শুক্রবার, ২৭ মে ২০২২, ০৯:২৮ পূর্বাহ্ন
চট্টগ্রাম জেলার সীতাকুন্ড থানাধীন জংগল সলিমপুর এলাকায় মশিউরের আস্তানায় অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধারসহ কয়েকজন চিহ্নত অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীকে আটক করেছে র্যাব-৭, চট্টগ্রাম।
আজ রবিবার ০৬ ফেব্রয়ারি দিবাগত রাত সীতাকুন্ড থানাধীন জংগল সলিমপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করার বিষয়ে র্যাব-৭ ব্যাটালিয়ান সদর দপ্তর,পতেঙ্গায় আজ সকালে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেন র্যাব-৭ অধিনায়ক লেঃ কর্নেল এম এ ইউসুফ।
আটককৃত আসামীরা হলেন, রফিকুল ইসলাম মালু (৪১) ব্রাক্ষনবাড়িয়া নবীনগর থানাধীন চত্তন খোলা এলাকার মৃত শামসুল হকের ছেলে।বর্তমানে চট্টগ্রাম মহানগরীর বায়েজিদ থানাধীন শান্তিনগর এলাকার বাসিন্দা। মোঃ সিরাজুল ইসলাম (৩৪) লালমনিরহাট জেলার পাটগ্রাম থানাধীন উপরামারা মৃত কফিল উদ্দিনের ছেলে। বর্তমানে চট্টগ্রাম জেলার সীতাকুন্ড থানাধীন ১০নং জঙ্গল সলিমপুর এলাকার বাসিন্দা। মোঃ হাসান (৩৫),চাঁদপুর জেলার শাহারাস্তি থানাধীন আহাম্মদ নগর এলাকার আব্দুল মান্নানের ছেলে। বর্তমানে চট্টগ্রাম মহানগরীর বায়েজিদ থানাধীন আলী নগর এলাকার বাসিন্দা ও জামাল শেখ (৪৭) সীতাকুন্ড থানাধীন ১০নং জঙ্গল সলিমপুর এলাকার মৃত মজিদ শেখের ছেলে এবং মিজানুর রহমান কদর(৩৪) বাঁশখালী থানাধীন ছনুুয়া এলাকার আহামদুর রহমান ফারুকীর ছেলে। বর্তমানে সীতাকুন্ড থানাধীন ৪ নং সমাজ, ছিন্নমুল, জঙ্গল ছলিমপুর এলাকার বাসিন্দা।
র্যাব-৭ অধিনায়ক লেঃ কর্নেল এম এ ইউসুফ জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে আমরা জানতে পারি যে, চট্টগ্রাম জেলার সীতাকুন্ড থানাধীন ছিন্নমূল জঙ্গল সলিমপুর এলাকায় শিবলুর সেমিপাকা চিনসেট ঘরে কতিপয় চিহ্নিত দুষ্কৃতিকারী অবস্থান করছে। এমন তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান পরিচালনা করলে র্যাবের উপস্থিতি টের পেয়ে এলোপাথারিভাবে দৌড়ে পালানোর চেস্টা করলে র্যাব সদস্যরা ধাওয়া করে ৫ জনকে আটক করে।
তিনি জানান, গ্রেফতাকৃত আসামীদের নিয়ে অস্ত্র উদ্ধারের ব্যাপক অভিযান চালানো শুরু করতেই মশিউরের ছেলে সন্ত্রাসী শিবলুর নেতৃত্বে একদল অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী র্যাবকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে, লাঠি সোটা ও দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে র্যাবের উপর অতর্কিত আক্রমন করে র্যাবের কর্মকান্ডে বাধা প্রদানসহ গ্রেফতারকৃত আসামীদের ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। একপর্যায়ে সন্ত্রাসীরা র্যাবকে লক্ষ্য করে পাহাড়ী এলাকা থেকে গুলি বর্ষণ শুরু করে। এই পরিস্থিতিতে র্যাবও পাল্টা গুলি ছোড়ে। সন্ত্রাসীরা গুলি করতে করতে দূর্গম পাহাড়ের দিকে পালিয়ে যায়। নিজেদের জীবন ও অস্ত্র ও গোলাবারুদ রক্ষার্থে র্যাবও বিভিন্ন অস্ত্র দ্বারা ১২৯ রাউন্ড গুলি বর্ষণ করে। র্যাব এলাকাটিকে ঘিরে রাখে পরবর্তীতে অধিক ফোর্স নিয়ে সন্ত্রাসীদের আস্তানায় ব্যাপক তল্লাশী শুরু হয়। অভিযানটি রাত ০০৩০ পর্যন্ত চলতে থাকে। অভিযান চলাকালীন সময় জঙ্গল ছলিমপুর অভিযানস্থলে আমি উপস্থিত ছিলাম এবং অভিযানের নিবিড়ভাবে তদারক করা হয়। সন্ত্রাসীদের আক্রমন ও ইট পাটকেল ছোড়ায় কয়েক জন র্যাব সদস্য কিছুটা আঘাতপ্রাপ্ত হয়।
এম এ ইউসুফ জানান, অভিযানকালীন সময় বিভিন্ন স্থান ও সন্ত্রাসীদের নিকট হতে ১০ টি দেশীয় আগ্নেয়াস্ত্র, ১ টি বিদেশী আগ্নেয়াস্ত্র, ১ টি ধারালো ছোরা এবং মোট ২২ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়। এছাড়াও তাদের আস্তানা থেকে মিলিটারী গেজেট, মিলিটারী পোশাক, মিলিটারী বাইনোকোলার ও অবৈধ ধাতব মুদ্রা উদ্ধার করা হয়। উদ্ধারকৃত আগ্নেয়াস্ত্ররের ভিত্তিতে পৃথক তিনটি অস্ত্র মামলা ও র্যাবের উপর আক্রমন, সরকারী কর্তব্যে বাধা প্রদানের কারনে একটি র্যাব এসোল্ট মামলা ও মিলিটারী উপকরণ রাখা ও অবৈধভাবে ধাতব মুদ্রা রাখায় পৃথক পৃথক মামলা রুজু প্রক্রিয়াধীন।
র্যাব-৭ অধিনায়ক লেঃ কর্নেল এম এ ইউসুফ আরও জানান, আসামীদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, তারা দীর্ঘ দিন যাবৎ চট্টগ্রাম জেলার সীতাকুন্ড থানাধীন জঙ্গল ছলিমপুর এলাকায় নিজেদের প্রভাব বিস্তার, চাঁদাবাজী, সরকারী জমি প্লট আকারে লোক জনের কাছে বিক্রয় করে টাকা আদায় করে। উক্ত এলাকায় গরীব বসতি লোক জনের নিকট হতে বিদ্যুতের মিটার না দিয়ে মশিউরের নিজ মিটারের মাধ্যমে বিদ্যুত সরবরাহ করে বিদ্যুতের সরকারী মূল্যের চেয়ে অনেক বেশি টাকা আদায় করত। এছাড়াও উক্ত এলাকায় ছিনতাই, চাঁদাবাজী এবং নিজেদের অপরাধকর্ম চালিয়ে যাওয়ার স্বার্থে মশিউর ও তার ছেলে শিবলু একটি সন্ত্রাসী বাহিনী গড়ে তুলে।গ্রেফতারকৃত আসামীদের চট্টগ্রাম জেলার সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর প্রক্রিয়াধীন ।
উল্লেখ্য যে, গ্রেফতারকৃত আসামী রফিকুল ইসলাম মালু (৪১) এর বিরুদ্ধে চট্টগ্রাম জেলার বায়েজিদ থানায় ১ টি মামলা রয়েছে এবং সে এলাকায় মালু নামে পরিচিত, ২। আসামী মোঃ সিরাজুল ইসলাম এর বিরুদ্ধে চট্টগ্রাম জেলার বিভিন্ন থানায় ৫ টি অস্ত্র মামলা রয়েছে,আসামী মোঃ হাসান (৩৫) এর বিরুদ্ধে চট্টগ্রাম জেলার বিভিন্ন থানায় ০৭ টি মামলা রয়েছে,আসামী জামাল শেখ (৪৭) এর বিরুদ্ধে চট্টগ্রাম জেলার বিভিন্ন থানায় ১০ টি মামলা রয়েছে এবং আসামী মিজানুর রহমান কদর এর বিরুদ্ধে চট্টগ্রাম জেলার বিভিন্ন থানায় ১০ টিরও অধিক মামলা রয়েছে এবং সে এলাকায় অন্ধ জামাল ও বাবুর্চি জামাল নামে পরিচিত।
বিএস/কেসিবি/সিটিজি/৭ঃ৩৪পিএম