০৮:০৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বিজ্ঞপ্তি

ড. নমিতা হালদার – নারী নেতৃত্ব উন্নয়নে এক অনুপ্রেরণা

পুলক সরকার

সে-যুগ হয়েছে বাসি,
যে যুগে পুরুষ দাস ছিল না ক, নারীরা আছিল দাসী।
বেদনার যুগ, মানুষের যুগ, সাম্যের যুগ আজি,
কেহ রহিবেনা বন্দী কাহারও, উঠিছে ডঙ্কা বাজি!

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের এ স্তবকের সাথে আমাদের বর্তমান সমাজে নারীর অবস্থান অনেকটাই মিলে যায়। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় নারী নেতৃত্বে দৃশ্যমান অগ্রগতি হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে, বর্তমানে কংগ্রেসে নারী সদস্য সংখ্যা দ্বিগুণ হয়েছে এবং বেসরকারি সেক্টরেও ব্যবস্থাপনা পদে ৫০ শতাংশের বেশি নারীর অবস্থান। সারা বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশেও নারীরা এগিয়ে যাচ্ছে।

বাংলাদেশে নারীদের আরও এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য, নারীর ক্ষমতায়ন ও উন্নয়ন নিশ্চিতের জন্য নিরলস কাজ করে যাওয়া এক অনন্য ব্যক্তিত্ব ড. নমিতা হালদার এনডিসি। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ সরকারের শীর্ষ আর্থিক প্রতিষ্ঠান পল্লী কর্ম—সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ)—এর ১১তম ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে কর্মরত আছেন। ড. হালদার দীর্ঘ ৩০ বছরেরও বেশি সময় গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের স্থানীয় প্রশাসন থেকে শুরু করে সরকারের উচ্চতর নীতি—নির্ধারণ পর্যায়ে সুনামের সাথে কাজ করেছেন। তিনি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিবসহ প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। কবির কাব্যিক স্তবক যেমন রূপকভাবে নারীর অসীম শক্তি এবং সংকল্পের মর্মকে ধারণ করে, তেমনি ড. হালদারের অক্লান্ত নিবেদন, নারীর ভূমিকা ও সুযোগের চলমান রুপান্তরকে প্রতিফলিত করে।

কর্মসংস্থানের মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচনের লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকার ১৯৯০ সালে পল্লী কর্ম—সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ) প্রতিষ্ঠা করে। দেশে টেকসই দারিদ্র্য বিমোচন নিশ্চিতের লক্ষ্যে প্রায় দুই শতাধিক সহযোগী সংস্থার মাধ্যমে বিভিন্ন আর্থিক ও অ—আর্থিক সেবা প্রদানের মাধ্যমে কাজ করে যাচ্ছে পিকেএসএফ। সময়ের সাথে পরিবর্তিত চাহিদার নিরিখে পিকেএসএফ—এর কার্যক্রমেও আসছে বৈচিত্র্য। সর্বোপরি, দেশের পিছিয়ে পড়া নারীর সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন নিশ্চিতে পিকেএসএফ সদা তৎপর। বর্তমানে পিকেএসএফ—এর মোট সদস্যের প্রায় ৯০ শতাংশই নারী। ড. হালদারের নেতৃত্বে পিকেএসএফ—এ ব্যাপক বিস্তৃত কর্মযজ্ঞে যোগ হয়েছে নতুন মাত্রা। পিকেএসএফ—এ যোগদানের পূর্বেও ড. হালদার নারী শিক্ষা, নারীর ক্ষমতায়ন, শিশু অধিকার ও সুরক্ষা, লিঙ্গ সমতা, সামাজিক সুরক্ষা এবং বিভিন্ন উন্নয়ন প্রতিষ্ঠানের সাথে কাজ করেছেন। এ অভিজ্ঞতা এবং কৌশলগত দিক নির্দেশনা কাজে লাগিয়ে পিকেএসএফ—এর কার্যক্রমকে আরও সুনির্দিষ্টভাবে মাঠ পর্যায়ে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। পাশাপাশি, নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিতের লক্ষ্যে বিভিন্ন আর্থিক, কারিগরি ও প্রশিক্ষণ সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে।

ড. নমিতা হালদার ১৯৫৯ সালে বাগেরহাট জেলার উপকূলীয় উপজেলা মোংলায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৭৫ সালে দিনাজপুর সেন্ট ফিলিপ’স উচ্চ বিদ্যালয় হতে মাধ্যমিক, ১৯৭৭ সালে যশোর মহিলা কলেজ হতে উচ্চ মাধ্যমিক এবং ১৯৮৪ ও ১৯৮৭ সালে বাংলাদেশ কৃষি বিশ^বিদ্যালয় হতে যথাক্রমে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। পরবর্তীতে তিনি অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি হতে উন্নয়ন প্রশাসন বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী অর্জন করেন এবং নিউজিল্যান্ডের ক্যান্টারবেরি বিশ^বিদ্যালয় থেকে ২০০৩ সালে রাষ্ট্রবিজ্ঞান ডিসিপ্লিনে ‘সংসদে নারীর কার্যকরী নেতৃত্ব ও প্রতিনিধিত্ব’ বিষয়ে পিএইচডি ডিগ্রী লাভ করেন। ড. হালদার স্বপ্ন দেখেন ও স্বপ্ন দেখাতে ভালবাসেন। তার নেতৃত্ব ও নির্দেশনা আজ দেশের লক্ষ লক্ষ নারীর জন্য অনুপ্রেরণা ও উদাহরণ হয়ে থাকবে।

ট্যাগস :
আপডেট : ১০:১০:১২ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৩ অগাস্ট ২০২৩
১৪৬ বার পড়া হয়েছে

ড. নমিতা হালদার – নারী নেতৃত্ব উন্নয়নে এক অনুপ্রেরণা

আপডেট : ১০:১০:১২ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৩ অগাস্ট ২০২৩

সে-যুগ হয়েছে বাসি,
যে যুগে পুরুষ দাস ছিল না ক, নারীরা আছিল দাসী।
বেদনার যুগ, মানুষের যুগ, সাম্যের যুগ আজি,
কেহ রহিবেনা বন্দী কাহারও, উঠিছে ডঙ্কা বাজি!

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের এ স্তবকের সাথে আমাদের বর্তমান সমাজে নারীর অবস্থান অনেকটাই মিলে যায়। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় নারী নেতৃত্বে দৃশ্যমান অগ্রগতি হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে, বর্তমানে কংগ্রেসে নারী সদস্য সংখ্যা দ্বিগুণ হয়েছে এবং বেসরকারি সেক্টরেও ব্যবস্থাপনা পদে ৫০ শতাংশের বেশি নারীর অবস্থান। সারা বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশেও নারীরা এগিয়ে যাচ্ছে।

বাংলাদেশে নারীদের আরও এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য, নারীর ক্ষমতায়ন ও উন্নয়ন নিশ্চিতের জন্য নিরলস কাজ করে যাওয়া এক অনন্য ব্যক্তিত্ব ড. নমিতা হালদার এনডিসি। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ সরকারের শীর্ষ আর্থিক প্রতিষ্ঠান পল্লী কর্ম—সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ)—এর ১১তম ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে কর্মরত আছেন। ড. হালদার দীর্ঘ ৩০ বছরেরও বেশি সময় গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের স্থানীয় প্রশাসন থেকে শুরু করে সরকারের উচ্চতর নীতি—নির্ধারণ পর্যায়ে সুনামের সাথে কাজ করেছেন। তিনি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিবসহ প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। কবির কাব্যিক স্তবক যেমন রূপকভাবে নারীর অসীম শক্তি এবং সংকল্পের মর্মকে ধারণ করে, তেমনি ড. হালদারের অক্লান্ত নিবেদন, নারীর ভূমিকা ও সুযোগের চলমান রুপান্তরকে প্রতিফলিত করে।

কর্মসংস্থানের মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচনের লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকার ১৯৯০ সালে পল্লী কর্ম—সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ) প্রতিষ্ঠা করে। দেশে টেকসই দারিদ্র্য বিমোচন নিশ্চিতের লক্ষ্যে প্রায় দুই শতাধিক সহযোগী সংস্থার মাধ্যমে বিভিন্ন আর্থিক ও অ—আর্থিক সেবা প্রদানের মাধ্যমে কাজ করে যাচ্ছে পিকেএসএফ। সময়ের সাথে পরিবর্তিত চাহিদার নিরিখে পিকেএসএফ—এর কার্যক্রমেও আসছে বৈচিত্র্য। সর্বোপরি, দেশের পিছিয়ে পড়া নারীর সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন নিশ্চিতে পিকেএসএফ সদা তৎপর। বর্তমানে পিকেএসএফ—এর মোট সদস্যের প্রায় ৯০ শতাংশই নারী। ড. হালদারের নেতৃত্বে পিকেএসএফ—এ ব্যাপক বিস্তৃত কর্মযজ্ঞে যোগ হয়েছে নতুন মাত্রা। পিকেএসএফ—এ যোগদানের পূর্বেও ড. হালদার নারী শিক্ষা, নারীর ক্ষমতায়ন, শিশু অধিকার ও সুরক্ষা, লিঙ্গ সমতা, সামাজিক সুরক্ষা এবং বিভিন্ন উন্নয়ন প্রতিষ্ঠানের সাথে কাজ করেছেন। এ অভিজ্ঞতা এবং কৌশলগত দিক নির্দেশনা কাজে লাগিয়ে পিকেএসএফ—এর কার্যক্রমকে আরও সুনির্দিষ্টভাবে মাঠ পর্যায়ে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। পাশাপাশি, নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিতের লক্ষ্যে বিভিন্ন আর্থিক, কারিগরি ও প্রশিক্ষণ সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে।

ড. নমিতা হালদার ১৯৫৯ সালে বাগেরহাট জেলার উপকূলীয় উপজেলা মোংলায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৭৫ সালে দিনাজপুর সেন্ট ফিলিপ’স উচ্চ বিদ্যালয় হতে মাধ্যমিক, ১৯৭৭ সালে যশোর মহিলা কলেজ হতে উচ্চ মাধ্যমিক এবং ১৯৮৪ ও ১৯৮৭ সালে বাংলাদেশ কৃষি বিশ^বিদ্যালয় হতে যথাক্রমে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। পরবর্তীতে তিনি অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি হতে উন্নয়ন প্রশাসন বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী অর্জন করেন এবং নিউজিল্যান্ডের ক্যান্টারবেরি বিশ^বিদ্যালয় থেকে ২০০৩ সালে রাষ্ট্রবিজ্ঞান ডিসিপ্লিনে ‘সংসদে নারীর কার্যকরী নেতৃত্ব ও প্রতিনিধিত্ব’ বিষয়ে পিএইচডি ডিগ্রী লাভ করেন। ড. হালদার স্বপ্ন দেখেন ও স্বপ্ন দেখাতে ভালবাসেন। তার নেতৃত্ব ও নির্দেশনা আজ দেশের লক্ষ লক্ষ নারীর জন্য অনুপ্রেরণা ও উদাহরণ হয়ে থাকবে।