মঙ্গলবার, ১৭ মে ২০২২, ০৭:০৪ পূর্বাহ্ন
যেমন-একটি দম্পতির হয়তো চার -পাঁচ বা তার থেকেও বেশি সময় বিবাহ হয়েছে এখনো নিঃসন্তান। তাদেরকে সন্তান নেওয়ার পরামর্শ দাতার বা গোষ্ঠীর অভাব নেই এ সমাজে। একই ভাবে নববিবাহিত দম্পতিকে ছ মাস না ঘুরতেই আলাপের কেন্দ্র থাকে তারা বাচ্চা- কাচ্চা নিচ্ছেন কবে এসব নিয়ে। এ ব্যাপারে সবচেয়ে অগ্রণী ভূমিকা রাখেন পরিবারের নিকটজনেরা বিশেষত বাবা- মা -ভাই -বোন- আত্মীয়স্বজন। এরপর লাইনে থাকেন বন্ধু বান্ধব সহকর্মী থেকে শুরু করে আমজনতা। বিবাহের তারিখ যেন তারাই বেশি মনে রাখেন এবং কতদিন বিয়ে হয়ে গেলো অথচ এখনো সুখবর আসলো না এটা নিয়ে তাদের গবেষণার অন্ত থাকে না। নব বিবাহিত দম্পতি তাদের পরিবার পরিকল্পনার বিষয়টি ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে হয়তো কিছুদিন বাদে জানানো আরম্ভ করবে আমাদের উঠতি ফেসবুক জেনারেশন সে পথেই হাঁটছে তার আগ পর্যন্ত ব্যক্তি জীবনের সকল বিষয়কে এতোটা উন্মোচিত করে ব্যবচ্ছেদ করার অধিকার কারো থাকার কথা নয়! ভুক্তভোগী ছাড়া এ কথাগুলোর মর্মার্থ বোঝা কঠিন – বেশ কঠিন।
বিবিধ জটিলতার প্যাঁচে পড়ে অনেক দম্পতি সন্তান ধারণে সক্ষম নাও হতে পারেন বা শারীরিক জটিলতার কারনে বিলম্ব হতে পারে সেটা তাদের এবং একান্তই তাদের দুজনের বিষয় হওয়া উচিৎ। এখানে নাতি- নাতনির, ভাগ্নে ভাগ্নি বা ভাজতে ভাজতির মুখ দেখার জন্য উতলা জনগোষ্ঠীর আহাম্মকী এবং তাদেরকে দূরে ঠেলের দেওয়ার মতো ঘটনার জনক হয়ে ওঠেন। আমি বেশ কয়েকজন দম্পতিকে চিনি যাদের কারো সন্তান হয়না প্রায় পাঁচ বছর, দশবছর বা তারও কম বেশি সময় ধরে। সেসব মানুষগুলো দিব্যি দারুনভাবে জীবন কাটাচ্ছেন। অনেকে বলবে তারা কস্টে আছেন – মূলত আশপাশের মানুষের আহাজারি আর আহা বলার মহোৎসবে তারা নিজেদের মানিয়ে নিতে পারেন না- এটাই তাদের বেশি কস্টের কারন।
কোন একটি সামাজিক অনুষ্ঠানে গেলে তাদেরকে যখন আপন হয়ে জিগেস করেন বাচ্চারা কেমন আছে! কয় ছেলে মেয়ে – তাদের আনেননি ইত্যাদি! আবার যখন জানতে পারেন তারা নিঃস্তান তখন তাদের মুখাবয়ব দেখার মত হয়। যেন তারা কস্টে খান খান হয়ে যান!
তেমনি আপনাদের লাল টুকটুকে এন্জেলদের লাফালাফি আর ঝাঁপাঝাপির ছবি দেখে অনেকের বুকে হাহাকার করে সেটা দোষের কিছু নয়! আমি আরো কয়েকজনকে চিনি যারা কোন সামাজিক অনুষ্ঠান এড়িয়ে চলেন শুধু এই মুখরা মানুষের আলাপ থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য একটু ভালো থাকার জন্য! দুজন মানুষের ভালো থাকাটা শুধু দুজনের বিষয় হলে পৃথিবীটা আরো সুন্দর হতো। সেখানে অনেক মানুষ ঢুকে পড়ে যারা ব্যক্তিগত সব বিষয়ে অতি উৎসাহী হয়ে নাক গলিয়ে ফেলেন যা সুখকর হয় না কারো জন্য। এর চেয়ে বরং নিজেকে নিয়ে ভাবতে শেখা উচিত। কারন অন্যকে নিয়ে আমরা এতো বেশি ভাবনা চিন্তা করি যে – কখন নিজের পায়ের নিচের তলাটা ক্ষয় হয়ে যাবে একটুও বুঝবেন না – শুধু তখনই চোখে পড়বে যখন দেখবেন অন্যরা বলবে আপনার পায়ে ধূলা লেগে আছে একটু পরিষ্কার করুন!
লেখকঃ রাজীব হোসেন- সহকারী কমিশনার(ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট
বিএস/কেসিবি/সিটিজি/৬ঃ৩০পিএম