০৭:৫৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বিজ্ঞপ্তি

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রথম টাইম আউট

ড. সাঈদুর রহমান

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রথমবারের মতো কোনো ব্যাটসম্যান টাইম আউটের শিকার হয়ে প্যাভিলিয়নে ফিরে গেলেন। তিনি হচ্ছেন এঞ্জেলো ম্যাথিউস, যিনি অনেকদিন ধরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলছেন। এই নিয়মটি তার জানা না থাকার কোন কারণ নেই। শ্রীলংকান ইনিংসের ২৫তম ওভারে সাদিরা সামারাবিক্রমা আউট হওয়ার পর উইকেটে আসেন এঞ্জেলো ম্যাথিউস। কিন্তু তিনি যে হেলমেট নিয়ে এসেছিলেন, সেটি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের জন্য উপযুক্ত ছিল না। ফলে তিনি ড্রেসিংরুম থেকে আরেকটি হেলমেট চেয়ে পাঠান। এগুলো করতে করতেই অনেকটা সময় পার হয়ে যায়। ফলে সাকিব আল হাসান টাইম আউটের জন্য আবেদন জানান। আর তাতে নিয়ম অনুযায়ী আউট দেন আম্পায়ার। এভাবে আউট হ‌ওয়াটা কিছুতেই মেনে নিতে পারছিলেন না এঞ্জেলো ম্যাথিউস। এমসিসির আইনের ৪০.১.১ নম্বর ধারায় বলা আছে, একজন ব্যাটসম্যান আউট হয়ে যাওয়া বা রিটায়ার্ড হার্টের পর পরবর্তী ব্যাটসম্যানকে ৩ মিনিটের মধ্যে বলের মুখোমুখি হওয়ার জন্য প্রস্তুত হতে হবে। তিন মিনিটের মধ্যে তিনি যদি বল ফেস করার জন্য প্রস্তুত হতে না পারেন, তাহলে তাকে আউট ঘোষণা করা হবে। অবশ্য বিশ্বকাপের প্লেয়িং কন্ডিশনে বলা আছে, টাইম আউট এর জন্য সময় ২ মিনিট। এঞ্জেলো ম্যাথিউস এদিন ৩ মিনিটেরও বেশি সময় পার করে ফেলেন। যার ফলে, বাংলাদেশের আবেদনের প্রেক্ষিতে তাকে আউট দেন আম্পায়াররা। এক্ষেত্রে সাকিব আল হাসান বা বাংলাদেশ দলের কিছুই করার ছিল না। কারণ ক্রিকেটের নিয়ম মেনেই তাকে আউট দেওয়া হয়েছে। সাকিব আল হাসান হয়তো তাকে ব্যাটিংয়ের জন্য ফিরিয়ে আনতে পারতেন। কিন্তু এবারের বিশ্বকাপে বাংলাদেশের যে অবস্থা, তাতে এই ধরনের উদারতা দেখানো, বাংলাদেশের জন্য বিলাসিতা ছাড়া আর কিছু নয়।

একটি পরিবর্তন নিয়ে শ্রীলংকার বিরুদ্ধে ম্যাচ খেলতে নেমেছিল বাংলাদেশ। মুস্তাফিজুর রহমান পুরোপুরি ফিট না থাকার কারণে তাকে একাদশের বাইরে রেখে প্রথমবারের মতো তানজিম হাসান সাকিবকে একাদশে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। তানজিম হাসান সাকিবের একাদশে অন্তর্ভুক্তি অনেকটা অনুমিতই ছিল। কারণ পনেরো সদস্যের বাংলাদেশ স্কোয়াডের তিনিই একমাত্র সদস্য, যিনি এবারের বিশ্বকাপে এই ম্যাচের আগে কোন ম্যাচ খেলেননি। বাংলাদেশের সেমিফাইনালের সম্ভাবনা যদি থাকতো, জয়ের ধারাবাহিকতা বজায় রাখার বিষয় যদি থাকতো, তাহলে উইনিং কম্বিনেশন না ভাঙ্গার জন্য অথবা জয়ের ধারাবাহিকতা বজায় রাখার জন্য হয়তো তিন সিনিয়র পেস বোলারকে একাদশে রাখা হতো। কিন্তু বাংলাদেশের বিশ্বকাপ মিশন যেহেতু সেমিফাইনাল আগেই শেষ হয়ে যাবে, তাই তরুণ এই পেস বোলারকে একটি দুটি ম্যাচে সুযোগ দেওয়া টিম ম্যানেজমেন্টের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। টসে জিতে সাকিব আল হাসান প্রথমে ব্যাটিং না করে কেন ফিল্ডিং নিলেন, সেটা হয়তো অনেকের মনে প্রশ্ন হিসেবে আসতে পারে। টসের সময় সাকিব বলেছিলেন, উইকেটে কিছুটা ময়েশ্চার তিনি দেখেছিলেন, যেটাকে কাজে লাগানোর জন্যই তিনি প্রথমে ফিল্ডিং-এর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। প্রথম ওভারে উইকেট তুলে নিয়ে শরিফুল ইসলাম সাকিব আল হাসান এর সিদ্ধান্তের যৌক্তিকতা প্রমাণ করেছিলেন। বাংলাদেশের একাদশ নির্বাচন আজকের ম্যাচের জন্য অন্তত ঠিক ছিল বলেই মনে হয়েছে। ঠিক পাঁচ জন বোলার নিয়ে আজকে ম্যাচ খেলতে নেমেছিল বাংলাদেশ। নাসুম আহমেদ বা শেখ মাহাদী হাসানকে একাদশের বাইরে রাখা হয়েছিল। তার মানে জেনুইন আটজন ব্যাটসম্যান নিয়ে বাংলাদেশ খেলতে নেমেছিল ম্যাচটি। শ্রীলঙ্কানরা যেহেতু স্পিন ভালো খেলেন, তাই নাসুম আহমেদ বা শেখ মাহাদী হাসানকে দলভুক্ত করার চেয়ে বরং একজন ব্যাটসম্যান বেশি নিয়ে খেলাটাই বাংলাদেশের জন্য লাভজনক। তানজিম হাসান সাকিব বিশ্বকাপে তার অভিষেক ম্যাচেই ৩ উইকেট নিয়ে ভালো সূচনা করলেন। তবে তিনিই ছিলেন বাংলাদেশের বোলারদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ব্যয়বহুল। ১০ ওভারে ৮০ রান দিয়ে ফেলাটা আসলে বেশি হয়ে যায়। লাইন এবং লেন্থের উপর মাঝে মাঝেই তিনি নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছেন। ফলে ব্যাটসম্যানেরা তার বিরুদ্ধে বেশি চড়া‌ও হওয়ার সুযোগ পেয়েছেন। শ্রীলংকার চারিথ আসালাংকার দুর্বলতা জায়গাগুলো তিনি খুব ভালোভাবে স্টাডি করেননি বলেই মনে হলো। কিংবা স্টাডি করা থাকলেও হয়তো সেই অনুযায়ী বল করতে পারেননি। এই বিষয়গুলো যদি তিনি ঠিক করতে পারেন, তাহলে নিঃসন্দেহে আগামীতে বাংলাদেশের পেস আক্রমণের অন্যতম সেরা ভরসা হয়ে উঠবেন এই তানজিম হাসান সাকিব। তাসকিন আহমেদ ভালো বল করেছেন ১০ ওভারে মাত্র ৩৯ রান দিয়েছেন, তবে তিনি যদি একটি দুটি উইকেট পেতেন, তাহলে হয়তো শ্রীলংকার ইনিংস ২৭৯ পর্যন্ত যেতে পারত না। সাকিব আল হাসান এবারের বিশ্বকাপে এখনো পর্যন্ত মোট ৯ টি উইকেট পেয়েছেন, যেটি তার নামের সাথে একেবারেই মানানসই নয়। মেহেদী হাসান মিরাজ মোটামুটি ভালো বল করেছেন। তবে তার কাছ থেকে প্রত্যাশা আরেকটু বেশি। সব মিলিয়ে বাংলাদেশ যে শ্রীলঙ্কাকে ২৭৯ রানে বেঁধে রাখতে পেরেছে, সেজন্য বোলাররা টুপি খোলা অভিবাদন না পেলেও, বাহবা পেতেই পারেন।

ট্যাগস :
আপডেট : ০৭:২০:০২ অপরাহ্ন, সোমবার, ৬ নভেম্বর ২০২৩
১২৫ বার পড়া হয়েছে

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রথম টাইম আউট

আপডেট : ০৭:২০:০২ অপরাহ্ন, সোমবার, ৬ নভেম্বর ২০২৩

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রথমবারের মতো কোনো ব্যাটসম্যান টাইম আউটের শিকার হয়ে প্যাভিলিয়নে ফিরে গেলেন। তিনি হচ্ছেন এঞ্জেলো ম্যাথিউস, যিনি অনেকদিন ধরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলছেন। এই নিয়মটি তার জানা না থাকার কোন কারণ নেই। শ্রীলংকান ইনিংসের ২৫তম ওভারে সাদিরা সামারাবিক্রমা আউট হওয়ার পর উইকেটে আসেন এঞ্জেলো ম্যাথিউস। কিন্তু তিনি যে হেলমেট নিয়ে এসেছিলেন, সেটি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের জন্য উপযুক্ত ছিল না। ফলে তিনি ড্রেসিংরুম থেকে আরেকটি হেলমেট চেয়ে পাঠান। এগুলো করতে করতেই অনেকটা সময় পার হয়ে যায়। ফলে সাকিব আল হাসান টাইম আউটের জন্য আবেদন জানান। আর তাতে নিয়ম অনুযায়ী আউট দেন আম্পায়ার। এভাবে আউট হ‌ওয়াটা কিছুতেই মেনে নিতে পারছিলেন না এঞ্জেলো ম্যাথিউস। এমসিসির আইনের ৪০.১.১ নম্বর ধারায় বলা আছে, একজন ব্যাটসম্যান আউট হয়ে যাওয়া বা রিটায়ার্ড হার্টের পর পরবর্তী ব্যাটসম্যানকে ৩ মিনিটের মধ্যে বলের মুখোমুখি হওয়ার জন্য প্রস্তুত হতে হবে। তিন মিনিটের মধ্যে তিনি যদি বল ফেস করার জন্য প্রস্তুত হতে না পারেন, তাহলে তাকে আউট ঘোষণা করা হবে। অবশ্য বিশ্বকাপের প্লেয়িং কন্ডিশনে বলা আছে, টাইম আউট এর জন্য সময় ২ মিনিট। এঞ্জেলো ম্যাথিউস এদিন ৩ মিনিটেরও বেশি সময় পার করে ফেলেন। যার ফলে, বাংলাদেশের আবেদনের প্রেক্ষিতে তাকে আউট দেন আম্পায়াররা। এক্ষেত্রে সাকিব আল হাসান বা বাংলাদেশ দলের কিছুই করার ছিল না। কারণ ক্রিকেটের নিয়ম মেনেই তাকে আউট দেওয়া হয়েছে। সাকিব আল হাসান হয়তো তাকে ব্যাটিংয়ের জন্য ফিরিয়ে আনতে পারতেন। কিন্তু এবারের বিশ্বকাপে বাংলাদেশের যে অবস্থা, তাতে এই ধরনের উদারতা দেখানো, বাংলাদেশের জন্য বিলাসিতা ছাড়া আর কিছু নয়।

একটি পরিবর্তন নিয়ে শ্রীলংকার বিরুদ্ধে ম্যাচ খেলতে নেমেছিল বাংলাদেশ। মুস্তাফিজুর রহমান পুরোপুরি ফিট না থাকার কারণে তাকে একাদশের বাইরে রেখে প্রথমবারের মতো তানজিম হাসান সাকিবকে একাদশে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। তানজিম হাসান সাকিবের একাদশে অন্তর্ভুক্তি অনেকটা অনুমিতই ছিল। কারণ পনেরো সদস্যের বাংলাদেশ স্কোয়াডের তিনিই একমাত্র সদস্য, যিনি এবারের বিশ্বকাপে এই ম্যাচের আগে কোন ম্যাচ খেলেননি। বাংলাদেশের সেমিফাইনালের সম্ভাবনা যদি থাকতো, জয়ের ধারাবাহিকতা বজায় রাখার বিষয় যদি থাকতো, তাহলে উইনিং কম্বিনেশন না ভাঙ্গার জন্য অথবা জয়ের ধারাবাহিকতা বজায় রাখার জন্য হয়তো তিন সিনিয়র পেস বোলারকে একাদশে রাখা হতো। কিন্তু বাংলাদেশের বিশ্বকাপ মিশন যেহেতু সেমিফাইনাল আগেই শেষ হয়ে যাবে, তাই তরুণ এই পেস বোলারকে একটি দুটি ম্যাচে সুযোগ দেওয়া টিম ম্যানেজমেন্টের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। টসে জিতে সাকিব আল হাসান প্রথমে ব্যাটিং না করে কেন ফিল্ডিং নিলেন, সেটা হয়তো অনেকের মনে প্রশ্ন হিসেবে আসতে পারে। টসের সময় সাকিব বলেছিলেন, উইকেটে কিছুটা ময়েশ্চার তিনি দেখেছিলেন, যেটাকে কাজে লাগানোর জন্যই তিনি প্রথমে ফিল্ডিং-এর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। প্রথম ওভারে উইকেট তুলে নিয়ে শরিফুল ইসলাম সাকিব আল হাসান এর সিদ্ধান্তের যৌক্তিকতা প্রমাণ করেছিলেন। বাংলাদেশের একাদশ নির্বাচন আজকের ম্যাচের জন্য অন্তত ঠিক ছিল বলেই মনে হয়েছে। ঠিক পাঁচ জন বোলার নিয়ে আজকে ম্যাচ খেলতে নেমেছিল বাংলাদেশ। নাসুম আহমেদ বা শেখ মাহাদী হাসানকে একাদশের বাইরে রাখা হয়েছিল। তার মানে জেনুইন আটজন ব্যাটসম্যান নিয়ে বাংলাদেশ খেলতে নেমেছিল ম্যাচটি। শ্রীলঙ্কানরা যেহেতু স্পিন ভালো খেলেন, তাই নাসুম আহমেদ বা শেখ মাহাদী হাসানকে দলভুক্ত করার চেয়ে বরং একজন ব্যাটসম্যান বেশি নিয়ে খেলাটাই বাংলাদেশের জন্য লাভজনক। তানজিম হাসান সাকিব বিশ্বকাপে তার অভিষেক ম্যাচেই ৩ উইকেট নিয়ে ভালো সূচনা করলেন। তবে তিনিই ছিলেন বাংলাদেশের বোলারদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ব্যয়বহুল। ১০ ওভারে ৮০ রান দিয়ে ফেলাটা আসলে বেশি হয়ে যায়। লাইন এবং লেন্থের উপর মাঝে মাঝেই তিনি নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছেন। ফলে ব্যাটসম্যানেরা তার বিরুদ্ধে বেশি চড়া‌ও হওয়ার সুযোগ পেয়েছেন। শ্রীলংকার চারিথ আসালাংকার দুর্বলতা জায়গাগুলো তিনি খুব ভালোভাবে স্টাডি করেননি বলেই মনে হলো। কিংবা স্টাডি করা থাকলেও হয়তো সেই অনুযায়ী বল করতে পারেননি। এই বিষয়গুলো যদি তিনি ঠিক করতে পারেন, তাহলে নিঃসন্দেহে আগামীতে বাংলাদেশের পেস আক্রমণের অন্যতম সেরা ভরসা হয়ে উঠবেন এই তানজিম হাসান সাকিব। তাসকিন আহমেদ ভালো বল করেছেন ১০ ওভারে মাত্র ৩৯ রান দিয়েছেন, তবে তিনি যদি একটি দুটি উইকেট পেতেন, তাহলে হয়তো শ্রীলংকার ইনিংস ২৭৯ পর্যন্ত যেতে পারত না। সাকিব আল হাসান এবারের বিশ্বকাপে এখনো পর্যন্ত মোট ৯ টি উইকেট পেয়েছেন, যেটি তার নামের সাথে একেবারেই মানানসই নয়। মেহেদী হাসান মিরাজ মোটামুটি ভালো বল করেছেন। তবে তার কাছ থেকে প্রত্যাশা আরেকটু বেশি। সব মিলিয়ে বাংলাদেশ যে শ্রীলঙ্কাকে ২৭৯ রানে বেঁধে রাখতে পেরেছে, সেজন্য বোলাররা টুপি খোলা অভিবাদন না পেলেও, বাহবা পেতেই পারেন।