১০:০৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৬ মে ২০২৪, ২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বিজ্ঞপ্তি

১৫ ঘণ্টার সফল অস্ত্রোপচারে আলাদা হলো নুহা-নাভা

মো. বেল্লাল হাওলাদার, স্টাফ রিপোর্টার 
দীর্ঘ ১৫ ঘণ্টার জটিল অপারেশনের পর আলাদা হলো কুড়িগ্রামের মেরুদণ্ড জোড়া লাগানো শিশু নুহা ও নাভা। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) গতকাল সোমবার সকাল ৯টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত জটিল অস্ত্রোপচারে তাদের পৃথক করা হয়েছে। নুহা-নাভা চিকিৎসায় দায়িত্বে থাকা প্রখ্যাত নিউরোসার্জনস, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন অনুষদ সার্জারি অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ হোসেন জানিয়েছেন, অস্ত্রোপচার পরবর্তী অবস্থায় নুহা ও নাভা ভালো আছে।
 মঙ্গলবার (২০ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে বিএসএমএমইউর কেবিন ব্লকে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে শিশু দুটির সার্বিক অবস্থা তুলে ধরেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন। শিশু দুটির সার্বিক অবস্থা পরিদর্শন শেষে স্বাস্থ্যমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, নাভা ও নুহা এখন দুজনেই পৃথক। তারা ভালো আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিশু নুহা ও নাভার চিকিৎসার দায়িত্ব নিয়েছেন। তাদের চিকিৎসার সব খরচ প্রধানমন্ত্রী ব্যক্তিগতভাবে বহন করছেন। তিনি নুহা ও নাভার সার্বক্ষণিক খবর নিচ্ছেন।
এ সময় বিএসএমএমইউ উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, চিকিৎসার শেষ ধাপের অস্ত্রোপচার সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছেন। নুহা ও নাভা ভালো আছে। তাদের এখন নিবিড় পরিচর্য কেন্দ্রে তাদের রাখা হয়েছে।
কুড়িগ্রাম জেলার কাঁঠালবাড়ীর পরিবহন শ্রমিক আলমগীর রানা ও তার স্ত্রী নাসরিনের গর্ভে মেরুদণ্ডে জোড়া লাগানো কন্যা সন্তান নুহা ও নাভা গত ২০২২ সালের ২১ মার্চ জন্ম নেয়। জন্মের অল্প কয়েকদিন পর এপ্রিল মাসে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্জারি অনুষদের ডিন ও নিউরো স্পাইন সার্জন অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ হোসেনের অধীনে নুহা ও নাভাকে ভর্তি করা হয়।
২০২৩ সালের ৩১ জানুয়ারি তাদের প্রথম ধাপের সফল অস্ত্রোপচার করা হয়। গতকাল সোমবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) সকাল ৯টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত ১৫ ঘণ্টার জটিল অস্ত্রোপচারে সার্জারি অনুষদের ডিন ও নিউরোসার্জারি বিভাগের অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ হোসেনের নেতৃত্বে ৩৯ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকসহ ১০০ জন মেডিকেল সদস্যের টিম অংশগ্রহণ করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের কেবিন ব্লকের অপারেশন থিয়েটারে গত বছরের (২০২৩) ২৯ জানুয়ারি সকাল ৯টায় থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত চলা নুহা ও নাভার প্রথম ধাপের অস্ত্রোপচার সফলভাবে সম্পন্ন হয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্জারি অনুষদের ডিন ও নিউরোসার্জারি বিভাগের অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ হোসেন এ অস্ত্রোপচারের নেতৃত্ব দেন।
চিকিৎসকরা জানান, এ অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে নুহা ও নাভার দেহে টিস্যু বর্ধনকারী ডিভাইস ৪টি এক্সপান্ডা সফলভাবে প্রতিস্থাপন করা হয়। অস্ত্রোপচারের সময় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের প্রধান অধ্যাপক ডা. আইয়ুব আলী, বিশ্ববিদ্যালয়ের নার্সিং অনুষদের ডিন ও অ্যানেসথেসিয়া বিভাগের অধ্যাপক ডা. দেবব্রত বনিক, শিশু সার্জারি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. একেএম জাহিদ হোসেন, অ্যানেসথেসিয়া বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. দেবাশীষ বনিকসহ আরও ১০ জন চিকিৎসক এ অস্ত্রোপচারে অংশগ্রহণ করেন।
প্রসঙ্গত, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ এই জোড়া লাগানো জমজ শিশু দুজনের চিকিৎসার জন্য ১৯ সদস্যের মেডিকেল বোর্ড গঠন করেছেন। অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ হোসেনের নেতৃত্বে শিশু সার্জারি, প্লাস্টিক ও রিকন্সট্রাকটিভ সার্জারি, ভাসকুলার সার্জারি, ট্রান্সফিউশন মেডিসিন, অ্যানেসথেসিয়াসহ সব বিভাগের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকগণ নিয়ে এ বোর্ড গঠন করা হয়।
ট্যাগস :
আপডেট : ০৩:৩৩:০৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২০ ফেব্রুয়ারী ২০২৪
১৫২ বার পড়া হয়েছে

১৫ ঘণ্টার সফল অস্ত্রোপচারে আলাদা হলো নুহা-নাভা

আপডেট : ০৩:৩৩:০৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২০ ফেব্রুয়ারী ২০২৪
দীর্ঘ ১৫ ঘণ্টার জটিল অপারেশনের পর আলাদা হলো কুড়িগ্রামের মেরুদণ্ড জোড়া লাগানো শিশু নুহা ও নাভা। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) গতকাল সোমবার সকাল ৯টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত জটিল অস্ত্রোপচারে তাদের পৃথক করা হয়েছে। নুহা-নাভা চিকিৎসায় দায়িত্বে থাকা প্রখ্যাত নিউরোসার্জনস, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন অনুষদ সার্জারি অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ হোসেন জানিয়েছেন, অস্ত্রোপচার পরবর্তী অবস্থায় নুহা ও নাভা ভালো আছে।
 মঙ্গলবার (২০ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে বিএসএমএমইউর কেবিন ব্লকে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে শিশু দুটির সার্বিক অবস্থা তুলে ধরেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন। শিশু দুটির সার্বিক অবস্থা পরিদর্শন শেষে স্বাস্থ্যমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, নাভা ও নুহা এখন দুজনেই পৃথক। তারা ভালো আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিশু নুহা ও নাভার চিকিৎসার দায়িত্ব নিয়েছেন। তাদের চিকিৎসার সব খরচ প্রধানমন্ত্রী ব্যক্তিগতভাবে বহন করছেন। তিনি নুহা ও নাভার সার্বক্ষণিক খবর নিচ্ছেন।
এ সময় বিএসএমএমইউ উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, চিকিৎসার শেষ ধাপের অস্ত্রোপচার সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছেন। নুহা ও নাভা ভালো আছে। তাদের এখন নিবিড় পরিচর্য কেন্দ্রে তাদের রাখা হয়েছে।
কুড়িগ্রাম জেলার কাঁঠালবাড়ীর পরিবহন শ্রমিক আলমগীর রানা ও তার স্ত্রী নাসরিনের গর্ভে মেরুদণ্ডে জোড়া লাগানো কন্যা সন্তান নুহা ও নাভা গত ২০২২ সালের ২১ মার্চ জন্ম নেয়। জন্মের অল্প কয়েকদিন পর এপ্রিল মাসে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্জারি অনুষদের ডিন ও নিউরো স্পাইন সার্জন অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ হোসেনের অধীনে নুহা ও নাভাকে ভর্তি করা হয়।
২০২৩ সালের ৩১ জানুয়ারি তাদের প্রথম ধাপের সফল অস্ত্রোপচার করা হয়। গতকাল সোমবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) সকাল ৯টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত ১৫ ঘণ্টার জটিল অস্ত্রোপচারে সার্জারি অনুষদের ডিন ও নিউরোসার্জারি বিভাগের অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ হোসেনের নেতৃত্বে ৩৯ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকসহ ১০০ জন মেডিকেল সদস্যের টিম অংশগ্রহণ করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের কেবিন ব্লকের অপারেশন থিয়েটারে গত বছরের (২০২৩) ২৯ জানুয়ারি সকাল ৯টায় থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত চলা নুহা ও নাভার প্রথম ধাপের অস্ত্রোপচার সফলভাবে সম্পন্ন হয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্জারি অনুষদের ডিন ও নিউরোসার্জারি বিভাগের অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ হোসেন এ অস্ত্রোপচারের নেতৃত্ব দেন।
চিকিৎসকরা জানান, এ অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে নুহা ও নাভার দেহে টিস্যু বর্ধনকারী ডিভাইস ৪টি এক্সপান্ডা সফলভাবে প্রতিস্থাপন করা হয়। অস্ত্রোপচারের সময় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের প্রধান অধ্যাপক ডা. আইয়ুব আলী, বিশ্ববিদ্যালয়ের নার্সিং অনুষদের ডিন ও অ্যানেসথেসিয়া বিভাগের অধ্যাপক ডা. দেবব্রত বনিক, শিশু সার্জারি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. একেএম জাহিদ হোসেন, অ্যানেসথেসিয়া বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. দেবাশীষ বনিকসহ আরও ১০ জন চিকিৎসক এ অস্ত্রোপচারে অংশগ্রহণ করেন।
প্রসঙ্গত, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ এই জোড়া লাগানো জমজ শিশু দুজনের চিকিৎসার জন্য ১৯ সদস্যের মেডিকেল বোর্ড গঠন করেছেন। অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ হোসেনের নেতৃত্বে শিশু সার্জারি, প্লাস্টিক ও রিকন্সট্রাকটিভ সার্জারি, ভাসকুলার সার্জারি, ট্রান্সফিউশন মেডিসিন, অ্যানেসথেসিয়াসহ সব বিভাগের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকগণ নিয়ে এ বোর্ড গঠন করা হয়।