১১:১৮ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বিজ্ঞপ্তি

ফেসবুকে প্রেম থেকে বিয়ে, অর্থ হাতিয়ে ডিভোর্সের ফাঁদে দুই ছেলে নিয়ে নিঃস্ব নারী

প্রতিনিধির নাম

চাঁপাইনবাবগঞ্জে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নেয়ার পর ডিভোর্সের ফাঁদে ফেলে এক নারীকে নিঃস্ব করে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। এতে ওই নারী তার দুই ছেলেকে নিয়ে পথে বসেছেন। পারিবারিকভাবে পূর্ব পরিকল্পনা করে ডিভোর্সী নারীকে বিয়ে করে হাতিয়ে নেয়া হয়েছে প্রায় ১৮ লাখ টাকা। টাকা নেয়ার পর ডিভোর্সের নোটিশ পাঠিয়েছেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার সেলিনাবাদ গ্রামের মো. মোজাম্মেল হকের ছেলে মো. নজিবুর রহমান (৩০)।

উপায় না পেয়ে দুই সন্তান নিয়ে নিঃস্ব নারী আদালতে দুইটি মামলা দায়ের করেছেন। জানা যায়, এক সন্তানসহ ডিভোর্স হয় ঢাকার যাত্রাবাড়ী মোমেনবাগ এলাকার মৃত জাহাঙ্গীর আহমেদের মেয়ে তানিয়া আক্তারের। এরপর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে সন্তানসহ ডিভোর্সি নারী তানিয়া আক্তারের সাথে পরিচয় হয় শিবগঞ্জের সেলিনাবাদ এলাকার নজিবুর রহমানের। এরপর ওই নারী ডিভোর্স ও সন্তান থাকার বিষয়টি বললেও তা মেনে নিয়েই বিয়ের প্রস্তাব দেয় নজিবুর রহমান। পরে ২০১৮ সালের ০৫ ফেব্রুয়ারী উভয়ের সম্মতিতে দুইজনের বিয়ে হয়।

ভুক্তভোগী নারী তানিয়া আক্তার বলেন, বিয়ের পর নজিবুর রহমানের পরিবারও আমাদের বিষয়টি মেনে নেয়। এরপর গ্রামের বাসায় নিয়ে আসলে শশুর-শাশুড়িও এলাকার বিভিন্ন লোকজনের সাথে আমার পরিচয় করিয়ে দেয়। পরে আমার শাশুড়ি ও স্বামী আমাকে আদর যত্ন করে আমার মন জয় করে নিতে সক্ষম হয়। এসময় স্বামী নজিবুর শাশুড়ির প্রয়োজনের কথা বলে আমার বাবার পাওয়া উত্তরাধিকার সূত্রের জমি বিক্রি বাবদ থাকা টাকা ধার নিতে চাই।

তিনি আরও বলেন, টাকা ফেরতের প্রতিশ্রুতি দিলে শাশুড়ীর জন্য স্বামীকে ১৫ লাখ টাকা দেয়। পরে স্বামীকে নিজের কাছে থাকা শেষ সম্বল প্রায় তিন লাখ টাকা দিয়ে সৌদি আরবে পাঠায়। এসময় শশুরবাড়িতে থাকাকালীন সময়ে আমার খরচ না দেয়াসহ নানরকম নির্যাতন করে শশুরবাড়ির লোকজন। আমার থেকে ১৮ লাখ টাকা নিয়েও নানরকম দুর্ব্যবহার করতে থাকে তারা৷ এনিয়ে স্থানীয়ভাবে সালিশে বসলেও কোনো সমাধান হয়নি।

তানিয়া আক্তার বলেন, উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান শিউলী বেগমসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরা শ্বশুর বাড়ির এলাকায় সমাধানের লক্ষ্যে বসলে হঠাৎ করেই আমার বড় ছেলেকে অস্বীকার করে স্বামী ও শ্বশুর শ্বাশুড়ীসহ তাদের পরিবার। এতে আমি আরও নিরুপায় হয়ে যায়। মায়ের সাথে ঢাকায় ফিরে যাওয়ার পর দিনই চলতি বছরের ১৯ জানুয়ারী সাক্ষরিত আদালতের মাধ্যমে ডিভোর্সের কাগজ পাঠায় স্বামী নজিবুর রহমান। এ থেকেই সুস্পষ্ট প্রমাণ হয়, পূর্ব পরিকল্পনা করেই সকল ব্যবস্থা তারা সমাধানে বসেছিল। আমাকে তালাক পাঠালেও দেনমোহর বাবদ ৩ লাখ ১০১ টাকা পরিশোধ করেননি।

এই অবস্থায় বাধ্য হয়েই তানিয়া আক্তার ঢাকার সিএমএম আদালতে দুইটি মামলা দায়ের করেন। এরমধ্যে একটি যৌতুক মামলা, আরেকটি প্রতারণা করে অর্থ হাতিয়ে নেয়ার বিষয়ে। মামলায় প্রধান আসামি করা হয়, স্বামী নজিবুর রহমান, শশুড় মোজাম্মেল হক, শাশুড়ী নাদিরা বেগম, ননদ মোরসালিনা, মোজহারিনা ও মোসলেমাকে।

তাহেরা, সাগিরা, মর্জিনা বেগমসহ কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, মেয়েটিট একটি বড় ছেলে ছিল তা জানা স্বত্বেও নজিবুর তাকে বিয়ে করে। ছেলেটিকে নিজের ছেলের স্বীকৃতি দিব বলে প্রতিশ্রুতি দিয়ে বিয়ে করে। এতে মন গলে যায় তানিয়া আক্তারের। তাই স্বামী চাওয়া মাত্রই ১৫ লাখ ও তাকে বিদেশ পাঠানো বাবদ আরও তিন লাখ টাকা খরচ করে তানিয়া৷ টাকা নেয়া হয়ে গেলে স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজনের পক্ষ থেকে অমানবিক নির্যাতন শুরু হয় তানিয়ার উপর। এখন তাকে ডিভোর্স পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। তার দেনমোহর পরিশোধ করা হয়নি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে নজিবুর রহমানের এক নিকটাত্মীয় জানান, মুজিবুর রহমান বলতো প্রচন্ড অর্থলোভী প্রকৃতির। মেয়েটির কাছে অনেক টাকা আছে জানতে পেরেই তার সাথে ভালো ব্যবহার করে তার মন জয় করে তাকে ফাঁদে ফেলে টাকাগুলো হাতে নিয়েছে তারা। টাকা হাতিয়ে নেয়ার পরই ছুড়ে ফেলে দেয়ার মত দুর্ব্যবহার করছে। আদালতে যে মামলাগুলো হয়েছে, আমরা চাই এর সুষ্ঠু তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক। পাশাপাশি তার দেয়া ১৮ লাখ টাকা ও দেনমোহরের টাকা ফেরত দিয়ে দুইটি ছেলের ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত করার দাবি জানায়। ৫ বছরের দাম্পত্য জীবনে নজিবুর রহমানের ছেলে সন্তান হয়েছে। কিন্তু টাকা হাতিয়ে নেয়ার পর সেই ছেলেরও কোন খোঁজ খবর রাখছে না তারা।

এনিয়ে অভিযোগ অস্বীকার করেন তানিয়া আক্তারের থেকে বয়সে ৭ বছরের ছোট নজিবুর রহমান। মুঠোফোনে তিনি বলেন, সে (তানিয়া) আমার বাবা-মার সাথে থাকতে চাই না। তাই দীর্ঘদিন ধরে পারিবারিক বনিবনা হচ্ছিল না। এর সূত্র ধরেই আমি আদালতের মাধ্যমে ডিভোর্স পাঠিয়েছি। পরে জানতে পারলাম, আমার নামে দুইটি মিথ্যা মামলা করেছে৷ ১৮ লাখ টাকা নেয়ার বিষয়টি সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট।

এবিষয়ে শিবগঞ্জ উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান শিউলী বেগম জানান, এনিয়ে একাধিকবার বসে ও উভয় পক্ষের সাথে কথা বলে সংসার টিকিয়ে রাখতে আমরা উদ্যোগ নেয়। তারা দুইজনই নিজেদের সীধান্তে অটুট থাকে। এমনকি উভয় পক্ষই আদালতের শরণাপন্ন হয়েছে। অতএব, এবিষয়ে এখন আদালত সীধান্ত গ্রহণ করবে।

ট্যাগস :
আপডেট : ০৪:৫২:০১ অপরাহ্ন, বুধবার, ১০ মে ২০২৩
৬২ বার পড়া হয়েছে

ফেসবুকে প্রেম থেকে বিয়ে, অর্থ হাতিয়ে ডিভোর্সের ফাঁদে দুই ছেলে নিয়ে নিঃস্ব নারী

আপডেট : ০৪:৫২:০১ অপরাহ্ন, বুধবার, ১০ মে ২০২৩

চাঁপাইনবাবগঞ্জে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নেয়ার পর ডিভোর্সের ফাঁদে ফেলে এক নারীকে নিঃস্ব করে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। এতে ওই নারী তার দুই ছেলেকে নিয়ে পথে বসেছেন। পারিবারিকভাবে পূর্ব পরিকল্পনা করে ডিভোর্সী নারীকে বিয়ে করে হাতিয়ে নেয়া হয়েছে প্রায় ১৮ লাখ টাকা। টাকা নেয়ার পর ডিভোর্সের নোটিশ পাঠিয়েছেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার সেলিনাবাদ গ্রামের মো. মোজাম্মেল হকের ছেলে মো. নজিবুর রহমান (৩০)।

উপায় না পেয়ে দুই সন্তান নিয়ে নিঃস্ব নারী আদালতে দুইটি মামলা দায়ের করেছেন। জানা যায়, এক সন্তানসহ ডিভোর্স হয় ঢাকার যাত্রাবাড়ী মোমেনবাগ এলাকার মৃত জাহাঙ্গীর আহমেদের মেয়ে তানিয়া আক্তারের। এরপর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে সন্তানসহ ডিভোর্সি নারী তানিয়া আক্তারের সাথে পরিচয় হয় শিবগঞ্জের সেলিনাবাদ এলাকার নজিবুর রহমানের। এরপর ওই নারী ডিভোর্স ও সন্তান থাকার বিষয়টি বললেও তা মেনে নিয়েই বিয়ের প্রস্তাব দেয় নজিবুর রহমান। পরে ২০১৮ সালের ০৫ ফেব্রুয়ারী উভয়ের সম্মতিতে দুইজনের বিয়ে হয়।

ভুক্তভোগী নারী তানিয়া আক্তার বলেন, বিয়ের পর নজিবুর রহমানের পরিবারও আমাদের বিষয়টি মেনে নেয়। এরপর গ্রামের বাসায় নিয়ে আসলে শশুর-শাশুড়িও এলাকার বিভিন্ন লোকজনের সাথে আমার পরিচয় করিয়ে দেয়। পরে আমার শাশুড়ি ও স্বামী আমাকে আদর যত্ন করে আমার মন জয় করে নিতে সক্ষম হয়। এসময় স্বামী নজিবুর শাশুড়ির প্রয়োজনের কথা বলে আমার বাবার পাওয়া উত্তরাধিকার সূত্রের জমি বিক্রি বাবদ থাকা টাকা ধার নিতে চাই।

তিনি আরও বলেন, টাকা ফেরতের প্রতিশ্রুতি দিলে শাশুড়ীর জন্য স্বামীকে ১৫ লাখ টাকা দেয়। পরে স্বামীকে নিজের কাছে থাকা শেষ সম্বল প্রায় তিন লাখ টাকা দিয়ে সৌদি আরবে পাঠায়। এসময় শশুরবাড়িতে থাকাকালীন সময়ে আমার খরচ না দেয়াসহ নানরকম নির্যাতন করে শশুরবাড়ির লোকজন। আমার থেকে ১৮ লাখ টাকা নিয়েও নানরকম দুর্ব্যবহার করতে থাকে তারা৷ এনিয়ে স্থানীয়ভাবে সালিশে বসলেও কোনো সমাধান হয়নি।

তানিয়া আক্তার বলেন, উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান শিউলী বেগমসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরা শ্বশুর বাড়ির এলাকায় সমাধানের লক্ষ্যে বসলে হঠাৎ করেই আমার বড় ছেলেকে অস্বীকার করে স্বামী ও শ্বশুর শ্বাশুড়ীসহ তাদের পরিবার। এতে আমি আরও নিরুপায় হয়ে যায়। মায়ের সাথে ঢাকায় ফিরে যাওয়ার পর দিনই চলতি বছরের ১৯ জানুয়ারী সাক্ষরিত আদালতের মাধ্যমে ডিভোর্সের কাগজ পাঠায় স্বামী নজিবুর রহমান। এ থেকেই সুস্পষ্ট প্রমাণ হয়, পূর্ব পরিকল্পনা করেই সকল ব্যবস্থা তারা সমাধানে বসেছিল। আমাকে তালাক পাঠালেও দেনমোহর বাবদ ৩ লাখ ১০১ টাকা পরিশোধ করেননি।

এই অবস্থায় বাধ্য হয়েই তানিয়া আক্তার ঢাকার সিএমএম আদালতে দুইটি মামলা দায়ের করেন। এরমধ্যে একটি যৌতুক মামলা, আরেকটি প্রতারণা করে অর্থ হাতিয়ে নেয়ার বিষয়ে। মামলায় প্রধান আসামি করা হয়, স্বামী নজিবুর রহমান, শশুড় মোজাম্মেল হক, শাশুড়ী নাদিরা বেগম, ননদ মোরসালিনা, মোজহারিনা ও মোসলেমাকে।

তাহেরা, সাগিরা, মর্জিনা বেগমসহ কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, মেয়েটিট একটি বড় ছেলে ছিল তা জানা স্বত্বেও নজিবুর তাকে বিয়ে করে। ছেলেটিকে নিজের ছেলের স্বীকৃতি দিব বলে প্রতিশ্রুতি দিয়ে বিয়ে করে। এতে মন গলে যায় তানিয়া আক্তারের। তাই স্বামী চাওয়া মাত্রই ১৫ লাখ ও তাকে বিদেশ পাঠানো বাবদ আরও তিন লাখ টাকা খরচ করে তানিয়া৷ টাকা নেয়া হয়ে গেলে স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজনের পক্ষ থেকে অমানবিক নির্যাতন শুরু হয় তানিয়ার উপর। এখন তাকে ডিভোর্স পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। তার দেনমোহর পরিশোধ করা হয়নি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে নজিবুর রহমানের এক নিকটাত্মীয় জানান, মুজিবুর রহমান বলতো প্রচন্ড অর্থলোভী প্রকৃতির। মেয়েটির কাছে অনেক টাকা আছে জানতে পেরেই তার সাথে ভালো ব্যবহার করে তার মন জয় করে তাকে ফাঁদে ফেলে টাকাগুলো হাতে নিয়েছে তারা। টাকা হাতিয়ে নেয়ার পরই ছুড়ে ফেলে দেয়ার মত দুর্ব্যবহার করছে। আদালতে যে মামলাগুলো হয়েছে, আমরা চাই এর সুষ্ঠু তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক। পাশাপাশি তার দেয়া ১৮ লাখ টাকা ও দেনমোহরের টাকা ফেরত দিয়ে দুইটি ছেলের ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত করার দাবি জানায়। ৫ বছরের দাম্পত্য জীবনে নজিবুর রহমানের ছেলে সন্তান হয়েছে। কিন্তু টাকা হাতিয়ে নেয়ার পর সেই ছেলেরও কোন খোঁজ খবর রাখছে না তারা।

এনিয়ে অভিযোগ অস্বীকার করেন তানিয়া আক্তারের থেকে বয়সে ৭ বছরের ছোট নজিবুর রহমান। মুঠোফোনে তিনি বলেন, সে (তানিয়া) আমার বাবা-মার সাথে থাকতে চাই না। তাই দীর্ঘদিন ধরে পারিবারিক বনিবনা হচ্ছিল না। এর সূত্র ধরেই আমি আদালতের মাধ্যমে ডিভোর্স পাঠিয়েছি। পরে জানতে পারলাম, আমার নামে দুইটি মিথ্যা মামলা করেছে৷ ১৮ লাখ টাকা নেয়ার বিষয়টি সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট।

এবিষয়ে শিবগঞ্জ উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান শিউলী বেগম জানান, এনিয়ে একাধিকবার বসে ও উভয় পক্ষের সাথে কথা বলে সংসার টিকিয়ে রাখতে আমরা উদ্যোগ নেয়। তারা দুইজনই নিজেদের সীধান্তে অটুট থাকে। এমনকি উভয় পক্ষই আদালতের শরণাপন্ন হয়েছে। অতএব, এবিষয়ে এখন আদালত সীধান্ত গ্রহণ করবে।