১০:৩৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বিজ্ঞপ্তি

প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অভাবে মৌলিক শিক্ষা হতে বঞ্চিত হাওর পাড়ের শিশুরা

আহম্মদ কবির, তাহিরপুর

 

সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার উপজেলার টাঙ্গুয়ার হাওর ওয়াচ-টাওয়ার এলাকার জয়পুর, গোলাবাড়ি ও জয়পুর নতুনহাটি গ্রামে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অভাবে প্রাথমিক শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে শিশুরা।এতে পড়াশোনা থেকে পিছিয়ে পড়া শিশুরা সামান্য টাকার বিনিময়ে টাঙ্গুয়ার হাওরে ঘুরতে পর্যটকদের গান গেয়ে বিনোদন দেওয়াসহ ঝুঁকে পড়ছে বিভিন্ন শিশু শ্রমে। শুধু তাই নয় ওই এলাকায় বাড়ছে বাল্যবিবাহসহ মাদকাসক্তের মতো মারাত্মক অপরাধ।
স্থানীয়রা জানান টাঙ্গুয়ার হাওর ওয়াচ-টাওয়ার সংলগ্ন জয়পুর, গোলাবাড়ি ও জয়পুর নতুনহাটি এলাকায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অভাবে প্রায় সহস্রাধিক সুবিধাবঞ্চিত শিশু কিশোর মৌলিক শিক্ষার আলো থেকে  বঞ্চিত হচ্ছে।প্রাথমিক শিক্ষার ব্যবস্থা না থাকায় পূর্বপুরুষের ন্যায় নিরক্ষর রয়ে যাচ্ছে ওই এলাকার অধিকাংশ শিশু-কিশোর।শিক্ষার অভাবে বাড়ছে শিশু শ্রম বাল্যবিবাহ ও মাদকাসক্তের মতো  মারাত্মক অপরাধ।স্কুলে না  যাওয়া শিশুদের দিন কাটছে সামান্য টাকার বিনিময়ে টাঙ্গুয়ার হাওরে ঘুরতে আসা পর্যটকদের গান গেয়ে বিনোদন ও ওয়াচ-টাওয়ার এলাকায় আড্ডায়।সরকারি শিক্ষা প্রকল্পের সুফল না পাওয়া শিক্ষা বঞ্চিত ওই এলাকাগুলোর শতশত শিশু ও অভিভাবকরা সরকারি ব্যবস্থাপনায় ওই এলাকায় একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন করার দাবি জানান।
টাঙ্গুয়ার হাওর ওয়াচ-টাওয়ার এলাকার সুবিধাবঞ্চিত শিশুরা জানান তাদের এলাকায় কোন প্রাথমিক বিদ্যালয় না থাকায় দুরের স্কুলে গিয়ে পড়তে হয়।হেমন্তে একটি নদী পার হয়ে পায়ে হেঁটে স্কুলে যেতে প্রায় ঘন্টাব্যাপী সময় লাগে।এছাড়াও  বর্ষায় দেড় থেকে দুই কিলোমিটার দূরে স্কুলে যেতে হলে টাঙ্গুয়ার হাওরের উত্তাল ঢেউয়ের মধ্যে ছোট-ছোট নৌকায় যেতে হয় এতে করে অনেক সময় দুর্ঘটনারও শিকার হতে হয়।এ জন্য বেশিরভাগ শিশুরা স্কুলে ভর্তিই হয়নি।তাই এলাকার শিশুদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে উপজেলার শ্রীপুর উত্তর ইউনিয়নের টাঙ্গুয়ার হাওর ওয়াচ-টাওয়ার এলাকায় যেন একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেয় সরকার এমনটাই দাবি করেন ওই এলাকার সুবিধাবঞ্চিত শিশু-কিশোর।
টাঙ্গুয়ার হাওর পাড়ের গোলাবাড়ি গ্রামের হাওর বিলাস রিসোর্ট এর মালিক খসরুল আলম জানান আমাদের গোলাবাড়ি জয়পুর, জয়পুর নতুন হাটিসহ কয়েকটি গ্রামের প্রায় কয়েক শতাধিক পরিবারের বসবাস। আমাদের এলাকায় কোন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় না থাকায় আমাদের শিশুরা তাদের মৌলিক শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।অধিকাংশ শিশুই পূর্বপুরুষদের ন্যায় নিরক্ষর রয়ে যাচ্ছে।শিক্ষার অভাবে বাল্যবিবাহ শিশু শ্রম ও বিভিন্ন অপরাধে যুক্ত হচ্ছে শিশুরা।ওই এলাকায় সরকারি ব্যবস্থাপনায় একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন হলে আমাদের শিশুরাও তাদের শিক্ষার মৌলিক অধিকার হতে বঞ্চিত হবে না বলে অভিমত প্রকাশ করেন তিনি।তিনি জানান একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জন্য আমরা জনপ্রতিনিধিসহ সরকারের উপরস্থ কর্মকর্তাদের কাছে বহুবার যোগাযোগ করেছি।আমরা বিদ্যালয়ের জন্য আইন মোতাবেক যতটুকু জায়গা প্রয়োজন সেই প্রয়োজনীয় জায়গা দিতেও আমরা ইচ্ছা পোষণ করেছি।এতে মাঝেমধ্যে আশ্বাস পেলেও আলোরমুখ দেখিনি আমরা।
পার্শ্ববর্তী জয়পুর গ্রামের মহশীন মিয়া জানান আমাদের বাপদাদারা শিক্ষার মৌলিক অধিকার হতে বঞ্চিত ছিল,একই ভাবে আমরাও বঞ্চিত ছিলাম,এখন আমাদের সন্তানদের ভবিষ্যত চিন্তা করে আমাদের এলাকায় একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জন্য জনপ্রতিনিধিসহ সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে যোগাযোগ করেছি,এতে আশার বাণী আমরা অনেক শুনেছি,কিন্তু বাস্তবায়ন আজ হয়নি।তাই আমাদের সন্তানদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে আমাদের এলাকায় একটা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দাবি জানাই।
এ ব্যাপারে ছিলানী তাহিরপুর অবস্থানরত জয়পুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হাদিউজ্জামান জানান জয়পুর,গোলাবাড়ি ও জয়পুর নতুন হাটির শিশুরা বর্ষায় টাঙ্গুয়ার হাওরের উত্তাল ঢেউয়ের কারনে বিদ্যালয়ে আসতে পারেনা এছাড়াও হেমন্তে দুইটা নদী পার হয়ে প্রায় দেড় দুই কিলোমিটার দূরে আসতে হয়।এ জন্য অধিকাংশ শিশু বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়নি।যারা ভর্তি হয়েছে তারাও নিয়মিত ক্লাসে আসেনি,বাড়ি বাড়ি গিয়ে অভিভাবকদের কতবার বুঝিয়ে বলেছি তবুও সুফল হয়নি।
তাহিরপুর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আবুল খয়ার বলেন আমাদের কিছুই করার নেই যদি সরকার প্রকল্প দেয়,তাহলে আমরা বিচ্ছিন্ন অংশে বিদ্যালয় স্থাপন করার প্রস্তাব দেই।এছাড়া আমাদের পক্ষে কিছুই করার নেই।
ট্যাগস :
আপডেট : ০৫:৩৭:৩১ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩
১০৭ বার পড়া হয়েছে

প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অভাবে মৌলিক শিক্ষা হতে বঞ্চিত হাওর পাড়ের শিশুরা

আপডেট : ০৫:৩৭:৩১ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩

 

সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার উপজেলার টাঙ্গুয়ার হাওর ওয়াচ-টাওয়ার এলাকার জয়পুর, গোলাবাড়ি ও জয়পুর নতুনহাটি গ্রামে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অভাবে প্রাথমিক শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে শিশুরা।এতে পড়াশোনা থেকে পিছিয়ে পড়া শিশুরা সামান্য টাকার বিনিময়ে টাঙ্গুয়ার হাওরে ঘুরতে পর্যটকদের গান গেয়ে বিনোদন দেওয়াসহ ঝুঁকে পড়ছে বিভিন্ন শিশু শ্রমে। শুধু তাই নয় ওই এলাকায় বাড়ছে বাল্যবিবাহসহ মাদকাসক্তের মতো মারাত্মক অপরাধ।
স্থানীয়রা জানান টাঙ্গুয়ার হাওর ওয়াচ-টাওয়ার সংলগ্ন জয়পুর, গোলাবাড়ি ও জয়পুর নতুনহাটি এলাকায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অভাবে প্রায় সহস্রাধিক সুবিধাবঞ্চিত শিশু কিশোর মৌলিক শিক্ষার আলো থেকে  বঞ্চিত হচ্ছে।প্রাথমিক শিক্ষার ব্যবস্থা না থাকায় পূর্বপুরুষের ন্যায় নিরক্ষর রয়ে যাচ্ছে ওই এলাকার অধিকাংশ শিশু-কিশোর।শিক্ষার অভাবে বাড়ছে শিশু শ্রম বাল্যবিবাহ ও মাদকাসক্তের মতো  মারাত্মক অপরাধ।স্কুলে না  যাওয়া শিশুদের দিন কাটছে সামান্য টাকার বিনিময়ে টাঙ্গুয়ার হাওরে ঘুরতে আসা পর্যটকদের গান গেয়ে বিনোদন ও ওয়াচ-টাওয়ার এলাকায় আড্ডায়।সরকারি শিক্ষা প্রকল্পের সুফল না পাওয়া শিক্ষা বঞ্চিত ওই এলাকাগুলোর শতশত শিশু ও অভিভাবকরা সরকারি ব্যবস্থাপনায় ওই এলাকায় একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন করার দাবি জানান।
টাঙ্গুয়ার হাওর ওয়াচ-টাওয়ার এলাকার সুবিধাবঞ্চিত শিশুরা জানান তাদের এলাকায় কোন প্রাথমিক বিদ্যালয় না থাকায় দুরের স্কুলে গিয়ে পড়তে হয়।হেমন্তে একটি নদী পার হয়ে পায়ে হেঁটে স্কুলে যেতে প্রায় ঘন্টাব্যাপী সময় লাগে।এছাড়াও  বর্ষায় দেড় থেকে দুই কিলোমিটার দূরে স্কুলে যেতে হলে টাঙ্গুয়ার হাওরের উত্তাল ঢেউয়ের মধ্যে ছোট-ছোট নৌকায় যেতে হয় এতে করে অনেক সময় দুর্ঘটনারও শিকার হতে হয়।এ জন্য বেশিরভাগ শিশুরা স্কুলে ভর্তিই হয়নি।তাই এলাকার শিশুদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে উপজেলার শ্রীপুর উত্তর ইউনিয়নের টাঙ্গুয়ার হাওর ওয়াচ-টাওয়ার এলাকায় যেন একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেয় সরকার এমনটাই দাবি করেন ওই এলাকার সুবিধাবঞ্চিত শিশু-কিশোর।
টাঙ্গুয়ার হাওর পাড়ের গোলাবাড়ি গ্রামের হাওর বিলাস রিসোর্ট এর মালিক খসরুল আলম জানান আমাদের গোলাবাড়ি জয়পুর, জয়পুর নতুন হাটিসহ কয়েকটি গ্রামের প্রায় কয়েক শতাধিক পরিবারের বসবাস। আমাদের এলাকায় কোন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় না থাকায় আমাদের শিশুরা তাদের মৌলিক শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।অধিকাংশ শিশুই পূর্বপুরুষদের ন্যায় নিরক্ষর রয়ে যাচ্ছে।শিক্ষার অভাবে বাল্যবিবাহ শিশু শ্রম ও বিভিন্ন অপরাধে যুক্ত হচ্ছে শিশুরা।ওই এলাকায় সরকারি ব্যবস্থাপনায় একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন হলে আমাদের শিশুরাও তাদের শিক্ষার মৌলিক অধিকার হতে বঞ্চিত হবে না বলে অভিমত প্রকাশ করেন তিনি।তিনি জানান একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জন্য আমরা জনপ্রতিনিধিসহ সরকারের উপরস্থ কর্মকর্তাদের কাছে বহুবার যোগাযোগ করেছি।আমরা বিদ্যালয়ের জন্য আইন মোতাবেক যতটুকু জায়গা প্রয়োজন সেই প্রয়োজনীয় জায়গা দিতেও আমরা ইচ্ছা পোষণ করেছি।এতে মাঝেমধ্যে আশ্বাস পেলেও আলোরমুখ দেখিনি আমরা।
পার্শ্ববর্তী জয়পুর গ্রামের মহশীন মিয়া জানান আমাদের বাপদাদারা শিক্ষার মৌলিক অধিকার হতে বঞ্চিত ছিল,একই ভাবে আমরাও বঞ্চিত ছিলাম,এখন আমাদের সন্তানদের ভবিষ্যত চিন্তা করে আমাদের এলাকায় একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জন্য জনপ্রতিনিধিসহ সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে যোগাযোগ করেছি,এতে আশার বাণী আমরা অনেক শুনেছি,কিন্তু বাস্তবায়ন আজ হয়নি।তাই আমাদের সন্তানদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে আমাদের এলাকায় একটা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দাবি জানাই।
এ ব্যাপারে ছিলানী তাহিরপুর অবস্থানরত জয়পুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হাদিউজ্জামান জানান জয়পুর,গোলাবাড়ি ও জয়পুর নতুন হাটির শিশুরা বর্ষায় টাঙ্গুয়ার হাওরের উত্তাল ঢেউয়ের কারনে বিদ্যালয়ে আসতে পারেনা এছাড়াও হেমন্তে দুইটা নদী পার হয়ে প্রায় দেড় দুই কিলোমিটার দূরে আসতে হয়।এ জন্য অধিকাংশ শিশু বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়নি।যারা ভর্তি হয়েছে তারাও নিয়মিত ক্লাসে আসেনি,বাড়ি বাড়ি গিয়ে অভিভাবকদের কতবার বুঝিয়ে বলেছি তবুও সুফল হয়নি।
তাহিরপুর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আবুল খয়ার বলেন আমাদের কিছুই করার নেই যদি সরকার প্রকল্প দেয়,তাহলে আমরা বিচ্ছিন্ন অংশে বিদ্যালয় স্থাপন করার প্রস্তাব দেই।এছাড়া আমাদের পক্ষে কিছুই করার নেই।