১২:২৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বিজ্ঞপ্তি

(জাতীয় শিক্ষাক্রম রূপরেখা (২০২১) মোবাইল অ্যাপ এবং সচেতনতামূলক ডিজিটাল কনটেন্ট এর উদ্বোধন অনুষ্ঠিত

প্রতিনিধির নাম

রাজীব কান্তি দে /ঢাকা

 

আজ ২৯ মার্চ ২০২৩, বুধবার, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে সকাল ১১ টায়, জাতীয় শিক্ষাক্রম ২০২১ বিস্তরণ কার্যক্রমের অংশ হিসেবে দেশব্যাপী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানগণের প্রশিক্ষণ, এনসিএফ (জাতীয় শিক্ষাক্রম রূপরেখা (২০২১) মোবাইল অ্যাপ এবং সচেতনতামূলক ডিজিটাল কনটেন্ট এর উদ্বোধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এম.পি.। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাননীয় উপমন্ত্রী জনাব মহিবুল হাসান চৌধুরী, এম. পি., জনাব মো: কামাল হোসেন, সিনিয়র সচিব, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, জনাব সোলেমান খান, সচিব, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ, শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং জনাব দীপা শংকর, চিফ অব এডুকেশন, ইউনিসেফ। সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল এবং প্রফেসর ড. সৈয়দ মো: গোলাম ফারুক, সদস্য, সরকারি কর্ম কমিশন, বাংলাদেশ। সভাপতিত্ব করেন অধ্যাপক নেহাল আহমেদ, মহাপরিচালক, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর, ঢাকা। এছাড়াও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাবৃন্দ, বিভিন্ন শিক্ষা বোর্ডের চ্যায়ারম্যান, শিক্ষা সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন অধিদপ্তর ও দপ্তরের মহাপরিচালক ও পরিচালকগণ উপস্থিত থেকে এ উদ্বোধন অনুষ্ঠানটিকে সফল করতে ভূমিকা রাখেন। উদ্বোধন অনুষ্ঠানটি যৌথভাবে আয়োজন করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড, বাংলাদেশ (এনসিটিবি) এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর, ঢাকা (মাউশি)

শুরুতেই স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন, প্রফেসর মো: ফরহাদুল ইসলাম, চেয়ারম্যান, এনসিটিবি। তিনি জাতীয় শিক্ষাক্রম ২০২২ প্রণয়নে ও বাস্তবায়নে এনসিটিবি’র বিভিন্নি উদ্যোগের কথা তুলে ধরে সারাদেশের মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানদের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম, এনসিএফ মোবাইল অ্যাপ এবং শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকসহ সর্বস্তরের মানুষকে জাতীয় শিক্ষাক্রম ২০২২ সম্পর্কে সচেতন করার জন্য সচেতনতামূলক ডিজিটাল কনটেন্ট উদ্বোধন অনুষ্ঠানে উপস্থিত সকলকে স্বাগত জানান।

এরপর সম্মানিত অতিথি হিসেবে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল তাঁর বক্তব্যে বলেন যে, জাতীয় শিক্ষাক্রম ২০২২

প্রচলিত মুখস্ত নির্ভর শিক্ষার পরিবর্তে শিক্ষার্থীদের জন্য আনন্দপূর্ণভাবে শেখার একটি সুযোগ সৃষ্টি করেছে। এতে আগের চেয়ে

অনেক বেশি বিজ্ঞান চর্চার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এই শিক্ষাক্রম বাস্তবায়িত হলে শিক্ষার্থীরা এখন শ্রেণি কক্ষের বাইরে প্রকৃতির মাঝে গিয়ে পরীক্ষা-নীরিক্ষার মাধ্যমে হাতে-কলমে সবকিছু শেখার সুযোগ পাবে। ফলে যা কিছু শিখবে তা গভীর ও দীর্ঘস্থায়ী হবে। এরপর জাতীয় শিক্ষাক্রম ২০২২ এর বিভিন্ন দিক নিয়ে প্রফেসর সৈয়দ মঞ্জুরুল ইসলাম, শিক্ষাবিদ ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল, বিজ্ঞানী ড. হাসিনা খান, শিল্পী নিসার হোসেন, নাটা ব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদারসহ বিভিন্ন বিশিষ্ট জনদের মতামত নিয়ে নির্মিত একটি তথ্যচিত্র প্রদর্শিত হয়।

এরপর অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথিগণ বক্তব্য প্রদান করেন। প্রথমেই জনাব দীপা শংকর জানান যে, জাতীয় শিক্ষাক্রম ২০২২ প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশ শিক্ষা ক্ষেত্রে একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। ইউনিসেফ এ উদ্যোগের প্রতিটি ক্ষেত্রেই সরকারের পাশে থাকতে পেরে গৌরবান্বিত বোধ করছে। তিনি আগামীতেও শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নের সকল কার্যক্রমে ইউনিসেফ এর এ সহযোগিতা অব্যাহত থাকার আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

তাঁর বক্তব্যে জনাব সোলেমান খান জানান যে, আগামী প্রজন্মের জন্য যুগপোযুগী ও গুণগতমানসম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিত করতে জাতীয় শিক্ষাক্রম ২০২২ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। তবে শিক্ষার গুণগতমান নিশ্চিত করতে হলে প্রয়োজনীয় জ্ঞান, দক্ষতা ও মূল্যবোধসম্পন্ন শিক্ষক ও প্রধান শিক্ষকের কোন বিকল্প নেই। সে জন্য তাদের যথাযথ প্রশিক্ষণের গুরুত্ব তিনি ধরেন। একই সাথে শিক্ষা প্রশাসনেরও পরিবর্তন প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন।

জনাব মো: কামাল হোসেন, তাঁর বক্তব্যে জাতীয় শিক্ষাক্রম ২০২২ এ সাধারণ ও মাদ্রাসা শিক্ষা ধারাতেও মাধ্যমিক স্তর থেকেই কারিগরি ও কর্মমুখী শিক্ষা উপযুক্ততা অনুসারে অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়টি যুগোপযোগী সিদ্ধান্ত বলে উল্লেখ করেছেন। তাঁর মতে, এতে দশম শ্রেণি শেষে শিক্ষার্থীরা যে কোন একটি অকুপেশনকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করার যোগ্যতা অর্জন করবে। এটা শুধু শিক্ষার্থীদের কর্মক্ষেত্রে প্রবেশের উপযুক্ততাই বাড়াবে না দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতেও ভূমিকা রাখবে।

বিশেষ অতিথি হিসেবে তাঁর বক্তব্যে, জনাব মহিবুল হাসান চৌধুরী, এম.পি., মাননীয় উপমন্ত্রী, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, বলেন যে, জাতীয় শিক্ষাক্রম 2022 প্রচলিত মুখস্ত নির্ভর শিক্ষার পরিবর্তে শিক্ষার্থীদের মাঝে সূক্ষ চিন্তন দক্ষতা, সৃজনশীলতা, সমস্যা সমাধানের দক্ষতা, উদ্ভাবন দক্ষতা, সহমর্মিতাসহ আরো গুরুত্বপূর্ণ কিছু দক্ষতা তৈরি করবে। আর এর সবই চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে তাদের যোগ্য করে তুলবে। তিনি মনে করেন, এর মাধ্যমে আমাদের আগামী প্রজন্ম কীভাবে শিখতে হয় সে দক্ষতা অর্জন করে জীবনব্যাপী শিখনের যোগ্যতা অর্জন করবে। ফলে শিক্ষার্থীদের মাঝে নতুন যুগের চাহিদা মেটানোর মত সুফল পেতে হলে যোগ্যতাসম্পন্ন শিক্ষক ও প্রধান শিক্ষকের কোন বিকল্প নেই।

এ পর্যায়ে প্রধান অতিথির ২০২২ করার পাশাপাশি এর বাস্তবায়নের চ্যালেজসমূহ নিয়ে আলোকপাত করেন। তিনি বর্তমান সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর গৃহীত বিভিন্ন উদ্যোগ যেমন ডিজিটাল বাংলাদেশ, পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, শিল্প ও বাণিজ্যের প্রসার কর্মসংস্থান সৃষ্টি দেশের সমুদ্রসীমা নির্দিষ্ট করে বিপুল পরিমান সামুদ্রিক সম্পদের উপর অধিকার প্রতিষ্ঠা প্রকৃতি উল্লেখ করে বলেন, এসব উদ্যোগের কোনটিই খুব সহজ ছিল না। প্রতিটি উদ্যোগের বিরুদ্ধেই কিছু মানুষ হড়যন্ত্র করেছে। যে কোন প্রকারে উন্নয়নকে থামিয়ে দিতে চেয়েছে। কিন্তু জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী প্রতিজ্ঞা ও নেতৃত্বে বাধা অতিক্রম করে সরকার এসব উদ্যোগকে বাস্তবে রূপায়িত করেছে। তিনি বলেন ঠিক একই ভাবে সরকার যখন জাতীয় শিক্ষক্রেন ২০২১ বাস্তবাচন করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে কিছু মানুষ শুরু থেকেই এর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিঙ্ক হয়েছে। ি করে এ উদ্যোগকে দমানো যাবে না।

তিনি বলেন, চতুর্থ শিল্প বিপ্লব, করোনার মতো অতিমারি আর বিশ্ব রাজনীতির জটিল পরিস্থিতি প্রতিষ্ঠিত সকল ব্যবস্থাকে অকার্যকর করে দিচ্ছে। টিকে থাকার প্রয়োজনে বিশ্বের অধিকাংশ দেশই তাই বর্তমানে তাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় পরিব আনছে। আমরাও যদি উন্নত দেশে পরিণত হতে চাই, তাহলে নিশ্চয়ই আমাদেরও পুরানো ব্যবস্থা আঁকড়ে ধরে বসে থাকলে চলবে না। কাজেই আমরা চাই বা না চাই, শিক্ষা ব্যবস্থায় এ পরিবর্তন এখন সময়ের দাবী।

তিনি বলেন, নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী শিক্ষার্থীরা এখন হাতে কলমে প্রযোগ করতে পারার পারদর্শিতা অর্জন করবে। কাজেই পারদর্শিতা পরিমাপের জন্য আগের মত শুধু খাতা-কলমের পরীক্ষা পদ্ধতিতেও এখন চলছে না। ফলে পরীক্ষা পদ্ধতিতেও আসছে ব্যাপক পরিবর্তন। নতুন পদ্ধতিতে শ্রেণি কক্ষে বা শ্রেণি কক্ষের বাইরে শিক্ষার্থীরা যখনই লিখবে তখনই তার মূল্যায়ন করা হবে। এছাড়াও বছরে দুইবার তাদের সামষ্টিক মূল্যায়ন হবে। অবশ্যই এটা একটা বড় ধরনের পরিবর্তন। প্রচলিত পদ্ধতিতে যেখানে শিক্ষার্থীরা বেশি নম্বর পাবার প্রতিযোগিতায় অভ্যন্ত সেখানে হঠাৎ করেই এখন নম্বরের বদলে শেখার প্রতিযোগিতা শুরু হতে যাচ্ছে। তাঁর মতে, যদিও শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন করা যায় তাহলে আগামী প্রজন্ম অনেক যোগ্যতা সম্পন্ন হয়ে বড় হবে। তাদের মূল্যবোধ ও দৃষ্টিভঙ্গির আমূল পরিবর্তন ঘটবে।

তাঁর মতে, সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টা ছাড়া জাতীয় শিক্ষাক্রম ২০২১ বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়। শিক্ষক-শিক্ষার্থী-অভিভাবকসহ সমাজের সকল স্তরের মানুষের ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে নিজ নিজ ভূমিকা যথাযথভাবে পালনের উপর তিনি গুরুত্বারোপ করেন। তিনি মনে করেন এক্ষেত্রে শিক্ষক ও প্রধান শিক্ষকদের ভূমিকা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। তিনি আশা প্রকাশ করেন যে, এই প্রশিক্ষণের মাধ্যমে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানগণ জাতীয় শিক্ষাক্রম ২০২১ বাস্তবায়নে তাদের ভূমিকা কী হওয়া উচিত তা উপপৰি করবেন। এলাকায় ফিরে গিয়ে শিক্ষক ও অভিভাবকদের সাথে নিয়ে নিজ নিজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সুষ্ঠুভাবে নতুন শিক্ষাজন ৰাস্তবায়নে মনোযোগী হবেন।

এছাড়াও আলোচনার ফাঁকে ফাঁকে সচেতনতামূলক ভিডিও, এনসিএফ মোবাইল অ্যাপ ও নতুন মূল্যায়ন কাঠামো উদ্বোধন করা

সবশেষে অনুষ্ঠানের সভাপতি অধ্যাপক নেহাল আহমেদ, জাতীয় শিক্ষাক্রম ২০২১ বাস্তবায়নে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানগণসহ শিক্ষা প্রশাসনের সকলকে সক্রিয় ভূমিকা পালনের আহ্বান জানিয়ে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করেন।

ট্যাগস :
আপডেট : ০৮:১২:২৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৯ মার্চ ২০২৩
১৫৩ বার পড়া হয়েছে

(জাতীয় শিক্ষাক্রম রূপরেখা (২০২১) মোবাইল অ্যাপ এবং সচেতনতামূলক ডিজিটাল কনটেন্ট এর উদ্বোধন অনুষ্ঠিত

আপডেট : ০৮:১২:২৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৯ মার্চ ২০২৩

রাজীব কান্তি দে /ঢাকা

 

আজ ২৯ মার্চ ২০২৩, বুধবার, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে সকাল ১১ টায়, জাতীয় শিক্ষাক্রম ২০২১ বিস্তরণ কার্যক্রমের অংশ হিসেবে দেশব্যাপী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানগণের প্রশিক্ষণ, এনসিএফ (জাতীয় শিক্ষাক্রম রূপরেখা (২০২১) মোবাইল অ্যাপ এবং সচেতনতামূলক ডিজিটাল কনটেন্ট এর উদ্বোধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এম.পি.। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাননীয় উপমন্ত্রী জনাব মহিবুল হাসান চৌধুরী, এম. পি., জনাব মো: কামাল হোসেন, সিনিয়র সচিব, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, জনাব সোলেমান খান, সচিব, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ, শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং জনাব দীপা শংকর, চিফ অব এডুকেশন, ইউনিসেফ। সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল এবং প্রফেসর ড. সৈয়দ মো: গোলাম ফারুক, সদস্য, সরকারি কর্ম কমিশন, বাংলাদেশ। সভাপতিত্ব করেন অধ্যাপক নেহাল আহমেদ, মহাপরিচালক, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর, ঢাকা। এছাড়াও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাবৃন্দ, বিভিন্ন শিক্ষা বোর্ডের চ্যায়ারম্যান, শিক্ষা সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন অধিদপ্তর ও দপ্তরের মহাপরিচালক ও পরিচালকগণ উপস্থিত থেকে এ উদ্বোধন অনুষ্ঠানটিকে সফল করতে ভূমিকা রাখেন। উদ্বোধন অনুষ্ঠানটি যৌথভাবে আয়োজন করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড, বাংলাদেশ (এনসিটিবি) এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর, ঢাকা (মাউশি)

শুরুতেই স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন, প্রফেসর মো: ফরহাদুল ইসলাম, চেয়ারম্যান, এনসিটিবি। তিনি জাতীয় শিক্ষাক্রম ২০২২ প্রণয়নে ও বাস্তবায়নে এনসিটিবি’র বিভিন্নি উদ্যোগের কথা তুলে ধরে সারাদেশের মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানদের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম, এনসিএফ মোবাইল অ্যাপ এবং শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকসহ সর্বস্তরের মানুষকে জাতীয় শিক্ষাক্রম ২০২২ সম্পর্কে সচেতন করার জন্য সচেতনতামূলক ডিজিটাল কনটেন্ট উদ্বোধন অনুষ্ঠানে উপস্থিত সকলকে স্বাগত জানান।

এরপর সম্মানিত অতিথি হিসেবে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল তাঁর বক্তব্যে বলেন যে, জাতীয় শিক্ষাক্রম ২০২২

প্রচলিত মুখস্ত নির্ভর শিক্ষার পরিবর্তে শিক্ষার্থীদের জন্য আনন্দপূর্ণভাবে শেখার একটি সুযোগ সৃষ্টি করেছে। এতে আগের চেয়ে

অনেক বেশি বিজ্ঞান চর্চার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এই শিক্ষাক্রম বাস্তবায়িত হলে শিক্ষার্থীরা এখন শ্রেণি কক্ষের বাইরে প্রকৃতির মাঝে গিয়ে পরীক্ষা-নীরিক্ষার মাধ্যমে হাতে-কলমে সবকিছু শেখার সুযোগ পাবে। ফলে যা কিছু শিখবে তা গভীর ও দীর্ঘস্থায়ী হবে। এরপর জাতীয় শিক্ষাক্রম ২০২২ এর বিভিন্ন দিক নিয়ে প্রফেসর সৈয়দ মঞ্জুরুল ইসলাম, শিক্ষাবিদ ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল, বিজ্ঞানী ড. হাসিনা খান, শিল্পী নিসার হোসেন, নাটা ব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদারসহ বিভিন্ন বিশিষ্ট জনদের মতামত নিয়ে নির্মিত একটি তথ্যচিত্র প্রদর্শিত হয়।

এরপর অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথিগণ বক্তব্য প্রদান করেন। প্রথমেই জনাব দীপা শংকর জানান যে, জাতীয় শিক্ষাক্রম ২০২২ প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশ শিক্ষা ক্ষেত্রে একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। ইউনিসেফ এ উদ্যোগের প্রতিটি ক্ষেত্রেই সরকারের পাশে থাকতে পেরে গৌরবান্বিত বোধ করছে। তিনি আগামীতেও শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নের সকল কার্যক্রমে ইউনিসেফ এর এ সহযোগিতা অব্যাহত থাকার আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

তাঁর বক্তব্যে জনাব সোলেমান খান জানান যে, আগামী প্রজন্মের জন্য যুগপোযুগী ও গুণগতমানসম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিত করতে জাতীয় শিক্ষাক্রম ২০২২ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। তবে শিক্ষার গুণগতমান নিশ্চিত করতে হলে প্রয়োজনীয় জ্ঞান, দক্ষতা ও মূল্যবোধসম্পন্ন শিক্ষক ও প্রধান শিক্ষকের কোন বিকল্প নেই। সে জন্য তাদের যথাযথ প্রশিক্ষণের গুরুত্ব তিনি ধরেন। একই সাথে শিক্ষা প্রশাসনেরও পরিবর্তন প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন।

জনাব মো: কামাল হোসেন, তাঁর বক্তব্যে জাতীয় শিক্ষাক্রম ২০২২ এ সাধারণ ও মাদ্রাসা শিক্ষা ধারাতেও মাধ্যমিক স্তর থেকেই কারিগরি ও কর্মমুখী শিক্ষা উপযুক্ততা অনুসারে অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়টি যুগোপযোগী সিদ্ধান্ত বলে উল্লেখ করেছেন। তাঁর মতে, এতে দশম শ্রেণি শেষে শিক্ষার্থীরা যে কোন একটি অকুপেশনকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করার যোগ্যতা অর্জন করবে। এটা শুধু শিক্ষার্থীদের কর্মক্ষেত্রে প্রবেশের উপযুক্ততাই বাড়াবে না দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতেও ভূমিকা রাখবে।

বিশেষ অতিথি হিসেবে তাঁর বক্তব্যে, জনাব মহিবুল হাসান চৌধুরী, এম.পি., মাননীয় উপমন্ত্রী, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, বলেন যে, জাতীয় শিক্ষাক্রম 2022 প্রচলিত মুখস্ত নির্ভর শিক্ষার পরিবর্তে শিক্ষার্থীদের মাঝে সূক্ষ চিন্তন দক্ষতা, সৃজনশীলতা, সমস্যা সমাধানের দক্ষতা, উদ্ভাবন দক্ষতা, সহমর্মিতাসহ আরো গুরুত্বপূর্ণ কিছু দক্ষতা তৈরি করবে। আর এর সবই চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে তাদের যোগ্য করে তুলবে। তিনি মনে করেন, এর মাধ্যমে আমাদের আগামী প্রজন্ম কীভাবে শিখতে হয় সে দক্ষতা অর্জন করে জীবনব্যাপী শিখনের যোগ্যতা অর্জন করবে। ফলে শিক্ষার্থীদের মাঝে নতুন যুগের চাহিদা মেটানোর মত সুফল পেতে হলে যোগ্যতাসম্পন্ন শিক্ষক ও প্রধান শিক্ষকের কোন বিকল্প নেই।

এ পর্যায়ে প্রধান অতিথির ২০২২ করার পাশাপাশি এর বাস্তবায়নের চ্যালেজসমূহ নিয়ে আলোকপাত করেন। তিনি বর্তমান সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর গৃহীত বিভিন্ন উদ্যোগ যেমন ডিজিটাল বাংলাদেশ, পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, শিল্প ও বাণিজ্যের প্রসার কর্মসংস্থান সৃষ্টি দেশের সমুদ্রসীমা নির্দিষ্ট করে বিপুল পরিমান সামুদ্রিক সম্পদের উপর অধিকার প্রতিষ্ঠা প্রকৃতি উল্লেখ করে বলেন, এসব উদ্যোগের কোনটিই খুব সহজ ছিল না। প্রতিটি উদ্যোগের বিরুদ্ধেই কিছু মানুষ হড়যন্ত্র করেছে। যে কোন প্রকারে উন্নয়নকে থামিয়ে দিতে চেয়েছে। কিন্তু জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী প্রতিজ্ঞা ও নেতৃত্বে বাধা অতিক্রম করে সরকার এসব উদ্যোগকে বাস্তবে রূপায়িত করেছে। তিনি বলেন ঠিক একই ভাবে সরকার যখন জাতীয় শিক্ষক্রেন ২০২১ বাস্তবাচন করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে কিছু মানুষ শুরু থেকেই এর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিঙ্ক হয়েছে। ি করে এ উদ্যোগকে দমানো যাবে না।

তিনি বলেন, চতুর্থ শিল্প বিপ্লব, করোনার মতো অতিমারি আর বিশ্ব রাজনীতির জটিল পরিস্থিতি প্রতিষ্ঠিত সকল ব্যবস্থাকে অকার্যকর করে দিচ্ছে। টিকে থাকার প্রয়োজনে বিশ্বের অধিকাংশ দেশই তাই বর্তমানে তাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় পরিব আনছে। আমরাও যদি উন্নত দেশে পরিণত হতে চাই, তাহলে নিশ্চয়ই আমাদেরও পুরানো ব্যবস্থা আঁকড়ে ধরে বসে থাকলে চলবে না। কাজেই আমরা চাই বা না চাই, শিক্ষা ব্যবস্থায় এ পরিবর্তন এখন সময়ের দাবী।

তিনি বলেন, নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী শিক্ষার্থীরা এখন হাতে কলমে প্রযোগ করতে পারার পারদর্শিতা অর্জন করবে। কাজেই পারদর্শিতা পরিমাপের জন্য আগের মত শুধু খাতা-কলমের পরীক্ষা পদ্ধতিতেও এখন চলছে না। ফলে পরীক্ষা পদ্ধতিতেও আসছে ব্যাপক পরিবর্তন। নতুন পদ্ধতিতে শ্রেণি কক্ষে বা শ্রেণি কক্ষের বাইরে শিক্ষার্থীরা যখনই লিখবে তখনই তার মূল্যায়ন করা হবে। এছাড়াও বছরে দুইবার তাদের সামষ্টিক মূল্যায়ন হবে। অবশ্যই এটা একটা বড় ধরনের পরিবর্তন। প্রচলিত পদ্ধতিতে যেখানে শিক্ষার্থীরা বেশি নম্বর পাবার প্রতিযোগিতায় অভ্যন্ত সেখানে হঠাৎ করেই এখন নম্বরের বদলে শেখার প্রতিযোগিতা শুরু হতে যাচ্ছে। তাঁর মতে, যদিও শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন করা যায় তাহলে আগামী প্রজন্ম অনেক যোগ্যতা সম্পন্ন হয়ে বড় হবে। তাদের মূল্যবোধ ও দৃষ্টিভঙ্গির আমূল পরিবর্তন ঘটবে।

তাঁর মতে, সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টা ছাড়া জাতীয় শিক্ষাক্রম ২০২১ বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়। শিক্ষক-শিক্ষার্থী-অভিভাবকসহ সমাজের সকল স্তরের মানুষের ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে নিজ নিজ ভূমিকা যথাযথভাবে পালনের উপর তিনি গুরুত্বারোপ করেন। তিনি মনে করেন এক্ষেত্রে শিক্ষক ও প্রধান শিক্ষকদের ভূমিকা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। তিনি আশা প্রকাশ করেন যে, এই প্রশিক্ষণের মাধ্যমে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানগণ জাতীয় শিক্ষাক্রম ২০২১ বাস্তবায়নে তাদের ভূমিকা কী হওয়া উচিত তা উপপৰি করবেন। এলাকায় ফিরে গিয়ে শিক্ষক ও অভিভাবকদের সাথে নিয়ে নিজ নিজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সুষ্ঠুভাবে নতুন শিক্ষাজন ৰাস্তবায়নে মনোযোগী হবেন।

এছাড়াও আলোচনার ফাঁকে ফাঁকে সচেতনতামূলক ভিডিও, এনসিএফ মোবাইল অ্যাপ ও নতুন মূল্যায়ন কাঠামো উদ্বোধন করা

সবশেষে অনুষ্ঠানের সভাপতি অধ্যাপক নেহাল আহমেদ, জাতীয় শিক্ষাক্রম ২০২১ বাস্তবায়নে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানগণসহ শিক্ষা প্রশাসনের সকলকে সক্রিয় ভূমিকা পালনের আহ্বান জানিয়ে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করেন।