০২:১৯ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বিজ্ঞপ্তি

বাংলাদেশের লক্ষ্য পূরণ

ড. সাঈদুর রহমান

হেরে গিয়েও চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সম্ভাবনা বাঁচিয়ে রাখল বাংলাদেশ। লক্ষ্য ছিল, অস্ট্রেলিয়ার কাছে পরাজিত হলেও এমন ব্যবধানে পরাজিত হওয়া, যাতে নেট রানরেট অনেক কমে গিয়ে বাংলাদেশ শ্রীলংকা বা নেদারল্যান্ডসের নিচে চলে না যায়। সে লক্ষ্যে আপাতত বাংলাদেশ সফল। এখন নেদারল্যান্ডস যদি আজ ভারতের বিরুদ্ধে অঘটন না ঘটাতে পারে, তাহলে বাংলাদেশ অষ্টম স্থানে থেকে এবারের বিশ্বকাপ শেষ করতে পারবে। স্বাগতিক পাকিস্তানসহ এবারের বিশ্বকাপের শীর্ষ আট দল ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে পাকিস্তানে অনুষ্ঠিতব্য চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে অংশ গ্রহণের সুযোগ পাবে, তাই শ্রীলঙ্কা এবং নেদারল্যান্ডসকে পেছনে ফেলে বাংলাদেশ সেই চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে খেলার যোগ্যতা অর্জন করতে পারবে। শ্রীলংকার বিরুদ্ধে ম্যাচে ২৭৯ রান চেজ করতে গিয়ে বাংলাদেশ ৭ উইকেটে ২৮২ রান করেছিল। এবারের বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়া-ম্যাচের আগে পর্যন্ত ঐটাই ছিল বাংলাদেশের সর্বোচ্চ ইনিংস। নিজেদের শেষ ম্যাচে এসে বাংলাদেশ অবশেষে ৩০০ রানের দেখা পেল। এবারের বিশ্বকাপে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের ফর্মের প্রেক্ষাপটে আগে ব্যাট করে ৩০৬ রান করায় নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা প্রশংসা পাওয়ার দাবিদার। ভারতের বিরুদ্ধে উদ্বোধনী উইকেট জুটিতে বাংলাদেশ ৯৩ রান করেছিল। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে উদ্বোধনী জুটিতে ৭৬ রান এলো। দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে এলো ২৫ রান। ফলে বাংলাদেশের মিডল অর্ডারের ব্যাটসম্যানরা অনেকটা স্বাভাবিক ব্যাটিং করার সুযোগ পেলেন। তাওহীদ হৃদয় অবশেষে ফিফটির দেখা পেলেন। এর আগে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে তিনি ৬১ বল খেলে ৩৯ রান করেছিলেন, যেটা ছিল এবার বিশ্বকাপে তার সর্বোচ্চ রানের ইনিংস। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ৭৯ বলে ৭৪ রানের ইনিংসটাকে তিনি যদি সেঞ্চুরিতে টার্ন করাতে পারতেন, তাহলে নিশ্চয়ই তার নিজের জন্য ভালো হতো এবং বাংলাদেশের জন্য জয়ের সম্ভাবনা তৈরি করত। এবারের বিশ্বকাপে এই প্রথম বাংলাদেশের শীর্ষ ৭ ব্যাটসম্যানের সবাই মোটামুটি রান পেলেন, যার ফলে মাত্র একটি ফিফটিতেই বাংলাদেশ ৩০০ রানের মাইল ফলক পেরিয়ে গেল। নাজমুল হোসেন শান্ত গত ম্যাচে ৯০ রান করার পর এই ম্যাচেও ৪৫ রান করলেন। মাঝের ম্যাচগুলোতে যদি শান্ত এরকম ধারাবাহিক থাকতেন তাহলে হয়তো আরো একটি দুটি ম্যাচে বাংলাদেশ জয়ের দেখা পেত। সাকিব দলে না থাকায় মাহমুদ‌উল্লাহ রিয়াদকে ৫ নম্বরে ব্যাটিংয়ে পাঠানোর সিদ্ধান্ত যথার্থ ছিল। তিনটি ছক্কার সাহায্যে ২৮ বলে ৩২ রান করে তিনি বড় একটা ইনিংসের স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন। মুশফিকুর রহিম আবারো নিজের ইনিংসটাকে বড় করতে ব্যর্থ হলেন। মেহেদী হাসান মিরাজ ২০ বলে ২৯ রানের ইনিংস খেলে দলের স্কোর ৩০০ পার করিয়ে দেন। বাংলাদেশের প্রথম সাত ব্যাটসম্যানের ইনিংস ছিল যথাক্রমে ৩৬,৩৬,৪৫,৭৪,৩২,২১,২৯ রান। এর মধ্যে আরও অন্তত দুজনকে ফিফটি রানের ইনিংস খেলতে হতো। একবার স্টার্ট পেয়ে গেলেও সেটাকে বড় করতে না পারাটা আমাদের ব্যাটসম্যানদের একটা বড় ব্যর্থতা। বিশ্বকাপের পর এই জায়গাটায় আরো অনেক শ্রম দিতে হবে বাংলাদেশের কোচকে। সাকিব আল হাসানকে ছাড়া ম্যাচ খেলা মানেই বাংলাদেশের একজন খেলোয়াড় কম নিয়ে খেলা। কারণ সাকিব একাই দুজনের কাজ করতে পারেন। পুনের উইকেটে যেহেতু স্পিনাররা উইকেট থেকে বাড়তি সহায়তা লাভ করেন, তাই এবারের বিশ্বকাপে এই প্রথম বাংলাদেশ দুজন পেস বোলার নিয়ে ম্যাচ খেলল। তবে বাংলাদেশের তিন স্পিনার মেহেদী হাসান মিরাজ, শেখ মাহাদী হাসান এবং নাসুম আহমেদ- এই তিনজনের কেউই কোন উইকেট পেলেন না। স্পিনারদের পারফরম্যান্স দেখে মনে হয়েছে বরং নাসুম আহমেদকে বাইরে রেখে তরুণ তানজিম হাসান সাকিবকে একাদশে রাখলেই বোধহয় বাংলাদেশ ভালো করত। অস্ট্রেলিয়ার যে দুটি উইকেট এর পতন ঘটেছে তার একটি পেয়েছেন তাসকিন আহমেদ এবং অন্যটি মুস্তাফিজুর রহমান। মাত্র ১২ রানে অস্ট্রেলিয়ার প্রথম উইকেট এর পতন হওয়ার পর দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে তারা যোগ করে ১২০ রান এবং তৃতীয় উইকেট জুটিতে তাদের আসে অপরাজিত ১৭৫ রান। বড় দল হতে গেলে এইভাবে শুরুর দিকেই পার্টনারশিপ বিল্ড‌আপ করা বাংলাদেশকে শিখতে হবে। মিচেল মার্শ ১৩২ বলে অপরাজিত ১৭৫ রানের ইনিংস খেলে একাই ম্যাচটাকে বাংলাদেশের কাছ থেকে বের করে নিয়ে গেলেন। এরকম ব্যাটসম্যান আমরা যত দিন তৈরি করতে না পারব, ততদিন পর্যন্ত আমরা বিশ্ব ক্রিকেটে বড় দল হতে পারবো না। গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে ১২৮ বলে করা অপরাজিত ২০১ রানের ইনিংসের কথাও আরেকবার বলতে হয়। এই রকম ইনিংস যখন বাংলাদেশের কোন ব্যাটসম্যান খেলার মতো যোগ্যতা অর্জন করবেন, তখন আমরাও বিশ্ব ক্রিকেটে শীর্ষ দলগুলোর মধ্যেই থাকবো।

ট্যাগস :
আপডেট : ১২:৩৮:৫৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ১২ নভেম্বর ২০২৩
৪৭ বার পড়া হয়েছে

বাংলাদেশের লক্ষ্য পূরণ

আপডেট : ১২:৩৮:৫৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ১২ নভেম্বর ২০২৩

হেরে গিয়েও চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সম্ভাবনা বাঁচিয়ে রাখল বাংলাদেশ। লক্ষ্য ছিল, অস্ট্রেলিয়ার কাছে পরাজিত হলেও এমন ব্যবধানে পরাজিত হওয়া, যাতে নেট রানরেট অনেক কমে গিয়ে বাংলাদেশ শ্রীলংকা বা নেদারল্যান্ডসের নিচে চলে না যায়। সে লক্ষ্যে আপাতত বাংলাদেশ সফল। এখন নেদারল্যান্ডস যদি আজ ভারতের বিরুদ্ধে অঘটন না ঘটাতে পারে, তাহলে বাংলাদেশ অষ্টম স্থানে থেকে এবারের বিশ্বকাপ শেষ করতে পারবে। স্বাগতিক পাকিস্তানসহ এবারের বিশ্বকাপের শীর্ষ আট দল ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে পাকিস্তানে অনুষ্ঠিতব্য চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে অংশ গ্রহণের সুযোগ পাবে, তাই শ্রীলঙ্কা এবং নেদারল্যান্ডসকে পেছনে ফেলে বাংলাদেশ সেই চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে খেলার যোগ্যতা অর্জন করতে পারবে। শ্রীলংকার বিরুদ্ধে ম্যাচে ২৭৯ রান চেজ করতে গিয়ে বাংলাদেশ ৭ উইকেটে ২৮২ রান করেছিল। এবারের বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়া-ম্যাচের আগে পর্যন্ত ঐটাই ছিল বাংলাদেশের সর্বোচ্চ ইনিংস। নিজেদের শেষ ম্যাচে এসে বাংলাদেশ অবশেষে ৩০০ রানের দেখা পেল। এবারের বিশ্বকাপে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের ফর্মের প্রেক্ষাপটে আগে ব্যাট করে ৩০৬ রান করায় নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা প্রশংসা পাওয়ার দাবিদার। ভারতের বিরুদ্ধে উদ্বোধনী উইকেট জুটিতে বাংলাদেশ ৯৩ রান করেছিল। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে উদ্বোধনী জুটিতে ৭৬ রান এলো। দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে এলো ২৫ রান। ফলে বাংলাদেশের মিডল অর্ডারের ব্যাটসম্যানরা অনেকটা স্বাভাবিক ব্যাটিং করার সুযোগ পেলেন। তাওহীদ হৃদয় অবশেষে ফিফটির দেখা পেলেন। এর আগে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে তিনি ৬১ বল খেলে ৩৯ রান করেছিলেন, যেটা ছিল এবার বিশ্বকাপে তার সর্বোচ্চ রানের ইনিংস। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ৭৯ বলে ৭৪ রানের ইনিংসটাকে তিনি যদি সেঞ্চুরিতে টার্ন করাতে পারতেন, তাহলে নিশ্চয়ই তার নিজের জন্য ভালো হতো এবং বাংলাদেশের জন্য জয়ের সম্ভাবনা তৈরি করত। এবারের বিশ্বকাপে এই প্রথম বাংলাদেশের শীর্ষ ৭ ব্যাটসম্যানের সবাই মোটামুটি রান পেলেন, যার ফলে মাত্র একটি ফিফটিতেই বাংলাদেশ ৩০০ রানের মাইল ফলক পেরিয়ে গেল। নাজমুল হোসেন শান্ত গত ম্যাচে ৯০ রান করার পর এই ম্যাচেও ৪৫ রান করলেন। মাঝের ম্যাচগুলোতে যদি শান্ত এরকম ধারাবাহিক থাকতেন তাহলে হয়তো আরো একটি দুটি ম্যাচে বাংলাদেশ জয়ের দেখা পেত। সাকিব দলে না থাকায় মাহমুদ‌উল্লাহ রিয়াদকে ৫ নম্বরে ব্যাটিংয়ে পাঠানোর সিদ্ধান্ত যথার্থ ছিল। তিনটি ছক্কার সাহায্যে ২৮ বলে ৩২ রান করে তিনি বড় একটা ইনিংসের স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন। মুশফিকুর রহিম আবারো নিজের ইনিংসটাকে বড় করতে ব্যর্থ হলেন। মেহেদী হাসান মিরাজ ২০ বলে ২৯ রানের ইনিংস খেলে দলের স্কোর ৩০০ পার করিয়ে দেন। বাংলাদেশের প্রথম সাত ব্যাটসম্যানের ইনিংস ছিল যথাক্রমে ৩৬,৩৬,৪৫,৭৪,৩২,২১,২৯ রান। এর মধ্যে আরও অন্তত দুজনকে ফিফটি রানের ইনিংস খেলতে হতো। একবার স্টার্ট পেয়ে গেলেও সেটাকে বড় করতে না পারাটা আমাদের ব্যাটসম্যানদের একটা বড় ব্যর্থতা। বিশ্বকাপের পর এই জায়গাটায় আরো অনেক শ্রম দিতে হবে বাংলাদেশের কোচকে। সাকিব আল হাসানকে ছাড়া ম্যাচ খেলা মানেই বাংলাদেশের একজন খেলোয়াড় কম নিয়ে খেলা। কারণ সাকিব একাই দুজনের কাজ করতে পারেন। পুনের উইকেটে যেহেতু স্পিনাররা উইকেট থেকে বাড়তি সহায়তা লাভ করেন, তাই এবারের বিশ্বকাপে এই প্রথম বাংলাদেশ দুজন পেস বোলার নিয়ে ম্যাচ খেলল। তবে বাংলাদেশের তিন স্পিনার মেহেদী হাসান মিরাজ, শেখ মাহাদী হাসান এবং নাসুম আহমেদ- এই তিনজনের কেউই কোন উইকেট পেলেন না। স্পিনারদের পারফরম্যান্স দেখে মনে হয়েছে বরং নাসুম আহমেদকে বাইরে রেখে তরুণ তানজিম হাসান সাকিবকে একাদশে রাখলেই বোধহয় বাংলাদেশ ভালো করত। অস্ট্রেলিয়ার যে দুটি উইকেট এর পতন ঘটেছে তার একটি পেয়েছেন তাসকিন আহমেদ এবং অন্যটি মুস্তাফিজুর রহমান। মাত্র ১২ রানে অস্ট্রেলিয়ার প্রথম উইকেট এর পতন হওয়ার পর দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে তারা যোগ করে ১২০ রান এবং তৃতীয় উইকেট জুটিতে তাদের আসে অপরাজিত ১৭৫ রান। বড় দল হতে গেলে এইভাবে শুরুর দিকেই পার্টনারশিপ বিল্ড‌আপ করা বাংলাদেশকে শিখতে হবে। মিচেল মার্শ ১৩২ বলে অপরাজিত ১৭৫ রানের ইনিংস খেলে একাই ম্যাচটাকে বাংলাদেশের কাছ থেকে বের করে নিয়ে গেলেন। এরকম ব্যাটসম্যান আমরা যত দিন তৈরি করতে না পারব, ততদিন পর্যন্ত আমরা বিশ্ব ক্রিকেটে বড় দল হতে পারবো না। গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে ১২৮ বলে করা অপরাজিত ২০১ রানের ইনিংসের কথাও আরেকবার বলতে হয়। এই রকম ইনিংস যখন বাংলাদেশের কোন ব্যাটসম্যান খেলার মতো যোগ্যতা অর্জন করবেন, তখন আমরাও বিশ্ব ক্রিকেটে শীর্ষ দলগুলোর মধ্যেই থাকবো।