০৭:৩০ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বিজ্ঞপ্তি

শিক্ষকদের আন্দোলন সংগ্রামে শিক্ষার্থীরা বঞ্চিত হচ্ছে তাদের ক্লাশ থেকে, আর কতোদিন রাজপথে?

মোঃ বেল্লাল হাওলাদার

 

ঢাকার রাজপথ বর্তমানে বেশ উত্তপ্ত। একদিকে রাজনৈতিক দলগুলো বিভিন্ন ইস্যুতে মিছিল মিটিং সমাবেশ করছে অন্যদিকে আমাদের দেশের এমপিওভুক্ত মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা গত ১১ জুলাই থেকে ঢাকার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে রোড অবরোধ করে “মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণের দাবিতে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি পালন করছে। ভাবতে ভীষণ কষ্ট লাগছে বিদ্যালয় তালা ঝুলিয়ে ক্লাশ বন্ধ রেখে দাবি আদায়ের জন্য হাজার হাজার শিক্ষক-শিক্ষিকা খেয়ে না খেয়ে প্রচন্ড গরমের নির্মম যন্ত্রণা সহ্য করে রাজপথে গলা ফাটিয়ে চিৎকার করছে! ঘোষণা দিয়েছে যতদিন দাবি আদায় না হবে ততদিন রাজপথে থাকবে। এই আন্দোলন করতে গিয়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে কোন কোন শিক্ষক লাঞ্ছিতও হয়েছেন এটা অত্যন্ত লজ্জাজনক বিষয়। যারা শিক্ষকের গায়ে হাত তুলছেন তারা তো কোন না কোন শিক্ষককের ছাত্র ছিল তাদের হাত ধরেই আজ সমাজের একজন প্রতিষ্ঠিত মানুষ হিসেবে তৈরি হয়েছে। আসলে আমরা মুখেই বলি একজন শিক্ষক সমাজের সম্মানিত ব্যক্তি বাস্তবতায় দেখা যায় একেবারে ভিন্নরূপ। সমাজে একজন সম্মানিত ব্যক্তির সম্মানটা বজায় রাখা যেমনি জরুরি তেমনি সম্মানিত শিক্ষিত ব্যক্তির আচার-আচরণ সুন্দর ও মার্জিত থাকা অবশ্যই জরুরি।

সরকার নতুন শিক্ষাক্রমে পাঠ্যবই, পরীক্ষা পদ্ধতি ও শ্রেণি কার্যক্রম নিয়ে মানসম্মত কিছু উদ্যেগ গ্রহণ করেছে কিন্তু যারা নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন করবেন তারা আজ জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বসে শিক্ষা জাতীয়করণের দাবিতে বিক্ষোভ করে চলেছেন। আমাদের সকলের জানা আছে শিক্ষকদের অক্লান্ত পরিশ্রমেই একটি সভ্য, শিক্ষিত ও মেধাবী জাতি গড়ে উঠে। বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়তে হলে একটি স্থায়ী শিক্ষা কাঠামো প্রয়োজন, সেই স্থায়ী শিক্ষা কাঠামোর জন্য প্রয়োজন যোগ্য শিক্ষক আর যোগ্য শিক্ষকের জন্য প্রয়োজন উপযুক্ত সম্মানী ও মর্যাদা। সে সম্মানী আদায়ের দাবিতে তারা তাদের কথা বলতেই পারে তারজন্য নির্দিষ্ট একটি প্লাটফর্ম আছে নির্দিষ্ট একটি জায়গা আছে সেখানে করুক তাতে কোন আপত্তি নেই কিন্তু ঢাকার প্রাণকেন্দ্র জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ব্যস্ততম সড়কে দিনভর জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করে দাবি আদায়ের কথা বলা এটা শিক্ষকের পক্ষে কি মানায়.? তারা তো মানুষ গড়ার কারিগর এইসময় থাকবে তারা ক্লাশে ব্যস্ত। কারণ বছর প্রায় শেষ আর কয়েকটি মাস আছে সামনে, এই সময়ে ক্লাশ বন্ধ করে তারা রাস্তায় সংগ্রাম করে সময় কাটাচ্ছে এর ফলে ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষা কার্যক্রম।

জরিপে উঠে আসে সারাদেশে মাধ্যমিকস্তরে ২০ হাজারের অধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তার মধ্যে ৬৮৪ টি সরকারি আর বাকিগুলো বেসরকারি। সরকারি-বেসরকারি সর্বমোট শিক্ষার্থী ১ কোটি ১ লক্ষ ৯০ হাজার ২২ জন আর শিক্ষক-শিক্ষিকা রয়েছে প্রায় পৌনে ৩ লক্ষের মতো। এই পৌনে তিন লক্ষ শিক্ষকদের হাতে আমাদের আগামীর ভবিষ্যত ১ কোটি ১ লক্ষ ৯০ হাজার ২২ জন। শিক্ষকদের আন্দোলন সংগ্রামের কারণে এই শিক্ষার্থীরা বঞ্চিত হচ্ছে তাদের ক্লাশ থেকে। একবার ভাবুন এই ক্ষতি কার হচ্ছে? শিক্ষক? শিক্ষার্থীর না রাষ্ট্রের? সহজভাবে ভাবলেই বোঝা যায়, এতে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে আমাদের আগামীর প্রজন্ম, আগামীর ভবিষ্যত। বিষয়টি আমি ব্যক্তিগতভাবে একেবারেই মানতে পারছি না। আন্দোলন সংগ্রাম করে যদি শিক্ষকরা তাদের দাবি আদায় করতে না পারে তাহলে কি শিক্ষার্থীরা আলোর মুখ দেখতে পারবে? আমি তো দেখছি তাদের সামনে অন্ধকার! নতুন শিক্ষাক্রমে এরা এখনও তেমন কিছু বুঝে উঠতে মোটেও পারেনি এ মুহূর্তে তাদের দরকার শিক্ষকদের সরাসরি তত্ত্বাবধান কিন্তু কোথায় আজ শিক্ষক? স্কুল বন্ধ রেখে দাবি আদায় করা কি সম্ভব.? আমি মনে করি মোটেও নয়। বর্তমান সরকার তো শিক্ষাবান্ধব সরকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের যে সমস্ত উন্নয়ন হয়েছে তা এ সরকারের আমলেই হয়েছে এটা অবশ্যই মানতে হবে। সরকার ধারাবাহিকভাবে এমপিওভুক্ত ও জাতীয়করণ করছে বা যেগুলো হয়নি পর্যায়ক্রমে হবে। এরজন্য কেন শিক্ষকদের বারবার ঢাকার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে দাঁড়াতে হবে.? এর আগেও আমরা দেখেছি করোনাকালীন সময় কেটে যাওয়ার পর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যখন খুললো তখন শিক্ষকরা দল বেঁধে দাঁড়িয়েছিল প্রেসক্লাবে দাবি আদায়ের জন্য। লক্ষ করলে দেখা যায় স্কুল বন্ধ রেখে সারা বছরই শিক্ষকদের কোন না কোন অংশ তাদের দাবি আদায়ে প্রেসক্লাবে অবস্থান করে এটা মোটেও কাম্য নয়। এই কথাগুলো বলা মানে এই নয় যে, আমি শিক্ষকদের বিপক্ষে। শিক্ষকের শিক্ষাদানে আমিও কলম ধরা শিখতে পারছি তাইতো পক্ষে-বিপক্ষে দু’চার লাইন লিখে মনের ভাব প্রকাশ করতে পারছি। তারা যে দাবি তুলছেন এ দাবি যৌক্তিক দাবি তবে আর কতোদিন শিক্ষকরা রাজপথে থাকবে.? এভাবে যদি শিক্ষকরা দিনের পর দিন রাজপথে অবস্থান করে তাহলে তো ধ্বংস হয়ে যাবে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা। এই কথাটা ভাবা উচিত।

যতটুকু জানতে পেরেছি জাতীয়করণের এই দাবিটি সরকারের উচ্চ মহলও যৌক্তিক মনে করেন। তাহলে বাধা কোথায়? কেন জাতীয়করণ হয় না? এর সমাধান কার কাছে.? শিক্ষামন্ত্রীর সাথে আন্দোলনরত শিক্ষকদের আলোচনা ‘ফলপ্রসূ হয়নি’ এর জন্য প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপই যথেষ্ট মনে করেন শিক্ষকরা। তারা মনেপ্রাণে বিশ্বাস করে যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই পারবেন শিক্ষা ব্যবস্থাকে একযোগে জাতীয়করণ করতে। যিনি শিক্ষার মান উন্নতি করেছেন ২০১৪ সালে এক ঘোষণায় ২৬ হাজার ১৯৩টি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ করেছেন। তাইতো প্রাথমিক স্তরের কোন কোন স্কুলের শিক্ষকরা স্বাধীনভাবে ক্লাশ করছে। এখানে কিছু কথা লেখতেই হয়, না লিখে পারছি না। ক্লাশ না করেও হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করেছে এমন ঘটনাও ঘটেছে। অনেকের বিরুদ্ধে কোচিং বাণিজ্য, দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ রয়েছে। সম্প্রতি পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া উপজেলার মহিপুর থানা সদরের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকা তৃপ্তি রানীর বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগের নিউজ বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় সহ অনলাইন পোর্টালে প্রকাশিত হয়েছে। এগুলো তো সরকারের উচ্চ পর্যায়ে দেখছে। প্রাথমিক স্তরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো জাতীয়করণ সরকার করেছিল এই সমস্ত কর্মকাণ্ড দেখার জন্য.?

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এদেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে একদিনে ১০০টি সড়ক সেতুর উদ্বোধন করেছেন এছাড়াও দেশ বিদেশের সকল ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করে পদ্মা সেতুর মত একটি বৃহৎ প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হয়েছেন, এটা বুঝতে হবে তাঁর পক্ষে শিক্ষা ব্যবস্থা জাতীয়করণ করা তেমন কোন বিষয় নয় শুধু মাত্র সময়ের ব্যাপার। বেশ কয়েকদিন আগে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী একটি অনুষ্ঠানে বলেছেন, “কোথায় কোথায় সরকারি করতে হবে বা করতে হবে না, সেটাও তো একটা নীতিমালার ভিত্তিতে হবে। যখন তখন যে কেউ দাবি করলে সেটা পূরণ করা সম্ভব নয়”। এই কথায় সহজে বুঝা যায় যে, সমগ্র শিক্ষা ব্যবস্থাকে জাতীয়করণ করতে যে পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন তা এই মুহুর্তে সরকারের আছে কি-না সে বিষয়টি নিয়েও ভাবতে হবে এছাড়াও অন্যান্য কি কি চ্যালেঞ্জসমুহ রয়েছে সেটা নিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন। সেটা তো সকলকে অনুধাবন করতে হবে, বুঝতে হবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছে তো আছে সেক্ষেত্রে অবশ্যই নীতিমালার ভিত্তিতে গবেষণামূলক জরিপের পরে হতে পারে। আমি মনে করি শিক্ষকদের উচিত অবশ্যই শিক্ষার গুণগতমান ঠিক রাখার জন্য শিক্ষার্থীদের উন্নতি ভবিষ্যতের জন্য রাজপথ ছেড়ে ক্লাসের ফিরে যাওয়া।

জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমান সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন। তিনি জানতেন যে, সোনার বাংলা গড়ার প্রথম এবং প্রধান সোপান হলো শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়ন। তাইতো তিনি ১৯৭৩ খ্রিষ্টাব্দে এক ঘোষণায় ৩৭ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ করেছিলেন। ১২ হাজার নতুন বিদ্যালয় স্থাপন ও প্রায় অর্ধ লক্ষ শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছিলেন এবং বিনামূল্যে বই বিতরণসহ নানা সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করেছিলেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তো বঙ্গবন্ধুরই কন্যা তিনিও তাঁর বাবার আদর্শ বুকে ধারণ করে এই বাংলাদেশকে সমৃদ্ধ করতে পেরেছেন এবং ভবিষ্যতেও পারবেন বলে বিশ্বাস করি তাইতো ঘোষণা দিয়েছেন স্মার্ট বাংলাদেশের। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উপর আস্থা ও বিশ্বাস রেখে শিক্ষকদের উচিত স্ব স্ব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিরে গিয়ে মনোযোগ দিয়ে ক্লাশ করা তা না হলে চরম হুমকিতে পড়বে দেশের শিক্ষার গুণগত মান ও সার্বিক অগ্রগতি। শিক্ষকের ন্যায্য প্রাপ্যটুকু নিশ্চিত করবে এটা আমারও প্রত্যাশা।

লেখক- মোঃ বেল্লাল হাওলাদার
কবি ও সাংবাদিক

ট্যাগস :
আপডেট : ১০:৪৯:৫১ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২২ জুলাই ২০২৩
২২০ বার পড়া হয়েছে

শিক্ষকদের আন্দোলন সংগ্রামে শিক্ষার্থীরা বঞ্চিত হচ্ছে তাদের ক্লাশ থেকে, আর কতোদিন রাজপথে?

আপডেট : ১০:৪৯:৫১ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২২ জুলাই ২০২৩

 

ঢাকার রাজপথ বর্তমানে বেশ উত্তপ্ত। একদিকে রাজনৈতিক দলগুলো বিভিন্ন ইস্যুতে মিছিল মিটিং সমাবেশ করছে অন্যদিকে আমাদের দেশের এমপিওভুক্ত মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা গত ১১ জুলাই থেকে ঢাকার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে রোড অবরোধ করে “মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণের দাবিতে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি পালন করছে। ভাবতে ভীষণ কষ্ট লাগছে বিদ্যালয় তালা ঝুলিয়ে ক্লাশ বন্ধ রেখে দাবি আদায়ের জন্য হাজার হাজার শিক্ষক-শিক্ষিকা খেয়ে না খেয়ে প্রচন্ড গরমের নির্মম যন্ত্রণা সহ্য করে রাজপথে গলা ফাটিয়ে চিৎকার করছে! ঘোষণা দিয়েছে যতদিন দাবি আদায় না হবে ততদিন রাজপথে থাকবে। এই আন্দোলন করতে গিয়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে কোন কোন শিক্ষক লাঞ্ছিতও হয়েছেন এটা অত্যন্ত লজ্জাজনক বিষয়। যারা শিক্ষকের গায়ে হাত তুলছেন তারা তো কোন না কোন শিক্ষককের ছাত্র ছিল তাদের হাত ধরেই আজ সমাজের একজন প্রতিষ্ঠিত মানুষ হিসেবে তৈরি হয়েছে। আসলে আমরা মুখেই বলি একজন শিক্ষক সমাজের সম্মানিত ব্যক্তি বাস্তবতায় দেখা যায় একেবারে ভিন্নরূপ। সমাজে একজন সম্মানিত ব্যক্তির সম্মানটা বজায় রাখা যেমনি জরুরি তেমনি সম্মানিত শিক্ষিত ব্যক্তির আচার-আচরণ সুন্দর ও মার্জিত থাকা অবশ্যই জরুরি।

সরকার নতুন শিক্ষাক্রমে পাঠ্যবই, পরীক্ষা পদ্ধতি ও শ্রেণি কার্যক্রম নিয়ে মানসম্মত কিছু উদ্যেগ গ্রহণ করেছে কিন্তু যারা নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন করবেন তারা আজ জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বসে শিক্ষা জাতীয়করণের দাবিতে বিক্ষোভ করে চলেছেন। আমাদের সকলের জানা আছে শিক্ষকদের অক্লান্ত পরিশ্রমেই একটি সভ্য, শিক্ষিত ও মেধাবী জাতি গড়ে উঠে। বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়তে হলে একটি স্থায়ী শিক্ষা কাঠামো প্রয়োজন, সেই স্থায়ী শিক্ষা কাঠামোর জন্য প্রয়োজন যোগ্য শিক্ষক আর যোগ্য শিক্ষকের জন্য প্রয়োজন উপযুক্ত সম্মানী ও মর্যাদা। সে সম্মানী আদায়ের দাবিতে তারা তাদের কথা বলতেই পারে তারজন্য নির্দিষ্ট একটি প্লাটফর্ম আছে নির্দিষ্ট একটি জায়গা আছে সেখানে করুক তাতে কোন আপত্তি নেই কিন্তু ঢাকার প্রাণকেন্দ্র জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ব্যস্ততম সড়কে দিনভর জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করে দাবি আদায়ের কথা বলা এটা শিক্ষকের পক্ষে কি মানায়.? তারা তো মানুষ গড়ার কারিগর এইসময় থাকবে তারা ক্লাশে ব্যস্ত। কারণ বছর প্রায় শেষ আর কয়েকটি মাস আছে সামনে, এই সময়ে ক্লাশ বন্ধ করে তারা রাস্তায় সংগ্রাম করে সময় কাটাচ্ছে এর ফলে ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষা কার্যক্রম।

জরিপে উঠে আসে সারাদেশে মাধ্যমিকস্তরে ২০ হাজারের অধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তার মধ্যে ৬৮৪ টি সরকারি আর বাকিগুলো বেসরকারি। সরকারি-বেসরকারি সর্বমোট শিক্ষার্থী ১ কোটি ১ লক্ষ ৯০ হাজার ২২ জন আর শিক্ষক-শিক্ষিকা রয়েছে প্রায় পৌনে ৩ লক্ষের মতো। এই পৌনে তিন লক্ষ শিক্ষকদের হাতে আমাদের আগামীর ভবিষ্যত ১ কোটি ১ লক্ষ ৯০ হাজার ২২ জন। শিক্ষকদের আন্দোলন সংগ্রামের কারণে এই শিক্ষার্থীরা বঞ্চিত হচ্ছে তাদের ক্লাশ থেকে। একবার ভাবুন এই ক্ষতি কার হচ্ছে? শিক্ষক? শিক্ষার্থীর না রাষ্ট্রের? সহজভাবে ভাবলেই বোঝা যায়, এতে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে আমাদের আগামীর প্রজন্ম, আগামীর ভবিষ্যত। বিষয়টি আমি ব্যক্তিগতভাবে একেবারেই মানতে পারছি না। আন্দোলন সংগ্রাম করে যদি শিক্ষকরা তাদের দাবি আদায় করতে না পারে তাহলে কি শিক্ষার্থীরা আলোর মুখ দেখতে পারবে? আমি তো দেখছি তাদের সামনে অন্ধকার! নতুন শিক্ষাক্রমে এরা এখনও তেমন কিছু বুঝে উঠতে মোটেও পারেনি এ মুহূর্তে তাদের দরকার শিক্ষকদের সরাসরি তত্ত্বাবধান কিন্তু কোথায় আজ শিক্ষক? স্কুল বন্ধ রেখে দাবি আদায় করা কি সম্ভব.? আমি মনে করি মোটেও নয়। বর্তমান সরকার তো শিক্ষাবান্ধব সরকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের যে সমস্ত উন্নয়ন হয়েছে তা এ সরকারের আমলেই হয়েছে এটা অবশ্যই মানতে হবে। সরকার ধারাবাহিকভাবে এমপিওভুক্ত ও জাতীয়করণ করছে বা যেগুলো হয়নি পর্যায়ক্রমে হবে। এরজন্য কেন শিক্ষকদের বারবার ঢাকার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে দাঁড়াতে হবে.? এর আগেও আমরা দেখেছি করোনাকালীন সময় কেটে যাওয়ার পর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যখন খুললো তখন শিক্ষকরা দল বেঁধে দাঁড়িয়েছিল প্রেসক্লাবে দাবি আদায়ের জন্য। লক্ষ করলে দেখা যায় স্কুল বন্ধ রেখে সারা বছরই শিক্ষকদের কোন না কোন অংশ তাদের দাবি আদায়ে প্রেসক্লাবে অবস্থান করে এটা মোটেও কাম্য নয়। এই কথাগুলো বলা মানে এই নয় যে, আমি শিক্ষকদের বিপক্ষে। শিক্ষকের শিক্ষাদানে আমিও কলম ধরা শিখতে পারছি তাইতো পক্ষে-বিপক্ষে দু’চার লাইন লিখে মনের ভাব প্রকাশ করতে পারছি। তারা যে দাবি তুলছেন এ দাবি যৌক্তিক দাবি তবে আর কতোদিন শিক্ষকরা রাজপথে থাকবে.? এভাবে যদি শিক্ষকরা দিনের পর দিন রাজপথে অবস্থান করে তাহলে তো ধ্বংস হয়ে যাবে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা। এই কথাটা ভাবা উচিত।

যতটুকু জানতে পেরেছি জাতীয়করণের এই দাবিটি সরকারের উচ্চ মহলও যৌক্তিক মনে করেন। তাহলে বাধা কোথায়? কেন জাতীয়করণ হয় না? এর সমাধান কার কাছে.? শিক্ষামন্ত্রীর সাথে আন্দোলনরত শিক্ষকদের আলোচনা ‘ফলপ্রসূ হয়নি’ এর জন্য প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপই যথেষ্ট মনে করেন শিক্ষকরা। তারা মনেপ্রাণে বিশ্বাস করে যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই পারবেন শিক্ষা ব্যবস্থাকে একযোগে জাতীয়করণ করতে। যিনি শিক্ষার মান উন্নতি করেছেন ২০১৪ সালে এক ঘোষণায় ২৬ হাজার ১৯৩টি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ করেছেন। তাইতো প্রাথমিক স্তরের কোন কোন স্কুলের শিক্ষকরা স্বাধীনভাবে ক্লাশ করছে। এখানে কিছু কথা লেখতেই হয়, না লিখে পারছি না। ক্লাশ না করেও হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করেছে এমন ঘটনাও ঘটেছে। অনেকের বিরুদ্ধে কোচিং বাণিজ্য, দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ রয়েছে। সম্প্রতি পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া উপজেলার মহিপুর থানা সদরের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকা তৃপ্তি রানীর বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগের নিউজ বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় সহ অনলাইন পোর্টালে প্রকাশিত হয়েছে। এগুলো তো সরকারের উচ্চ পর্যায়ে দেখছে। প্রাথমিক স্তরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো জাতীয়করণ সরকার করেছিল এই সমস্ত কর্মকাণ্ড দেখার জন্য.?

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এদেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে একদিনে ১০০টি সড়ক সেতুর উদ্বোধন করেছেন এছাড়াও দেশ বিদেশের সকল ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করে পদ্মা সেতুর মত একটি বৃহৎ প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হয়েছেন, এটা বুঝতে হবে তাঁর পক্ষে শিক্ষা ব্যবস্থা জাতীয়করণ করা তেমন কোন বিষয় নয় শুধু মাত্র সময়ের ব্যাপার। বেশ কয়েকদিন আগে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী একটি অনুষ্ঠানে বলেছেন, “কোথায় কোথায় সরকারি করতে হবে বা করতে হবে না, সেটাও তো একটা নীতিমালার ভিত্তিতে হবে। যখন তখন যে কেউ দাবি করলে সেটা পূরণ করা সম্ভব নয়”। এই কথায় সহজে বুঝা যায় যে, সমগ্র শিক্ষা ব্যবস্থাকে জাতীয়করণ করতে যে পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন তা এই মুহুর্তে সরকারের আছে কি-না সে বিষয়টি নিয়েও ভাবতে হবে এছাড়াও অন্যান্য কি কি চ্যালেঞ্জসমুহ রয়েছে সেটা নিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন। সেটা তো সকলকে অনুধাবন করতে হবে, বুঝতে হবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছে তো আছে সেক্ষেত্রে অবশ্যই নীতিমালার ভিত্তিতে গবেষণামূলক জরিপের পরে হতে পারে। আমি মনে করি শিক্ষকদের উচিত অবশ্যই শিক্ষার গুণগতমান ঠিক রাখার জন্য শিক্ষার্থীদের উন্নতি ভবিষ্যতের জন্য রাজপথ ছেড়ে ক্লাসের ফিরে যাওয়া।

জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমান সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন। তিনি জানতেন যে, সোনার বাংলা গড়ার প্রথম এবং প্রধান সোপান হলো শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়ন। তাইতো তিনি ১৯৭৩ খ্রিষ্টাব্দে এক ঘোষণায় ৩৭ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ করেছিলেন। ১২ হাজার নতুন বিদ্যালয় স্থাপন ও প্রায় অর্ধ লক্ষ শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছিলেন এবং বিনামূল্যে বই বিতরণসহ নানা সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করেছিলেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তো বঙ্গবন্ধুরই কন্যা তিনিও তাঁর বাবার আদর্শ বুকে ধারণ করে এই বাংলাদেশকে সমৃদ্ধ করতে পেরেছেন এবং ভবিষ্যতেও পারবেন বলে বিশ্বাস করি তাইতো ঘোষণা দিয়েছেন স্মার্ট বাংলাদেশের। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উপর আস্থা ও বিশ্বাস রেখে শিক্ষকদের উচিত স্ব স্ব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিরে গিয়ে মনোযোগ দিয়ে ক্লাশ করা তা না হলে চরম হুমকিতে পড়বে দেশের শিক্ষার গুণগত মান ও সার্বিক অগ্রগতি। শিক্ষকের ন্যায্য প্রাপ্যটুকু নিশ্চিত করবে এটা আমারও প্রত্যাশা।

লেখক- মোঃ বেল্লাল হাওলাদার
কবি ও সাংবাদিক