শনিবার, ২১ মে ২০২২, ০৩:০৫ পূর্বাহ্ন
কমল চক্রবর্তীঃ
আজ মহান স্বাধীনতা দিবস। এইদিনটি বাঙালী জাতির অধিকার আদায়ের প্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে। শত বাধা ঠেলে সামনে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয়দ্বীপ্ত এ দিন।মহান মুক্তিযুদ্ধে আত্মদানকারী সকল শহীদদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করছি এবং মহান মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা রয়েছে উল্লেখ করে মহান মুক্তিযুদ্ধসহ বিভিন্ন সময়ে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় আত্মোৎসর্গকারী পুলিশ সদস্যদের গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি। ১৯৭১ সালে ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে স্বাধীনতার ডাক দেন বঙ্গবন্ধু । তার আহ্বানে সাড়া দিয়ে রাজারবাগ পুলিশ লাইনসে বাংলাদেশ পুলিশের সদস্যরা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশ পুলিশের ১ হাজার ২৬২ জন সদস্য জীবন উৎসর্গ করেন। শুধু মহান মুক্তিযুদ্ধেই নয়, দেশের প্রয়োজনে ও বিভিন্ন সংকটে জীবন উৎসর্গ করতে কুণ্ঠাবোধ করেননি পুলিশ সদস্যরা।
স্বাধীনতার ৫১ বছর পেড়িয়ে গেলেও ধর্মকে পুজি করে স্বাধীনতা বিরোধিরা সক্রিয়। এ ধর্মীয় পুঁজিবাদদের বিষয়ে সকলকে সচেতন হতে হবে। মুক্তিযুদ্ধে পাক বাহিনীর বিরুদ্ধে অপ্রস্তুত হয়েও প্রথম প্রতিরোধ গড়ে তোলা হয় পুলিশ বাহিনীর পক্ষ থেকে। স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে জিমনেসিয়াম প্রাঙ্গনে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন চট্টগ্রাম রেঞ্জ ডিআইজি মোঃ আনোয়ার হোসেন বিপিএম(বার), পিপিএম(বার)।
তিনি আরো বলেন, স্বাধীনতার ৫১ বছর পরেও এসে ধর্মকে পুজি করে স্বাধীনতা বিরোধিরা সক্রিয়। এ ধর্মীয় পুঁজিবাদদের বিষয়ে সকলকে সচেতন হতে হবে। এ প্রজন্মের পুলিশ সদস্যদেরকে মুক্তিযুদ্ধের সত্যিকার ইতিহাস জানতে হবে। তা না হলে তারা বিভ্রান্তিতে পড়তে পারে। তিনি প্রত্যেক পুলিশ সদস্যকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারন করতে অহ্বান জানান। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে জনগণের কল্যাণে কাজ করতে হবে।
আজ শনিবার ২৬ শে মার্চ যথাযোগ্য মর্যাদা ও বর্ণাঢ্য কর্মসূচি পালনের মধ্য দিয়ে বন্দরনগরী চট্টগ্রামে উদযাপিত হয়েছে ২৬ মার্চ-মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস। দিবসটি পালন উপলক্ষ্যে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন ও বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ব্যাপক কর্মসূচি পালন করেছে।
দিবসের কর্মসূচি শুরু হয় সূর্যোদয়ের সাথে সাথে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় প্রাঙ্গণের শেখ রাসেল চত্বরে ৩১ বার তোপধ্বনির মধ্য দিয়ে। সূর্যোদয়ের সাথে সাথে সকল সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত এবং বেসরকারি ভবনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। এছাড়া একই সময়ে মিউনিসিপ্যাল মডেল স্কুল এন্ড কলেজ প্রাঙ্গনের শহিদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়।
বিভাগীয় কমিশনার মো. আশরাফ উদ্দিন, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান, মহানগর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মোজাফফর আহমদসহ পুলিশ, আনসার, সিভিল সার্জন, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ এবং সর্বস্তরের জনসাধারণ এসময় শহিদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। তাছাড়া জেলা প্রশাসকের কার্যালয় প্রাঙ্গণে অবস্থিত মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে চট্টগ্রাম জেলার শহিদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণে নির্মিত ‘‘আমরা তোমাদের ভুলবনা’’ স্মৃতিস্তম্ভটি এ উপলক্ষ্যে নতুনভাবে সংস্কার করা হয়। আজ এ স্মৃতিস্তম্ভে পুস্পস্তবক অর্পণ করা হয়।
দিবসের মূল কর্মসূচি শুরু হয় নগরীর এম এ আজিজ স্টেডিয়ামে আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও কূচকাওয়াজে সালাম গ্রহণের মাধ্যমে। বিভাগীয় কমিশনার মোঃ আশরাফ উদ্দিন আনুষ্ঠানিকভাবে পতাকা উত্তোলন ও কূচকাওয়াজে অভিবাদন গ্রহণ করেন। তিনি বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে অনুষ্ঠানের শুভ সুচনা করেন।
বিভাগীয় কমিশনার, চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি মো. আনোয়ার হোসেন, মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার সালেহ্ মোহাম্মদ তানভীর, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান, পুলিশ সুপার এস এম রশিদুল হক এসময় উপস্থিত ছিলেন।
এসময় পুলিশ, কারারক্ষী, আনসার-ভিডিপি, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স, বি.এন.সি.সি, বাংলাদেশ স্কাউটস, গার্লস গাইডসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্বাস্থ্যবিধি মেনে কুচকাওয়াজে অংশগ্রহণ । পরে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মনোজ্ঞ ডিসপ্লে প্রদর্শন করে।
পরে জিমনেসিয়াম প্রাঙ্গনে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা প্রদান করা হয়। এ অনুষ্ঠানে, বিভাগীয় কমিশনার,বিভাগীয় কমিশনারসহ ডিআইজি, সিএমপি কমিশনার, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, মহানগর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মোজাফফর আহমদ, জেলা ভারপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা একেএম সারোয়ার কামাল ও সাবেক নির্বাচন কমিশনার মোহাম্মদ আব্দুল মোবারাক বক্তৃতা করেন।
দিবসের অন্যান্য কর্মসূচির মধ্যে ছিল হাসপাতাল জেলখানা এতিমখানা শিশু পরিবার ভবঘুরে প্রতিষ্ঠান ও শিশু কেন্দ্রসমূহে উন্নতমানের খাবার পরিবেশন, জেলা মহিলা ক্রীড়া সংস্থার আনুষ্ঠান, জাতির শান্তি ও অগ্রগতি এবং মুক্তিযুদ্ধে শহিদদের আত্মার শান্তি কামনায় মসজিদ মন্দির গীর্জা প্যাগোডা ও অন্যান্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে স্বাস্থ্যবিধি মেনে বিশেষ মোনাজাত ও প্রার্থনা। এছাড়া ছিল সিনেমা হলসমূহে বিনা টিকিটে ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র এবং উন্মুক্ত স্থানে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক প্রমাণ্য চলচ্চিত্র প্রদর্শন, জেলা ও উপজেলা সদরে স্কুল-কলেজের ছাত্র-ছাত্রীদের সমাবেশ, ক্রীড়া অনুষ্ঠান, টি-টুয়েন্টি ক্রিকেট ম্যাচ, কাবাডি ও হা-ডু-ডু খেলার আয়োজন, এম এ আজিজ স্টেডিয়ামে সিজেকেএস বনাম বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার প্রীতি ফুটবল প্রতিযোগিতা ।
এছাড়া জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে “জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান-এঁর ঐতিহাসিক নেতৃত্ব এবং সুবর্ণজয়ন্তীতে দেশের উন্নয়ন” বিষয়ে আলোচনা সভা আয়োজন করা হয়।
বিভাগীয় কমিশনারসহ প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ পৃথক পৃথক এসব অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
বিএস/কেসিবি/সিটিজি/১০ঃ১০পিএম