০৩:০১ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বিজ্ঞপ্তি

নির্বাচনী প্রেক্ষাপট পটুয়াখালী-৪ : নৌকা বনাম ঈগল

লেখক: মোঃ বেল্লাল হাওলাদার, কবি ও সাংবাদিক

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটভুক্ত দলগুলোর অংশগ্রহণ ছাড়া ভোটের মাঠে উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরি করতে আওয়ামী লীগ সরকার যে পদক্ষেপ নিয়েছে, তাতে কিছু কিছু আসনে আওয়ামী লীগের মূল প্রতিদ্বন্দ্বি নৌকা না পাওয়া আওয়ামী লীগের দলীয় নেতা, সাবেক এমপি ও মন্ত্রী। যার কারণে নিজেদের মধ্যে একটা অস্বস্তিকর উত্তেজনার মধ্য দিয়ে ভোটের হাওয়া অন্য সুরে বইছে সারাদেশে।আমাদের দেশে নির্বাচন এলে অনেক নেতা-নেত্রী যেমনিভাবে নিজেরা অতি ধার্মিক বনে যান, তাতে তাদের লেবাস পরিবর্তনে এলাকায় লোকজনের কাছে আকর্ষণীয় হয়ে উঠে। কিন্তু একটু ভিন্ন চোখে প্রত্যক্ষ করলে প্রায়ই দেখা যায়, প্রার্থীর উভয় পক্ষের নেতৃবৃন্দই নির্বাচন ইস্যুতে পরস্পরের বিরুদ্ধে কথা বলতে শুরু করে এবং সীমাহীন আক্রমনাত্মক হয়ে ওঠেন। আবার কোনো কোনো প্রার্থী নেচে গেয়ে ভোটারদের আকৃষ্ট করবার চেষ্টা করেন। তখন তিনি তার লেবাসের দিকে তাকান না! কেউ কেউ শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান এড়িয়ে মান-অভিমানে পূর্ব শত্রুতার জেরে, দলের আদর্শকে পিঠের পিছনে রেখে নিজ ব্যক্তি স্বার্থে বক্তব্য রাখেন কঠোর ও অশালীন ভাষায়। কিভাবে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করে ভোটারদের সমর্থন পাওয়া যায়, সে কৌশলে অসত্য তথ্যও উপস্থাপন করেন। এমন কি গালমন্দ অশালীন কথাবার্তাও বলেন। তবে আমি মনে করি যুক্তি প্রমাণ ছাড়া মন্তব্য করলে নিজ অবস্থানকেই দুর্বল করা হয়, এটা গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করে নেতাদের মঞ্চে বক্তব্য বা মন্তব্য করা উচিত। আমার এলাকা ১১৪, পটুয়াখালী ৪ আসনেও চলছে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা। একই দলের নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ায় তাকে নিয়ে গালমন্দ বিষোদাগার ও কঠোর ভাষায় সমালোচনা করছেন দলের মনোনীত প্রার্থীর কিছু সমর্থক। সেদিন ভিডিওতে একটি কল রেকর্ড দেখলাম। তাতে শোনা গেছে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি নিজ দলের উপজেলা সভাপতিকে সন্ত্রাসী বলছেন। কারণ তিনি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন, জনপ্রিয়তায়ও বেশ এগিয়ে রয়েছেন। এজন্য উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকদের ফোন করে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি গালমন্দ ও বিভিন্নভাবে কটুক্তি করে স্বতন্ত্র প্রার্থীকে কিভাবে বিচ্ছিন্ন করা যায় সে চেষ্টা করে যাচ্ছেন।

শোনা যাচ্ছে শুধু তিনি নন, নির্বাচনী সভা সমাবেশে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকসহ অনেক নেতাই স্বতন্ত্র প্রার্থীকে অশোভন ভাষায় বিভিন্ন শব্দ দিয়ে উপস্থাপন করছেন। এছাড়াও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতির কল রেকর্ডের সেই ভিডিও’র কথোপকথনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে বিকৃত ভাষায় উপস্থাপন করার বিষয়টিও শোনা গেছে। যা শুনে আওয়ামীপ্রেমীদের মনটা বিষণ্ণতায় ভরে গেছে।

নিজ দলের নেতা বরেণ্য আওয়ামী লীগার, সাবেক এমপি, প্রতিমন্ত্রীকে এভাবে অশ্রদ্ধা করে কথা বলে, তার দলের উপজেলা সাধারণ সম্পাদক ও ইউনিয়ন সভাপতিসহ অন্যান্য নেতারা! যতটুকু জেনেছি এই আক্রমণাত্মক বিষয়গুলো স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকরা ভালোভাবে নেয়নি। তারা অনেকেই ক্ষোভ ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন। তাদের কথা হলো, ভোটের মাঠে জনপ্রিয়তার শীর্ষে থাকা স্বতন্ত্র প্রার্থীর যারা সমালোচনা করছেন, এক সময় তারাই এমপি-প্রতিমন্ত্রী থাকাকালে তার পাশে থেকে ফায়দা লুটেছেন। স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকরা মনে করেন, অংশগ্রহণমূলক, প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করার লক্ষ্যে স্বয়ং দলের সভানেত্রী শেখ হাসিনা নিজেই ঘোষণা দিয়েছেন ভোটের মাঠে উৎসবমুখর পরিবেশে সৃষ্টি করতে দলের বা দলের বাইরে যে কেউ স্বতন্ত্র (ডামি) প্রার্থী হতে পারবেন।

যদিও আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্রের ৪৭ (১১) ধারায় বলা আছে, ‘জাতীয় এবং স্থানীয় সরকার নির্বাচনে কেউ দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে প্রার্থী হলে সরাসরি বহিষ্কার হবেন। এমনকি প্রার্থী না হলেও কেউ দলীয় প্রার্থীর বিরোধিতা করলে তদন্ত সাপেক্ষে বহিষ্কার হবেন। অর্থাৎ আওয়ামী লীগের নীতি অনুযায়ী দলের সিদ্ধান্তের বাইরে প্রার্থী হওয়া গুরুতর অপরাধ।’

যদি আমরা একটু পিছনের দিকে তাকাই তাহলে দেখা যাবে, দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে যারা প্রার্থী হয়েছিলেন, তাদের বহিষ্কার করা হয়েছে। সেক্ষেত্রে এবার দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অনেকটাই দলের বিদ্রোহী প্রার্থীর প্রতি কোনো পদক্ষেপ না নিয়ে দলটির নীতি নির্ধারকরা একেবারেই চুপচাপ। কারণ ভোট অংশগ্রহণমূলক করতে, ভোটারের উপস্থিতি বাড়াতে এবং বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয় ঠেকানোর কথা বলে নিজ দলের স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার সুযোগ করে দিয়েছেন। ফলে স্বতন্ত্র বা বিদ্রোহী হিসেবে দাঁড়ানো নেতাদের বহিষ্কার করা হবে না। নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা এবং ভোটার উপস্থিতি বাড়াতে আওয়ামী লীগের যে সিদ্ধান্ত- সে মোতাবেক ছার পেয়ে যাবেন বিদ্রোহীরা তা সময়ের সাথে স্পষ্ট।

মূলত এই সুযোগটা কাজে লাগানোর জন্যই অন্যান্য আসনের ন্যায় পটুয়াখালী-৪ আসনে আওয়ামীলীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন বর্তমান উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, সাবেক দু’বারের এমপি ও একবারে প্রতিমন্ত্রী মাহবুবুর রহমান তালুকদার ও আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় উপকমিটির সাবেক সহ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল ইসলাম লিটন। এই দুইজনের মধ্যে নৌকার মূল প্রতিদ্বন্দী মাহবুবুর রহমান তালুকদার। তাই মাহবুবুর রহমানের সমর্থকরা বলেন, ‘মাহাবুবুর রহমান তালুকদারের জনপ্রিয়তা ঠেকাতে, তার বিরুদ্ধে নৌকার প্রার্থীর অতি উৎসাহি লোকজন যে যার অবস্থান থেকে জেদ ও আক্রোশে অশোভন বিষোদাগার করেই যাচ্ছেন।’ তারা আরো বলেন, ‘নিন্দুকেরা কত কী না বলছে, এমনকি ফোন কলে মিছিল মিটিং সমাবেশে এই বিষোদাগার, সমলোচনা থেকে মুক্ত থাকছে না তারা। যার সাথে বাস্তবের সম্পর্ক থাকছে খুবই কম। ব্যক্তিগত এই জেরে অনাকাঙ্ক্ষিত তিক্ততায় এলাকার জনসাধারণ মর্মাহত হচ্ছেন, ভীষণ কষ্ট পাচ্ছেন। জনগণের বিরাট একটি অংশকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোতে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছেন। এমনকি তাকে বেকায়দায় ফেলবার জন্য মিথ্যে তথ্য দিয়ে তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকার সংবাদ পরিবেশন করছেন।’

ঈগল প্রতীকের অনেকের মুখে শোনা যায়, মহিব্বুর রহমান অতি ঠান্ডা মাথার একজন মানুষ। ৫ বছরে ক্ষমতার অপব্যবহার, দুর্নীতি করে অঢেল সম্পদের মালিক হয়েছেন। পুনরায় এমপি হতে অবৈধভাবে অর্থ উপার্জন থেকে কিছু অর্থ বিভিন্ন মহলে খরচ করে জনসমর্থন ও ভোট নেওয়ার চেষ্টা করছেন। তাতেও তেমন সুবিধা করতে পারছে না। দেখা যায় ঈগল প্রতীকের চেয়ে নৌকার সভা সমাবেশের লোকের উপস্থিতি কম। এতে বুঝা যায় এবার এমপি হওয়ার কৌশলী জালে আটকা পড়েছে নৌকার মাঝি। যার ফলশ্রুতিতে মাহবুবুর রহমানকে নিয়ে বিভিন্নভাবে আলোচনা-সমালোচনা করা হচ্ছে।

এটা ঠিক যে সব কিছুরই কোনো না কোনোভাবে সমালোচনা থাকবেই। তাই সমালোচনার ক্ষেত্রে অবশ্যই গঠনমূলক এবং বন্ধুভাবাপন্ন মনোভাব নিয়ে তা করা উচিত। বড় আক্ষেপের সঙ্গে মনের মধ্যে প্রশ্ন জাগে, আমাদের মাঝে লাগামহীন বিষোদগার ও নিয়ন্ত্রণহীন বাকযুদ্ধের মহড়া আর কতকাল চলবে? এভাবে যদি নিজ দলের নেতার প্রতি নেতার গালমন্দ বিষোদাগার ও কঠোর ভাষায় সমালোচনা চলতে থাকে, তাহলে তা আগামীতে ক্ষতি হবে বহুমুখী।

জনসাধারণ কোনো কোনো নেতার বক্তব্যকে সত্য মানছেন, অন্য গ্রুপ মিথ্যা জানছেন। কেউ কেউ কারো কারো বক্তব্যকে অর্ধেক সত্য বা অর্ধেক মিথ্যা মানছেন। এসবের বড় ক্ষতি হচ্ছে ভবিষ্যত প্রজন্মের ওপর। তারা গালির ভাষাটাকে স্বাভাবিক ভাষা হিসেবে গ্রহণ করছে। বিভক্তি ও অসহিষ্ণুতায় অভ্যস্ত হচ্ছে। এতে মহামারির আকারে ছড়িয়ে পড়ছে গালমন্দ, অশ্রদ্ধা ও বিভক্তি।

এ ধরনের আচরণে আরেকটি বড় ক্ষতি হচ্ছে সম্প্রসারিত মিডিয়ার কল্যাণে, নেতৃবৃন্দের এসব অশ্রাব্য কথাবার্তা মুহূর্তেই পৌঁছে যাচ্ছে সারা বিশ্বে। এতে করে কলঙ্কিত হচ্ছে পুরো দেশ ও জাতির মান-মর্যাদা। তাছাড়া এ তো বাস্তব যে, কোনো বিষয়ের উত্তর-প্রতি উত্তরে যুক্তি-প্রমাণের স্থলে গালি-গালাজ, অশালীন কথাবার্তা নিজ অবস্থানকেই দুর্বল করে দেয়। কারণ এ দ্বারা প্রমাণ হয় যে, এ অবস্থানের পক্ষে যুক্তি ও প্রমাণ নেই।

ট্যাগস :
আপডেট : ০৯:০৫:৫৯ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০২৩
১৭৮ বার পড়া হয়েছে

নির্বাচনী প্রেক্ষাপট পটুয়াখালী-৪ : নৌকা বনাম ঈগল

আপডেট : ০৯:০৫:৫৯ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০২৩

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটভুক্ত দলগুলোর অংশগ্রহণ ছাড়া ভোটের মাঠে উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরি করতে আওয়ামী লীগ সরকার যে পদক্ষেপ নিয়েছে, তাতে কিছু কিছু আসনে আওয়ামী লীগের মূল প্রতিদ্বন্দ্বি নৌকা না পাওয়া আওয়ামী লীগের দলীয় নেতা, সাবেক এমপি ও মন্ত্রী। যার কারণে নিজেদের মধ্যে একটা অস্বস্তিকর উত্তেজনার মধ্য দিয়ে ভোটের হাওয়া অন্য সুরে বইছে সারাদেশে।আমাদের দেশে নির্বাচন এলে অনেক নেতা-নেত্রী যেমনিভাবে নিজেরা অতি ধার্মিক বনে যান, তাতে তাদের লেবাস পরিবর্তনে এলাকায় লোকজনের কাছে আকর্ষণীয় হয়ে উঠে। কিন্তু একটু ভিন্ন চোখে প্রত্যক্ষ করলে প্রায়ই দেখা যায়, প্রার্থীর উভয় পক্ষের নেতৃবৃন্দই নির্বাচন ইস্যুতে পরস্পরের বিরুদ্ধে কথা বলতে শুরু করে এবং সীমাহীন আক্রমনাত্মক হয়ে ওঠেন। আবার কোনো কোনো প্রার্থী নেচে গেয়ে ভোটারদের আকৃষ্ট করবার চেষ্টা করেন। তখন তিনি তার লেবাসের দিকে তাকান না! কেউ কেউ শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান এড়িয়ে মান-অভিমানে পূর্ব শত্রুতার জেরে, দলের আদর্শকে পিঠের পিছনে রেখে নিজ ব্যক্তি স্বার্থে বক্তব্য রাখেন কঠোর ও অশালীন ভাষায়। কিভাবে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করে ভোটারদের সমর্থন পাওয়া যায়, সে কৌশলে অসত্য তথ্যও উপস্থাপন করেন। এমন কি গালমন্দ অশালীন কথাবার্তাও বলেন। তবে আমি মনে করি যুক্তি প্রমাণ ছাড়া মন্তব্য করলে নিজ অবস্থানকেই দুর্বল করা হয়, এটা গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করে নেতাদের মঞ্চে বক্তব্য বা মন্তব্য করা উচিত। আমার এলাকা ১১৪, পটুয়াখালী ৪ আসনেও চলছে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা। একই দলের নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ায় তাকে নিয়ে গালমন্দ বিষোদাগার ও কঠোর ভাষায় সমালোচনা করছেন দলের মনোনীত প্রার্থীর কিছু সমর্থক। সেদিন ভিডিওতে একটি কল রেকর্ড দেখলাম। তাতে শোনা গেছে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি নিজ দলের উপজেলা সভাপতিকে সন্ত্রাসী বলছেন। কারণ তিনি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন, জনপ্রিয়তায়ও বেশ এগিয়ে রয়েছেন। এজন্য উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকদের ফোন করে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি গালমন্দ ও বিভিন্নভাবে কটুক্তি করে স্বতন্ত্র প্রার্থীকে কিভাবে বিচ্ছিন্ন করা যায় সে চেষ্টা করে যাচ্ছেন।

শোনা যাচ্ছে শুধু তিনি নন, নির্বাচনী সভা সমাবেশে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকসহ অনেক নেতাই স্বতন্ত্র প্রার্থীকে অশোভন ভাষায় বিভিন্ন শব্দ দিয়ে উপস্থাপন করছেন। এছাড়াও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতির কল রেকর্ডের সেই ভিডিও’র কথোপকথনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে বিকৃত ভাষায় উপস্থাপন করার বিষয়টিও শোনা গেছে। যা শুনে আওয়ামীপ্রেমীদের মনটা বিষণ্ণতায় ভরে গেছে।

নিজ দলের নেতা বরেণ্য আওয়ামী লীগার, সাবেক এমপি, প্রতিমন্ত্রীকে এভাবে অশ্রদ্ধা করে কথা বলে, তার দলের উপজেলা সাধারণ সম্পাদক ও ইউনিয়ন সভাপতিসহ অন্যান্য নেতারা! যতটুকু জেনেছি এই আক্রমণাত্মক বিষয়গুলো স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকরা ভালোভাবে নেয়নি। তারা অনেকেই ক্ষোভ ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন। তাদের কথা হলো, ভোটের মাঠে জনপ্রিয়তার শীর্ষে থাকা স্বতন্ত্র প্রার্থীর যারা সমালোচনা করছেন, এক সময় তারাই এমপি-প্রতিমন্ত্রী থাকাকালে তার পাশে থেকে ফায়দা লুটেছেন। স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকরা মনে করেন, অংশগ্রহণমূলক, প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করার লক্ষ্যে স্বয়ং দলের সভানেত্রী শেখ হাসিনা নিজেই ঘোষণা দিয়েছেন ভোটের মাঠে উৎসবমুখর পরিবেশে সৃষ্টি করতে দলের বা দলের বাইরে যে কেউ স্বতন্ত্র (ডামি) প্রার্থী হতে পারবেন।

যদিও আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্রের ৪৭ (১১) ধারায় বলা আছে, ‘জাতীয় এবং স্থানীয় সরকার নির্বাচনে কেউ দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে প্রার্থী হলে সরাসরি বহিষ্কার হবেন। এমনকি প্রার্থী না হলেও কেউ দলীয় প্রার্থীর বিরোধিতা করলে তদন্ত সাপেক্ষে বহিষ্কার হবেন। অর্থাৎ আওয়ামী লীগের নীতি অনুযায়ী দলের সিদ্ধান্তের বাইরে প্রার্থী হওয়া গুরুতর অপরাধ।’

যদি আমরা একটু পিছনের দিকে তাকাই তাহলে দেখা যাবে, দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে যারা প্রার্থী হয়েছিলেন, তাদের বহিষ্কার করা হয়েছে। সেক্ষেত্রে এবার দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অনেকটাই দলের বিদ্রোহী প্রার্থীর প্রতি কোনো পদক্ষেপ না নিয়ে দলটির নীতি নির্ধারকরা একেবারেই চুপচাপ। কারণ ভোট অংশগ্রহণমূলক করতে, ভোটারের উপস্থিতি বাড়াতে এবং বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয় ঠেকানোর কথা বলে নিজ দলের স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার সুযোগ করে দিয়েছেন। ফলে স্বতন্ত্র বা বিদ্রোহী হিসেবে দাঁড়ানো নেতাদের বহিষ্কার করা হবে না। নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা এবং ভোটার উপস্থিতি বাড়াতে আওয়ামী লীগের যে সিদ্ধান্ত- সে মোতাবেক ছার পেয়ে যাবেন বিদ্রোহীরা তা সময়ের সাথে স্পষ্ট।

মূলত এই সুযোগটা কাজে লাগানোর জন্যই অন্যান্য আসনের ন্যায় পটুয়াখালী-৪ আসনে আওয়ামীলীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন বর্তমান উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, সাবেক দু’বারের এমপি ও একবারে প্রতিমন্ত্রী মাহবুবুর রহমান তালুকদার ও আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় উপকমিটির সাবেক সহ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল ইসলাম লিটন। এই দুইজনের মধ্যে নৌকার মূল প্রতিদ্বন্দী মাহবুবুর রহমান তালুকদার। তাই মাহবুবুর রহমানের সমর্থকরা বলেন, ‘মাহাবুবুর রহমান তালুকদারের জনপ্রিয়তা ঠেকাতে, তার বিরুদ্ধে নৌকার প্রার্থীর অতি উৎসাহি লোকজন যে যার অবস্থান থেকে জেদ ও আক্রোশে অশোভন বিষোদাগার করেই যাচ্ছেন।’ তারা আরো বলেন, ‘নিন্দুকেরা কত কী না বলছে, এমনকি ফোন কলে মিছিল মিটিং সমাবেশে এই বিষোদাগার, সমলোচনা থেকে মুক্ত থাকছে না তারা। যার সাথে বাস্তবের সম্পর্ক থাকছে খুবই কম। ব্যক্তিগত এই জেরে অনাকাঙ্ক্ষিত তিক্ততায় এলাকার জনসাধারণ মর্মাহত হচ্ছেন, ভীষণ কষ্ট পাচ্ছেন। জনগণের বিরাট একটি অংশকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোতে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছেন। এমনকি তাকে বেকায়দায় ফেলবার জন্য মিথ্যে তথ্য দিয়ে তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকার সংবাদ পরিবেশন করছেন।’

ঈগল প্রতীকের অনেকের মুখে শোনা যায়, মহিব্বুর রহমান অতি ঠান্ডা মাথার একজন মানুষ। ৫ বছরে ক্ষমতার অপব্যবহার, দুর্নীতি করে অঢেল সম্পদের মালিক হয়েছেন। পুনরায় এমপি হতে অবৈধভাবে অর্থ উপার্জন থেকে কিছু অর্থ বিভিন্ন মহলে খরচ করে জনসমর্থন ও ভোট নেওয়ার চেষ্টা করছেন। তাতেও তেমন সুবিধা করতে পারছে না। দেখা যায় ঈগল প্রতীকের চেয়ে নৌকার সভা সমাবেশের লোকের উপস্থিতি কম। এতে বুঝা যায় এবার এমপি হওয়ার কৌশলী জালে আটকা পড়েছে নৌকার মাঝি। যার ফলশ্রুতিতে মাহবুবুর রহমানকে নিয়ে বিভিন্নভাবে আলোচনা-সমালোচনা করা হচ্ছে।

এটা ঠিক যে সব কিছুরই কোনো না কোনোভাবে সমালোচনা থাকবেই। তাই সমালোচনার ক্ষেত্রে অবশ্যই গঠনমূলক এবং বন্ধুভাবাপন্ন মনোভাব নিয়ে তা করা উচিত। বড় আক্ষেপের সঙ্গে মনের মধ্যে প্রশ্ন জাগে, আমাদের মাঝে লাগামহীন বিষোদগার ও নিয়ন্ত্রণহীন বাকযুদ্ধের মহড়া আর কতকাল চলবে? এভাবে যদি নিজ দলের নেতার প্রতি নেতার গালমন্দ বিষোদাগার ও কঠোর ভাষায় সমালোচনা চলতে থাকে, তাহলে তা আগামীতে ক্ষতি হবে বহুমুখী।

জনসাধারণ কোনো কোনো নেতার বক্তব্যকে সত্য মানছেন, অন্য গ্রুপ মিথ্যা জানছেন। কেউ কেউ কারো কারো বক্তব্যকে অর্ধেক সত্য বা অর্ধেক মিথ্যা মানছেন। এসবের বড় ক্ষতি হচ্ছে ভবিষ্যত প্রজন্মের ওপর। তারা গালির ভাষাটাকে স্বাভাবিক ভাষা হিসেবে গ্রহণ করছে। বিভক্তি ও অসহিষ্ণুতায় অভ্যস্ত হচ্ছে। এতে মহামারির আকারে ছড়িয়ে পড়ছে গালমন্দ, অশ্রদ্ধা ও বিভক্তি।

এ ধরনের আচরণে আরেকটি বড় ক্ষতি হচ্ছে সম্প্রসারিত মিডিয়ার কল্যাণে, নেতৃবৃন্দের এসব অশ্রাব্য কথাবার্তা মুহূর্তেই পৌঁছে যাচ্ছে সারা বিশ্বে। এতে করে কলঙ্কিত হচ্ছে পুরো দেশ ও জাতির মান-মর্যাদা। তাছাড়া এ তো বাস্তব যে, কোনো বিষয়ের উত্তর-প্রতি উত্তরে যুক্তি-প্রমাণের স্থলে গালি-গালাজ, অশালীন কথাবার্তা নিজ অবস্থানকেই দুর্বল করে দেয়। কারণ এ দ্বারা প্রমাণ হয় যে, এ অবস্থানের পক্ষে যুক্তি ও প্রমাণ নেই।