০৪:১২ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বিজ্ঞপ্তি

নেত্রকোণায় আদিবাসী গোষ্ঠীর সংস্কৃতিচর্চার অনন্য প্রতিষ্ঠান কালচারাল একাডেমি

প্রতিনিধির নাম

আঁকাবাঁকা সোমেশ্বরী নদী, ছড়া, সারিবদ্ধ ঐতিহাসিক চিনামাটির পাহাড়, সবুজ বেষ্টিত এক বৈচিত্র্যময় জনপদ নেত্রকোণার সুসং দুর্গাপুর। সোমেশ্বরী নদীর দক্ষিণ কূল ঘেঁষে দুর্গাপুর উপজেলার ছোট একটি ইউনিয়নের নাম বিরিশিরি। যেখানে কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে আদিবাসী গোষ্ঠীর নিজস্ব সংস্কৃতিচর্চায় এক অনন্য প্রতিষ্ঠান ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর কালচারাল একাডেমি।

প্রায় ৪৫ বছর ধরে জেলার দূর্গাপুরে বিরিশিরি কালচারাল একাডেমি মূলত দুটি শাখার মাধ্যমে কাজ করে আসছে। একটি সাংস্কৃতিক শাখা, অন্যটি অন‍্যতম গবেষণা শাখা।

প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে বৃহত্তর ময়মনসিংহে বসবাসরত গারো, হাজং, হদি, কোচ, বানাই, ডালুসহ ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর সংস্কৃতিচর্চার ধারা বিকাশে অবদান রেখে যাচ্ছে এই ঐতিহাসিক প্রতিষ্ঠানটি।

ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর কালচারাল একাডেমি সূত্র জানায়, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অধীনে পরিচালিত প্রতিষ্ঠানটি ১৯৭৭ সালে স্থাপিত হয়। স্বায়ত্তশাসিত এই প্রতিষ্ঠানের নাম দেওয়া হয়েছিল ‘উপজাতীয় কালচারাল একাডেমি’। কিন্তু ২০১০ সালে নাম পরিবর্তন করে করা হয় ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর কালচারাল একাডেমি। শান্ত, সুনিবিড় ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জনপদ হিসেবে খ্যাত বিরিশিরিতে প্রতিষ্ঠিত সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানটি ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীগুলোর বিলুপ্তপ্রায় ভাষা, সংস্কৃতি, ইতিহাস, নৃত্য-গীত প্রভৃতি সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ, সংরক্ষণ, নিয়মিত চর্চা, বিভিন্ন উৎসব উদ্‌যাপন, বিকাশ, প্রকাশনা, অডিও-ভিজ্যুয়াল প্রভৃতির মাধ্যমে জাতীয় সংস্কৃতির মূল স্রোতোধারার সঙ্গে সংগতি রেখে কাজ করে যাচ্ছে।

প্রতিষ্ঠানটি এখন সারা দেশের ভ্রমণ পিপাসুদের অন্যতম আকর্ষণীয় স্থান। প্রতিদিনই বিভিন্ন স্থান থেকে আসা পর্যটকেরা এখানে ভিড় জমাচ্ছেন। ৩ দশমিক ২১ একর জায়গা জুড়ে আছে প্রশাসনিক ভবন, আধুনিক অডিটরিয়াম, জাদুঘর ও সংগ্রহশালা, লাইব্রেরি, মহড়াকক্ষ, বিশ্রামাগার, হোস্টেল, পরিচালকের বাসভবন, পুকুর, বাগান। সম্প্রতি নতুন একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। গণপূর্ত বিভাগের অধীনে প্রস্তাবিত প্রকল্পটিতে মিউজিয়াম, প্রশিক্ষণ ভবন, আদিবাসীর জীবনধারা সম্পর্কিত ম্যুরাল, টেরাকোটা, মুক্তমঞ্চ, প্রধান ফটক, জমি অধিগ্রহণসহ বেশ কিছু উন্নয়নকাজ ধরা হয়েছে। এসব বাস্তবায়িত হলে সংস্কৃতিচর্চা আরও বেগবান হবে।

প্রতিষ্ঠানটি ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী গুলোর হারিয়ে যাওয়া ভাষা, সংস্কৃতি, ইতিহাস-ঐতিহ্য, পোশাক-পরিচ্ছদ, বাদ্যযন্ত্র, ব্যবহৃত জিনিস সংরক্ষণ ছাড়াও বছরব্যাপী বিভিন্ন উৎসব-অনুষ্ঠানের আয়োজন করে আসছে। উৎসবের মধ্যে আছে গারো সম্প্রদায়ের ওয়ানগালা, হাজং সম্প্রদায়ের দেউলি উৎসব, কোচ সম্প্রদায়ের বিহু উৎসব, হদি সম্প্রদায়ের বসন্তবর্ত উৎসব, বানাই সম্প্রদায়ের বাস্তুপূজা উৎসব অন্যতম। এসব উৎসবে বিভিন্ন ধর্মের মানুষ অংশ নেন।

গবেষণা কর্মকর্তা সৃজন সাংমা বলেন, ‘বহু ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর ভাষা ও সংস্কৃতি হারিয়ে গেছে, যাচ্ছে। বিলুপ্ত এসব ভাষা ও সংস্কৃতি সংরক্ষণে অনেক সীমাবদ্ধতার মধ্যেও আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। এখনো যেসব ভাষা বা সংস্কৃতি-ঐতিহ্য আছে, সেগুলোর সঠিক লালন, উন্নয়ন ও বিকাশে কাজ চলছে।

ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর কালচারাল একাডেমির পরিচালক সুজন কুমার হাজং(সুজন হাজং) বলেন, বাংলাদেশের ঐতিহ্য, কৃষ্টি ও সংস্কৃতি হাজার বছরের প্রাচীন এবং বৈচিত্র্যময়। এই অঞ্চলে বসবাসকারী বিভিন্ন নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর ভাষা-সংস্কৃতির চর্চা, সংরক্ষণ, উন্নয়ন ও বিকাশের লক্ষ্যে বিরিশিরি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর কালচারাল একাডেমি নিরলসভাবে কাজ করে আসছে।

ট্যাগস :
আপডেট : ০৯:০২:৩৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৩ জানুয়ারী ২০২২
৪৯৩ বার পড়া হয়েছে

নেত্রকোণায় আদিবাসী গোষ্ঠীর সংস্কৃতিচর্চার অনন্য প্রতিষ্ঠান কালচারাল একাডেমি

আপডেট : ০৯:০২:৩৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৩ জানুয়ারী ২০২২

আঁকাবাঁকা সোমেশ্বরী নদী, ছড়া, সারিবদ্ধ ঐতিহাসিক চিনামাটির পাহাড়, সবুজ বেষ্টিত এক বৈচিত্র্যময় জনপদ নেত্রকোণার সুসং দুর্গাপুর। সোমেশ্বরী নদীর দক্ষিণ কূল ঘেঁষে দুর্গাপুর উপজেলার ছোট একটি ইউনিয়নের নাম বিরিশিরি। যেখানে কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে আদিবাসী গোষ্ঠীর নিজস্ব সংস্কৃতিচর্চায় এক অনন্য প্রতিষ্ঠান ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর কালচারাল একাডেমি।

প্রায় ৪৫ বছর ধরে জেলার দূর্গাপুরে বিরিশিরি কালচারাল একাডেমি মূলত দুটি শাখার মাধ্যমে কাজ করে আসছে। একটি সাংস্কৃতিক শাখা, অন্যটি অন‍্যতম গবেষণা শাখা।

প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে বৃহত্তর ময়মনসিংহে বসবাসরত গারো, হাজং, হদি, কোচ, বানাই, ডালুসহ ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর সংস্কৃতিচর্চার ধারা বিকাশে অবদান রেখে যাচ্ছে এই ঐতিহাসিক প্রতিষ্ঠানটি।

ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর কালচারাল একাডেমি সূত্র জানায়, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অধীনে পরিচালিত প্রতিষ্ঠানটি ১৯৭৭ সালে স্থাপিত হয়। স্বায়ত্তশাসিত এই প্রতিষ্ঠানের নাম দেওয়া হয়েছিল ‘উপজাতীয় কালচারাল একাডেমি’। কিন্তু ২০১০ সালে নাম পরিবর্তন করে করা হয় ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর কালচারাল একাডেমি। শান্ত, সুনিবিড় ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জনপদ হিসেবে খ্যাত বিরিশিরিতে প্রতিষ্ঠিত সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানটি ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীগুলোর বিলুপ্তপ্রায় ভাষা, সংস্কৃতি, ইতিহাস, নৃত্য-গীত প্রভৃতি সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ, সংরক্ষণ, নিয়মিত চর্চা, বিভিন্ন উৎসব উদ্‌যাপন, বিকাশ, প্রকাশনা, অডিও-ভিজ্যুয়াল প্রভৃতির মাধ্যমে জাতীয় সংস্কৃতির মূল স্রোতোধারার সঙ্গে সংগতি রেখে কাজ করে যাচ্ছে।

প্রতিষ্ঠানটি এখন সারা দেশের ভ্রমণ পিপাসুদের অন্যতম আকর্ষণীয় স্থান। প্রতিদিনই বিভিন্ন স্থান থেকে আসা পর্যটকেরা এখানে ভিড় জমাচ্ছেন। ৩ দশমিক ২১ একর জায়গা জুড়ে আছে প্রশাসনিক ভবন, আধুনিক অডিটরিয়াম, জাদুঘর ও সংগ্রহশালা, লাইব্রেরি, মহড়াকক্ষ, বিশ্রামাগার, হোস্টেল, পরিচালকের বাসভবন, পুকুর, বাগান। সম্প্রতি নতুন একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। গণপূর্ত বিভাগের অধীনে প্রস্তাবিত প্রকল্পটিতে মিউজিয়াম, প্রশিক্ষণ ভবন, আদিবাসীর জীবনধারা সম্পর্কিত ম্যুরাল, টেরাকোটা, মুক্তমঞ্চ, প্রধান ফটক, জমি অধিগ্রহণসহ বেশ কিছু উন্নয়নকাজ ধরা হয়েছে। এসব বাস্তবায়িত হলে সংস্কৃতিচর্চা আরও বেগবান হবে।

প্রতিষ্ঠানটি ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী গুলোর হারিয়ে যাওয়া ভাষা, সংস্কৃতি, ইতিহাস-ঐতিহ্য, পোশাক-পরিচ্ছদ, বাদ্যযন্ত্র, ব্যবহৃত জিনিস সংরক্ষণ ছাড়াও বছরব্যাপী বিভিন্ন উৎসব-অনুষ্ঠানের আয়োজন করে আসছে। উৎসবের মধ্যে আছে গারো সম্প্রদায়ের ওয়ানগালা, হাজং সম্প্রদায়ের দেউলি উৎসব, কোচ সম্প্রদায়ের বিহু উৎসব, হদি সম্প্রদায়ের বসন্তবর্ত উৎসব, বানাই সম্প্রদায়ের বাস্তুপূজা উৎসব অন্যতম। এসব উৎসবে বিভিন্ন ধর্মের মানুষ অংশ নেন।

গবেষণা কর্মকর্তা সৃজন সাংমা বলেন, ‘বহু ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর ভাষা ও সংস্কৃতি হারিয়ে গেছে, যাচ্ছে। বিলুপ্ত এসব ভাষা ও সংস্কৃতি সংরক্ষণে অনেক সীমাবদ্ধতার মধ্যেও আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। এখনো যেসব ভাষা বা সংস্কৃতি-ঐতিহ্য আছে, সেগুলোর সঠিক লালন, উন্নয়ন ও বিকাশে কাজ চলছে।

ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর কালচারাল একাডেমির পরিচালক সুজন কুমার হাজং(সুজন হাজং) বলেন, বাংলাদেশের ঐতিহ্য, কৃষ্টি ও সংস্কৃতি হাজার বছরের প্রাচীন এবং বৈচিত্র্যময়। এই অঞ্চলে বসবাসকারী বিভিন্ন নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর ভাষা-সংস্কৃতির চর্চা, সংরক্ষণ, উন্নয়ন ও বিকাশের লক্ষ্যে বিরিশিরি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর কালচারাল একাডেমি নিরলসভাবে কাজ করে আসছে।