১১:০১ অপরাহ্ন, রবিবার, ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বিজ্ঞপ্তি

১৫ ই আগস্ট কালো রাতে বাঙালি জাতির জীবনে এক অন্ধকার নেমে আসে 

মোহাম্মদ আলমগীর (জুয়েল)
১৫ ই আগস্ট বাঙালি জাতির জীবনে এক অন্ধকার, অমানিশা ও কালো অধ্যায় নেমে আসে। হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, বাংলার অবিসংবাদিত নেতা ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পুরো পরিবারকে যেভাবে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রে বিপথগামী সেনাবাহিনী হত্যা করেছে এটি ইতিহাসে এক ন্যাক্কারজনক ঘটনা।
যিনি দেশের স্বাধীনতা অর্জনের মূল স্বপ্নদ্রষ্টা। জেল -জুলুম, হুলিয়া মাথা নিয়ে এই দেশের মানুষের জন্য আজীবন সংগ্রাম করেছে তাকে এভাবে প্রাণ দিতে হবে ভাবতে ভীষণ কষ্ট লাগে। যেখানে পাকিস্তান শাসকেরাও তাকে হত্যা করতে সাহস করেনি। এদেশের কিছু  বিশ্বাস ঘাতক, উচ্চাভিলাষী এবং মোস্তাকের নেতৃত্বে ক্ষমতালোভীরা সে স্পর্ধা দেখিয়েছে। বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুতে যারা প্রকাশ্যে নৃত্য করে আনন্দ উৎসব মেতেছিল,  এদের মধ্যে কেহ কেহ যখন দেখি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মন্ত্রী সভায় অংশীদার হয়, তখন হৃদয় অনাবিল ধারায় বয় বেদনার প্রসবন।
আরো বেশি ব্যাথিত হই যখন দেখি সংগঠনের নামে এবং  সরকারি, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে দূর্নীতিবাজ,  সুবিধাবাদী, সিন্ডিকেট,  ঘুষখোর, তেলমর্দন ও হাইব্রিডরা অবৈধ উপায় অর্থ উপার্জন করে, কেহ কেহ আবার এই দেশের অর্থ পাচার করে বিদেশে বেগমপাড়া নামে সাম্রাজ্যে গড়ে তুলে।
যাই হোক বঙ্গবন্ধুর আদর্শ সত্যিকারের দেশপ্রেম ও সোনার বাংলা গড়তে হলে আমাদের গণতন্ত্র, মৌলিক অধিকার, মতপ্রকাশের অধিকার, পরনির্ভরশীলতা হ্রাস এবং নিজস্ব স্বকীয়তা, আত্মনির্ভরশীল হয়ে আর্থ সামাজিক উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা ও উন্নতি সাধন করতে হবে।  এখন সবার চোখ দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে। বিরোধী দলের সাথে   বিদেশীরাও অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের আশা প্রকাশ করে। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু হলেই কি  সমাধান হয়ে যাবে সকল সমস্যার। গণতন্ত্রের সুবাতাস বয়ে যাবে দেশজুড়ে! কায়েম হবে আইনের শাসন ও সামাজিক ন্যায়বিচার। প্রতিষ্ঠিত হবে মানবাধিকার। নিশ্চিত হবে সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতা।
নির্বাচনই শুধু  গণতন্ত্রের শেষ কথা নয়।  নির্বাচন হলে দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়, কায়েম হয় আইনের শাসন, সামাজিক ন্যায়বিচার ও মানবিক মর্যাদা। নির্বাচন হলেই রাষ্ট্রে গণতন্ত্র প্রাতিষ্ঠানিকতা লাভ করে এমনটি ভাবার কোন কারণ নেই।  জাতীয় সংসদের এগারোটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত  হওয়ার পরও কাঙ্ক্ষিত গণতন্ত্রের দেখা মিলেছে এটি  কখনো মনে হয়নি।
আধুনিক রাষ্ট্র ও জনপ্রতিনিধিত্বশীল সরকার ব্যবস্থায় গণতন্ত্র  সর্বোত্তম মতবাদ। গণতন্ত্রের প্রধান উপজীব্য হলো নির্বাচন। বাংলাদেশ থেকে গণতন্ত্র আজ নির্বাসিত। স্বাধীনতার পরপরই মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম চেতনা গণতন্ত্রের কবর রচনা হয়।  হচ্ছে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। হাতবদল হচ্ছে ক্ষমতার। দুর্ভাগ্যজনকভাবে গণতন্ত্রায়ন বা সাধারণ মানুষের অধিকারের বিষয়টি এখনো রয়েছে অধরা। প্রতিনিধিত্বশীল গণতান্ত্রিক দেশে প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিকরা সরাসরি জনপ্রতিনিধি নির্বাচন করে থাকে।
বাংলাদেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীন নির্বাচনগুলো ছাড়া প্রায় প্রতিটি নির্বাচনেই নজির রয়েছে অনিয়মের। রাষ্ট্রের চেয়ে দল, দলের চেয়ে বড় হয়ে উঠেছে ব্যক্তি বিশেষ। পাঁচবছর পর ফিরে আসছে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এবছরের ডিসেম্বর অথবা আগামী জানুয়ারিতে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সরগরম হয়ে উঠেছে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গন। নির্বাচনের  দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে এবারো সরকারী ও বিরোধী দলের অবস্থান মুখোমুখি। প্রধান বিরোধী রাজনৈতিক দল সহ অন্যান্য দলগুলো ঘোষণা দিয়েছে নিরপেক্ষ নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া নির্বাচনে অংশ নেবে না। অপরদিকে বর্তমান সরকারের অধীনেই নির্বাচনের সিদ্ধান্তে অনড় ক্ষমতাসীনরা।
এমতাবস্থায় রাজনীতির আকাশে ক্রমেই জমে উঠছে কালো মেঘ। দেশে গণতন্ত্র থাকলে কখনো এমনটি হবার কথা নয়। গণতন্ত্রহীনতার এই সুযোগটি বার বার লুফে নিচ্ছে বিদেশীরা। বিশেষ করে বাংলাদেশে নিযুক্ত প্রভাবশালী দেশের রাষ্ট্রদূতরা মাঠে নেমেছেন এবারো। অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিশ্চিত করতে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয়ান ইউনিয়ন ইতোমধ্যেই গ্রহণ করেছে কঠোর অবস্থান। জাতিসংঘ মানবাধিকার সংস্থা সহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলোও সক্রিয় হয়ে উঠেছে বাংলাদেশের নির্বাচনের ব্যাপারে। সবকিছু মিলিয়ে দেশের রাজনীতি চলছে ভয়ানক ক্রান্তিকাল।
দেশের মানুষ বিগত ১১টি সংসদ নির্বাচন দেখেছেন। এর মাঝে তিনটি নির্বাচন নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই অনুষ্ঠিত হয়েছে। তাতেও কোন লাভ হয়নি। কারণ রাজনৈতিক দলগুলো মুখে গণতন্ত্রের কথা বললেও এখনো তা আত্মস্থ করতে পারেননি তারা। বড় রাজনৈতিক দলগুলোর অভ্যন্তরে নেই গণতান্ত্রিক চর্চা।  পরিবারতান্ত্রিকতার কারণে দলগুলো কার্যত পরিণত হয়েছে ব্যবসায়িক লিমিটেড কোম্পানীতে। মনোনয়ন ও কমিটি বাণিজ্যের কারণে এসব রাজনৈতিক দলে বিগত ১৫ বছরে নতুন কোন নেতাও বেরিয়ে আসেনি। এই যদি হয় রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থা তাহলে রাষ্ট্রে তারা গণতন্ত্র চর্চা করবে কিভাবে? কিছু ধনাঢ্য  ব্যবসায়ী, প্রাক্তন আমলা, বিতর্কিত ব্যক্তি দ্বারা সর্বত্র বিকশিত হয়ে বর্তমান জাতীয় সংসদ। সরকারি প্লট, ফ্ল্যাট, শুল্কমুক্ত গাড়ী, ব্যাংক ঋণ, ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান গড়তে নতুন উদ্যমে নেমে পড়বে তারা। তাদের সাঙ্গপাঙ্গ গণতন্ত্রের মুন্ডুপাত করবে। এভাবেই গড়ে উঠবে নব্য আরেকটি ধনিক-বণিক শ্রেণী।
রাষ্ট্রীয় বৈষম্যের শিকার সাধারণ মানুষের ভাগ্যের কোন পরিবর্তন যেমন আগে হয়নি ভবিষ্যতে হবার  নেই কোন সম্ভাবনা । রাষ্ট্রের অবহেলিত নাগরিকরা সুশাসন, সামাজিক ন্যায়বিচার মানবিক মর্যাদা ও বৈষম্যেও অবসান চান। অধিকার চান নিজেদের স্বাধীন মত প্রকাশের। গণতন্ত্র কি জিনিস তা তারা বুঝে না। যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতি বা স্যাংশন নিয়ে মাথাব্যথা নেই তাদের। দারিদ্র এবং  অবহেলিত জনগোষ্ঠীর ভোটের আগে ভাত চাই। এবার দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে গুরুত্বপূর্ণ একটি দাবি উঠেছে  ‘নির্বাচনের আগে চাই রাজনৈতিক সংস্কার’।
নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী রাজনৈতিক দলগুলোকে আনতে হবে সুনির্দিষ্ট আইনী কাঠামোর আওতায়। রাজনৈতিক দলগুলো মুখে গণতন্ত্রের কথা বলবে অথচ নূন্যতম চর্চা থাকবে না দলে এমনটি চলতে পারেনা।
জাতীয় সমঝোতার ভিত্তিতে  নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী দলগুলোকে অঙ্গীকার করতে হবে জাতীয় সমঝোতার ভিত্তিতে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বিজয়ী সংসদ সদস্যরাই বাংলাদেশকে পরিণত করবে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে। দেশে দুর্নীতিমুক্ত যোগ্য নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠার জন্যই প্রয়োজন প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক  সংস্কার । জাতীয় জীবনে বিদ্যমান কতিপয় মৌলিক সমস্যা এবং প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যকার যে অবিশ্বাস ও আস্থাহীনতা তা দূর করে দুর্নীতিবাজ, কালো টাকার মালিক ও পেশীশক্তির রাজনীতির অবসান ঘটানোর এখনই মোক্ষম সময়।
ভবিষ্যত রাজনৈতিক সংঘাতের যেনো পুনরাবৃত্তি না ঘটে নির্বাচনের পূর্বেই দেশের জনগণ তার নিশ্চয়তা চায়। স্থায়ী এবং টেকসই গণতন্ত্রের জন্য আলোচনা, গোল টেবিল বৈঠক  রাজনৈতিক সংস্কার, সমঝোতা, পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ, বিদেশীদের নির্ভরশীলতা হ্রাস, রাষ্ট্রের বিশিষ্ট ব্যাক্তিদের পরামর্শ এর কোন  কোন বিকল্প নেই।
জাতীয় শোক দিবসে-গণতন্ত্র   সুসংগত,মৌলিক অধিকার বাস্তবায়ন, সুশাসন, বিদেশি নির্ভরশীলতা হ্রাস, সমঝোতা, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন এটি হোক অঙ্গিকার “
লেখক: কবি, প্রাবন্ধিক, সম্পাদক ও নাট্যকার।
ট্যাগস :
আপডেট : ০৪:১২:১৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩১ অগাস্ট ২০২৩
২৪৩ বার পড়া হয়েছে

১৫ ই আগস্ট কালো রাতে বাঙালি জাতির জীবনে এক অন্ধকার নেমে আসে 

আপডেট : ০৪:১২:১৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩১ অগাস্ট ২০২৩
১৫ ই আগস্ট বাঙালি জাতির জীবনে এক অন্ধকার, অমানিশা ও কালো অধ্যায় নেমে আসে। হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, বাংলার অবিসংবাদিত নেতা ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পুরো পরিবারকে যেভাবে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রে বিপথগামী সেনাবাহিনী হত্যা করেছে এটি ইতিহাসে এক ন্যাক্কারজনক ঘটনা।
যিনি দেশের স্বাধীনতা অর্জনের মূল স্বপ্নদ্রষ্টা। জেল -জুলুম, হুলিয়া মাথা নিয়ে এই দেশের মানুষের জন্য আজীবন সংগ্রাম করেছে তাকে এভাবে প্রাণ দিতে হবে ভাবতে ভীষণ কষ্ট লাগে। যেখানে পাকিস্তান শাসকেরাও তাকে হত্যা করতে সাহস করেনি। এদেশের কিছু  বিশ্বাস ঘাতক, উচ্চাভিলাষী এবং মোস্তাকের নেতৃত্বে ক্ষমতালোভীরা সে স্পর্ধা দেখিয়েছে। বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুতে যারা প্রকাশ্যে নৃত্য করে আনন্দ উৎসব মেতেছিল,  এদের মধ্যে কেহ কেহ যখন দেখি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মন্ত্রী সভায় অংশীদার হয়, তখন হৃদয় অনাবিল ধারায় বয় বেদনার প্রসবন।
আরো বেশি ব্যাথিত হই যখন দেখি সংগঠনের নামে এবং  সরকারি, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে দূর্নীতিবাজ,  সুবিধাবাদী, সিন্ডিকেট,  ঘুষখোর, তেলমর্দন ও হাইব্রিডরা অবৈধ উপায় অর্থ উপার্জন করে, কেহ কেহ আবার এই দেশের অর্থ পাচার করে বিদেশে বেগমপাড়া নামে সাম্রাজ্যে গড়ে তুলে।
যাই হোক বঙ্গবন্ধুর আদর্শ সত্যিকারের দেশপ্রেম ও সোনার বাংলা গড়তে হলে আমাদের গণতন্ত্র, মৌলিক অধিকার, মতপ্রকাশের অধিকার, পরনির্ভরশীলতা হ্রাস এবং নিজস্ব স্বকীয়তা, আত্মনির্ভরশীল হয়ে আর্থ সামাজিক উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা ও উন্নতি সাধন করতে হবে।  এখন সবার চোখ দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে। বিরোধী দলের সাথে   বিদেশীরাও অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের আশা প্রকাশ করে। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু হলেই কি  সমাধান হয়ে যাবে সকল সমস্যার। গণতন্ত্রের সুবাতাস বয়ে যাবে দেশজুড়ে! কায়েম হবে আইনের শাসন ও সামাজিক ন্যায়বিচার। প্রতিষ্ঠিত হবে মানবাধিকার। নিশ্চিত হবে সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতা।
নির্বাচনই শুধু  গণতন্ত্রের শেষ কথা নয়।  নির্বাচন হলে দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়, কায়েম হয় আইনের শাসন, সামাজিক ন্যায়বিচার ও মানবিক মর্যাদা। নির্বাচন হলেই রাষ্ট্রে গণতন্ত্র প্রাতিষ্ঠানিকতা লাভ করে এমনটি ভাবার কোন কারণ নেই।  জাতীয় সংসদের এগারোটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত  হওয়ার পরও কাঙ্ক্ষিত গণতন্ত্রের দেখা মিলেছে এটি  কখনো মনে হয়নি।
আধুনিক রাষ্ট্র ও জনপ্রতিনিধিত্বশীল সরকার ব্যবস্থায় গণতন্ত্র  সর্বোত্তম মতবাদ। গণতন্ত্রের প্রধান উপজীব্য হলো নির্বাচন। বাংলাদেশ থেকে গণতন্ত্র আজ নির্বাসিত। স্বাধীনতার পরপরই মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম চেতনা গণতন্ত্রের কবর রচনা হয়।  হচ্ছে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। হাতবদল হচ্ছে ক্ষমতার। দুর্ভাগ্যজনকভাবে গণতন্ত্রায়ন বা সাধারণ মানুষের অধিকারের বিষয়টি এখনো রয়েছে অধরা। প্রতিনিধিত্বশীল গণতান্ত্রিক দেশে প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিকরা সরাসরি জনপ্রতিনিধি নির্বাচন করে থাকে।
বাংলাদেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীন নির্বাচনগুলো ছাড়া প্রায় প্রতিটি নির্বাচনেই নজির রয়েছে অনিয়মের। রাষ্ট্রের চেয়ে দল, দলের চেয়ে বড় হয়ে উঠেছে ব্যক্তি বিশেষ। পাঁচবছর পর ফিরে আসছে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এবছরের ডিসেম্বর অথবা আগামী জানুয়ারিতে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সরগরম হয়ে উঠেছে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গন। নির্বাচনের  দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে এবারো সরকারী ও বিরোধী দলের অবস্থান মুখোমুখি। প্রধান বিরোধী রাজনৈতিক দল সহ অন্যান্য দলগুলো ঘোষণা দিয়েছে নিরপেক্ষ নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া নির্বাচনে অংশ নেবে না। অপরদিকে বর্তমান সরকারের অধীনেই নির্বাচনের সিদ্ধান্তে অনড় ক্ষমতাসীনরা।
এমতাবস্থায় রাজনীতির আকাশে ক্রমেই জমে উঠছে কালো মেঘ। দেশে গণতন্ত্র থাকলে কখনো এমনটি হবার কথা নয়। গণতন্ত্রহীনতার এই সুযোগটি বার বার লুফে নিচ্ছে বিদেশীরা। বিশেষ করে বাংলাদেশে নিযুক্ত প্রভাবশালী দেশের রাষ্ট্রদূতরা মাঠে নেমেছেন এবারো। অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিশ্চিত করতে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয়ান ইউনিয়ন ইতোমধ্যেই গ্রহণ করেছে কঠোর অবস্থান। জাতিসংঘ মানবাধিকার সংস্থা সহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলোও সক্রিয় হয়ে উঠেছে বাংলাদেশের নির্বাচনের ব্যাপারে। সবকিছু মিলিয়ে দেশের রাজনীতি চলছে ভয়ানক ক্রান্তিকাল।
দেশের মানুষ বিগত ১১টি সংসদ নির্বাচন দেখেছেন। এর মাঝে তিনটি নির্বাচন নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই অনুষ্ঠিত হয়েছে। তাতেও কোন লাভ হয়নি। কারণ রাজনৈতিক দলগুলো মুখে গণতন্ত্রের কথা বললেও এখনো তা আত্মস্থ করতে পারেননি তারা। বড় রাজনৈতিক দলগুলোর অভ্যন্তরে নেই গণতান্ত্রিক চর্চা।  পরিবারতান্ত্রিকতার কারণে দলগুলো কার্যত পরিণত হয়েছে ব্যবসায়িক লিমিটেড কোম্পানীতে। মনোনয়ন ও কমিটি বাণিজ্যের কারণে এসব রাজনৈতিক দলে বিগত ১৫ বছরে নতুন কোন নেতাও বেরিয়ে আসেনি। এই যদি হয় রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থা তাহলে রাষ্ট্রে তারা গণতন্ত্র চর্চা করবে কিভাবে? কিছু ধনাঢ্য  ব্যবসায়ী, প্রাক্তন আমলা, বিতর্কিত ব্যক্তি দ্বারা সর্বত্র বিকশিত হয়ে বর্তমান জাতীয় সংসদ। সরকারি প্লট, ফ্ল্যাট, শুল্কমুক্ত গাড়ী, ব্যাংক ঋণ, ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান গড়তে নতুন উদ্যমে নেমে পড়বে তারা। তাদের সাঙ্গপাঙ্গ গণতন্ত্রের মুন্ডুপাত করবে। এভাবেই গড়ে উঠবে নব্য আরেকটি ধনিক-বণিক শ্রেণী।
রাষ্ট্রীয় বৈষম্যের শিকার সাধারণ মানুষের ভাগ্যের কোন পরিবর্তন যেমন আগে হয়নি ভবিষ্যতে হবার  নেই কোন সম্ভাবনা । রাষ্ট্রের অবহেলিত নাগরিকরা সুশাসন, সামাজিক ন্যায়বিচার মানবিক মর্যাদা ও বৈষম্যেও অবসান চান। অধিকার চান নিজেদের স্বাধীন মত প্রকাশের। গণতন্ত্র কি জিনিস তা তারা বুঝে না। যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতি বা স্যাংশন নিয়ে মাথাব্যথা নেই তাদের। দারিদ্র এবং  অবহেলিত জনগোষ্ঠীর ভোটের আগে ভাত চাই। এবার দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে গুরুত্বপূর্ণ একটি দাবি উঠেছে  ‘নির্বাচনের আগে চাই রাজনৈতিক সংস্কার’।
নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী রাজনৈতিক দলগুলোকে আনতে হবে সুনির্দিষ্ট আইনী কাঠামোর আওতায়। রাজনৈতিক দলগুলো মুখে গণতন্ত্রের কথা বলবে অথচ নূন্যতম চর্চা থাকবে না দলে এমনটি চলতে পারেনা।
জাতীয় সমঝোতার ভিত্তিতে  নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী দলগুলোকে অঙ্গীকার করতে হবে জাতীয় সমঝোতার ভিত্তিতে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বিজয়ী সংসদ সদস্যরাই বাংলাদেশকে পরিণত করবে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে। দেশে দুর্নীতিমুক্ত যোগ্য নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠার জন্যই প্রয়োজন প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক  সংস্কার । জাতীয় জীবনে বিদ্যমান কতিপয় মৌলিক সমস্যা এবং প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যকার যে অবিশ্বাস ও আস্থাহীনতা তা দূর করে দুর্নীতিবাজ, কালো টাকার মালিক ও পেশীশক্তির রাজনীতির অবসান ঘটানোর এখনই মোক্ষম সময়।
ভবিষ্যত রাজনৈতিক সংঘাতের যেনো পুনরাবৃত্তি না ঘটে নির্বাচনের পূর্বেই দেশের জনগণ তার নিশ্চয়তা চায়। স্থায়ী এবং টেকসই গণতন্ত্রের জন্য আলোচনা, গোল টেবিল বৈঠক  রাজনৈতিক সংস্কার, সমঝোতা, পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ, বিদেশীদের নির্ভরশীলতা হ্রাস, রাষ্ট্রের বিশিষ্ট ব্যাক্তিদের পরামর্শ এর কোন  কোন বিকল্প নেই।
জাতীয় শোক দিবসে-গণতন্ত্র   সুসংগত,মৌলিক অধিকার বাস্তবায়ন, সুশাসন, বিদেশি নির্ভরশীলতা হ্রাস, সমঝোতা, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন এটি হোক অঙ্গিকার “
লেখক: কবি, প্রাবন্ধিক, সম্পাদক ও নাট্যকার।