০৯:৪৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বিজ্ঞপ্তি

জলবায়ু পরিবর্তন অভিঘাতে ফকিরহাটে কমেছে নারকেলের ফলন

ফকিরহাট (বাগেরহাট) প্রতিনিধি

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আশঙ্কাজনক হারে কমেছে নারকেলের ফলন। নারকেলের রাজধানী হিসেবে খ্যাত বাগেরহাট জেলার ফকিরহাটে জলবায়ু পরিবর্তন অভিঘাতে উষ্ণতা ও শীতের ভারসম্য নষ্ট, লবনক্ততার সহনশীল মাত্রা অতিক্রম, হোয়াইট ফ্লাইয়ের আক্রমণ, স্যুটি মোল্ড ছত্রাক, শূতিমূল সহ নানা রোগ ব্যাধির কারণে নারকেল উৎপাদন বর্তমানে প্রান্তিক পর্যায়ে পৌঁছেছে।

বাগেরহাট জেলায় সবচেয়ে বেশি নারকেল উৎপাদন হয় ফকিরহাট উপজেলায়। কৃষি সম্প্রসারণ অফিসের তথ্য মতে, বানিজ্যিক ভিত্তিতে বাগান না থাকলেও ফকিরহাট উপজেলায় উৎপাদিত ৪১ ধরণের অর্থকরী ফল জাতীয় ফসলের মধ্যে সবচেয়ে বেশি পরিমান জমিতে নারকেল গাছ রয়েছে। উপজেলার প্রায় প্রতিটি বাড়ির সীমানায়, ঘেরের পাড়ে, রাস্তার পাশে নারকেল গাছ আছে। সরকারি হিসেবে ৪০০ হেক্টর জমিতে নারকেল চাষের কথা বলা হলেও জমির প্রকৃত পরিমান আরো বেশি বলে মনে করেন স্থানীয় লোকজন। তবে বর্তমানে নারকেল গাছে ফলনের হার ৪০ থেকে ৫০ ভাগ কমেছে বলে জানা গেছে।

কৃষি গবেষণা ফাউন্ডেশন (কেজিএফ) এর তথ্য মতে, ২০১৯ সালে রুগোস স্পাইরালিং হোয়াইটফ্লাই নামের একটি বিদেশী পোকা উষ্ণতা বৃদ্ধির কারণে বাংলাদেশের নারকেল গাছে ব্যাপকভাবে আক্রমণ শুরু করে। ক্যারবীয় দ্বীপের এ পোকার ২০১৬ সাল থেকে ভারতের বিভিন্ন প্রদেশে আক্রমণের পর বাংলাদেশেও বিস্তার লাভ করে। পরবর্তীতে এ পোকা অভিযোজন করে দ্রæত আক্রমণে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষোভাবে দেশের নারকেল উৎপাদন আশঙ্কাজনক হারে কমিয়ে দেয়। স্পাইরালিং হোয়াইটফ্লাই নারকেল গাছে পরোক্ষভাবে স্যুটি মোল্ড নামের ছত্রাককে আক্রমনে সহযোগীতা করায় নারকেল গাছ দ্রæত সজিবতা হারিয়ে উৎপাদন হ্রাস করে।

স্থানীয় চাষি, নারকেল ব্যবসায়ী ও শিল্প উদ্যোক্তাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বাগেরহাট জেলার প্রায় অর্ধশত নারকেল কেন্দ্রিক শিল্প কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। এরমধ্যে রয়েছে নারকেল ছোবড়া থেকে তৈরী ম্যাট্রেস কারখানা, নারকেলের মালা থেকে তৈরী উন্নতমানের মশার কয়েল তৈরীর কাঁচামাল কারখানা, নারকেল মালা দিয়ে সো-পিস তৈরীর কুটির শিল্প, নারকেল তেল কারখানা সহ বিভিন্ন কুটির শিল্প।

বাগেরহাট বিসিকের শিল্পনগরী কর্মকর্তা (আ.দা) ইউনুস আল রাফি জানান, বছর দশেক আগেও বাগেরহাট বিসিক নগরীতে ১৯টি নারকেল তেল কারখানায় নিয়মিত তেল উৎপাদন হতো। কিন্তু বর্তমানে ৪টি কারখানা স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে গেছে। বাকী ১৫টি কারখানা বছরের বেশিরভাগ সময় কাঁচা মালের অভাবে বন্ধ থাকে। বাগেরহাটের ফকিরহাটসহ বিভিন্ন উপজেলা, খুলনা, বরিশাল, ভোলা, নোয়াখালী, কুমিল্লা ও কক্সবাজার থেকে নারকেল সংগ্রহ করে অর্ডার মাফিক উৎপাদনের জন্য মাঝে মাঝে কারখানা চালু করে। তিনি আরও বলেন, দেশে বাজারে চাহিদাকৃত কয়েক হাজার কোটি টাকার নারকেল তেল এখন আমদানী নির্ভর হয়ে পড়েছে।

শুক্রবার (৯ ফেব্রæয়ারি) সরেজমিনে উপজেলার লখপুর, পিলজংগ, বাহিরদিয়াসহ বিভিন্ন স্থানে গিয়ে দেখা গেছে শতশত নারকেল গাছে প্রায় নারকেল শূণ্য অবস্থা। জাহিদুল ইসলাম, শেখ মনিরুজ্জামান, স্বপন বাগচিসহ উপজেলার একাধিক চাষি ও নারকেল ব্যসবায়ীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ২০০৭ সালে সুপার সাইক্লেন সিডর ও ২০০৯ সালে আইলার পর থেকে নারকেল উৎপাদন কমতে শুরু করে।

বাংলাদেশ সরকারের ঘুর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচী (সিপিপি) এর তথ্য অনুযায়ী ২০০৭, ২০০৯, ২০১৬, ২০১৭,  ২০১৯, ২০২১ ও ২০২৩ সালে উপর্যপুরি প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে উপকূলীয় এলাকার ইকো-সিন্টেম। সিডর, আইলা, মোখা, ইয়াসের মতো ক্রান্তীয় ঘুর্ণিঝড়ের কারণে এ অঞ্চলের আবহাওয়ায় বিরুপ প্রভাব ফেলেছে। তাপমাত্রা ও বৃষ্টিপাতের সময়কাল, তীব্রতা ও পৌণপুনিকতার হেরফেরের জন্য নারকেল গাছে বিভিন্ন রোগ বালাই দেখা দিয়েছে। চাষিরা জানান, নারিকেলের কুঁড়ি পচা, ফল পচা, ফল ঝড়া, পাতায় দাগ পড়া, ছোট পাতা, কাÐের রস ঝড়া ও শিকড় পচা রোগ দেখা দিচ্ছে। বিশেষ করে গত কয়েক বছর ধরে হোয়াইট ফ্লাইং পোকার তীব্র আক্রমনে নারকেলের ফলন একেবারে কমে গেছে। সরকারি হিসাব মতে ফকিরহাট উপজেলায় বার্ষিক ৪ হাজার মেট্রিক টন নারকেল উৎপাদন হয়। তবে সম্প্রতি সময়ে নারকেল উৎপাদনের হার সবচেয়ে কম বলে জানান চাষিরা। ফলে ডাব ও ঝুনা নারকেলের দামও বেড়েছে আকাশ ছোঁয়া। ছোট-বড় গড়ে নারকেলের জেড়া ১০০ টাকা থেকে ১৬০ টাকায় পর্যন্ত।

উপজেলার পিলজঙ্গ ইউনিয়নের বাসিন্দা শওকত শেখ জানান, তার ঘেরের পাড়ে প্রায় ১০০টি নারকেল গাছ রয়েছে। বছর পনেরো আগে তিনি এই গাছ থেকে ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকার নারকেল বিক্রি করতেন। কিন্তু বর্তমানে ২০ হাজার টাকারও নারকেল উৎপাদন হয় না তাঁর গাছে। অনেক গাছের পাতায় সাদা সাদা পোকায় ভরে গেছে। আবার গোড়ায় সাদা রোগে (শূতিমূল ছত্রাক) পচে যাচ্ছে।’ উপজেলার অন্যান্য চাষীরা প্রায় একই ধরনের কথা বলেন।

‘একটি গাছে মোটামুটি ৩৬টি পাতা থাকলে সেটিকে আমরা স্বাস্থ্যবান গাছ বলে থাকি। কিন্তু বর্তমানে একেকটি গাছে গতে ১৫ থেকে ২০টি পাতা দেখা যায়। এটি নারকেল উৎপাদনের জন্য আদর্শ নয়। নারকেল গাছের মূল সাধারণত ১০ ফিট পর্যন্ত গভীরে যায়। মাটিতে লবনক্ততা সহনশীল মাত্রা অতিক্রম করলে মূলের ক্ষতি হয়’ বলে জানান উপসহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা নয়ন কুমার সেন।

বাগেরহাটে নারকেলের পাইকারী ব্যবসায়ী কানাই লাল চক্রবর্তী, সৈয়দ আলী, শেখ হাফিজুল ইসলাম জানান, বর্তমানে সপ্তাহের রবি ও বুধবার হাটের দিনে তাঁরা ১হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার নারকেল কিনছেন। কিন্তু বছর দশেক আগেও একেক জন পাইকার ৭ থেকে ৮ হাজার নাকেল কিনতেন।

ফকিরহাট উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ শেখ সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তন, নারকেল গাছে সাদা মাছির আক্রমন ও ছত্রাক জনিত কারণে উৎপাদন কমেছে। এসব অঞ্চলের নারকেল গাছ অনেক উচু ও অপরিকল্পিতভাবে রোপন করায় সমন্বিত বালাইনাশক ব্যবহার করা কষ্ট সাধ্য। কৃষক কারিগরি সহযোগিতা চাইলে কৃষি বিভাগ সহযোগিতা করেন বলে তিনি জানান। ’

ফকিরহাট উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান স্বপন দাশ বলেন, অর্থকারী ফসল নারকেলের ফলন মারাত্মকভাবে কমে গেছে। এ নিয়ে তেমন কোন গবেষণা ও প্রতিকার লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। নারকেল উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য কৃষি বিভাগ সহযোগিতা চাইলে উপজেলা পরিষদ সহযোগিতা করবে। ফকিরহাটে নারকেল উৎপাদনে তার হারানো ঐতিহ্য ফিরে পেতে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে চাষাবাদ, গবেষনা, জলবায়ু পরিবর্তন সহনশীল জাত উদ্ভাবন ও কৃষি বিভাগকে প্রকল্প গ্রহণের জন্য পরামর্শ প্রদান করেছেন বলে জানান।

ট্যাগস :
আপডেট : ১২:৫৯:৪৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৪
১৩৬ বার পড়া হয়েছে

জলবায়ু পরিবর্তন অভিঘাতে ফকিরহাটে কমেছে নারকেলের ফলন

আপডেট : ১২:৫৯:৪৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৪

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আশঙ্কাজনক হারে কমেছে নারকেলের ফলন। নারকেলের রাজধানী হিসেবে খ্যাত বাগেরহাট জেলার ফকিরহাটে জলবায়ু পরিবর্তন অভিঘাতে উষ্ণতা ও শীতের ভারসম্য নষ্ট, লবনক্ততার সহনশীল মাত্রা অতিক্রম, হোয়াইট ফ্লাইয়ের আক্রমণ, স্যুটি মোল্ড ছত্রাক, শূতিমূল সহ নানা রোগ ব্যাধির কারণে নারকেল উৎপাদন বর্তমানে প্রান্তিক পর্যায়ে পৌঁছেছে।

বাগেরহাট জেলায় সবচেয়ে বেশি নারকেল উৎপাদন হয় ফকিরহাট উপজেলায়। কৃষি সম্প্রসারণ অফিসের তথ্য মতে, বানিজ্যিক ভিত্তিতে বাগান না থাকলেও ফকিরহাট উপজেলায় উৎপাদিত ৪১ ধরণের অর্থকরী ফল জাতীয় ফসলের মধ্যে সবচেয়ে বেশি পরিমান জমিতে নারকেল গাছ রয়েছে। উপজেলার প্রায় প্রতিটি বাড়ির সীমানায়, ঘেরের পাড়ে, রাস্তার পাশে নারকেল গাছ আছে। সরকারি হিসেবে ৪০০ হেক্টর জমিতে নারকেল চাষের কথা বলা হলেও জমির প্রকৃত পরিমান আরো বেশি বলে মনে করেন স্থানীয় লোকজন। তবে বর্তমানে নারকেল গাছে ফলনের হার ৪০ থেকে ৫০ ভাগ কমেছে বলে জানা গেছে।

কৃষি গবেষণা ফাউন্ডেশন (কেজিএফ) এর তথ্য মতে, ২০১৯ সালে রুগোস স্পাইরালিং হোয়াইটফ্লাই নামের একটি বিদেশী পোকা উষ্ণতা বৃদ্ধির কারণে বাংলাদেশের নারকেল গাছে ব্যাপকভাবে আক্রমণ শুরু করে। ক্যারবীয় দ্বীপের এ পোকার ২০১৬ সাল থেকে ভারতের বিভিন্ন প্রদেশে আক্রমণের পর বাংলাদেশেও বিস্তার লাভ করে। পরবর্তীতে এ পোকা অভিযোজন করে দ্রæত আক্রমণে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষোভাবে দেশের নারকেল উৎপাদন আশঙ্কাজনক হারে কমিয়ে দেয়। স্পাইরালিং হোয়াইটফ্লাই নারকেল গাছে পরোক্ষভাবে স্যুটি মোল্ড নামের ছত্রাককে আক্রমনে সহযোগীতা করায় নারকেল গাছ দ্রæত সজিবতা হারিয়ে উৎপাদন হ্রাস করে।

স্থানীয় চাষি, নারকেল ব্যবসায়ী ও শিল্প উদ্যোক্তাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বাগেরহাট জেলার প্রায় অর্ধশত নারকেল কেন্দ্রিক শিল্প কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। এরমধ্যে রয়েছে নারকেল ছোবড়া থেকে তৈরী ম্যাট্রেস কারখানা, নারকেলের মালা থেকে তৈরী উন্নতমানের মশার কয়েল তৈরীর কাঁচামাল কারখানা, নারকেল মালা দিয়ে সো-পিস তৈরীর কুটির শিল্প, নারকেল তেল কারখানা সহ বিভিন্ন কুটির শিল্প।

বাগেরহাট বিসিকের শিল্পনগরী কর্মকর্তা (আ.দা) ইউনুস আল রাফি জানান, বছর দশেক আগেও বাগেরহাট বিসিক নগরীতে ১৯টি নারকেল তেল কারখানায় নিয়মিত তেল উৎপাদন হতো। কিন্তু বর্তমানে ৪টি কারখানা স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে গেছে। বাকী ১৫টি কারখানা বছরের বেশিরভাগ সময় কাঁচা মালের অভাবে বন্ধ থাকে। বাগেরহাটের ফকিরহাটসহ বিভিন্ন উপজেলা, খুলনা, বরিশাল, ভোলা, নোয়াখালী, কুমিল্লা ও কক্সবাজার থেকে নারকেল সংগ্রহ করে অর্ডার মাফিক উৎপাদনের জন্য মাঝে মাঝে কারখানা চালু করে। তিনি আরও বলেন, দেশে বাজারে চাহিদাকৃত কয়েক হাজার কোটি টাকার নারকেল তেল এখন আমদানী নির্ভর হয়ে পড়েছে।

শুক্রবার (৯ ফেব্রæয়ারি) সরেজমিনে উপজেলার লখপুর, পিলজংগ, বাহিরদিয়াসহ বিভিন্ন স্থানে গিয়ে দেখা গেছে শতশত নারকেল গাছে প্রায় নারকেল শূণ্য অবস্থা। জাহিদুল ইসলাম, শেখ মনিরুজ্জামান, স্বপন বাগচিসহ উপজেলার একাধিক চাষি ও নারকেল ব্যসবায়ীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ২০০৭ সালে সুপার সাইক্লেন সিডর ও ২০০৯ সালে আইলার পর থেকে নারকেল উৎপাদন কমতে শুরু করে।

বাংলাদেশ সরকারের ঘুর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচী (সিপিপি) এর তথ্য অনুযায়ী ২০০৭, ২০০৯, ২০১৬, ২০১৭,  ২০১৯, ২০২১ ও ২০২৩ সালে উপর্যপুরি প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে উপকূলীয় এলাকার ইকো-সিন্টেম। সিডর, আইলা, মোখা, ইয়াসের মতো ক্রান্তীয় ঘুর্ণিঝড়ের কারণে এ অঞ্চলের আবহাওয়ায় বিরুপ প্রভাব ফেলেছে। তাপমাত্রা ও বৃষ্টিপাতের সময়কাল, তীব্রতা ও পৌণপুনিকতার হেরফেরের জন্য নারকেল গাছে বিভিন্ন রোগ বালাই দেখা দিয়েছে। চাষিরা জানান, নারিকেলের কুঁড়ি পচা, ফল পচা, ফল ঝড়া, পাতায় দাগ পড়া, ছোট পাতা, কাÐের রস ঝড়া ও শিকড় পচা রোগ দেখা দিচ্ছে। বিশেষ করে গত কয়েক বছর ধরে হোয়াইট ফ্লাইং পোকার তীব্র আক্রমনে নারকেলের ফলন একেবারে কমে গেছে। সরকারি হিসাব মতে ফকিরহাট উপজেলায় বার্ষিক ৪ হাজার মেট্রিক টন নারকেল উৎপাদন হয়। তবে সম্প্রতি সময়ে নারকেল উৎপাদনের হার সবচেয়ে কম বলে জানান চাষিরা। ফলে ডাব ও ঝুনা নারকেলের দামও বেড়েছে আকাশ ছোঁয়া। ছোট-বড় গড়ে নারকেলের জেড়া ১০০ টাকা থেকে ১৬০ টাকায় পর্যন্ত।

উপজেলার পিলজঙ্গ ইউনিয়নের বাসিন্দা শওকত শেখ জানান, তার ঘেরের পাড়ে প্রায় ১০০টি নারকেল গাছ রয়েছে। বছর পনেরো আগে তিনি এই গাছ থেকে ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকার নারকেল বিক্রি করতেন। কিন্তু বর্তমানে ২০ হাজার টাকারও নারকেল উৎপাদন হয় না তাঁর গাছে। অনেক গাছের পাতায় সাদা সাদা পোকায় ভরে গেছে। আবার গোড়ায় সাদা রোগে (শূতিমূল ছত্রাক) পচে যাচ্ছে।’ উপজেলার অন্যান্য চাষীরা প্রায় একই ধরনের কথা বলেন।

‘একটি গাছে মোটামুটি ৩৬টি পাতা থাকলে সেটিকে আমরা স্বাস্থ্যবান গাছ বলে থাকি। কিন্তু বর্তমানে একেকটি গাছে গতে ১৫ থেকে ২০টি পাতা দেখা যায়। এটি নারকেল উৎপাদনের জন্য আদর্শ নয়। নারকেল গাছের মূল সাধারণত ১০ ফিট পর্যন্ত গভীরে যায়। মাটিতে লবনক্ততা সহনশীল মাত্রা অতিক্রম করলে মূলের ক্ষতি হয়’ বলে জানান উপসহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা নয়ন কুমার সেন।

বাগেরহাটে নারকেলের পাইকারী ব্যবসায়ী কানাই লাল চক্রবর্তী, সৈয়দ আলী, শেখ হাফিজুল ইসলাম জানান, বর্তমানে সপ্তাহের রবি ও বুধবার হাটের দিনে তাঁরা ১হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার নারকেল কিনছেন। কিন্তু বছর দশেক আগেও একেক জন পাইকার ৭ থেকে ৮ হাজার নাকেল কিনতেন।

ফকিরহাট উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ শেখ সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তন, নারকেল গাছে সাদা মাছির আক্রমন ও ছত্রাক জনিত কারণে উৎপাদন কমেছে। এসব অঞ্চলের নারকেল গাছ অনেক উচু ও অপরিকল্পিতভাবে রোপন করায় সমন্বিত বালাইনাশক ব্যবহার করা কষ্ট সাধ্য। কৃষক কারিগরি সহযোগিতা চাইলে কৃষি বিভাগ সহযোগিতা করেন বলে তিনি জানান। ’

ফকিরহাট উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান স্বপন দাশ বলেন, অর্থকারী ফসল নারকেলের ফলন মারাত্মকভাবে কমে গেছে। এ নিয়ে তেমন কোন গবেষণা ও প্রতিকার লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। নারকেল উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য কৃষি বিভাগ সহযোগিতা চাইলে উপজেলা পরিষদ সহযোগিতা করবে। ফকিরহাটে নারকেল উৎপাদনে তার হারানো ঐতিহ্য ফিরে পেতে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে চাষাবাদ, গবেষনা, জলবায়ু পরিবর্তন সহনশীল জাত উদ্ভাবন ও কৃষি বিভাগকে প্রকল্প গ্রহণের জন্য পরামর্শ প্রদান করেছেন বলে জানান।