন (৩৫) ও সাজু ইসলাম (২৮), হুজরাপুর রেলবাজার এলাকার নিতাই চৌধুরী (৪৫), সদর উপজেলার বেহুলা এলাকার মো. রানা ওরফে ছোট রানা (৩০) এবং ইসলামপুর বড়ইন্দারা মোড় এলাকার মো. নুর আলম ওরফে আলম (৩২)।
প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে আরো জানানো হয়, রাজশাহী জেলার গোদাগাড়ী উপজেলার রেলবাজার গ্রাম থেকে সোমবার রাতে হত্যাকা-ে ব্যবহৃত তিনটি মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়।
এর আগে আরো চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরা হলেন- মো. রুনু, মো. রোকনুজ্জামান, রনি ও মেরাজ আলী। এদের মধ্যে তিনজন সন্দেহভাজন এবং একজন এজাহারভুক্ত বলে জানান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবুল কালাম সাহিদ।
প্রসঙ্গত, খাইরুল আলম জেমকে হত্যার পর দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ-উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। ঘটনার পরদিন হত্যার প্রতিবাদে জেমের মরদেহ নিয়ে শহরে বিক্ষোভ মিছিল ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
এদিকে গত সোমবার প্রেস ব্রিফিংয়ে এই এপ্রিলে ঘটে যাওয়া অন্যান্য হত্যাকাণ্ডসহ জেলার সার্বিক আইনশৃঙ্খলার অবনতির বিষয়টি উঠে আসে। এই সময় পুলিশ সুপর বলেন- শুধুমাত্র হত্যাকাণ্ড দিয়ে আইন-শৃঙ্খলার অবনতি হয়েছে এমনটা বলা যাবে না। অল্প দিনের ব্যবধানে হত্যাকা-গুলো ঘটেছে বলে এমনটা (অবনতি) মনে হচ্ছে।