০১:১৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বিজ্ঞপ্তি

পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহার বাংলাদেশর প্রাচীন ঐতিহ্যের এক অনন্য নিদর্শন 

প্রতিনিধির নাম

মোঃ চপল সরদার রিপোর্টার

 

পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহার ধ্বংসাবশেষ বাংলাদেশে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক নিদর্শন।  হিমালয়ের দক্ষিণে সর্ববৃহৎ বৌদ্ধ বিহারের পরিচয় বহন করছে। যুগ যুগ ধরে এ  ধ্বংসাবশেষের উপর বায়ু বাহিত ধূলা বালি ক্রমান্বয়ে জমে এক বিশালাকার উঁচু ঢিবি বা পাহাড়ের রূপ পরিগ্রহ করে। সম্ভবতঃ এভাবেই এ স্থানের নাম হয় পাহাড়পুর। ১৯২৩ খ্রিঃ হতে ১৯৩৪ খ্রিঃ পর্যন্ত সময়ের খননের ফলে এখানে একটি গুপ্ত যুগের তাম্রশাসন (৪৭৯ খ্রিঃ) সহ প্রস্তর লিপি, প্রস্তর ও ব্রোঞ্জ ভাস্কর্য, পোড়ামাটির ফলক চিত্র, উৎকীর্ণ। লিপিযুক্ত রৌদ্র তাপে শুকানো মাটির সিল, অলংকৃত ইট, বিভিন্ন ধাতব দ্রব্যাদি, রৌপ্য মুদ্রা, মাটির তৈরি বিভিন্ন পাত্র ইত্যাদি প্রচুর প্রত্ন নিদর্শন পাওয়া যায়। উৎকীর্ণ লিপিযুক্ত মাটির | সিলের পাঠোদ্ধার হতে জানা যায় যে, এ বিহারের প্রকৃত নাম ছিল সোমপুর মহাবিহার। এ | মহাবিহার পাল বংশীয় দ্বিতীয় রাজা ধর্মপাল (৭৭০-৮১০ খ্রিঃ) কর্তৃক নির্মিত। উল্লেখ্য যে, ১৯৮২ খ্রিঃ এবং পরবর্তী সময় পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহারের কতিপয় ভিক্ষু কক্ষে গভীর খননের ফলে নিম্ন আবাস স্তরে একটি পোড়া মাটির মূর্তির মাথা, একটি তাম্র মুদ্রা ও অন্যান্য কতিপয় প্রত্ন দ্রব্যাদি পাওয়া যায়। এ সমস্ত প্রত্ন দ্রব্যাদি বিশেষতঃ পোড়া মাটির মূর্তির মাথাটি গুপ্ত যুগের ভাস্কর্যের বৈশিষ্ট্যের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। আলোচ্য প্রত্ন নিদর্শন ব্যতিরেখে ও বৃহদাকারের কক্ষ বিশিষ্ট (১৬×১৩-৬”) একটি ইমারতের ধ্বংসাবশেষ উক্ত খননে উম্মুক্ত হয়। বৃহদাকারের এ ইমারতটি পাহাড়পুর তাম্র শাসনে উল্লেখিত জৈন বিহার বলে অনুমিত। এ বিষয়ে নিশ্চিত হওয়ার জন্য আরও গভীর খনন, অনুসন্ধান ও সমীক্ষা অত্যাবশ্যক। পাহাড়পুর বিহার উত্তর-দক্ষিণে ৯২২ ফুট এবং পূর্ব-পশ্চিমে ৯১৯ ফুট। বিহারের উত্তর বাহুর |

মধ্যস্থলে অবস্থিত প্রধান ও আকর্ষণীয় প্রবেশ পথ। বিহারের উম্মুক্ত আঙ্গিনার চতুপার্শ্বে চার বাহুতে ১৭৭ টি ভিক্ষু কক্ষ আছে। অঙ্গনের কেন্দ্রস্থলে সুউচ্চ মন্দির ও উহার অন্যান্য স্থানে | বহু সংখ্যক নিবেদন স্তূপ, কেন্দ্রীয় মন্দিরের অনুকৃতি, ছোট মন্দির, কুপ, রান্না ঘর, ভোজনশালা, ছোট ছোট মন্দির ও অন্যান্য অট্টালিকার সমাবেশ খুবই চমৎকার। আকর্ষণীয় কেন্দ্রীয় মন্দিরটি ক্রুশাকৃতি এবং ধাপে ধাপে উচু করে নির্মাণ করা হয়েছে। পোড়া মাটির ফলক চিত্র দ্বারা মন্দিরের বহির্দেয়াল মুখ সুশোভিত করা হয়েছে। ৯ম শতাব্দীর শেষ পর্ব হতে শুরু করে কতিপয় বিদেশী রাজাগণ এবং দিব্য নামে এ দেশীয় এক কৈবর্ত সামন্ত নরপতি কর্তৃক পাল সাম্রাজ্য বারবার আক্রান্ত হয়। এভাবে পূনঃ আক্রমনের ফলে সোমপুর বিহারের যথেষ্ট ক্ষতি সাধিত হয়। প্রায় একই সময় বঙ্গাল সৈন্যগণ পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহার ও মন্দির পুড়িয়ে দেন। খ্রিস্টীয় ১২ শতকে বাংলাদেশ সেন রাজাদের হস্তগত হয়। সেন রাজাগণ ব্রাহ্মণ্য ধর্মের গোঁড়া সমর্থক ছিলেন। এভাবে রাজকীয় পৃষ্টপোষকতার অভাবে পাহাড়পুরের বৌদ্ধ বিহার ও মন্দির ক্রমে ক্রমে পরিত্যক্ত হয়। ভিক্ষু ও পূজারীগণ পাহাড়পুর ত্যাগ করে অন্যত্র চলে যান।

ট্যাগস :
আপডেট : ১১:৩০:৪৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৫ মার্চ ২০২৩
৮৮ বার পড়া হয়েছে

পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহার বাংলাদেশর প্রাচীন ঐতিহ্যের এক অনন্য নিদর্শন 

আপডেট : ১১:৩০:৪৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৫ মার্চ ২০২৩

মোঃ চপল সরদার রিপোর্টার

 

পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহার ধ্বংসাবশেষ বাংলাদেশে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক নিদর্শন।  হিমালয়ের দক্ষিণে সর্ববৃহৎ বৌদ্ধ বিহারের পরিচয় বহন করছে। যুগ যুগ ধরে এ  ধ্বংসাবশেষের উপর বায়ু বাহিত ধূলা বালি ক্রমান্বয়ে জমে এক বিশালাকার উঁচু ঢিবি বা পাহাড়ের রূপ পরিগ্রহ করে। সম্ভবতঃ এভাবেই এ স্থানের নাম হয় পাহাড়পুর। ১৯২৩ খ্রিঃ হতে ১৯৩৪ খ্রিঃ পর্যন্ত সময়ের খননের ফলে এখানে একটি গুপ্ত যুগের তাম্রশাসন (৪৭৯ খ্রিঃ) সহ প্রস্তর লিপি, প্রস্তর ও ব্রোঞ্জ ভাস্কর্য, পোড়ামাটির ফলক চিত্র, উৎকীর্ণ। লিপিযুক্ত রৌদ্র তাপে শুকানো মাটির সিল, অলংকৃত ইট, বিভিন্ন ধাতব দ্রব্যাদি, রৌপ্য মুদ্রা, মাটির তৈরি বিভিন্ন পাত্র ইত্যাদি প্রচুর প্রত্ন নিদর্শন পাওয়া যায়। উৎকীর্ণ লিপিযুক্ত মাটির | সিলের পাঠোদ্ধার হতে জানা যায় যে, এ বিহারের প্রকৃত নাম ছিল সোমপুর মহাবিহার। এ | মহাবিহার পাল বংশীয় দ্বিতীয় রাজা ধর্মপাল (৭৭০-৮১০ খ্রিঃ) কর্তৃক নির্মিত। উল্লেখ্য যে, ১৯৮২ খ্রিঃ এবং পরবর্তী সময় পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহারের কতিপয় ভিক্ষু কক্ষে গভীর খননের ফলে নিম্ন আবাস স্তরে একটি পোড়া মাটির মূর্তির মাথা, একটি তাম্র মুদ্রা ও অন্যান্য কতিপয় প্রত্ন দ্রব্যাদি পাওয়া যায়। এ সমস্ত প্রত্ন দ্রব্যাদি বিশেষতঃ পোড়া মাটির মূর্তির মাথাটি গুপ্ত যুগের ভাস্কর্যের বৈশিষ্ট্যের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। আলোচ্য প্রত্ন নিদর্শন ব্যতিরেখে ও বৃহদাকারের কক্ষ বিশিষ্ট (১৬×১৩-৬”) একটি ইমারতের ধ্বংসাবশেষ উক্ত খননে উম্মুক্ত হয়। বৃহদাকারের এ ইমারতটি পাহাড়পুর তাম্র শাসনে উল্লেখিত জৈন বিহার বলে অনুমিত। এ বিষয়ে নিশ্চিত হওয়ার জন্য আরও গভীর খনন, অনুসন্ধান ও সমীক্ষা অত্যাবশ্যক। পাহাড়পুর বিহার উত্তর-দক্ষিণে ৯২২ ফুট এবং পূর্ব-পশ্চিমে ৯১৯ ফুট। বিহারের উত্তর বাহুর |

মধ্যস্থলে অবস্থিত প্রধান ও আকর্ষণীয় প্রবেশ পথ। বিহারের উম্মুক্ত আঙ্গিনার চতুপার্শ্বে চার বাহুতে ১৭৭ টি ভিক্ষু কক্ষ আছে। অঙ্গনের কেন্দ্রস্থলে সুউচ্চ মন্দির ও উহার অন্যান্য স্থানে | বহু সংখ্যক নিবেদন স্তূপ, কেন্দ্রীয় মন্দিরের অনুকৃতি, ছোট মন্দির, কুপ, রান্না ঘর, ভোজনশালা, ছোট ছোট মন্দির ও অন্যান্য অট্টালিকার সমাবেশ খুবই চমৎকার। আকর্ষণীয় কেন্দ্রীয় মন্দিরটি ক্রুশাকৃতি এবং ধাপে ধাপে উচু করে নির্মাণ করা হয়েছে। পোড়া মাটির ফলক চিত্র দ্বারা মন্দিরের বহির্দেয়াল মুখ সুশোভিত করা হয়েছে। ৯ম শতাব্দীর শেষ পর্ব হতে শুরু করে কতিপয় বিদেশী রাজাগণ এবং দিব্য নামে এ দেশীয় এক কৈবর্ত সামন্ত নরপতি কর্তৃক পাল সাম্রাজ্য বারবার আক্রান্ত হয়। এভাবে পূনঃ আক্রমনের ফলে সোমপুর বিহারের যথেষ্ট ক্ষতি সাধিত হয়। প্রায় একই সময় বঙ্গাল সৈন্যগণ পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহার ও মন্দির পুড়িয়ে দেন। খ্রিস্টীয় ১২ শতকে বাংলাদেশ সেন রাজাদের হস্তগত হয়। সেন রাজাগণ ব্রাহ্মণ্য ধর্মের গোঁড়া সমর্থক ছিলেন। এভাবে রাজকীয় পৃষ্টপোষকতার অভাবে পাহাড়পুরের বৌদ্ধ বিহার ও মন্দির ক্রমে ক্রমে পরিত্যক্ত হয়। ভিক্ষু ও পূজারীগণ পাহাড়পুর ত্যাগ করে অন্যত্র চলে যান।