০১:১৬ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বিজ্ঞপ্তি

জীবন নিয়ে হতাশা যেনো আত্মহত্যাতে পরিত্রাণের উপায়

জবি, প্রতিনিধি

জীবন নিয়ে হতাশা যেনো আত্মহত্যাতে পরিত্রাণের উপায়
(ছবির বা থেকে আসমাউল হুসনা ফ্লোরা, আবদুল কাদের নাগিব, মৌতুসী এবং মাহমুদ হাসান আসিফ)

১০ই সেপ্টেম্বর আত্মহত্যা প্রতিরোধ দিবস, আত্মহত্যা প্রতিরোধের জন্য নানান পন্থা যেমন অবলম্বন করা হচ্ছে তেমনি অনুৎসাহিত করা হচ্ছে সবাইকে। তার পরেও প্রতিনিয়ত বেড়ে চলেছে আত্মহত্যাকারীর সংখ্যা। বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের মাঝে এর প্রভাব যেনো বিরূপ। কেনো তারা এতো বেশি আত্মহত্যা প্রবণ? কেনো প্রতিনিয়ত বেড়ে চলেছে তাদের সংখ্যা? বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা নিয়ে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মতামত তুলে ধরেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের শিক্ষার্থী রোকাইয়া তিথি –

আত্মহত্যা বিষয়টি  বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মাঝে দিন দিন বেড়েই চলেছে। আত্মহত্যার নানা কারনের মধ্যে প্রথমেই যেই বিষয়টি আসে সেটি হল পারিবারিক দায়বদ্ধতা। বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত অধিকাংশ ছাত্রছাত্রী নিম্ন ও মধ্যম আয়ের পরিবার থেকে উঠে আসা। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের শুরু থেকেই তাদের লক্ষ্য থাকে উচ্চ সিজিপিএ অথবা কোনোভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের গন্ডি পেরিয়ে বিসিএস জয় অথবা সমমানের একটি চাকরির মাধ্যমে পরিবারের হাল ধরা। দেখা যায় অনেকেই  তাদের আশানুরুপ ফলাফল পায়না। ফলে জন্ম নেয় হতাশা। হতাশা হতে মৃত্যুর চিন্তা এবং অতঃপর জীবনের সমাপ্তি।
বর্তমান বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটই যেন এর পিছনের অন্যতম কারন। আমাদের দেশে রয়েছে সরকারী চাকরির যথেষ্ট স্বল্পতা তাছাড়া অধিকাংশ ছাত্রছাত্রীর প্রধান লক্ষ্য থাকে সরকারী চাকরি। তাদের চিন্তাধারা এমন যে একটি সরকারী চাকরি বা বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে একটি উচ্চ সিজিপিএ জীবনের সবকিছু। এখানে ছাত্রছাত্রীদেরকে উদ্যোক্তা হতে উদ্বুদ্ধ করা হয়না। প্রতিবছর যতসংখ্যক শিক্ষার্থী পড়াশুনার পাঠ চুকিয়ে বেকার হিসেবে দিন পার করে তাদেরকে উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তুলতে পারলে তারা তাদের মেধাশক্তিকে কাজে লাগিয়ে দেশের অর্থনীতিকে অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে যেতে পারতো।
এছাড়া মাদকাসক্তি আত্মহত্যার অন্যতম কারনগুলোর মধ্যে একটি। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে  প্রায়শই অসৎ সঙ্গ অথবা কৌতুহলবশত অনেকেই বিভিন্ন ধরনের মাদকে আসক্ত হয়ে পড়ে যার ফলে তারা জড়িয়ে পড়ে বিভিন্ন অন্যায় ও অনৈতিক কাজকর্মে সেই সাথে তাদের মধ্যে বাড়ছে আত্মহত্যার ঝুঁকি। পারিবারিক পারিপার্শ্বিক অবস্থা ও চাপের জন্য অঙ্কুরেই ঝরে যায় সম্ভামনাময় অনেক জীবন।

আসমাউল হুসনা ফ্লোরা
কৃষি অর্থনীতি ও ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদ,
সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়

সকল ব্যর্থতাকে ধৈর্যের মাধ্যমে শক্তিতে পরিণত করে দৃঢ় সংকল্পে এগিয়ে যাওয়ার নামই জীবন। প্রায়ই অপ্রত্যাশিত এমন খবর আমাদের দেখতে হয় যে, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যা! জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশে এসে যেখানে হাজারও স্বপ্নের হাতছানি সেখানে এমন ভূল সিদ্ধান্ত দেশ ও পরিবারের জন্য অত্যন্ত দুঃখের। কেন এরা সফলতার মুখমুখি এসে আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছেন! একটি প্রতিবেদনে এ বিষয়ে কয়েকটি তথ্য উঠে এসেছে,  তা হলো পারিবারিক সমস্যা ও অভাব, জীবনের লক্ষ্য বারবার ব্যর্থ যেমন জীবিকার জন্য কিছু না করতে পারা। বিশেষ করে সবচেয়ে বেশি ও গুরুত্বপূর্ণ যে কারণ তা হচ্ছে প্রেমে ব্যর্থ হয়ে মেনে নিতে না পারা। আবেগকে উপেক্ষা করে বিবেককে কাজে লাগাতে হবে। দুঃখ ও কষ্ট জীবনের একটি অংশ যা সাময়িক । তাই ধর্মীয় শিক্ষা, পারিবারিক শিক্ষা, নিয়মিত কাউন্সিলিং ও প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় এ বিষয়টি জোর দেওয়া উচিত। জীবনের মূল্য অনেক যা কোন সাময়িক  সামান্য ব্যর্থতায় শেষ হয়ে যায় না  এবং আত্মহত্যা মহাপাপ ও বোকামি।

-আবদুল কাদের নাগিব
ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ,
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

আত্মহননের পথে সবচেয়ে বর্ধিত হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা এবং প্রতিবছর এর পরিমাণ বেড়েই চলেছে। ২২ থেকে ২৫ বছরে শিক্ষার্থীদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বেশি। সম্পর্কের জটিলতা, পারিবারিক জীবনের জটিলতা, চাহিদার সাথে প্রাপ্তির মিল না থাকা, বিষণ্নতা, আর্থিক সমস্যা, একাকিত্ব নানা কারণে একজন শিক্ষার্থীর মধ্যে হতাশা আর আত্মহত্যার প্রবণতা বেড়ে যায়। যখন কোনো শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে আসে তখন তার উপর তার পরিবার,সমাজ এবং তার নিজের ও কিছু এক্সপেকটেশন থাকে কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে আসার পর নানা কারণে যখন তার এক্সপেকটেশনের কাঠামো পরিবর্তন হতে থাকে যেমনঃ সিজিপিএ কমে যাচ্ছে ভালো ফলাফল করতে পারছে না আবার বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে চাকরির বাজারে যে করুণ অবস্থা একজন শিক্ষার্থীকে ভাবাতে বাধ্য করে পড়াশোনা শেষ করে সে কি কোনো চাকরি পাবে কিনা ইত্যাদি কারণে একজন শিক্ষার্থী মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত হয়। তীব্র আকারে মানসিক অবসাদগ্রস্ত হওয়ার কারণে শিক্ষার্থীরা আত্মহত্যার পথে ঝোঁকে।

-মৌতুসী
গণিত বিভাগ,
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কিংবা ইঞ্জিনিয়ারিং স্টুডেন্ট, বর্তমানে সবাই আসলে এক ওপেন সিক্রেটের স্বীকার। তা হচ্ছে অনিশ্চয়তা। একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী স্নাতক শেষে একটি ভালো চাকরি পাবে কিনা, স্নাতকোত্তর এর শেষে তার যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরিটি আদৌ আছে কিনা, তা নিয়ে বরাবরই চিন্তিত থাকে। এই চিন্তা বিশেষভাবে প্রকট হয় স্নাতক তৃতীয় বা চতুর্থ বর্ষে এসে।
সেই সাথে যে মেডিকেলের শিক্ষার্থী অনেক বড় স্বপ্ন নিয়ে তার এই যাত্রা শুরু করেছিল, সেও ক্রমান্বয়ে হতাশ হয়ে যাচ্ছে, কারণ চাহিদার তুলনায় যোগান অনেক বেশি। প্রতি বছর যে পরিমাণ মেডিকেল বা ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষার্থী পাশ করে বের হচ্ছে, তাদেরকে সঠিক সম্মান দেয়া যাচ্ছে না। অনেক MBBS ডিগ্রীধারী শিক্ষার্থী আছেন, অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য বিনামূল্যে যখন বিভিন্ন ক্লিনিকে ডিউটি দেন তখন ডায়গনস্টিক সেন্টার কর্তৃক যাচ্ছেতাই ব্যাবহারের শিকার হচ্ছেন যেখানে পূর্বে তাদের সম্মাননায় ৪/৫ জন ব্যাগ ধরতেই তৎপর।
আর ইঞ্জিনিয়ারদের কথা তো বাদই দিলাম৷ একইসাথে বিজনেস এবং ইঞ্জিনিয়ারিং না বুঝলে তাদের ভাত নেই বললেই চলে। এর ফলে আত্মহত্যার সংবাদ নানা পত্র পত্রিকায় আমরা প্রায় প্রতিদিনই দেখছি। যা খুবই আশংকাজনক হারে বাড়ছে। এই ঘটনার অনেকগুলো বিষয়ের মধ্যে একটা হচ্ছে হতাশা, ক্যারিয়ার নিয়ে অনিশ্চয়তা।
এরজন্য শুরু থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন পড়ছি এবং পড়ে কি কি সুযোগ আছে তা নিয়ে প্রতিনিয়ত ভাবতে হবে। আলোচনা করতে হবে সমমনা বন্ধুমহলেও। আবার ব্যবসা বাণিজ্যের কথাও যদি বলি, আমাদের সমাজে বিজনেস বা ব্যবসা করতে চাই বললে, অভিভাবকদের মাথায় যে দৃশ্য ভেসে উঠে তা হলো, একটা মুদির দোকান, লুঙ্গি পরে ছেলে পরে মালামাল বিক্রিবাট্টা করছে। কিন্তু এখন এই ধারণা কতটা অমূলক আমরা জানি, অভিভাবকদের সেটা বোঝাতে হবে। প্রযুক্তিখাত থেকে শুরু করে এখন এমন কোন সেক্টর নেই যাকে ব্যবসায় কনভার্ট করা যায়না। যেমন ধরুন, জিওগ্রাফি এন্ড এনভায়রনমেন্ট ডিপার্টমেন্ট এর একজন শিক্ষার্থী তার শেখা জ্ঞানকে কিভাবে ব্যবসায় রূপান্তর করতে পারে? সে যদি দেশের বাইরে থেকে রিলেভেন্ট ফিল্ডে ডিগ্রী নিয়ে এসে, দেশে একটা কনসাল্টেন্সী ফার্ম এস্টাব্লিশ করে, তাহলে তার সিটি কর্পোরেশন থেকে শুরু করে, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, নগর পরিকল্পনা, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার মত হাই পটেনশিয়াল এরিয়ায় কনসাল্টেন্সী করার সুযোগ আছে।

মাহমুদ হাসান আসিফ
ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগ,
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

ট্যাগস :
আপডেট : ০১:০৩:১৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩
২৯০ বার পড়া হয়েছে

জীবন নিয়ে হতাশা যেনো আত্মহত্যাতে পরিত্রাণের উপায়

আপডেট : ০১:০৩:১৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩

জীবন নিয়ে হতাশা যেনো আত্মহত্যাতে পরিত্রাণের উপায়
(ছবির বা থেকে আসমাউল হুসনা ফ্লোরা, আবদুল কাদের নাগিব, মৌতুসী এবং মাহমুদ হাসান আসিফ)

১০ই সেপ্টেম্বর আত্মহত্যা প্রতিরোধ দিবস, আত্মহত্যা প্রতিরোধের জন্য নানান পন্থা যেমন অবলম্বন করা হচ্ছে তেমনি অনুৎসাহিত করা হচ্ছে সবাইকে। তার পরেও প্রতিনিয়ত বেড়ে চলেছে আত্মহত্যাকারীর সংখ্যা। বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের মাঝে এর প্রভাব যেনো বিরূপ। কেনো তারা এতো বেশি আত্মহত্যা প্রবণ? কেনো প্রতিনিয়ত বেড়ে চলেছে তাদের সংখ্যা? বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা নিয়ে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মতামত তুলে ধরেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের শিক্ষার্থী রোকাইয়া তিথি –

আত্মহত্যা বিষয়টি  বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মাঝে দিন দিন বেড়েই চলেছে। আত্মহত্যার নানা কারনের মধ্যে প্রথমেই যেই বিষয়টি আসে সেটি হল পারিবারিক দায়বদ্ধতা। বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত অধিকাংশ ছাত্রছাত্রী নিম্ন ও মধ্যম আয়ের পরিবার থেকে উঠে আসা। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের শুরু থেকেই তাদের লক্ষ্য থাকে উচ্চ সিজিপিএ অথবা কোনোভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের গন্ডি পেরিয়ে বিসিএস জয় অথবা সমমানের একটি চাকরির মাধ্যমে পরিবারের হাল ধরা। দেখা যায় অনেকেই  তাদের আশানুরুপ ফলাফল পায়না। ফলে জন্ম নেয় হতাশা। হতাশা হতে মৃত্যুর চিন্তা এবং অতঃপর জীবনের সমাপ্তি।
বর্তমান বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটই যেন এর পিছনের অন্যতম কারন। আমাদের দেশে রয়েছে সরকারী চাকরির যথেষ্ট স্বল্পতা তাছাড়া অধিকাংশ ছাত্রছাত্রীর প্রধান লক্ষ্য থাকে সরকারী চাকরি। তাদের চিন্তাধারা এমন যে একটি সরকারী চাকরি বা বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে একটি উচ্চ সিজিপিএ জীবনের সবকিছু। এখানে ছাত্রছাত্রীদেরকে উদ্যোক্তা হতে উদ্বুদ্ধ করা হয়না। প্রতিবছর যতসংখ্যক শিক্ষার্থী পড়াশুনার পাঠ চুকিয়ে বেকার হিসেবে দিন পার করে তাদেরকে উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তুলতে পারলে তারা তাদের মেধাশক্তিকে কাজে লাগিয়ে দেশের অর্থনীতিকে অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে যেতে পারতো।
এছাড়া মাদকাসক্তি আত্মহত্যার অন্যতম কারনগুলোর মধ্যে একটি। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে  প্রায়শই অসৎ সঙ্গ অথবা কৌতুহলবশত অনেকেই বিভিন্ন ধরনের মাদকে আসক্ত হয়ে পড়ে যার ফলে তারা জড়িয়ে পড়ে বিভিন্ন অন্যায় ও অনৈতিক কাজকর্মে সেই সাথে তাদের মধ্যে বাড়ছে আত্মহত্যার ঝুঁকি। পারিবারিক পারিপার্শ্বিক অবস্থা ও চাপের জন্য অঙ্কুরেই ঝরে যায় সম্ভামনাময় অনেক জীবন।

আসমাউল হুসনা ফ্লোরা
কৃষি অর্থনীতি ও ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদ,
সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়

সকল ব্যর্থতাকে ধৈর্যের মাধ্যমে শক্তিতে পরিণত করে দৃঢ় সংকল্পে এগিয়ে যাওয়ার নামই জীবন। প্রায়ই অপ্রত্যাশিত এমন খবর আমাদের দেখতে হয় যে, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যা! জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশে এসে যেখানে হাজারও স্বপ্নের হাতছানি সেখানে এমন ভূল সিদ্ধান্ত দেশ ও পরিবারের জন্য অত্যন্ত দুঃখের। কেন এরা সফলতার মুখমুখি এসে আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছেন! একটি প্রতিবেদনে এ বিষয়ে কয়েকটি তথ্য উঠে এসেছে,  তা হলো পারিবারিক সমস্যা ও অভাব, জীবনের লক্ষ্য বারবার ব্যর্থ যেমন জীবিকার জন্য কিছু না করতে পারা। বিশেষ করে সবচেয়ে বেশি ও গুরুত্বপূর্ণ যে কারণ তা হচ্ছে প্রেমে ব্যর্থ হয়ে মেনে নিতে না পারা। আবেগকে উপেক্ষা করে বিবেককে কাজে লাগাতে হবে। দুঃখ ও কষ্ট জীবনের একটি অংশ যা সাময়িক । তাই ধর্মীয় শিক্ষা, পারিবারিক শিক্ষা, নিয়মিত কাউন্সিলিং ও প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় এ বিষয়টি জোর দেওয়া উচিত। জীবনের মূল্য অনেক যা কোন সাময়িক  সামান্য ব্যর্থতায় শেষ হয়ে যায় না  এবং আত্মহত্যা মহাপাপ ও বোকামি।

-আবদুল কাদের নাগিব
ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ,
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

আত্মহননের পথে সবচেয়ে বর্ধিত হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা এবং প্রতিবছর এর পরিমাণ বেড়েই চলেছে। ২২ থেকে ২৫ বছরে শিক্ষার্থীদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বেশি। সম্পর্কের জটিলতা, পারিবারিক জীবনের জটিলতা, চাহিদার সাথে প্রাপ্তির মিল না থাকা, বিষণ্নতা, আর্থিক সমস্যা, একাকিত্ব নানা কারণে একজন শিক্ষার্থীর মধ্যে হতাশা আর আত্মহত্যার প্রবণতা বেড়ে যায়। যখন কোনো শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে আসে তখন তার উপর তার পরিবার,সমাজ এবং তার নিজের ও কিছু এক্সপেকটেশন থাকে কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে আসার পর নানা কারণে যখন তার এক্সপেকটেশনের কাঠামো পরিবর্তন হতে থাকে যেমনঃ সিজিপিএ কমে যাচ্ছে ভালো ফলাফল করতে পারছে না আবার বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে চাকরির বাজারে যে করুণ অবস্থা একজন শিক্ষার্থীকে ভাবাতে বাধ্য করে পড়াশোনা শেষ করে সে কি কোনো চাকরি পাবে কিনা ইত্যাদি কারণে একজন শিক্ষার্থী মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত হয়। তীব্র আকারে মানসিক অবসাদগ্রস্ত হওয়ার কারণে শিক্ষার্থীরা আত্মহত্যার পথে ঝোঁকে।

-মৌতুসী
গণিত বিভাগ,
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কিংবা ইঞ্জিনিয়ারিং স্টুডেন্ট, বর্তমানে সবাই আসলে এক ওপেন সিক্রেটের স্বীকার। তা হচ্ছে অনিশ্চয়তা। একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী স্নাতক শেষে একটি ভালো চাকরি পাবে কিনা, স্নাতকোত্তর এর শেষে তার যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরিটি আদৌ আছে কিনা, তা নিয়ে বরাবরই চিন্তিত থাকে। এই চিন্তা বিশেষভাবে প্রকট হয় স্নাতক তৃতীয় বা চতুর্থ বর্ষে এসে।
সেই সাথে যে মেডিকেলের শিক্ষার্থী অনেক বড় স্বপ্ন নিয়ে তার এই যাত্রা শুরু করেছিল, সেও ক্রমান্বয়ে হতাশ হয়ে যাচ্ছে, কারণ চাহিদার তুলনায় যোগান অনেক বেশি। প্রতি বছর যে পরিমাণ মেডিকেল বা ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষার্থী পাশ করে বের হচ্ছে, তাদেরকে সঠিক সম্মান দেয়া যাচ্ছে না। অনেক MBBS ডিগ্রীধারী শিক্ষার্থী আছেন, অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য বিনামূল্যে যখন বিভিন্ন ক্লিনিকে ডিউটি দেন তখন ডায়গনস্টিক সেন্টার কর্তৃক যাচ্ছেতাই ব্যাবহারের শিকার হচ্ছেন যেখানে পূর্বে তাদের সম্মাননায় ৪/৫ জন ব্যাগ ধরতেই তৎপর।
আর ইঞ্জিনিয়ারদের কথা তো বাদই দিলাম৷ একইসাথে বিজনেস এবং ইঞ্জিনিয়ারিং না বুঝলে তাদের ভাত নেই বললেই চলে। এর ফলে আত্মহত্যার সংবাদ নানা পত্র পত্রিকায় আমরা প্রায় প্রতিদিনই দেখছি। যা খুবই আশংকাজনক হারে বাড়ছে। এই ঘটনার অনেকগুলো বিষয়ের মধ্যে একটা হচ্ছে হতাশা, ক্যারিয়ার নিয়ে অনিশ্চয়তা।
এরজন্য শুরু থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন পড়ছি এবং পড়ে কি কি সুযোগ আছে তা নিয়ে প্রতিনিয়ত ভাবতে হবে। আলোচনা করতে হবে সমমনা বন্ধুমহলেও। আবার ব্যবসা বাণিজ্যের কথাও যদি বলি, আমাদের সমাজে বিজনেস বা ব্যবসা করতে চাই বললে, অভিভাবকদের মাথায় যে দৃশ্য ভেসে উঠে তা হলো, একটা মুদির দোকান, লুঙ্গি পরে ছেলে পরে মালামাল বিক্রিবাট্টা করছে। কিন্তু এখন এই ধারণা কতটা অমূলক আমরা জানি, অভিভাবকদের সেটা বোঝাতে হবে। প্রযুক্তিখাত থেকে শুরু করে এখন এমন কোন সেক্টর নেই যাকে ব্যবসায় কনভার্ট করা যায়না। যেমন ধরুন, জিওগ্রাফি এন্ড এনভায়রনমেন্ট ডিপার্টমেন্ট এর একজন শিক্ষার্থী তার শেখা জ্ঞানকে কিভাবে ব্যবসায় রূপান্তর করতে পারে? সে যদি দেশের বাইরে থেকে রিলেভেন্ট ফিল্ডে ডিগ্রী নিয়ে এসে, দেশে একটা কনসাল্টেন্সী ফার্ম এস্টাব্লিশ করে, তাহলে তার সিটি কর্পোরেশন থেকে শুরু করে, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, নগর পরিকল্পনা, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার মত হাই পটেনশিয়াল এরিয়ায় কনসাল্টেন্সী করার সুযোগ আছে।

মাহমুদ হাসান আসিফ
ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগ,
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়