১০:০৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বিজ্ঞপ্তি

আপনি কি জানেন ;  মেট্রোরেলে চলাচলের  দিকনির্দেশনা প্রদানকারী কে এই নারী? 

মো. জাহিদুর রহমান: 
“ট্রেনটির গন্তব্যস্থল উত্তরা উত্তর, আমাদের পরবর্তী স্টেশন বাংলাদেশ সচিবালয় ” মেট্রোরেল চলাচলের সময় কিছু সময় পরপর অত্যন্ত সুন্দর নারী  কন্ঠের দিকনির্দেশনার  ভয়েস শোনা যায়। সকলের মধ্যে কৌতুহলের যেন শেষ নেই, সবার জিজ্ঞাসা কে দিয়েছে এই সুন্দর ও সুকন্ঠের ভয়েস নাকি কোন মেশিন জেনারেটেড ভয়েস।  ব্যস্ত নাগরিক জীবনকে সহজ করতে দুর্বার এই মেট্রোতে তার ভয়েস নির্বাচনেও হয়েছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। অবশেষে জানাগেলো এই কন্ঠ মেশিনের নয় একজন সত্যিকার রক্তমাংসের মানুষ। তার  নাম কিমিয়া অরিন। বর্তমানে কানাডাতেন থাকেন”।
কিমিয়া অরিন সম্প্রতি সংবাদ মাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন। জানান তার কণ্ঠের যাত্রাপথের ধারাবাহিকতা নিয়ে। কিমিয়া বলেন, তিনি বাংলাদেশে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কাজ করেছেন। বাংলাদেশ টেলিভিশনে ইংরেজি সংবাদ পাঠিকা হিসেবে কাজ করেছেন। কাজ করেছেন বাংলাদেশ বেতারেও।
দেশে ৯ বছর কাজ করার পর তিনি বর্তমানে মাস্টার্স করার জন্য কানাডা গিয়েছেন। আগামী বছর পড়াশোনা শেষ করবেন কিমিয়া। তার পরিবারে রয়েছেন তার স্বামী এবং ছোট ভাই। কিমিয়ার স্বামীর রয়েছে মেইক মাই ইভেন্ট নামক  ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি।
কিমিয়া বলেন, ‘আমি বাংলাদেশে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কাজ করেছি। এছাড়া, বাংলাদেশ টেলিভিশনে ও বাংলাদেশ বেতারে ইংরেজি সংবাদ পাঠিকা হিসেবে কাজ করেছি। ৯ বছর ধরে কাজ করার পর আমি কানাডায় এসেছি মাস্টার্স করার জন্য। পরিবারে রয়েছে আমার স্বামী এবং ছোট ভাই। আমার স্বামীর ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি রয়েছে এবং ছোট ভাই সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার।’
ভয়েস নিয়ে মানুষের কৌতুহল নিয়ে তিনি বলেন, ‘মাঝে মাঝে আমার বন্ধুরা আমাকে ‘স্ক্রিন শট’ পাঠাত যে এটা কি আসলেই মানুষের ভয়েস না কি মেশিন জেনারেটেড ভয়েস। শুরুর দিকে সবাইকে বললে কেউ বিশ্বাস করতো না যে এটা আমার ভয়েস। এমন কি আমার কাছের মানুষও আমার ভয়েস চিনতো না। মেট্রোরেলে ভিডিও যে মানুষ আপলোড করতো, আমি সেই লিংক দিয়ে বলতাম এটা আমি, এই ভয়েস আমি দিয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘অনেকে মজা করে সামাজিক মাধ্যমে লিখত যে -এই আপা কি বাস্তবে আছে, না কি এটা কম্পিউটারে করা। শুরুতে যখন আমি মেট্রোরেলে নিজের ভয়েস শুনি, খুবই এক্সাইটেড হয়ে গিয়েছিলাম। সবাই আমার দিকনির্দেশনা শোনার জন্য অপেক্ষা করছে, এটি দারুণ ব্যাপার মনে হয়েছে। আমি দেশের বাইরে থাকলেও যখন মনে পড়ে দেশের লোকজন আমার ভয়েসের জন্য অপেক্ষা করছে, তখন খুবই ভালো লাগে। আমি এতো দূরে থেকে দেশের জন্য সার্ভিস দিয়ে যাচ্ছি, এটা মনে পড়লেই ভালো লাগা কাজ করে।’
ভয়েস দেওয়ার শুরুর গল্প হিসেবে কিমিয়া বলেন, ‘প্রথমদিকে বিটিভির একজন রিপোর্টার আমাকে বললেন, আপনি মেট্রোরেলে ভয়েস দিতে চাইলে সিভি দিতে পারেন। আমি তার কথায় সিভি দেই। কাজের স্যাম্পল হিসেবে আমার ইউটিউব থেকে ভিডিওগুলোও দেওয়া হয়। শুরুতে হয়েছিল টিকিট ভেন্ডিং মেশিনের কাজ। তখন ছিল করোনাকালীন সময়ের মাঝের দিক। অনেকবার ভয়েস দেওয়ার পর নানাভাবে বিশ্লেষণ করে সর্বশেষ আমার ভয়েসটিই নির্বাচিত হয়।’
কিমিয়া অরিন বলেন, ‘প্রথমবার প্লাটফর্মের জন্য ভয়েস নেওয়ার পর ট্রেনের জন্য ভয়েসের কাজ করি। প্লাটফর্মের ভয়েসের জন্য অনেক  কষ্ট করা হলেও ট্রেনের জন্য সে রকম হয়নি। আর শেষের দিকে আমি এলিভ্যাটেড ও লিফটের জন্য কাজ করেছি।’
উল্লেখ্য, মেট্রোরেলের উত্তরা থেকে আগারগাঁও অংশের চলাচল শুরু হয় ২০২২ সালের ২৯ ডিসেম্বর। এর একদিন আগে ২৮ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মেট্রোরেল উদ্বোধন করেন। আর গত ৫ নভেম্বর আগারগাঁও থেকে মতিঝিল অংশে যাত্রী চলাচল শুরু হয়। এরও একদিন আগে ৪ নভেম্বর প্রকল্পের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী।
উত্তরা থেকে মতিঝিল ও কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন পর্যন্ত ২১.২৬ কিলোমিটারের পুরো রুটটি ৪০ মিনিটেরও কম সময়ে ভ্রমণ করে মেট্রোরেল প্রতি ঘণ্টায় ৬০,০০০ যাত্রী বহন করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ট্যাগস :
আপডেট : ০৪:২৬:৪১ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৪
৩১৪ বার পড়া হয়েছে

আপনি কি জানেন ;  মেট্রোরেলে চলাচলের  দিকনির্দেশনা প্রদানকারী কে এই নারী? 

আপডেট : ০৪:২৬:৪১ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৪
“ট্রেনটির গন্তব্যস্থল উত্তরা উত্তর, আমাদের পরবর্তী স্টেশন বাংলাদেশ সচিবালয় ” মেট্রোরেল চলাচলের সময় কিছু সময় পরপর অত্যন্ত সুন্দর নারী  কন্ঠের দিকনির্দেশনার  ভয়েস শোনা যায়। সকলের মধ্যে কৌতুহলের যেন শেষ নেই, সবার জিজ্ঞাসা কে দিয়েছে এই সুন্দর ও সুকন্ঠের ভয়েস নাকি কোন মেশিন জেনারেটেড ভয়েস।  ব্যস্ত নাগরিক জীবনকে সহজ করতে দুর্বার এই মেট্রোতে তার ভয়েস নির্বাচনেও হয়েছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। অবশেষে জানাগেলো এই কন্ঠ মেশিনের নয় একজন সত্যিকার রক্তমাংসের মানুষ। তার  নাম কিমিয়া অরিন। বর্তমানে কানাডাতেন থাকেন”।
কিমিয়া অরিন সম্প্রতি সংবাদ মাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন। জানান তার কণ্ঠের যাত্রাপথের ধারাবাহিকতা নিয়ে। কিমিয়া বলেন, তিনি বাংলাদেশে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কাজ করেছেন। বাংলাদেশ টেলিভিশনে ইংরেজি সংবাদ পাঠিকা হিসেবে কাজ করেছেন। কাজ করেছেন বাংলাদেশ বেতারেও।
দেশে ৯ বছর কাজ করার পর তিনি বর্তমানে মাস্টার্স করার জন্য কানাডা গিয়েছেন। আগামী বছর পড়াশোনা শেষ করবেন কিমিয়া। তার পরিবারে রয়েছেন তার স্বামী এবং ছোট ভাই। কিমিয়ার স্বামীর রয়েছে মেইক মাই ইভেন্ট নামক  ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি।
কিমিয়া বলেন, ‘আমি বাংলাদেশে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কাজ করেছি। এছাড়া, বাংলাদেশ টেলিভিশনে ও বাংলাদেশ বেতারে ইংরেজি সংবাদ পাঠিকা হিসেবে কাজ করেছি। ৯ বছর ধরে কাজ করার পর আমি কানাডায় এসেছি মাস্টার্স করার জন্য। পরিবারে রয়েছে আমার স্বামী এবং ছোট ভাই। আমার স্বামীর ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি রয়েছে এবং ছোট ভাই সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার।’
ভয়েস নিয়ে মানুষের কৌতুহল নিয়ে তিনি বলেন, ‘মাঝে মাঝে আমার বন্ধুরা আমাকে ‘স্ক্রিন শট’ পাঠাত যে এটা কি আসলেই মানুষের ভয়েস না কি মেশিন জেনারেটেড ভয়েস। শুরুর দিকে সবাইকে বললে কেউ বিশ্বাস করতো না যে এটা আমার ভয়েস। এমন কি আমার কাছের মানুষও আমার ভয়েস চিনতো না। মেট্রোরেলে ভিডিও যে মানুষ আপলোড করতো, আমি সেই লিংক দিয়ে বলতাম এটা আমি, এই ভয়েস আমি দিয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘অনেকে মজা করে সামাজিক মাধ্যমে লিখত যে -এই আপা কি বাস্তবে আছে, না কি এটা কম্পিউটারে করা। শুরুতে যখন আমি মেট্রোরেলে নিজের ভয়েস শুনি, খুবই এক্সাইটেড হয়ে গিয়েছিলাম। সবাই আমার দিকনির্দেশনা শোনার জন্য অপেক্ষা করছে, এটি দারুণ ব্যাপার মনে হয়েছে। আমি দেশের বাইরে থাকলেও যখন মনে পড়ে দেশের লোকজন আমার ভয়েসের জন্য অপেক্ষা করছে, তখন খুবই ভালো লাগে। আমি এতো দূরে থেকে দেশের জন্য সার্ভিস দিয়ে যাচ্ছি, এটা মনে পড়লেই ভালো লাগা কাজ করে।’
ভয়েস দেওয়ার শুরুর গল্প হিসেবে কিমিয়া বলেন, ‘প্রথমদিকে বিটিভির একজন রিপোর্টার আমাকে বললেন, আপনি মেট্রোরেলে ভয়েস দিতে চাইলে সিভি দিতে পারেন। আমি তার কথায় সিভি দেই। কাজের স্যাম্পল হিসেবে আমার ইউটিউব থেকে ভিডিওগুলোও দেওয়া হয়। শুরুতে হয়েছিল টিকিট ভেন্ডিং মেশিনের কাজ। তখন ছিল করোনাকালীন সময়ের মাঝের দিক। অনেকবার ভয়েস দেওয়ার পর নানাভাবে বিশ্লেষণ করে সর্বশেষ আমার ভয়েসটিই নির্বাচিত হয়।’
কিমিয়া অরিন বলেন, ‘প্রথমবার প্লাটফর্মের জন্য ভয়েস নেওয়ার পর ট্রেনের জন্য ভয়েসের কাজ করি। প্লাটফর্মের ভয়েসের জন্য অনেক  কষ্ট করা হলেও ট্রেনের জন্য সে রকম হয়নি। আর শেষের দিকে আমি এলিভ্যাটেড ও লিফটের জন্য কাজ করেছি।’
উল্লেখ্য, মেট্রোরেলের উত্তরা থেকে আগারগাঁও অংশের চলাচল শুরু হয় ২০২২ সালের ২৯ ডিসেম্বর। এর একদিন আগে ২৮ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মেট্রোরেল উদ্বোধন করেন। আর গত ৫ নভেম্বর আগারগাঁও থেকে মতিঝিল অংশে যাত্রী চলাচল শুরু হয়। এরও একদিন আগে ৪ নভেম্বর প্রকল্পের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী।
উত্তরা থেকে মতিঝিল ও কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন পর্যন্ত ২১.২৬ কিলোমিটারের পুরো রুটটি ৪০ মিনিটেরও কম সময়ে ভ্রমণ করে মেট্রোরেল প্রতি ঘণ্টায় ৬০,০০০ যাত্রী বহন করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।