মোহাম্মদ রুহুল আমীনঃ
করোনার সময়ে মোটা দাগে মোটামুটি ৪ টি দলের লোকজনের সাথেই বেশি সাক্ষাৎ হয়েছে-
প্রথম দলে আছেন তারা যারা নিজে কিংবা তাদের কাছের আপনজন কেউ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন।এ দলের কাছে করোনার গুরুত্ব অসীম কারন তারা কাছ থেকে দেখেছেন করোনার ভয়াবহতা। তারা স্বাস্থ্যবিধি নিজেরা মানার চেষ্টা করেন বাকিদেরও স্বাস্থ্যবিধি মানতে উৎসাহিত করেন।তাদের চরম শত্রুও যেনো করোনায় আক্রান্ত না হন এমন দোয়াও এই দলের লোকজন স্রষ্টার কাছে করেন।
দ্বিতীয় দলের কাছে করোনা গুজবের মতো।এরা সংখ্যাগরিষ্ঠ দল,বিশাল জনগোষ্ঠী এই দলে।তারা আদর করে করোনা কে বলেন “করুনা”, এদের কাছ করোনা করুনার বিষয় হয়ে গেছে।তাদের কাছে করোনা নিছক ঠান্ডাকাশির মতই সহজ স্বাভাবিক নিরীহ অসুখ। তাদের মতে এটা নিয়া অত বিচলিত হবার কিছুই নাই।নাপা বা আদা দিয়া এক কাপ রং চা খাইলেই মামলা ডিসমিস। নাপা বা রং চা না পাওয়া গেলেও সমস্যা নাই,তাদের মতে বাড়িতে গিয়া কাঁচা মরিচ দিয়া ডলে ভাত খেতে হবে যতক্ষন না নাক দিয়া পানি বের হয়,নাক দিয়া পানি বের হলেই ধরে নিতে হবে করোনার রফদফা হয়ে গেছে,করোনা নাকের পানির সাথে ভেসে গেছে,দ্বিতীয়বার ভয়েও কাছে আসবেনা।এ দলের লোকজন অবশ্য মোবাইল কোর্টের ভয়ে বাধ্য হয়ে সাথে মাস্ক রাখেন তবে মুখে পড়েন না,সরকারি তদারকি টিমের মুখোমুখি হলেই তারা মাস্ক পড়েন, তদারকি টিম চলে যাওয়া মাত্রই মাস্ক খুলে বুক ভরে নি:শ্বাস নেন আর বিড়বিড় করে বলেন,এদের যন্ত্রনায় স্বাভাবিকভাবে শ্বাস নেয়াটাই দায় হয়ে পড়েছেন,এরা আড়ালে আবডালে করোনা নিয়া হাসাহাসিও করেন। স্বাস্থ্যবিধি নামক শব্দটা তাদের কাছে একটা হয়রানিমূলক শব্দ।একবার একজন আমাকে বলেই ফেললেন, স্যার আপনাকে অনেক ভালো অফিসার হিসেবেই আমরা জানি, মহব্বত করি আপনাকে, সেই আপনিও স্যার স্বাস্থ্যবিধির নামে যন্ত্রনা শুরু করছেন,আপনার থেকে এটা আশা করি নাই।
তৃতীয় দলের লোকজন এমনিতেই সচেতন, তারা যে শুধু করোনা নিয়া সচেতন তা না তারা সবকিছু নিয়াই সচেতন। যখন পৃথিবীতে করোনা বলে কিছু ছিল না তখনও তারা মাস্ক পরতো বলে জনশ্রুতি আছে। তারা নিজেরা সচেতন অন্যকে সচেতন করার ব্যাপারেও সচেতন।তারা স্বাস্থ্যবিধি মানাতে নিজ উদ্যোগে সমাজসেবামূলক কাজও করেন,চেস্টা করেন নিজ উদ্যোগে অসচেতন মানুষের সচেতনতা ফিরিয়ে আনতে।
চার নাম্বার দলের লোকজন মানবদরদী দলের পর্যায়ভুক্ত। তারা নিজেরা স্বাস্থ্যবিধি মানুক না মানুক অন্য লোক কেন মানতেছেনা সেই বিষয়ে যারপরনাই সিরিয়াস।সবকিছুতেই এরা সতর্ক নজর রাখেন।দেশের স্কুল কলেজসহ সব প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে কেন লকডাউন দেয়া হচ্ছে না সেটা নিয়া যেমন সোচ্চার তেমনি লকডাউনের কারনে সবকিছুই যে স্থবির হয়ে যাচ্ছে সেই বিষয়েও সোচ্চার। লকডাউন না দিয়া সরকার চরম উদাসীনতার পরিচয় দিচ্ছে সেটা যেমন বলেন লকডাউনের কারনে বাচ্চাদের পড়ালেখা ধ্বংসের উপক্রমসহ সাধারন মানুষের যে কষ্ট হচ্ছে সেটা নিয়াও তারা বিশাল বিশাল বক্তব্য দিয়া যাচ্ছেন ক্রমাগত । তারা বিনোদন কেন্দ্র ভ্রমণ করে ফেরার পথে লিখেন বিনোদন কেন্দ্র খোলা রাখার কারনে করোনা বাড়তেছে,হোটেলে খেতে খেতে বলেন সংক্রমণ উর্ধ্বগতি এই সময়ে সরকার হোটেল খোলা রাখছে কোনো মানে হয়???আবার লকডাউনে হোটেল/বিনোদন কেন্দ্র বন্ধ রেখে বহুত মানুষের জীবিকা বন্ধ করার তীব্র নিন্দাও জানান তারা।তারা আসলে কি চায় সেটা প্রায়ই বুঝা যায় না।তবে তাদের যদি বলা হয়,ভাইসাহেব স্বাস্থ্যবিধি তো মানতেছেন না,ব্যাপার কি??
তারা ভারি বিরক্ত হয়ে বলেন,মানুষের এমনিতেই যন্ত্রনার শেষ নাই আর আপনারা আসছেন করোনা নিয়া,সবকিছু নিয়া বাড়াবাড়ি ভালো না বুঝেছেন?? এর বাইরেও আরও ক্যাটাগরি থাকতে পারে।
(পরিশেষে সবাইকে অনুরোধ :নিজের আর পরিবারের সবার দিকে খেয়াল রাখুন,সতর্ক থাকুন,মাস্ক পরিধান করুন,পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকার চেষ্টা করুন,প্রয়োজন না থাকলে ভিড় এড়িয়ে চলুন,স্বাস্থ্যবিধি মানুন)
লেখকঃমোহাম্মদ রুহুল আমীন, সিনিয়র সহকারী সচিব(উপসচিব),সচিব (ভারপ্রাপ্ত) বাংলাদেশ চা বোর্ড।
বিএস/কেসিবি/সিটিজি/৭ঃ১২পিএম