০৬:৩৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বিজ্ঞপ্তি

সরকারি পলিটেকনিকেলের ৭৭৭ জন শিক্ষক দীর্ঘ ৩৪ মাস যাবত বেতন পাচ্ছে না

প্রতিনিধির নাম

বাংলাদেশ পলিটেকনিক টিচার্স ফেডারেশন ও আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান,কারিগরি শাখার যৌথভাবে আয়োজিত শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে যোগ দেয়া শিক্ষকবৃন্দ রবিবার এ অভিযোগ করেন।
আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান, কারিগরি শাখার সভাপতি মো. সুমন হায়দার জানান, তারা সবাই সরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষক। নিয়মিত ছাত্রদের পাঠদানে রয়েছেন। প্রতিষ্ঠানেও আসছেন নিয়মিত। কিন্তু টানা ৩৪ মাস বেতন নেই তাদের।এমন শিক্ষক রয়েছেন ৭৭৭ জন। আর এই বেতনের জন্য তারা বিভিন্ন পদস্থ কর্মকর্তার দ্বারে দ্বারে এদিক থেকে ওদিক ঘুরছেন।

কারিগরি শিক্ষার হার বাড়ানোর লক্ষ্যে স্কিলস অ্যান্ড ট্রেনিং এনহ্যান্সমেন্ট (স্টেপ) প্রজেক্ট প্রকল্পের মাধ্যমে ১ হাজার ১৫ জনকে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। প্রকল্পের মেয়াদ শেষে হলেও রাজস্ব খাতে স্থানান্তরের প্রক্রিয়ায় ধীরগতির কারণে এসব শিক্ষক দীর্ঘ সময় ধরে কোনো বেতন-ভাতা পাচ্ছেন না।
দ্রুত বকেয়া বেতন-ভাতা প্রদান এবং চাকরি দ্রুত রাজস্ব খাতে আত্তীকরণের দাবিতে আগামী ৩০ এপ্রিল থেকে কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের সামনে শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট এর শিক্ষকেরা।

খুলনা পলিটেকনিক ইনষ্টিউট থেকে আসা মরিয়ম আক্তার নামের এক শিক্ষিকা বলেন, ‘২০২০ সালের জুলাই থেকে চলতি এপ্রিল পর্যন্ত ৩৪ মাস যাবত ৭৭৭ জন শিক্ষক বেতন-ভাতা না পেয়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে চরম অর্থকষ্টে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। বেতন বন্ধ থাকায় আমাদের কয়েক জন সহকর্মী টাকার অভাবে সঠিক সময়ে চিকিৎসা না করাতে পেরে মারাও গেছেন। আরও বহু সহকর্মী মানসিক ও শারীরিক অসুস্থতা নিয়ে জীবন অতিবাহিত করছেন। বেতন-ভাতা সঠিক সময়ে পাওয়া গেলে হয়তো এসব পরিস্থিতি থেকে বের হওয়া সম্ভব হত।

প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, কারিগরি শিক্ষার মান উন্নয়নে সরকারি ৪৯টি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের মানোন্নয়ন ও শিক্ষকস্বল্পতা দূরীকরণের লক্ষ্যে ২০১০ সালের জুলাই মাসে স্টেপ প্রকল্প গ্রহণ করেন এবং দুই ধাপে বাড়িয়ে ধারাবাহিকভাবে ২০১৯ সালের জুন পর্যন্ত এই প্রকল্প চলমান থাকে।
প্রকল্পের আওতায় নিয়োগ প্রক্রিয়ায় দুই ধাপে ১ হাজার ১৫ জন শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়। এর মধ্যে বর্তমানে কর্মরত রয়েছেন ৭৭৭ জন। ১১ বছরের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন শিক্ষকদের ৪৯টি সরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে পদায়ন দেওয়া হয়।

প্রকল্প শেষ হলে কারিগরি শিক্ষার উন্নয়নে এই প্রকল্পের শিক্ষকদের অবদান ও প্রয়োজনীয়তা বিবেচনায় নিয়ে প্রকল্প শেষে শিক্ষকদের চাকরি রাজস্ব খাতে স্থানান্তরের প্রস্তাব প্রধানমন্ত্রী ২০২১ সালের ২২ মে অনুমোদন করেন। প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদিত অনুশাসনের আলোকে ২০১৯ সালের ৩০ জুন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ প্রকল্পে নিয়োজিত/কর্মরত শিক্ষকদের সাময়িকভাবে বহাল রেখে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করার জন্য প্রজ্ঞাপন জারি করেন।
প্রজ্ঞাপনের আলোকে ৪৯টি পলিটেকনিকের সব কার্যক্রম অদ্যাবধি যথাযথভাবে পালন করে আসছেন তারা। প্রকল্পের মেয়াদ শেষে ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে সরকারের থোক বরাদ্দ খাত থেকে ৭৮৬ জন শিক্ষকের বেতন-ভাতাও পরিশোধ করা হয়। কিন্তু এরপর থেকে আর কোন বেতন-ভাতা দেওয়া হচ্ছে না।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক অনুমোদিত সারসংক্ষেপ অনুসরণ করে স্টেপ শীর্ষক সমাপ্ত প্রকল্প থেকে রাজস্ব খাতে প্রক্রিয়াধীন ৭৭৭ জন শিক্ষককে চাকরি রাজস্ব খাতে স্থানান্তর সম্ভব কি না, সে বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ২০২২ সালের ১৯ মে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা অনুষ্ঠিত হয়।
আইন মন্ত্রণালয়ও এ বিষয়ে ইতিবাচক মতামত দিয়েছে। কিন্তু আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় এই কাজ চলছে খুবই ধীরগতিতে। আর এতেই বেতন-ভাতা থেকে বঞ্চিত রয়েছেন শিক্ষকরা।তারা বেতন ভাতা না পাওয়া পর্যন্ত তাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচী অব্যাহত থাকবে।

ট্যাগস :
আপডেট : ১১:০৩:৩৯ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৮ মে ২০২৩
৯৫ বার পড়া হয়েছে

সরকারি পলিটেকনিকেলের ৭৭৭ জন শিক্ষক দীর্ঘ ৩৪ মাস যাবত বেতন পাচ্ছে না

আপডেট : ১১:০৩:৩৯ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৮ মে ২০২৩

বাংলাদেশ পলিটেকনিক টিচার্স ফেডারেশন ও আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান,কারিগরি শাখার যৌথভাবে আয়োজিত শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে যোগ দেয়া শিক্ষকবৃন্দ রবিবার এ অভিযোগ করেন।
আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান, কারিগরি শাখার সভাপতি মো. সুমন হায়দার জানান, তারা সবাই সরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষক। নিয়মিত ছাত্রদের পাঠদানে রয়েছেন। প্রতিষ্ঠানেও আসছেন নিয়মিত। কিন্তু টানা ৩৪ মাস বেতন নেই তাদের।এমন শিক্ষক রয়েছেন ৭৭৭ জন। আর এই বেতনের জন্য তারা বিভিন্ন পদস্থ কর্মকর্তার দ্বারে দ্বারে এদিক থেকে ওদিক ঘুরছেন।

কারিগরি শিক্ষার হার বাড়ানোর লক্ষ্যে স্কিলস অ্যান্ড ট্রেনিং এনহ্যান্সমেন্ট (স্টেপ) প্রজেক্ট প্রকল্পের মাধ্যমে ১ হাজার ১৫ জনকে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। প্রকল্পের মেয়াদ শেষে হলেও রাজস্ব খাতে স্থানান্তরের প্রক্রিয়ায় ধীরগতির কারণে এসব শিক্ষক দীর্ঘ সময় ধরে কোনো বেতন-ভাতা পাচ্ছেন না।
দ্রুত বকেয়া বেতন-ভাতা প্রদান এবং চাকরি দ্রুত রাজস্ব খাতে আত্তীকরণের দাবিতে আগামী ৩০ এপ্রিল থেকে কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের সামনে শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট এর শিক্ষকেরা।

খুলনা পলিটেকনিক ইনষ্টিউট থেকে আসা মরিয়ম আক্তার নামের এক শিক্ষিকা বলেন, ‘২০২০ সালের জুলাই থেকে চলতি এপ্রিল পর্যন্ত ৩৪ মাস যাবত ৭৭৭ জন শিক্ষক বেতন-ভাতা না পেয়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে চরম অর্থকষ্টে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। বেতন বন্ধ থাকায় আমাদের কয়েক জন সহকর্মী টাকার অভাবে সঠিক সময়ে চিকিৎসা না করাতে পেরে মারাও গেছেন। আরও বহু সহকর্মী মানসিক ও শারীরিক অসুস্থতা নিয়ে জীবন অতিবাহিত করছেন। বেতন-ভাতা সঠিক সময়ে পাওয়া গেলে হয়তো এসব পরিস্থিতি থেকে বের হওয়া সম্ভব হত।

প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, কারিগরি শিক্ষার মান উন্নয়নে সরকারি ৪৯টি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের মানোন্নয়ন ও শিক্ষকস্বল্পতা দূরীকরণের লক্ষ্যে ২০১০ সালের জুলাই মাসে স্টেপ প্রকল্প গ্রহণ করেন এবং দুই ধাপে বাড়িয়ে ধারাবাহিকভাবে ২০১৯ সালের জুন পর্যন্ত এই প্রকল্প চলমান থাকে।
প্রকল্পের আওতায় নিয়োগ প্রক্রিয়ায় দুই ধাপে ১ হাজার ১৫ জন শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়। এর মধ্যে বর্তমানে কর্মরত রয়েছেন ৭৭৭ জন। ১১ বছরের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন শিক্ষকদের ৪৯টি সরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে পদায়ন দেওয়া হয়।

প্রকল্প শেষ হলে কারিগরি শিক্ষার উন্নয়নে এই প্রকল্পের শিক্ষকদের অবদান ও প্রয়োজনীয়তা বিবেচনায় নিয়ে প্রকল্প শেষে শিক্ষকদের চাকরি রাজস্ব খাতে স্থানান্তরের প্রস্তাব প্রধানমন্ত্রী ২০২১ সালের ২২ মে অনুমোদন করেন। প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদিত অনুশাসনের আলোকে ২০১৯ সালের ৩০ জুন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ প্রকল্পে নিয়োজিত/কর্মরত শিক্ষকদের সাময়িকভাবে বহাল রেখে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করার জন্য প্রজ্ঞাপন জারি করেন।
প্রজ্ঞাপনের আলোকে ৪৯টি পলিটেকনিকের সব কার্যক্রম অদ্যাবধি যথাযথভাবে পালন করে আসছেন তারা। প্রকল্পের মেয়াদ শেষে ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে সরকারের থোক বরাদ্দ খাত থেকে ৭৮৬ জন শিক্ষকের বেতন-ভাতাও পরিশোধ করা হয়। কিন্তু এরপর থেকে আর কোন বেতন-ভাতা দেওয়া হচ্ছে না।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক অনুমোদিত সারসংক্ষেপ অনুসরণ করে স্টেপ শীর্ষক সমাপ্ত প্রকল্প থেকে রাজস্ব খাতে প্রক্রিয়াধীন ৭৭৭ জন শিক্ষককে চাকরি রাজস্ব খাতে স্থানান্তর সম্ভব কি না, সে বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ২০২২ সালের ১৯ মে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা অনুষ্ঠিত হয়।
আইন মন্ত্রণালয়ও এ বিষয়ে ইতিবাচক মতামত দিয়েছে। কিন্তু আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় এই কাজ চলছে খুবই ধীরগতিতে। আর এতেই বেতন-ভাতা থেকে বঞ্চিত রয়েছেন শিক্ষকরা।তারা বেতন ভাতা না পাওয়া পর্যন্ত তাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচী অব্যাহত থাকবে।