মাসুদ রানা সরিষাবাড়ী (জামালপুর) প্রতিনিধি :
- মঙ্গলবার ১০ জানুয়ারি, ২০২৩ / ৪১
জামালপুরের সরিষাবাড়ীতে মাঠে মাঠে সরিষার হলুদ রংয়ের সমারোহে কৃষকের মুখে হাসি ফুটে উঠেছে। ষড় ঋতুর এ দেশে ঋতু বদলের সাথে পাল্টে যায় ফসলের মাঠ। ধানের সবুজ মাঠ পরিনত বয়সে সোনালী রং ধারন করে। বোরো ধান কাটা শেষে সরিষা আবাদের জন্য জমি তৈরির কাজ শুরু হয়। প্রতি বছর নভেম্বরের ৭ থেকে ১৫ তারিখের মধ্যে জমিতে সরিষার বীজ ছিটিয়ে দিতে হয়।
দুই সপ্তাহের মধ্য সরিষা গাছে ফুল আসে। তখন সরিষা ক্ষেতের হলুদের সমারোহে কৃষকের মন জুড়িয়ে যায়। এ এক অপরুপ দৃশ্য। নানা বয়সী মানুষ হলুদের এ অপরুপ সৌন্দর্য অবলোকন করতে সরিষা ক্ষেতের পাশে ভীড় জমান। অনেকে সরিষার হলুদ রংয়ে নিজেকে সাজাতে চায়। কেউ সরিষা ক্ষেতের পাশে বসে ছবি তুলতে ভালবাসেন।
সরিষা ফুলের নয়াভিরাম দৃশ্য সকলের মন ছুঁয়ে যায়।
এ বছর উপজেলার ৮টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার অধিকাংশ জমিতে সরিষার আবাদ করা হয়েছে। সরিষার মৌসুমে চরাঞ্চলের চেহারা পাল্টে যায়। চারদিকে হলুদ আর হলুদ। যেন হলুদ রংয়ের মেলা বসেছে। এ সময় হলুদ ফুলে আকৃষ্ট হয়ে মৌ চাষীরা মধু সংগ্রহে জন্য দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এ অঞ্চলে ছুটে আসেন। সরিষা ক্ষেতের পাশে মৌচাক বসিয়ে মধু সংগ্রহ করেন তারা। খাঁটি মধু সংগ্রহ করতে অনেকে মৌ চাষীদের কাছে ছুটে আসেন।
এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় সরিষার বাম্পার ফলনের আশা করছেন স্থানীয় কৃষকরা। প্রতি বিঘা জমিতে সরিষা আবাদে প্রায় ৩ হাজার খরচ হয়। বিঘা প্রতি ৫ মণ সরিষা উৎপন্ন হয়। প্রতি মণ সরিষা ৩ হাজার টাকায় বিক্রি করা যায়। প্রতি বিঘা জমির সরিষা বিক্রি করে কৃষকের ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা লাভ হয়।
সয়াবিন তেলের নির্ভরতা কমাতে সরিষা চাষে জোর দিয়েছে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয়। এ লক্ষ্যে এ বছর ৬ হাজার ৯০০ কৃষককে কৃষি প্রনোদনা দেওয়া হয়। কৃষি প্রনোদনা সরুপ প্রতি কৃষককে ১কেজি করে সরিষা বীজ, ১০কেজি এমওপি সার ও ১০কেজি ডিএপি সার দেওয়া হয়। এ বছর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৬০০ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ বেশী হয়েছে।
উপজেলার কামরাবাদ ইউনিয়নের শুয়াকৈর গ্রামের কৃষক মজনু মিয়া বলেন, এ বছর সরিষা আবাদের জন্য আবহাওয়া খুব ভাল। মাঠে মাঠে হলুদ ফুলে ছেঁয়ে গেছে। মাঠের দিকে তাকালেই মনে ভরে যায়। প্রতি বিঘা জমিতে ৫ মণ সরিষা উৎপন্ন হয়। প্রতি মণ ৩ হাজার টাকায় বিক্রি করা যায় বলেও তিনি জানান।
একই গ্রামের অপর কৃষক আশরাফুল আলম বলেন, প্রতি বিঘা জমিতে সরিষা আবাদ করতে প্রায় ৩ হাজার টাকা খরচ হয়।
বিঘা প্রতি ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা লাভ করা যায়। সরিষা ফুলের মধূ সংগ্রহ করতে দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে মৌ চাষীরা আসেন। সরিষার ফুল ঝরে পড়লে মৌ চাষীরা চলে যায়। বোরো ধান কাটার পর নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে জমিতে সরিষার বীজ ছিটিয়ে দিতে হয়। এর আগে জমির আগাছা নিধন করতে হয়। দুই সপ্তাহ পরে সরিষা গাছে ফুল ধরে। চারদিক হলুদ ফুলে ছেঁয়ে যায়। হলুদ ফুলের শোভা দেখতে অনেকে সরিষা ক্ষেতে ভীড় জমায় বলেও তিনি জানান।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, এ বছর প্রায় ৭ হাজার কৃষককে সরিষা আবাদে কৃষি প্রনোদনা দেওয়া হয়েছে। চলতি মৌসুমে সরিষা আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩ হাজার ৭৫০ হেক্টর। অর্জিত হয়েছে ৪ হাজার ৩৫০ হেক্টর। যা লক্ষ্যমাত্রায় চেয়ে ৬০০ হেক্টর বেশী।
Related