মঙ্গলবার, ০৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৩, ০৮:১৯ পূর্বাহ্ন
গত ২১ জানুয়ারী ২০২৩ তারিখ বাংলাদেশ রেফারেন্স ইনস্টিটিউট ফর কেমিক্যাল মেজারমেন্টস্ (বিআরআইসিএম)-এ রাসায়নিক পরিমাপে আন্তর্জাতিক মান অর্জনঃ বিআরআইসিএমের অভিযাত্রা শীর্ষক একটি সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।
বিআরআইসিএমের মহাপরিচালক ড. মালা খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উক্ত অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব জনাব জিয়াউল হসান এনডিসি এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব জনাব তপন কান্তি ঘোষ । সম্মানিত অতিথি ছিলেন ইউনিলিভার বাংলাদেশের সিইও এন্ড এমডি জনাব জাভেদ আখতার এবং প্রাণ গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জনাব মোঃ ইলিয়াস মৃধা। সেমিনারের মূল প্রতিপাদ্য উপস্থাপন করেন বিআরআইসিএমের প্রতিষ্ঠাতা বিজ্ঞানী এবং মহাপরিচালক ড. মালা খান। তিনি তার বক্তব্যে বিআরআইসিএমের অগ্রযাত্রা, সাফল্য ও অর্জন তুলে ধরেন। তিনি জানান, বিআরআইসিএম দেশে রাসায়নিক পরিমাপে আন্তর্জাতিক মান প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ইন্সট্রুমেন্টেশন ও ক্যালিব্রেশন, প্রফিসিয়েন্সি টেস্টিং (পিটি)/ইন্টার ল্যাবরেটরী কমপেরিজন (আইএলসি), সার্টিফায়েড রেফারেন্স ম্যাটেরিয়ালস (সিআরএম), মেথড ভেলিডেশন, রেফারেন্স মেজারমেন্ট প্রভৃতি সেবা উদ্ভাবন, প্রচার ও প্রদান করে চলেছে। এ পর্যন্ত ৩৯১২ ধরনের রাসায়নিক পরিমাপ সেবা, গবেষণাগার ও শিল্প প্রতিষ্ঠানে ব্যবহৃত ২২ ধরনের এনালাইটিক্যাল যন্ত্রের ক্যালিব্রেশন এবং ডায়াগনস্টিক ল্যাবরেটরি ও হাসপাতালে ব্যবহৃত ৩২ ধরনের মেডিক্যাল যন্ত্রের ক্যালিব্রেশন সেবা-সুবিধা তৈরি করা হয়েছে। ০৭ টি প্রফিসিয়েন্সি টেষ্টিং প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ এবং ৪১ টি প্রফিসিয়েন্সি টেস্টিং প্রোগ্রাম আয়োজন করা হয়েছে। ৩ টি রেফারেন্স ম্যাটেরিয়াল (পিএইচ বাফার, এসিটামিনোফেন, ডাইক্লোফেনাক সোডিয়াম) প্রস্তুতের কাজ সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। টেস্ট রেজাল্টের নির্ভরযোগ্যতা অর্জন, দেশের রাসায়নিক পরীক্ষাগারগুলির পরীক্ষণের মান আন্তর্জাতিকমানে উন্নীতকরণে সহযোগিতা এবং একই টেস্টের পরীক্ষাগারভেদে ভিন্ন ভিন্ন ফলাফল ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে গ্রহণযোগ্যতা না পাওয়া সংক্রান্ত সমস্যা দূর করার লক্ষ্যে বিআরআইসিএম নিরলসভাবে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বিআরইসিএম নিয়মিতভাবে প্রফিসিয়েন্সি টেস্টিং/আইএলসি প্রোগ্রাম আয়োজন করে। এর পাশাপাশি নিজেদের সক্ষমতা প্রমাণে এশিয়া প্যাসিফিক মেট্রোলোজি প্রোগ্রাম (এপিএমপি) কর্তৃক আয়োজিত ইউএসএ, কানাডা, সিংগাপুর, জাপান, চায়না, মালয়েশিয়া, মেক্সিকো, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড প্রভৃতি দেশের সাথে পিটি / আইএলসি প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করে নিজেদের সক্ষমতার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি অর্জন করে।
তিনি উল্লেখ করেন, বিআরআইসিএম যে কেবল আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি অর্জন করেছে তাই নয়, সাথে সাথে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন ও দেশীয় শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোকে আন্তর্জাতিক সেবা প্রদানের মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয়ের সুযোগ সৃষ্টি করেছে। কেমিক্যাল মেট্রোলজিতে দক্ষ মানব সম্পদ উন্নয়নের লক্ষ্যে বিআরআইসিএম নিয়মিতভাবে বিশ্ববিদ্যালয়, গবেষণাগার, শিল্প প্রতিষ্টানের বিজ্ঞানী/কর্মকর্তাদের জন্য বিশেষায়িত প্রশিক্ষণ আয়োজন করে থাকে। মারাত্নক স্বাস্থ্য ঝুঁকি মোকাবিলায় জনগণ ও সরকারকে সহায়তা করার জন্য করোনা প্রতিরোধে বিআরআইসিএম কোভিড-১৯ প্রতিরোধী হ্যান্ডরাব, স্যানিটাইজার উৎপাদন ও বিতরণ, সিডিসি, ইউএসএ- এর ফর্মুলা অনুযায়ী স্পেসিমেন কালেকশন কিট ভাইরাল ট্রান্সপোর্ট মিডিয়া (ভিটিএম) প্রস্তুত, করোনা ভাইরাস ধ্বংসকারী ওরো ন্যাসাল স্প্রে বঙ্গসেফ উৎপাদন, কোভিড-১৯ স্পেসিফিক এন্টিবডি (IgG) নির্ণয় সেবা প্রদান, জিনোম সিকোয়েন্সিং প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছে। তিনি আরও জানান, উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদায় উত্তরণ এবং সেটি টেকসই করার যে অন্যতম পূর্বশর্ত নতুন প্রযুক্তি আত্মস্থকরণ, প্রযুক্তি হস্তান্তর ও নতুন উদ্ভাবনের মাধ্যমে পণ্য উৎপাদনে দেশীয় সক্ষমতা সৃষ্টি ও বিদেশ নির্ভরতা হ্রাস, এই বিষয়গুলো সামনে রেখে বিআরআইসিএম নিরন্তর কাজ করে চলছে। অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ে সিনিয়র সচিব জনাব জিয়াউল হাসান এনডিসি তাঁর বক্তব্যে বিআরআইসিএমের সাফল্য, দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পরিচিতির কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, দেশের উন্নয়নে মেট্রোলজির গুরুত্ব অনুভব করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এই প্রতিষ্ঠান সৃষ্টি করেছেন। বিআরআইসিএম তার লক্ষ্য অর্জনের জন্য দিনরাত পরিশ্রম করে চলেছে এবং উত্তরোত্তর সফলতা লাভ করেছে। অনুষ্ঠানের অন্যতম বিশেষ অথিতি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব জনাব তপন কান্তি ঘোষ বলেন, বর্তমান সরকার জ্ঞানভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠায় নিরলস প্রেচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণে দিন-রাত কাজ করে চলেছেন। তিনি রাসায়নিক পরিমাপে আন্তর্জাতিক মান অর্জনের উপরও গুরুত্ব আরোপ করেন। ইউনিলিভার বাংলাদেশের সিইও এবং এমডি জনাব জাভেদ আখতার বলেন আর্ন্তজাতিক মানসম্মত সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে বিআরআইসিএম এক অনন্য দৃষ্টান্ত। প্রাণ গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জনাব মোঃ ইলিয়াস মৃধা বিআরআইসিএমের সেবাসমূহের ভূয়সী প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, বিআরআইসিএমের সেবা নিয়ে প্রাণ গ্রুপ ১৪৭টি দেশে পণ্য রপ্তানি করে। এ পর্যন্ত তাঁরা কোন সমস্যার সম্মুখীন হননি।