০৫:০৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বিজ্ঞপ্তি

ভারতের কবির কবিতা চুরি করে নিজের নামে প্রকাশ করলেন বাংলাদেশী নাদিয়া

মোঃ আমিনুল ইসলাম সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার:

সাহিত্যাঙ্গনে একজন কবির কবিতার ভাব, ধারণা এমনকি পুরো কবিতা চুরি করার অভিযোগ আছে। এ অভিযোগ একেবারেই পুরনো। বিশ্বসাহিত্যের অনেক সেরা সাহিত্যিকদের কবিতাও রেহাই পায়নি চুরি বা অপহরণ থেকে। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম, কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য, পল্লিকবি জসিমউদ্দিনসহ নামিদামি অনেক লেখকের লেখাই কাব্যচোরেরা নিজের নাম লেখকের স্থানে লিখে ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে কবি বনে যাচ্ছে।

সম্প্রতি ওপার বাংলার উদীয়মান তরুণ কবি সৃজা ঘোষের বেশ কয়েকটি কবিতা বাংলাদেশের তথাকথিত কবি, অনলাইন সাহিত্য সংগঠন জাতীয় কবি ভুবনের উপদেষ্টা নাদিয়া ইসলাম মনি কপি করে কবি হওয়ার নেশায় লেখকের নামের স্থলে নিজের নাম লিখে টাইমলাইনে পোস্ট করে লাইক ও কমেন্টে প্রশংসায় ভাসেন। এমনকি কিছু অনলাইন পত্রিকার ভার্সনে ও এই চুরি করা কবিতাগুলো দিয়েছেন।

সর্বশেষ গত ২৫ আগস্ট-২০২৩ তারিখে সৃজা ঘোষের ২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বর পোস্টকৃত “তোমার কথা ভাবি” কবিতাটি নাদিয়া ইসলাম মনি কপি (চুরি) করে নিজের নামে টাইমলাইনে পোস্ট করেন। যা মুহূর্তেই লাইক, কমেন্ট ও শেয়ারের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। একসময় পড়শী সাহিত্য সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি এস এম শেরআলী শেরবাগের নজর পড়লে তার সন্দেহ হয়। পরে তিনি নাদিয়া ইসলাম মনির পোস্টকৃত কবিতাটি সার্চ দিয়ে দেখতে পান এটার আসল কবি সৃজা ঘোষ। তিনি এই বিষয়টি নাদিয়া ইসলাম মনিকে ইনবক্সে অবহিত করলে সাথে সাথে তাকে ব্লক করে দেয়, পরবর্তীতে এস এম শেরআলী শেরবাগ আসল কবির কবিতা ও চুরি করা নাদিয়া ইসলাম মনির পোস্ট স্ক্রীনশট করে নাদিয়া ইসলাম মনিকে চোর হিসেবে চিহ্নিত করে অনলাইনে পোস্ট করলে সবাই জানতে পারে। এমনকি তা সৃজা ঘোষের নজরে পড়লে তিনি তার কবিতার প্রমাণসহ বিস্মিত হয়ে নাদিয়া ইসলাম মনিকে কবিতা চোরের আখ্যা দিয়ে তার টাইমলাইনে গত ৪ সেপ্টেম্বর পোস্ট করেন এবং বাংলাদেশী কবি সাহিত্যিকদের বিষয়টি দেখার অনুরোধ জানান। সাথে সাথে নাদিয়া ইসলাম মনি তার টাইমলাইনে চুরি করা সকল কবিতা ডিলেট করেন এবং নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে বিভিন্ন ফন্দি আঁটেন। পরবর্তীতে কোনো উপায় না পেয়ে এক পর্যায়ে সৃজা ঘোষের কাছে ক্ষমা চেয়ে তার প্রমাণসহ চোরের আখ্যা দেওয়া পোস্টটি ডিলিট করতে অনুরোধ জানান। কিন্তু সৃজা ঘোষ তার পোস্ট ডিলেট করেননি।

এ বিষয়ে নাদিয়া ইসলাম মনির কাছে জানতে চাইলে সৃজা ঘোষের কবিতা নিজের নামে টাইমলাইনে পোস্ট করেছেন মর্মে স্বীকার করে বলেন, ‘আমার ইচ্ছা ও অবচেতনভাবে বেশ কিছু কবিতা আমার ফেসবুক আইডিতে আমার নামে পোস্ট করি। আমার বিরুদ্ধে কপি করার অভিযোগ এলে আমি সৃজা দিদির টাইমলাইনে গিয়ে যাচাই-বাছাই করে দেখি লেখাগুলো তার, আমার নয়। এজন্য আমি সৃজা দিদির কাছে ক্ষমা চেয়েছি এবং আমার টাইমলাইনে ভুল স্বীকার করে পোস্ট দিয়েছি। আশা করছি তিনি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।’

এ বিষয়ে সৃজা ঘোষ বলেন, ‘আমার কবিতা শুধু উনি (নাদিয়া ইসলাম মনি) নন, অনেকেই চুরি করে ধরা পড়েছে। কবিতা চুরি যাওয়া বিষয়টি একেবারেই কাম্য নয়। এটি আইনিভাবেই একটি অপরাধ। একটি লেখা গড়ে ওঠার পর সেটির যাবতীয় স্বত্ব লেখকের। আমার স্বরচিত অসংখ্য কবিতা নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে বারংবার এই অসুবিধে হয়েছে, হচ্ছে। ভারত বাংলাদেশের বহু পেজে, প্রোফাইলে অন্য কবির নামে আমার লেখা প্রকাশ করেছেন বহুজন। আগে এ বিষয়গুলো এড়িয়ে গেলেও বর্তমানে এড়ানো সম্ভব নয়, কারণ তাতে এ অন্যায় বেড়েই চলেছে।’

তিনি নাদিয়া ইসলাম মনিসহ কবিতা চোরদের আইনের আওতায় এনে শাস্তির দাবি জানিয়ে বলেন, ‘তিনি ক্ষমা চাইলেই কি তার অপরাধ ম্লান হয়ে যাবে! আসলে কিছু কিছু ক্ষতির কাছে ক্ষমা অর্থহীন। আর এ বিষয়গুলো তো একজন পরিণত মানুষের পক্ষে কখনোই অজান্তে ঘটানো সম্ভব নয়। এদেরকে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।’

এবিষয়ে পড়শী সাহিত্য সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি শেরআলী শেরবাগ বলেন, ‘শুধু নাদিয়া ইসলাম মনিই নয়, এযাবৎ আমি অনেক কবিতা চোর ধরেছি। কাব্যচোর দেশ, সমাজ ও সাহিত্যের শত্রু। এদের প্রতিরোধ করতে না পারলে সাহিত্যের বারোটা বাজতে খুব বেশি সময় লাগবেনা। তেমনি সাহিত্য থেকে পাঠকরা মুখ ফিরিয়ে নিবে।’

তিনি আরো বলেন, ‘আমি অনেক লেখকের লেখা দেখেছি কাব্যচোরেরা নিজের নাম দিয়ে যৌথ কাব্যগ্রন্থে প্রকাশ করেছেন, এমন কি নিজের নামে একক বই প্রকাশের নজিরও রয়েছে। এছাড়া অনলাইনে এমন কিছু সাহিত্য সংগঠন আছে যাদের কমিটির উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারাও কাব্যচোর! যা সাহিত্যাঙ্গনকে কলুষিত করছে। তাই যার যার লেখা চুরি ঠেকাতে লেখককেই সচেতন হতে হবে। আর অকবিদের (কাব্যচোর) যারা পৃষ্ঠপোষকতা করছেন তারা এ পথ থেকে সরে আসবেন বলে আশা করছি।’

উল্লেখ্য, এস এম শেরআলী শেরবাগ দীর্ঘদিন ধরেই সোশ্যালমিডিয়ার এই যুগে অত্যন্ত কঠিনভাবে লেখা (কবিতা-গল্প) চোর সনাক্তকরণে ভূমিকা রেখে চলেছেন।

ট্যাগস :
আপডেট : ০৯:৩৪:৪৮ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩
১৮৪ বার পড়া হয়েছে

ভারতের কবির কবিতা চুরি করে নিজের নামে প্রকাশ করলেন বাংলাদেশী নাদিয়া

আপডেট : ০৯:৩৪:৪৮ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩

সাহিত্যাঙ্গনে একজন কবির কবিতার ভাব, ধারণা এমনকি পুরো কবিতা চুরি করার অভিযোগ আছে। এ অভিযোগ একেবারেই পুরনো। বিশ্বসাহিত্যের অনেক সেরা সাহিত্যিকদের কবিতাও রেহাই পায়নি চুরি বা অপহরণ থেকে। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম, কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য, পল্লিকবি জসিমউদ্দিনসহ নামিদামি অনেক লেখকের লেখাই কাব্যচোরেরা নিজের নাম লেখকের স্থানে লিখে ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে কবি বনে যাচ্ছে।

সম্প্রতি ওপার বাংলার উদীয়মান তরুণ কবি সৃজা ঘোষের বেশ কয়েকটি কবিতা বাংলাদেশের তথাকথিত কবি, অনলাইন সাহিত্য সংগঠন জাতীয় কবি ভুবনের উপদেষ্টা নাদিয়া ইসলাম মনি কপি করে কবি হওয়ার নেশায় লেখকের নামের স্থলে নিজের নাম লিখে টাইমলাইনে পোস্ট করে লাইক ও কমেন্টে প্রশংসায় ভাসেন। এমনকি কিছু অনলাইন পত্রিকার ভার্সনে ও এই চুরি করা কবিতাগুলো দিয়েছেন।

সর্বশেষ গত ২৫ আগস্ট-২০২৩ তারিখে সৃজা ঘোষের ২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বর পোস্টকৃত “তোমার কথা ভাবি” কবিতাটি নাদিয়া ইসলাম মনি কপি (চুরি) করে নিজের নামে টাইমলাইনে পোস্ট করেন। যা মুহূর্তেই লাইক, কমেন্ট ও শেয়ারের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। একসময় পড়শী সাহিত্য সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি এস এম শেরআলী শেরবাগের নজর পড়লে তার সন্দেহ হয়। পরে তিনি নাদিয়া ইসলাম মনির পোস্টকৃত কবিতাটি সার্চ দিয়ে দেখতে পান এটার আসল কবি সৃজা ঘোষ। তিনি এই বিষয়টি নাদিয়া ইসলাম মনিকে ইনবক্সে অবহিত করলে সাথে সাথে তাকে ব্লক করে দেয়, পরবর্তীতে এস এম শেরআলী শেরবাগ আসল কবির কবিতা ও চুরি করা নাদিয়া ইসলাম মনির পোস্ট স্ক্রীনশট করে নাদিয়া ইসলাম মনিকে চোর হিসেবে চিহ্নিত করে অনলাইনে পোস্ট করলে সবাই জানতে পারে। এমনকি তা সৃজা ঘোষের নজরে পড়লে তিনি তার কবিতার প্রমাণসহ বিস্মিত হয়ে নাদিয়া ইসলাম মনিকে কবিতা চোরের আখ্যা দিয়ে তার টাইমলাইনে গত ৪ সেপ্টেম্বর পোস্ট করেন এবং বাংলাদেশী কবি সাহিত্যিকদের বিষয়টি দেখার অনুরোধ জানান। সাথে সাথে নাদিয়া ইসলাম মনি তার টাইমলাইনে চুরি করা সকল কবিতা ডিলেট করেন এবং নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে বিভিন্ন ফন্দি আঁটেন। পরবর্তীতে কোনো উপায় না পেয়ে এক পর্যায়ে সৃজা ঘোষের কাছে ক্ষমা চেয়ে তার প্রমাণসহ চোরের আখ্যা দেওয়া পোস্টটি ডিলিট করতে অনুরোধ জানান। কিন্তু সৃজা ঘোষ তার পোস্ট ডিলেট করেননি।

এ বিষয়ে নাদিয়া ইসলাম মনির কাছে জানতে চাইলে সৃজা ঘোষের কবিতা নিজের নামে টাইমলাইনে পোস্ট করেছেন মর্মে স্বীকার করে বলেন, ‘আমার ইচ্ছা ও অবচেতনভাবে বেশ কিছু কবিতা আমার ফেসবুক আইডিতে আমার নামে পোস্ট করি। আমার বিরুদ্ধে কপি করার অভিযোগ এলে আমি সৃজা দিদির টাইমলাইনে গিয়ে যাচাই-বাছাই করে দেখি লেখাগুলো তার, আমার নয়। এজন্য আমি সৃজা দিদির কাছে ক্ষমা চেয়েছি এবং আমার টাইমলাইনে ভুল স্বীকার করে পোস্ট দিয়েছি। আশা করছি তিনি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।’

এ বিষয়ে সৃজা ঘোষ বলেন, ‘আমার কবিতা শুধু উনি (নাদিয়া ইসলাম মনি) নন, অনেকেই চুরি করে ধরা পড়েছে। কবিতা চুরি যাওয়া বিষয়টি একেবারেই কাম্য নয়। এটি আইনিভাবেই একটি অপরাধ। একটি লেখা গড়ে ওঠার পর সেটির যাবতীয় স্বত্ব লেখকের। আমার স্বরচিত অসংখ্য কবিতা নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে বারংবার এই অসুবিধে হয়েছে, হচ্ছে। ভারত বাংলাদেশের বহু পেজে, প্রোফাইলে অন্য কবির নামে আমার লেখা প্রকাশ করেছেন বহুজন। আগে এ বিষয়গুলো এড়িয়ে গেলেও বর্তমানে এড়ানো সম্ভব নয়, কারণ তাতে এ অন্যায় বেড়েই চলেছে।’

তিনি নাদিয়া ইসলাম মনিসহ কবিতা চোরদের আইনের আওতায় এনে শাস্তির দাবি জানিয়ে বলেন, ‘তিনি ক্ষমা চাইলেই কি তার অপরাধ ম্লান হয়ে যাবে! আসলে কিছু কিছু ক্ষতির কাছে ক্ষমা অর্থহীন। আর এ বিষয়গুলো তো একজন পরিণত মানুষের পক্ষে কখনোই অজান্তে ঘটানো সম্ভব নয়। এদেরকে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।’

এবিষয়ে পড়শী সাহিত্য সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি শেরআলী শেরবাগ বলেন, ‘শুধু নাদিয়া ইসলাম মনিই নয়, এযাবৎ আমি অনেক কবিতা চোর ধরেছি। কাব্যচোর দেশ, সমাজ ও সাহিত্যের শত্রু। এদের প্রতিরোধ করতে না পারলে সাহিত্যের বারোটা বাজতে খুব বেশি সময় লাগবেনা। তেমনি সাহিত্য থেকে পাঠকরা মুখ ফিরিয়ে নিবে।’

তিনি আরো বলেন, ‘আমি অনেক লেখকের লেখা দেখেছি কাব্যচোরেরা নিজের নাম দিয়ে যৌথ কাব্যগ্রন্থে প্রকাশ করেছেন, এমন কি নিজের নামে একক বই প্রকাশের নজিরও রয়েছে। এছাড়া অনলাইনে এমন কিছু সাহিত্য সংগঠন আছে যাদের কমিটির উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারাও কাব্যচোর! যা সাহিত্যাঙ্গনকে কলুষিত করছে। তাই যার যার লেখা চুরি ঠেকাতে লেখককেই সচেতন হতে হবে। আর অকবিদের (কাব্যচোর) যারা পৃষ্ঠপোষকতা করছেন তারা এ পথ থেকে সরে আসবেন বলে আশা করছি।’

উল্লেখ্য, এস এম শেরআলী শেরবাগ দীর্ঘদিন ধরেই সোশ্যালমিডিয়ার এই যুগে অত্যন্ত কঠিনভাবে লেখা (কবিতা-গল্প) চোর সনাক্তকরণে ভূমিকা রেখে চলেছেন।