১০:১৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বিজ্ঞপ্তি

আলো ছড়াচ্ছে নাজমুল হুদা সারোয়ারের পথ পাঠাগার

প্রতিনিধির নাম
বই যার নেশা আর পেশা,যিনি মেধার চর্চা নিয়ে সারাক্ষণ ব্রত। নতুন প্রজন্মের মাঝে আলোর ফেরি করে বেড়ান সর্বত্র। ভোগ বিলাসের মোহ কখনো তাঁকে আঁকড়ে ধরে রাখতে পারেনি। সেই সৃষ্টশীল ব্যক্তির হাত ধরে পথ পাঠাগার নামক একটি পাঠাগারের  যাত্রা শুরু হয় গত ২০২০ সালের ২জুন।
ব্যতিক্রমী পথ পাঠাগার প্রতিষ্ঠার পর থেকেই ময়মনসিংহ বিভাগের নানা জায়গায় স্থাপন করেণ ১৫টির মতো পথ পাঠাগার শাখা। ওই সব শাখা গুলি বরণ্যে ব্যক্তি ফিতা কেটে উদ্বোধন করেণ। সেলুন ও হোটেল শাখায় বই পড়ায় হিড়িক পড়তে দেখা গেছে প্রায় সময়ই। পাঠকদের মনের আত্মতৃপ্তি ও মনের সুপ্ত শিহরণকে বিকশিত করবার চেতনা থেকেই এ পথ পাঠাগার উদ্ভব ঘটান বলে জানান কবিতাব্রতী ও সাহিত্য কর্মী নাজমূল হুদা সারোয়ার।
নতুন প্রজন্মের মাঝে বই পড়ার চর্চা আর সমাজের নানা অবক্ষয় মূলক কর্মকান্ড থেকে বেড়িয়ে আসতে ব্যতিক্রম ধর্মী পথ পাঠাগার কার্যক্রমের সূচনা। তিনি নিজস্ব অর্থায়নে আলোর স্ফুরণ প্রস্ফুটিত করতে গ্রামগঞ্জ,লোকালয়,হাট-বাজার,দোকান,স্টল,সেলুন,ফার্মেসীতে বেশকিছু বই,সেলফ ও পাঠাগারের নিজস্ব একটি ব্যানার দিয়ে নতুন একটি বই পাঠের উপযুক্ত স্থান তৈরী করে দেন। যেখানে  বই পড়ার সুযোগ পান সকল শ্রেণি-পেশার লোকজন।
আর এই ব্যতিক্রমী পথ পাঠাগারের প্রতিষ্ঠাতা হলেন নাজমুল হুদা সারোয়ার। দুর্গাপুর পৌর শহরের বাগিচাপাড়া এলাকায় জন্ম গ্রহণ করেণ। পিতা হাজী মো. নজরুল ইসলাম। মাতা মরহুম হেলেনা বেগম। চার ভাই এক বোন। সবার ছোট সন্তান হলেন তিনি। মেঘালয়ের পাদদেশ ঘেঁষে সীমান্তবর্তী পাহাড়ি জনপদ সুসঙ্গ দুর্গাপুরে। ইতিহাস আর ঐতিহ্যের ভীড়ে যার বিচরণ, আজন্ম শৈল্পিক চিন্তা আর ভাবনার কল্পনায় ব্যস্ত রাখেন নিজেকে। ছাত্রবস্থায় থেকেই তিনি শিল্প সাহিত্য ও সংস্কৃতি অঙ্গনের সাথে অতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলেন। তিনি দুই বাংলার কবিদের নিয়ে কবিতা উৎসের আয়োজন  করেণ। তিনি দুর্গাপুর সাহিত্য সমাজের প্রতিষ্ঠাতা ও জ্ঞানী ব্যক্তিদের পুরস্কারের প্রবক্তা হিসেবে তাঁর খ্যাতি রয়েছে এ অঞ্চলে।
গ্রামের জনবহুল স্থানগুলিতে পথ পাঠাগার স্থাপনের মধ্য দিয়ে পাঠাআভ্যাস তৈরী করে আগামীর প্রজন্মকে বই মুখী করার প্রয়াস ছড়িয়ে দিচ্ছেন নাজমুল হুদা সারোয়ার। তাঁর এ উদ্যমী পথচলা শুরু থেকেই সর্বস্তরের লোকজনের প্রশংসা কুঁড়িয়েছে। এটি নিছক সাহসিকতা নয় বরং দুঃসাহকিতা বটে। ছুটে চলা দুরন্তমনা কবি নাজমুল হুদা সারোয়ার এ পর্যন্ত পথ পাঠাগারের ১৫টি শাখা স্থাপন করেছেন দুর্গাপুর পৌর শহরে এম কে সি এম মোড় এলাকার সুমন সাহা টি স্টলে পথ ফাঠাগার শাখা স্থাপতি হয়। চন্ডিগড় ইউনিয়নের সাতাশি বাজার এলাকার আজিজুল ইসলামের ফার্মেসী শাখা, বইয়ের সংখ্যা রয়েছে বত্রিশটি। উপজেলা প্রেসক্লাব মোড় এলাকায় খোকন মিয়ার হোটেল শাখায়  পঁচিশটির বেশি বই রয়েছে। নাজিরপুর মোড় এলাকায় তোতা মিয়ার অলম্যান সেলুন শাখায় ত্রিশটি বই রয়েছে।
রিক্সাচালক তারা মিয়ার ব্যাটারী চালিত অটোরিক্সায় ভ্রাম্যমাণ শাখায় বিশটির বেশী বই রয়েছে। সেখানে বইয়ের সংখ্যা রয়েছে প্রায় ত্রিশটির বেশি। কুল্লাগড়া ইউনিয়নের ভেন্নাকান্দা চৌরাস্তা গ্রামের আশরাফুল ইসলাম এর ফার্মেসিতে একটি শাখা রয়েছে, সেখানে বইয়ের সংখ্যা পঁচিশ। বহেরাতলী গ্রামে মোবারক হোসেন মিলন সেলুন শাখা, বই রয়েছে প্রায় পয়ত্রিশটি। দুবাউড়া উপজেলার চারুয়াপাড়া গ্রামে শামসুল হক মৃধার ফার্মেসীতে শাখা রয়েছে,বইয়ের সংখ্যা পঞ্চাশ। ধোবাউড়া তিলক সরকার এর গার্মেন্টস শাখা বই রয়েছে চল্লিশ। ধরমপাশা ভাসমান শাখা ধনা মিয়ার নৌকায়,বইয়ের সংখ্যা বিশ। পাঁচগাঁও বকুল মাস্টার ফার্মেসী শাখা,বইয়ের সংখ্যা ত্রিশ।
তিনি শুরু থেকেই একদল উদ্যমী তরুণ নিয়ে পথ পাঠাগারের যাত্রা শুরু করেণ। পথ পাঠাগার পরিচালনা ওই পাঠাগারে বই পড়ে জ্ঞান আহরণ করতে প্রতিদিন আসে শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন বইপ্রেমী মানুষ।
পাঠকদের উন্নত মানসিকতার সৃষ্টিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে আসছে পাঠাগারটি। পথ পাঠাগারের আয়োজনে বিভিন্ন জাতীয় দিবস, সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি,শিক্ষাসামগ্রী বিতরণ,   শিক্ষামূলক প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠান, কুইজ প্রতিযোগিতা ও এলাকার উন্নয়নমূলক কাজ করা হয়।
প্রবীণ লেখক ও আদিবাসী গবেষক মতিলাল হাজং বলেন, পথ পাঠাগার মানুষকে আলোকিত করার যে স্বপ্ন দেখাচ্ছে, সেটি থেকে সবার আদর্শ হওয়া উচিত। তাঁর স্বপ্নকে টিকিয়ে রাখতে হলে উদার ও মননশীল ব্যক্তিদের এগিয়ে আসা উচিত বলেও মনে করেণ তিনি।
পথ পাঠাগারের উদ্যোক্তা ও স্বপ্নদ্রষ্টা কবি নাজমুল হুদা সারোয়ার এ প্রতিবেদককে জানান, ‘পাঠাগারের শুরুতে আমি বলেছিলাম রবি ঠাকুরের সেই বিখ্যাত উক্তি-যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে, তবে একলা চলরে। কিন্তু আজ থেকে সেই কথাটি আর বলব না। পাঠকদের উপস্থিতি বলে দেয় আজকে পথ পাঠাগার কানায় কানায় সুশোভিত। সবার সহযোগিতায় পথ পাঠাগার এগিয়ে যাবে বহুদূর এবং বিভিন্ন অপকর্ম থেকে দূরে থাকবে তরুণ সমাজ।’ একটি তথ্য নির্ভর ও আধুনিক সমাজ বির্নিমাণে নতুন প্রজন্মরা এগিয়ে যাবে।
ট্যাগস :
আপডেট : ০৪:২০:০১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৮ জানুয়ারী ২০২২
২৪৬ বার পড়া হয়েছে

আলো ছড়াচ্ছে নাজমুল হুদা সারোয়ারের পথ পাঠাগার

আপডেট : ০৪:২০:০১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৮ জানুয়ারী ২০২২
বই যার নেশা আর পেশা,যিনি মেধার চর্চা নিয়ে সারাক্ষণ ব্রত। নতুন প্রজন্মের মাঝে আলোর ফেরি করে বেড়ান সর্বত্র। ভোগ বিলাসের মোহ কখনো তাঁকে আঁকড়ে ধরে রাখতে পারেনি। সেই সৃষ্টশীল ব্যক্তির হাত ধরে পথ পাঠাগার নামক একটি পাঠাগারের  যাত্রা শুরু হয় গত ২০২০ সালের ২জুন।
ব্যতিক্রমী পথ পাঠাগার প্রতিষ্ঠার পর থেকেই ময়মনসিংহ বিভাগের নানা জায়গায় স্থাপন করেণ ১৫টির মতো পথ পাঠাগার শাখা। ওই সব শাখা গুলি বরণ্যে ব্যক্তি ফিতা কেটে উদ্বোধন করেণ। সেলুন ও হোটেল শাখায় বই পড়ায় হিড়িক পড়তে দেখা গেছে প্রায় সময়ই। পাঠকদের মনের আত্মতৃপ্তি ও মনের সুপ্ত শিহরণকে বিকশিত করবার চেতনা থেকেই এ পথ পাঠাগার উদ্ভব ঘটান বলে জানান কবিতাব্রতী ও সাহিত্য কর্মী নাজমূল হুদা সারোয়ার।
নতুন প্রজন্মের মাঝে বই পড়ার চর্চা আর সমাজের নানা অবক্ষয় মূলক কর্মকান্ড থেকে বেড়িয়ে আসতে ব্যতিক্রম ধর্মী পথ পাঠাগার কার্যক্রমের সূচনা। তিনি নিজস্ব অর্থায়নে আলোর স্ফুরণ প্রস্ফুটিত করতে গ্রামগঞ্জ,লোকালয়,হাট-বাজার,দোকান,স্টল,সেলুন,ফার্মেসীতে বেশকিছু বই,সেলফ ও পাঠাগারের নিজস্ব একটি ব্যানার দিয়ে নতুন একটি বই পাঠের উপযুক্ত স্থান তৈরী করে দেন। যেখানে  বই পড়ার সুযোগ পান সকল শ্রেণি-পেশার লোকজন।
আর এই ব্যতিক্রমী পথ পাঠাগারের প্রতিষ্ঠাতা হলেন নাজমুল হুদা সারোয়ার। দুর্গাপুর পৌর শহরের বাগিচাপাড়া এলাকায় জন্ম গ্রহণ করেণ। পিতা হাজী মো. নজরুল ইসলাম। মাতা মরহুম হেলেনা বেগম। চার ভাই এক বোন। সবার ছোট সন্তান হলেন তিনি। মেঘালয়ের পাদদেশ ঘেঁষে সীমান্তবর্তী পাহাড়ি জনপদ সুসঙ্গ দুর্গাপুরে। ইতিহাস আর ঐতিহ্যের ভীড়ে যার বিচরণ, আজন্ম শৈল্পিক চিন্তা আর ভাবনার কল্পনায় ব্যস্ত রাখেন নিজেকে। ছাত্রবস্থায় থেকেই তিনি শিল্প সাহিত্য ও সংস্কৃতি অঙ্গনের সাথে অতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলেন। তিনি দুই বাংলার কবিদের নিয়ে কবিতা উৎসের আয়োজন  করেণ। তিনি দুর্গাপুর সাহিত্য সমাজের প্রতিষ্ঠাতা ও জ্ঞানী ব্যক্তিদের পুরস্কারের প্রবক্তা হিসেবে তাঁর খ্যাতি রয়েছে এ অঞ্চলে।
গ্রামের জনবহুল স্থানগুলিতে পথ পাঠাগার স্থাপনের মধ্য দিয়ে পাঠাআভ্যাস তৈরী করে আগামীর প্রজন্মকে বই মুখী করার প্রয়াস ছড়িয়ে দিচ্ছেন নাজমুল হুদা সারোয়ার। তাঁর এ উদ্যমী পথচলা শুরু থেকেই সর্বস্তরের লোকজনের প্রশংসা কুঁড়িয়েছে। এটি নিছক সাহসিকতা নয় বরং দুঃসাহকিতা বটে। ছুটে চলা দুরন্তমনা কবি নাজমুল হুদা সারোয়ার এ পর্যন্ত পথ পাঠাগারের ১৫টি শাখা স্থাপন করেছেন দুর্গাপুর পৌর শহরে এম কে সি এম মোড় এলাকার সুমন সাহা টি স্টলে পথ ফাঠাগার শাখা স্থাপতি হয়। চন্ডিগড় ইউনিয়নের সাতাশি বাজার এলাকার আজিজুল ইসলামের ফার্মেসী শাখা, বইয়ের সংখ্যা রয়েছে বত্রিশটি। উপজেলা প্রেসক্লাব মোড় এলাকায় খোকন মিয়ার হোটেল শাখায়  পঁচিশটির বেশি বই রয়েছে। নাজিরপুর মোড় এলাকায় তোতা মিয়ার অলম্যান সেলুন শাখায় ত্রিশটি বই রয়েছে।
রিক্সাচালক তারা মিয়ার ব্যাটারী চালিত অটোরিক্সায় ভ্রাম্যমাণ শাখায় বিশটির বেশী বই রয়েছে। সেখানে বইয়ের সংখ্যা রয়েছে প্রায় ত্রিশটির বেশি। কুল্লাগড়া ইউনিয়নের ভেন্নাকান্দা চৌরাস্তা গ্রামের আশরাফুল ইসলাম এর ফার্মেসিতে একটি শাখা রয়েছে, সেখানে বইয়ের সংখ্যা পঁচিশ। বহেরাতলী গ্রামে মোবারক হোসেন মিলন সেলুন শাখা, বই রয়েছে প্রায় পয়ত্রিশটি। দুবাউড়া উপজেলার চারুয়াপাড়া গ্রামে শামসুল হক মৃধার ফার্মেসীতে শাখা রয়েছে,বইয়ের সংখ্যা পঞ্চাশ। ধোবাউড়া তিলক সরকার এর গার্মেন্টস শাখা বই রয়েছে চল্লিশ। ধরমপাশা ভাসমান শাখা ধনা মিয়ার নৌকায়,বইয়ের সংখ্যা বিশ। পাঁচগাঁও বকুল মাস্টার ফার্মেসী শাখা,বইয়ের সংখ্যা ত্রিশ।
তিনি শুরু থেকেই একদল উদ্যমী তরুণ নিয়ে পথ পাঠাগারের যাত্রা শুরু করেণ। পথ পাঠাগার পরিচালনা ওই পাঠাগারে বই পড়ে জ্ঞান আহরণ করতে প্রতিদিন আসে শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন বইপ্রেমী মানুষ।
পাঠকদের উন্নত মানসিকতার সৃষ্টিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে আসছে পাঠাগারটি। পথ পাঠাগারের আয়োজনে বিভিন্ন জাতীয় দিবস, সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি,শিক্ষাসামগ্রী বিতরণ,   শিক্ষামূলক প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠান, কুইজ প্রতিযোগিতা ও এলাকার উন্নয়নমূলক কাজ করা হয়।
প্রবীণ লেখক ও আদিবাসী গবেষক মতিলাল হাজং বলেন, পথ পাঠাগার মানুষকে আলোকিত করার যে স্বপ্ন দেখাচ্ছে, সেটি থেকে সবার আদর্শ হওয়া উচিত। তাঁর স্বপ্নকে টিকিয়ে রাখতে হলে উদার ও মননশীল ব্যক্তিদের এগিয়ে আসা উচিত বলেও মনে করেণ তিনি।
পথ পাঠাগারের উদ্যোক্তা ও স্বপ্নদ্রষ্টা কবি নাজমুল হুদা সারোয়ার এ প্রতিবেদককে জানান, ‘পাঠাগারের শুরুতে আমি বলেছিলাম রবি ঠাকুরের সেই বিখ্যাত উক্তি-যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে, তবে একলা চলরে। কিন্তু আজ থেকে সেই কথাটি আর বলব না। পাঠকদের উপস্থিতি বলে দেয় আজকে পথ পাঠাগার কানায় কানায় সুশোভিত। সবার সহযোগিতায় পথ পাঠাগার এগিয়ে যাবে বহুদূর এবং বিভিন্ন অপকর্ম থেকে দূরে থাকবে তরুণ সমাজ।’ একটি তথ্য নির্ভর ও আধুনিক সমাজ বির্নিমাণে নতুন প্রজন্মরা এগিয়ে যাবে।