চোখের সামনেই তলিয়ে গেল বসতবাড়ি! পদ্মা নদীর ভাঙ্গনে কাঁপছে পাঁকা ও দুলর্ভপুর ইউনিয়ন
চাঁপাইনবাবগঞ্জ শিবগঞ্জ উপজেলার ১২ নং পাঁকা ইউনিয়ন ৪,৫ ও ৬ নং ওয়ার্ড জাইটপাড়া, বোগলাউড়ী লক্ষ্মীপুর এবং দূর্লভপুর ইউনিয়নের ৮ ও ৯ নং ওয়ার্ড চরজগনাথপুর, আইয়ুব আলী বিশ্বাসপাড়া, পন্ডিতপাড়া এবং মনোহারপুর তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। গত কয়েক দিনে দুইশ বসতবাড়ি ও ৪৬ বিঘা ফসলি জমি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। হুমকির মুখে নদীর দুপাড়ে কয়েকশ স্থাপনা।
পাঁকা ইউনিয়ন ৫ নং ওয়ার্ড নদী তীরবর্তী বাসিন্দা, মন্টু (৫০) বলেন, ১৫ দিন ধরেই তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। এতে আমার ১৪ বিঘা কৃষিজমি ও পাঁচটি ঘর নদীতে চলে গেছে। আমি এখন অনেক কষ্টে আছি পরিবার নিয়ে কোথায় গিয়ে আশ্রয় নিবো। তিনি আরও বলেন, গত আট বছর থেকেই এ সময় আমাদের বাড়ি ভেঙে অন্য স্থানে নিয়ে যেতে হয়। কিন্তু আমাদের দেখার কেউ নাই, পাই না কোনো সরকারি সুবিধাও।
রহমান (৪২) নামে এক কৃষক বলেন, আমার ১০ বিঘা কৃষিজমি ও পাঁচটি ঘর নদীতে চলে গেছে, আমি এখন অসহায়।
অনেক কষ্টে পাঁচ বিঘা জমিতে কলাই চাষ করেছিলাম। কিন্তু মাত্র ১৫ দিনের ভাঙনে ৫ বিঘা কলাই এখন নদীগর্ভে। আমি এখন কী করবো। জমিতে আমার একটি পানির পাম্প ছিল সেটিও নদীতে হারিয়ে গেছে।
জাার্জিস (৫৫) বলেন, আমার ১০ বিঘা কৃষিজমি ও চারটি ঘর নদীতে চলে গেছে, কবির (৪৫) বলেন, আমার ১২ বিঘা কৃষিজমি নদীতে চলে গেছে।
সরজমিনে শিবগঞ্জ উপজেলার নদী ভাঙ্গন এলাকায় গিয়ে সাধারন মানুষের সাথে কথা বলতে গেলে জাতীয় দৈনিক বাংলাদেশ সমাচার পত্রিকার প্রতিনিধি আল আমিন বলেন, আমাদের বাড়ি পাঁকা ইউনিয়ন। নদীভাঙনে আমাদের এলাকার মানুষ খুব কষ্টে রয়েছে। প্রতিদিন শতশত কৃষি জমি কিংবা বাড়িঘর নদীতে ভেঙে পড়ছে, ভাঙন তীব্র হওয়ায় পদ্মাপাড়ের অনেক বাসিন্দা ভিটামাটি ছেড়ে নিরাপদ দূরত্বে আশ্রয় নিয়েছেন। পাঁকা ইউনিয়নের কয়েকটি এলাকার মানুষ এখন নদীভাঙ্গন আতঙ্কে দিন পার করছেন,এখনই প্রতিরোধের ব্যবস্থা না নিলে আশপাশের কয়েকটি এলাকার মানুষও নদী ভাঙ্গনের শিকার হবেন।
গ্রামবাসী বলেন, জিওব্যাগ দিয়ে নদীভাঙন রক্ষা হবে না। জিওব্যাগ দিয়ে নদীভাঙন রক্ষার ক্ষেত্রে পাঁকা ইউনিয়ন ৫ ও ৬ নং ওয়ার্ড এর এখন পর্যন্ত কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। সরকারি ভাবে প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি দ্রুত এই ৫ ও ৬ নং ওয়ার্ড বোগলাউড়ী লক্ষ্মীপুর জাইটপাড়া গ্রামগুলোকে রক্ষার জন্য জিওব্যাগ বা অন্য পন্থা থাকলে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা। ফলে প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্থায়ীভাবে বাঁধ নির্মাণের দাবি জানাচ্ছি।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী ময়েজ উদ্দিন বলেন, শুনেছি পাঁকা ও দুলর্ভপুর ইউনিয়নে নদী ভাঙ্গন শুরু হয়েছে জিওব্যাগ দিয়ে নদীভাঙন রক্ষার ব্যবস্থা গ্রহণ চলছে।মনোহারপুর থেকে উজিরপুর সাড়ে ১২ কিলোমিটার স্থায়ীভাবে বাঁধ নির্মাণের কাজ আরম্ভ করার জন্য প্রজেক্ট তৈরি করা হচ্ছে। প্রায় পনেরশো কোটি টাকা ব্যায়ে এ প্রজেক্টে ডিসেম্বর মাস থেকে জানুয়ারি মাসে এ প্রজেক্টটি দাখিল করিবো। এ প্রজেক্ট প্রায় পনেরশ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। সেখানে নদীভাঙন আরো ভিতরে চলে না যায় এজন্য অস্থায়ীভাবে জিওব্যাগ দিয়ে ঠেকানো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।